=> প্রথম পর্ব
ভাইরাসের কলকব্জা
___________________________________________________________
আমতা আমতা করে অরুপ বলা শুরু করল, আমি আসলে প্রথম প্রজন্মের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করেছি। এটা খুবই দ্রুত কাজ করতে পারে।
-এখন চলছে পঞ্চদশ প্রজন্মের ভাষা আর এন্টিভাইরাসে ব্যবহার করেছি ষষ্ঠদশ প্রজন্মের কাছাকাছি ভাষা। প্রথম প্রজন্মের ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে এই ফায়ার ওয়াল ভাঙ্গা আর সুচ দিয়ে পাহাড় ভাঙ্গা একই বিষয়। যা সম্পূর্ণ অসম্ভব।
অরুপ খানিকটা সাহস সঞ্চয় করে বলল, ইঁদুর আর পাহাড়ের গল্পটা মনে রয়েছে নিশ্চয়ই?
-কোনটা? পরিচালকের কণ্ঠে উষ্মা ঝরে পড়ছে।
-একদল ইঁদুর পাহাড়ের কাছে মাটি চাইল। পাহাড় সহাস্যে রাজি হয়ে গেল। ভাবল, এক চিমটি মাটি নিলে কি আর হবে? এভাবে কয়েক প্রজন্মের পর দেখা গেল পাহাড়টি আর নেই। মাটিতে মিশে গিয়েছে।
-গাঁজাখুরি গল্প বাদ দাও। আমি পদ্ধতিটা জানতে চাচ্ছি, তাড়াতাড়ি বল।
-জানেনই তো প্রথম প্রজন্মের ভাষা খুব দ্রুত কাজ করতে পারে।
-হুম, এটাও জানি খুবই ছোট্ট একটা বাগ পুরো ভাষাকে নষ্ট করে দিতে পারে।
-Yes. That’s the point.
-What?
-বিষয়টা এমন, প্রথমে যখন ফায়ারওয়ালে প্রোগ্রাম প্রসেসিং করা শুরু হয় মানে বাগ খোঁজা শুরু করে তখন ১৫ স্তরের ১ম স্তরে আমার প্রোগ্রামটা স্কানিং এ চলে যায়। এটা এইসময় ভাইরাস হয়ে না থাকায় ১ম ওয়াল সেটাকে অনুমতি দেয়। এটা ঠিক তখন ঘটে যখন কোন প্রোগ্রামকে ফায়ারওয়ালের ছাঁকনি দিয়ে ছাঁকা হয় মানে স্ক্যান করা হয়। এইসময় কোডটা ১ম স্তরে এক্সেস পাওয়ার পেয়ে যায়। ফলে এটি প্রথম স্তরে যা খুশি তাই করতে পারার অধিকার পেয়ে যায়। এরপর কোডটার ভিতরে একটা টাইমার চালু হয়ে যায়। তারপর কাউন্ট ডাউন শেষে কোডটা দুভাগে ভাগ হয়ে যায়। প্রথম কোড দ্বিতীয় কোডে নির্দিষ্ট কিছু বাগ সৃষ্টি করে। আমি এমনভাবে কোডিংটা করেছি যাতে দ্বিতীয় কোডের নির্দিষ্ট কয়েকটা স্থানে বাগ সৃষ্টি করলেই এটি ‘হ্যামার ভাইরাস’ (Hamer Virus) হয়ে যায়। এরপর এই ভাইরাস প্রথম স্তরকে ভেঙ্গে ফেলে। এরপর প্রথম কোডটির মাঝে থাকা আরেক টাইমার চালু হয়। ওটার কাউন্ট ডাউন শেষে দ্বিতীয় কোডটির বাগ ফিক্স করে ফেলে আর প্রথমটার সাথে সংযুক্ত হয়ে আগের চেহারা ফিরে যায়। এরপর সেটি ২য় স্তরে যায়, টাইমার চালু হয়, ভেঙ্গে যায়, বাগ সৃষ্টি করে, ভাইরাস তৈরি করে, আবার বাগ ফিক্স, আবার আগের চেহারায়, এভাবে চলতে থাকে।
-এই কাজটা বাহিরে থেকে কেন করতে পারে না?
-আপনি শত্রুকে দুভাবে আক্রমণ করতে পারেন। সম্মুখ যুদ্ধে অথবা গেরিলা যুদ্ধে। যেহেতু আপনার প্রতিপক্ষ অনেক অনেক শক্তিশালী তখন গেরিলা যুদ্ধই শ্রেয়। তবে এটা অনেকটা ট্রয়ের সেই ট্রোজান হর্সের মত। ৯ বছর ধরে চলমান যুদ্ধে গ্রীকরা পরাজয় এড়াতে ট্রয়ে ঢুকেছিল ট্রয়কে উপহার দেওয়া বিশালসব কাঠের ঘোড়ার মূর্তির ভিতরে ঢুকে। তারপর বিজয় উৎসব করতে করতে রাতে ঘুমিয়ে পড়ার পর ঘোড়ার মূর্তি থেকে বের হয়ে গ্রীকরা ট্রয়বাসীদের উপর নির্মম হত্যাকাণ্ড চালিয়ে বিজয় ছিনিয়ে নেয়। তবে এটি ট্রোজান হর্স ভাইরাস নয়। কারণ এটি একবার চালু হলে নেটওয়ার্ক ব্রেক ছাড়া প্রয়োগকারীকে আর কোন তথ্য দেয় না যেটা ট্রোজান ভাইরাস দেয়। ট্রোজান ভাইরাস তো বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্য প্রোগ্রাম এর ভেতর লুকিয়ে থাকা অনাকাঙ্ক্ষিত ও ক্ষতিকারক প্রোগ্রাম বা ভাইরাস।
-বুঝলাম। এখন ভাইরাসটা আমাদের প্রোগ্রামারদের দিয়ে দাও, ওরা এর এন্টিডোট তৈরি করুক।
-ইয়ে মানে ওটা তো আমার কাছে এখন নেই।
-নেই মানে?
-ওটা ওয়ানটাইম ইনজেকশনের মতো। একবার ব্যবহার করা যায়। তারপর ওটা নিজে থেকেই তার সবকিছু ফরম্যাট করে ফেলে।
-সে যাই হোক, তোমার মাথায় তো আছে। আবার লিখে দাও।
-এত বড় কোড আমি কি করে মনে রাখব?
-তাহলে ওটার কোন কপি? এখন কি হবে?
অরুপের বুক ধক ধক করতে থাকে। সত্যিটা কি বলবে?
পুকুরচুরি
___________________________________________________________
অরুপ বাসায় রওনা দিল। সত্যিটা হল ভাইরাসের কপি তার কম্পিউটারে রয়েছে। পরিচালক অযথাই উত্তেজিত হচ্ছে। নিজের পরিচয় ওকে জানালে ওখানেই প্যান্ট নষ্ট করে ফেলত। এমনভাবে বলছিল যেন ও একটা আস্তাকুরের প্রোগ্রামার। হাহ।
ঘরে ঢুকে একটা বিষয় দেখে অরুপের ভ্রু কুঁচকে উঠে। অরুপের ঘরটা বেশ বড়সড়। একদিকে পর্দা লাগানো বিশাল কাচের জানালা, তারসাথে লাগোয়া সিঙ্গেল ম্যাগনেটিক খাট। অন্যদিকে পলিকার্বোনেট ডেস্ক,যাতে কম্পিউটার রাখা। সে প্রাচীন গোয়েন্দা লেখক ইয়ান ফ্লেমিং এর কঠিন ভক্ত। জেমস বন্ডের চাতুরি আর গ্যাজেট তাকে খুব টানে। সে যাওয়ার আগে তার তার সিপিইউ বক্সের লকে চাবি লাগানোর জায়গায় হালকা তুলা লাগিয়ে গিয়েছিল যাতে কেউ চাবি লাগালেই তুলা সরে যায় আর টের পাওয়া যায়। আর সে দেখল তুলা নেই।
বক্স খুলতেই তার মুখ হা হয়ে গেল। তার সবচেয়ে প্রিয় আড়াই ইঞ্চির সিপিইউ সেখানে নেই। কি করবে এখন সে? ভাইরাসটা না দিতে পারলে দুই মিলিয়ন টাকা হাত ফস্কে বেড়িয়ে যাবে। মাথার উপর পাহাড়সম দেনার চাপ। আর ভাবতে পারে না সে। হাত দিয়ে মাথা চেপে বসে পড়ে।
অরুপের ঘরে যে কেউ এসে অনধিকার চর্চা করে গিয়েছে তা বুঝতে জেমস বন্ড হতে হও না। সে জানালার পর্দা সরালেই দেখতে পেত জানালার কাঁচে চার ফুট ব্যাসের বৃত্তাকার ছিদ্র।
অরুপ কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন হাতে নেয়। চিন্তা দিয়ে চলা সেলফোনটা চিন্তাভাবনা থেকেই আদেশ নেয়। সে বার বার পুলিশকে কল করার জন্য নাম্বার আওড়ায় কিন্তু পারে না। শেষ পর্যন্ত সে পরিচালককে ফোন দেয়। রিং হচ্ছে,যেন অরুপের বিদায় ঘণ্টা বাজছে... ক্রিং ক্রিং ক্রিং
সেই রাশভারী কণ্ঠ,হ্যালো,কে?
-আমি, আমি অরুপ।
-কোন অরুপ? ও হ্যাঁ মনে পড়েছে। কি ব্যাপার?
অরুপ পুরোটা জানাতেই পরিচালক খেঁকিয়ে উঠে বলল, তোমার পিসিতে সুরক্ষা দেওয়া নাই?
-আছে তো। ৭ ধাপের। আমি ছাড়া কেউ এক্সেস করতে পারবে না। পাসওয়ার্ড লাগবে।
-কি পাসওয়ার্ড? ভয়েস স্ক্যান?
-হুম, সাথে রেটিনা, জিহ্বা, ঠোঁট, আর তিনটা নরমাল নিউম্যারিক্যাল পাসওয়ার্ড।
-বেশ। তাহলে কিছুটা চিন্তামুক্ত থাকা যায়। আমি পুলিশকে বলে দিচ্ছি, তারা যা জানতে চায় জানিয়ে দিও। বাদবাকি দেখি কি করা যায়। এমন কাজ করলে, তোমাকে যে কি করতে ইচ্ছে হচ্ছে। যদি কোনভাবে ওটা আমার প্রতিপক্ষ কোম্পানির কাছে যায় তবে আমাকে তোমার সাথেই রাস্তায় নামতে হবে।
অরুপ কিছু বলতে পারল না। চুপচাপ শুনে গেল।
পরিচালকের কড়া নির্দেশের কারণে পুলিশ এসে দুই মিনিটের কাজ সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে করল। সেই সাথে অরুপকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করে গেল।
অরুপ জানে না তখনো তার অনেক কিছু দেখার বাকি ছিল। কারণ রাত তখনো হয় নি।
মৃত্যুর বার্তা
__________________________________________________________
অরুপকে কেউ পানিতে চুবিয়ে ধরেছে। শ্বাস নেওয়ার জন্য সে হাঁসফাঁস করছে। কিন্তু বলিষ্ঠ হাত তাকে চেপে ধরছে। হঠাৎ অরুপের গায়ে অসুরের শক্তি ভর করে। সে সরিয়ে দেয় সেই হাত। পানি থেকে উঠে শ্বাস নেয়।
সে অবাক হয়ে দেখে তার সারা শরীর ভিজে গিয়েছে পানিতে নয়,ঘামে। আর সে বসে আছে বিছানায়।
সে নিজেকে প্রবোধ দেয়, “এটা একটা দুঃস্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয়। সব ঠিক হয়ে যাবে।” পানি পান করার জন্য গ্লাসের দিকে হাত বাড়াতেই দেখতে পারে মুঠোফোনে বার্তার নোটিফিকেশন এসেছে। ঘুমিয়ে ছিল বলে মুঠোফোন তাকে ডাকে নি। জেগে উঠেছে বলে এখন নোটিফিকেশন দিচ্ছে। রাত ৩টায় বার্তাটা এসেছে। অচেনা নম্বর। বার্তাটা হিজিবিজি ইউনিকোড বেজড প্রোগ্রামিং কোড।
কোড নিয়ে পিসিতে কোডগুলো কমান্ড মডিউলে প্রবেশ করাতে লাগলো। পরিচালকের দান করা সিপিইউ এর কারণে তার পিসি নতুন জীবন পেয়েছে। সব কোড প্রবেশ করার পর ইন্টার চাপবে কিনা ভাবতে ভাবতেই চাপ দিয়ে ফেলল। তারপর যা দেখল তা সে স্বপ্নেও ভাবে নি।
একটা একটা করে অক্ষর তৈরি হচ্ছে আবার মুছে যাচ্ছে চিরতরে। সব অক্ষর মিলিয়ে যা পেল তাতে তার অ্যাড্রেনালিনের ক্ষরণ বেড়ে গেল বহুগুণে।
GIVE PASSWORDS
GET ONE BILLION
IF AGREE THEN COME
IF DON’T AGREE THEN DIE.
টাকার চিন্তা বাদ দিয়ে এখন নিজের জানের চিন্তায় অরুপ অস্থির হয়ে উঠলো। মুঠোফোনে হাজার ঘেঁটেও আগের বার্তাটা পেল না। স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে গিয়েছে। তারপর সারাদিন সে পরের বার্তার জন্য অপেক্ষা করলো। ঠিক বেলা ৩ টায় একইভাবে বার্তা। পিসিতে ইনপুট দিতেই সে জানতে পারলো তাকে কোথায় যেতে হবে। একবার ভাবল পুলিশকে সে জানাবে,আরেকবার ভাবল পরিচালককে জানাবে। কিন্তু জানের চিন্তায় সে কাউকেই জানাতে পারলো না।
এরপর ঠিকানা অনুযায়ী যে জায়গায় পৌছাল সেটা একটা গাড়ির ডাস্টবিন। সারি সারি স্কাইকার(উড়তে পারা গাড়ি), ওয়াটার কার(জলচর গাড়ি) স্তুপ করে রাখা। অরুপ গাড়ির ডাস্টবিনে স্তুপ করা দুই সারির মাঝখানে যখন পৌছাল তখন পিছনে কারো হেঁটে আসার আওয়াজ পেয়ে ঘুরে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করল। কিন্তু ফিরে তাকানোর আগেই পড়ে গেল।
তাকে কি মেরে ফেলা হল? সে কিছুই বুঝতে পারলো না। কারণ কিছু বোঝার আগেই সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেল। ঘোর অন্ধকার।
>>>তৃতীয় পর্ব
পড়তে পারেন তিনটি ন্যানো সায়েন্স ফিকশন
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৫