প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব তৃতীয় পর্ব
গডফাদার
___________________________________________________________
ইলিয়াড মনিটরের সামনে অরুপকে বসিয়ে দিতে দিতে বলল, মহান গডফাদারের নামে শুরু হোক।
অরুপ ভ্রু ধনুকের মতো বাকিয়ে বলল, মহান গডফাদার?
-হুম। আমাদের হ্যাকিং জগতের গডফাদার। যার নাম-পরিচয় কেউ জানে না। সবাই চেনে তার কাজে। পৃথিবীর এমন কোন কোড নেই যা তিনি ভাঙতে পারেন না। তিনি পৃথিবীর অলিখিত গডফাদার। সবাই তাকে মহান গডফাদার বলে ডাকে।
-তো তাকে দিয়ে কাজ করালেই তো হয়।
-এই ভাইরাস তো তারই তৈরি।
অরুপ লাফ দিয়ে বলে, কি যা তা বলছেন? এটা তো আগুন্তক আমাকে দিয়েছিলেন।
-ওর নাম যাদব। ওর একটা ওষুধের বিশাল কোম্পানি আছে। বলা যায়, পৃথিবীর ৮৫ ভাগ ওষুধ ও একাই সরবরাহ করে। ও এটা গডফাদারের কাছ থেকে কিনেছে।
-ওষুধের কোম্পানির মালিক হয়ে ও কেন একটা এন্টিভাইরাস কোম্পানির সাথে লাগতে যাবে?
-কারণ সুপার কোয়ান্টাম কম্পিউটার চালু হলে মানুষের দেখভাল সব কম্পিউটারই করবে। মানুষের আর কোন প্রাণঘাতী রোগ থাকবে। রোগ না থাকলে তার কোম্পানির কি হবে ভেবে দেখেছ? ও দেউলিয়া হয়ে যাবে। হা হা হা।
অরুপ কেবল হা হয়ে সব কথা হজম করে নিল। সে এখনো বুঝছে না, তাকে এত ঝামেলায় কেন জড়াতে হচ্ছে। কি দোষ তার?
ভাইরাস পাসওয়ার্ড মুক্ত করে ইলিয়াডের হাতে দিয়ে বলল, এখন আমাকে যেতে দাও।
-হা হা হা। মজার কথা বললে। এখানে কেউ ঢুকলে আত্মা নিয়ে বের হতে পারে না। আত্মাটা এখানেই ছেড়ে যেতে হয়। হা হা হা। বাঁচতে চাইলে আমাদের সাথে কাজ কর। অরুপ বুঝলো সে ফাঁদে পড়ে গিয়েছে। উপায় না পেয়ে তাদের সাথে থাকতে শুরু করল।
চার সপ্তাহ পড়ে ইলিয়াড তার সব হ্যাকারদের নিমন্ত্রন জানালো। তারপর সবাইকে বলা শুরু করলো, মহান গডফাদারকে সম্মান করে শুরু করছি।
সবাই দাঁড়িয়ে গডফাদারের জয়ধ্বনি করল।
সবাই নীরব হলে ইলিয়াড বলা শুরু করল, আপনারা জানেন, মানবীয় সুপার কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রজেক্ট এক্স এর কথা। যেটা চালু হলে আমাদের কমোডে বসে হাগু করা ছাড়া আর কোন কাজ থাকবে না। সেই প্রজেক্ট এক্স কে রক্ষা করবে যে অপ্রতিরোধ্য ফায়ারওয়াল, সেই ওয়াল ভাঙ্গার জন্য যে ভাইরাস লাগবে তা আমরা পেয়ে গিয়েছি মহান গডফাদারের কল্যাণে। এখন আমরা ঘটাব সেই ২৬শে এপ্রিলের ঐতিহাসিক চেরনোবিল ভাইরাসের পুনরাবৃত্তি। আমি সবাইকে এর কপি দিয়ে দিচ্ছি যাতে আমাদের কেউ ব্যর্থ হলে যেন আরেকজন এগিয়ে আসতে পারে।
অরুপ চমকে উঠে ভয়ংকর চেরনোবিল ভাইরাসের কথা শুনে। পৃথিবীতে যা নিয়ে এসেছিল ঘোর অমানিশা। যা নেমে আসবে আবার। গডফাদার এত খারাপ হল কি করে? কে এই গডফাদার? চেরনোবিল ভাইরাসকে কে থামাবে?
CIH বা চেরনোবিল ভাইরাস
___________________________________________________________
১৯৯৯ সালের ২৬ শে এপ্রিল সারা বিশ্বে তাণ্ডব চালায় CIH বা চেরনোবিল ভাইরাস। কম্পিউটারের সবকিছু মুছে ফেলে নষ্ট করে ফেলেছিল লাখ লাখ কম্পিউটার। ভাইরাসটায় টাইমার সেট করা ছিল। যখনি ঘড়ির কাটায় তারিখ ১৯৯৯ সালের ২৬ শে এপ্রিল হয় ঠিক তখনি টাইম বোমার মত যেন বিস্ফোরিত হয়। নষ্ট করে দেয় বায়োস, মুছে ফেলে পার্টিশন।
ইতিহাস বলে ১৯৯৮ সালের জুনের শুরুতে তাইওয়ান নামের এক দেশে প্রথম এই ভাইরাস দেখা দেয়। ভাইরাসের নির্মাতা একে একটি স্থানীয় কনফারেন্সে পাঠিয়ে ছিল। সেখান থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসের নির্মাতা ছিল চেন ইং হাও। তার নামের আদ্যক্ষর দিয়ে ভাইরাসের নাম CIH করা হয়েছিল। আবার ১৯৮৬ সালের ২৬শে এপ্রিল রাশিয়া নামক দেশে চেরনোবিলে মারাত্মক পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটেছিল। তারিখ একই হওয়ায় একে চেরনোবিল ভাইরাসও বলা হয়।
একে “স্পেস ফিলার”ও বলা হয় কারণ এটি ফাইলের ভিতরের খালি জায়গা দখল করে। যে কারণে এন্টিভাইরাস ভাইরাসটি ধরতে পারেনা। তবে চেন এই ভাইরাসটি ছড়ান নি। ছড়িয়েছিল তার বন্ধুরা। চেন বলেছিলেন, সফটওয়্যার বিশেষজ্ঞদের বোকা বানানোর জন্য এই ভাইরাসটির তৈরি করেছিলেন। আর ভাইরাসটি এন্টিভাইরাস প্রোগ্রামকে ফাঁকি দিতে সক্ষম।
ইলিয়াড যথারীতি হা হা করে হাসতে হাসতে অরুপকে বলে, জানো আমাদেরকে কে ফান্ড করেছে?
-না।
-যাদব।
অরুপ নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, কি! কি বল? মাথা ঠিক আছে?
-হা হা হা। আমার মাথা মহান গডফাদারের মতো পরিস্কার।
-কেন সে এই কাজ করবে? আমাকেই বা কেন জড়িয়েছে? আমার কি দরকার ছিল?
-তাদের প্রজেক্ট এক্স ধ্বংস করে আমাদের প্রজেক্ট এক্স সফল হলে কার বেশি লাভ বুঝ না? যাদবের। সে তাহলে দেউলিয়া হওয়া থেকে বেঁচে যায়। আর আমরাও কিছু উপরি পাই সেই সাথে বিশ্ব দখল তো আছেই। অনেককাল আগে ব্যবসায়ীরা গডফাদার নামক গুন্ডাদের সাহায্য নিত ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে। এখন পেশীশক্তির চেয়ে প্রযুক্তির গুরুত্ব বেশি। তাই আমাদের মতো হ্যাকারদের গুরুত্ব আগেকার গডফাদারের মতো। এই কারণেই তো মহান গডফাদারের উত্থান। হা হা হা।
-তাহলে আমাকে কেন?
-ওটা একটা ফাঁদ ছিল। বোকা বানানোর ফাঁদ। তোমাকে নিয়ে যেয়ে ধরা খাইয়ে পরিচালককে বোকা বানিয়েছে। এখন পরিচালক ভাববে তার কাছে ভাইরাসটা আছে। সে সে অনুযায়ী এন্টিভাইরাসটা হালনাগাদ করবে। নিশ্চিন্ত মনে প্রজেক্ট এক্সে ব্যবহার করবে। কিন্তু তার জন্য দুঃখের বিষয় সেটা আসল ভাইরাসের একটা ডামি ভাইরাস। হা হা হা। আসল ভাইরাস তো আমাদের কাছে।
-তার মানে এখানে এনে আমাকে ছেড়ে দেওয়াও পরিকল্পনারই একটা অংশ!
-এটাও বুঝিয়ে বলতে হবে? তোমাকে চাবি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। বায়োলিজিক্যাল চাবি। আর এই চাবি মানে তোমাকে কে যোগাড় করে দিয়েছে জানো?
-কে?
-মহান গডফাদার। হা হা হা।
-মানে?
-এই পুরো পরিকল্পনা তো তারই। তার সাথে যাদব যোগাযোগ করে সব জানাতেই তিনি তোমাকে নির্বাচন করে দেন। তারপর তোমাকে মিছিমিছি প্রশিক্ষণ দেওয়া, বাসা দেওয়া, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করানো, পরিচালকের কাছে পৌঁছে দেওয়া, তারপর পরিচালকের শিকার হতে দেওয়া, জেলে দেওয়া, সেখান থেকে ছাড়িয়ে এনে আমাদের আস্তানায় ছেড়ে দেওয়া এসবই করা হয়েছে যাতে পরিচালকের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য। হা হা হা। তুমি ছিলে আমাদের খেলার পুতুল। হা হা হা।
অরুপ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। মাথা ঘুরে পড়ে যেতে থাকে। জ্ঞান হারানোর আগে ইলিয়াড তার কানে কানে বলে, আগামীকাল ২৬ শে এপ্রিল। হা হা হা।
>>>শেষ পর্ব
ভাষার আন্দোলনের উপর ঈষৎ গবেষণাধর্মী আর বিস্তারিত কাহিনী নিয়ে আমার একটা গল্প কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে...
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৮