পাখির জগতে যেমন বাদুর, চিন্তার জগতে তেমনি সন্দেহ অস্পষ্ট আলোকে বিরাজ করে। বস্তুত, সংশয় এবং সন্দেহ সর্বপ্রকারে দমন করা উচিত। অন্ততঃ এদের এড়িয়ে চলার প্রচেষ্টা সর্বোতভাবে কর্তব্য। কারণ সংশয় ও সন্দেহের জন্য মানুষের মন মেঘাচ্ছন্ন থাকে, মানুষকে অনেক সুহৃদ ও বন্ধুজন হারাতে হয় এবং দৈনন্দিন কাজকর্মের সহজ ও স্বচ্ছ গতি ব্যহত হয়। সংশয় ও সন্দেহ রাজ-রাজরাদের অতাচারি করে তোলেম স্বামীদের মনে হিংসা ও আক্রোশের সৃষ্টি করে এবিং জ্ঞানী ব্যক্তির অস্তিরচিত্ত ও বিমর্ষ করে।
সংশয় ও সন্দেহ মানসিক দুর্বলতা নয়, মস্তিস্কের অসুস্থতার পরিচায়ক। কারণ খুব সাহসী মানুষকেও সংশয় ও সন্দেহের বশীভুত হতে দেখা যায়। নজির হিসাবে ইংল্যান্ডের রাজা সপ্তম হেনরির (28 January 1457 – 21 April 1509) কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। অমন সন্দেহ আন্দোলিত মন বুঝি আর কারো ছিলোনা। অথচ তার চেয়ে সাহসী মানুষ ও নিতান্ত কম ছিলো। অবশ্য এ প্রকারের সংমিশ্রণের ক্ষেত্রে সংশয় ও সন্দেহের ক্ষতি সাধনের ক্ষমতা সীমিত। কারণ সাধারণতঃ এ ধরণের ব্যক্তিরা পরীক্ষা নিরিক্ষা ব্যতিত সন্দেহকে খুব একটা আমলে নেন না। কিন্তু দুর্বল চিত্তে সংশয় অতিদ্রুত প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
যে কোন বিষয়ে জ্ঞানের অভাবই মানুষকে সন্দেহ পোষনে সর্বাপেক্ষা বেশি প্ররোচিত করে। তাই সংশয় ও সন্দেহ মনে চেপে না রেখে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব তথ্য সংগ্রহ করা সমীচীন। আর অত সংশয় ও সন্দেহ পোষণের পিছনের যুক্তিই বা কোথায়? একজন মানুষ অপর মানুষের থেকে কি চাইতে পারে? যারা তার কাজে নিযুক্ত রয়েছে এবং যাদের সাথে তার অন্যবিধ সম্পর্ক তাদেরকে ফেরেশতা ভাবলে চলবে কেন? মনে রাখতে হবে তাদের জীবনেও মানবিক উদ্যেশ্য ও লক্ষ্য আছে এবং তারা ও অপরের স্বার্থের আগে নিজের স্বার্থের কথাই চিন্তা করবে। তাই যখন মনে সংশয় ও সন্দেহের উদয় হবে তাদের সত্য বলে ধরে নিয়ে প্রতিকারের চেষ্টায় প্রবৃত্ত হওয়া এবং অবশেষে অসত্যের মুখে লাগাম পরিয়ে দেয়া উচিত।
সন্দেহ ও সংশয়কে সহজ করে তোলার এই হলো প্রকৃষ্ট উপায়। যখন মনে সন্দেহের উদ্রেক হবে তখন সন্দেহকে সত্য বলে ধরে নিয়ে তার ক্ষতি করার শক্তিকে দুর্ব করে দেওয়াতে সন্দেহজনক পরিস্থিতির সত্যিকার মোকাবেলা করা হয়। যে সংশয় ও সন্দেহের একমাত্র ভিত্তি মানসিক দুশ্চিন্তা তা যেন শূন্যগর্ভ কোলাহল মাত্র। কিন্তু যে সংশয় ও সন্দেহ কৃত্রিম বারি সিঞ্চনে পরিপুষ্টি লাভ করে এবং অন্য লোকের কাহিনী ও কানাঘুষার সাহায্যে পল্লবিত হয়ে আমাদের মস্তিস্কে পথ খুঁজে পায় তার আবার দংশন-জ্বালা রয়েছে। এ প্রকারের সংশয়পূর্ণ দুর্গম বনে পথের সন্ধান খুঁজে পেতে হলে সর্বোত্তম উপায় হলো যাকে নিয়ে সন্দেহ উন্মুক্ত মন নিয়ে তার সাথে কথা বলবে। ফলে প্রকৃত ব্যাপার সম্পর্কে নিজের পূর্বাপেক্ষা স্বচ্ছতর হয় এবং তাকে আর সন্দেহ করার কারণ থাকেনা। অপর পক্ষও নিজের আচরণ অধিক নিয়ন্ত্রিত করতে পারে। অবশ্য হীন প্রবৃত্তির বেলায় এসব লোক একবার যদি বুঝতে পারে যে তাদের সন্দেহ করা হচ্ছে তা হলে তারা আর সত্যাশ্রয়ী হবে না। ইতালীয় ভাষাতে একটি কথা আছে – যাকে সন্দেহ করা হয় সে ধরেই নেয় তার পক্ষে নিজেকে বিশ্বাসী প্রতিপন্ন করার চেষ্টা না করাই উচিত; কারণ তাকে একবার অবিশ্বাস করা হয়েছে। কিন্তু যেহেতু তাকে সন্দেহ করা হয়েছে সেই জন্যেই বরং নিজেকে সন্দেহ-মুক্ত করার নিমিত্তে তার উদগ্রীব হওয়া উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১:৪৭