আমাদের মাঝে একশ্রেণীর ব্লগার আছে—তারা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে প্রতিনিয়ত শুধু সরকারবিরোধী রাজনৈতিক লেখা ছাড়া আর কিছু লিখতে পারে না। সবসময় এদের টার্গেট ইনিয়েবিনিয়ে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস, স্বাধীনতার অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিব ইত্যাদি। এরা বুঝেশুনে, জেনেশুনে ও স্বজ্ঞানেই এসব লিখে থাকে। উদ্দেশ্য সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করা। কিন্তু এদের কলম থেকে কখনো-কোনোদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রধান শত্রু জামায়াত-শিবির ও তাদের মিত্র বিএনপি’র বিরুদ্ধে একলাইন সমালোচনাও বের হয় না।
আপনি সমালোচনা করবেন ভালো কথা। কিন্তু আপনাকে তো গঠনমূলক সমালোচনা করতে হবে। মনে রাখবেন: কারও বিরুদ্ধে গঠনমূলক সমালোচনা করাটা আপনার গণতান্ত্রিক অধিকার হতে পারে। কিন্তু আপনার বুকে জামায়াত-শিবিরের শ্লোগান ও তাদের দলীয় আদর্শ রেখে আপনি বর্তমান সরকারকে গালি দিচ্ছেন কেন? আপনি তো পক্ষপাতদুষ্ট আচরণে বিশ্বাসী। আপনি নিজেই তো একটা স্বৈরাচার! অথচ, সেই আপনি অহেতুক কারও প্ররোচনায় সরকারকে ‘স্বৈরাচার’ বলে বিশেষায়িত করে কেন নিজের পরিচয় জনসমক্ষে তুলে ধরছেন? আপনাকে এখন নিরেট বোকা বলবো নাকি খুব বুদ্ধিমান বলবো?
আগে নিজের সমালোচনা করুন। নিজের দিকে তাকান। আপনি মানুষ কিনা—একবার ভাবুন। আর আপনি ভালোমানুষ কিনা—সেই বিচার পরে হবে। আপনি সরকারের সমালোচনা করুন। আর তা দিন-রাত করুন। আর আপনি মসজিদে বসেও সরকারের বিরুদ্ধে অভিসম্পাত করুন এবং মনের সুখে গালিগালাজ করতে থাকুন। কিন্তু আপনি সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের পর্যন্ত ব্যঙ্গবিদ্রুপ করছেন! আপনার এই ধৃষ্টতাপ্রদর্শনের পারমিশন আপনাকে কে দিয়েছে?
আপনারা সরকারের সমালোচনা করলে আমার তাতে কিছুই যায় আসে না। এমনকি সরকারেরও। কিন্তু প্রতিদিন ব্লগে এলে এইসব নিম্নমানের লেখা পড়ে মনটা খারাপ হয়ে যায়। সরকারের সমালোচনা করতে যোগ্যতা লাগে। অনেক পড়াশোনার প্রয়োজন আছে। যারা রাষ্ট্রচিন্তা ও রাষ্ট্রদর্শন বোঝে না—তারা কীভাবে সরকারের সমালোচনা করবে? সরকারের সঙ্গে রাষ্ট্রের কী সম্পর্ক রয়েছে—তাও যাদের জানা নাই তারাই এখন সরকারের সমালোচনার নামে কয়েকটি গালিগালাজ কিংবা তৎপরিবর্তে কয়েকটি বিশেষণবাচক শব্দ-ব্যবহার করে বিমল আনন্দ অনুভব করে থাকে। ব্যাপারটি খুবই হাস্যকর। তারা মনে করে থাকে—তাদের দুই-চারটি লেখায় বুঝি সরকার কাত হয়ে এখনই পড়ে যাবে!
প্রবন্ধ-নিবন্ধ লেখা এতো সহজ নয়। সুচিন্তিত প্রবন্ধ লেখা আরও কঠিন ও জটিল কাজ। সস্তা লেখা খুব সহজ। আর বাংলাদেশের মতো যদি কোনো দেশ হয় তবে তো পোয়াবারো! এখানে, নানির বাড়ির তালগাছ নিয়ে রচনা লিখতে গিয়ে শেষমেশ নানির সতীত্ব নিয়ে টানাটানি! হায় রে বাঙালি! হায় রে ত্রিশলক্ষ শহীদের বাংলাদেশ! আমরা দিন-দিন কোথায় যেন নেমে যাচ্ছি!
অনেকের লেখায় খুব রাজনীতি থাকে। আর তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়েই যেন এসব নিম্নমানের লেখা লিখে থাকে। কিন্তু এর ভবিষ্যৎ কী? নিজের পায়ে কুড়াল মারা। যারা এতোটাই রাজনীতিবিদ—তাদের উচিত মাঠে গিয়ে সরাসরি রাজনীতি করা। সেখানে জমবে ভালো। দেখি, আপনি কত কী করতে পারেন! আর কত কোটি লোক আপনার সামনে-পিছনে এসে দাঁড়ায়!
আর রাজনীতি না করলে মুক্ত ও সুস্থ গদ্যচর্চা করুন। আর ব্লগটাকে সৃজনশীলতা, মননশীলতা, জ্ঞানচর্চা ও বিবেকচর্চার পীঠস্থান হিসাবে আমাদের ব্যবহার করতে দিন। আমরা সাধারণ পাঠক এখানে সৃজনশীলতার লোভে আসি—কারও সস্তা রাজনৈতিক লেখা পড়তে নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৫১