সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর 'একটি তুলসী গাছের কাহিনী' গল্পের ইউনুস চরিত্রটি ৪বছর কচ্ছদেশীয় চামড়া ব্যবসায়ীদের সাথে থেকেছে। আর আমরা বঙ্গদেশীয় মানুষজন তো বিগত ৭টি বছর কাটালাম বহুজাতিক চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। আজ তার সপ্তম বর্ষপূর্ণ হলো বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে,যা সরাসরি সম্প্রচার করেছে চ্যানেল আই।। আমি "চ্যানেল আই- লাক্স সুপারস্টার ২০১২"র কথাই বললাম।
পৃথিবী জুড়ে মানুষে মানুষে যতগুলো ক্যাটাগরিতে বৈষম্য থাকতে পারে,সেসব ক্যাটাগরির মোটামুটি টপ পর্যায়ে আছে কালো চামড়ার প্রতি সাদা চামড়ার বৈষম্য।ধীরে ধীরে জ্ঞান-বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির উত্কর্ষতা বাড়লো,আর তাতেই ঘটনা ফাইনাল!!!সাদা চামড়ার ক্ষমতার দাপট দেখে দিকে দিকে এমন এক মন্ত্র ছড়িয়ে পড়লো,যে জীবনে সাদা ও ফরসা চামড়ার অধিকারী/ অধিকারিণী হতে না পারলে তো জীবনটা মূল্যহীন! আবিস্কৃত হলো রঙ ফর্সাকারী কসমেটিকস। মানুষের মগজকে ধোলাই হলো। সবার মধ্যে এই ধারণাই ছড়িয়ে পড়লো,জগতের সকল সৌন্দর্য্য তো কেবল ফর্সা চামড়ার।মানুষ জনকে এই দীক্ষায় দীক্ষিত করতে শিক্ষক হিসেবে আবির্ভূত হলো বিদ্যার সব জাহাজের।জগতের সকল রসায়ন তারা পড়ে আবিস্কার করলো এমন সব রং ফর্সাকারী ক্রীম,যা ভেতর থেকে আপনাকে করবে দীপ্তিময় এবংফর্সা। নির্মিত হলো বিজ্ঞাপন।গোগ্রাসে গিললো মানুষজন। ফেয়ার এন্ড লাভলী তো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো,একটা মেয়ের কালো হওয়ার গন্জনা। মেয়েটার বিয়েও হচ্ছিলো না,চাকরীও হচ্ছিলো না।মেয়েটা ফেয়ার এন্ড লাভলী মেখে মাত্র ৩সপ্তাহে হয়ে উঠলো এমন এক 'হটকেক',যে কেক খাওয়ার জন্য অফিসের বস আর পাত্রপক্ষ পাগলা কুত্তা হয়ে গেলো।তার মানে জগতের কোন কালো মেয়ের ভালো বিয়েও হবে না,ভালো বিয়েও হবে না,যতক্ষণ না সে ফেয়ার এন্ড লাভলী মাখছে!!
এটা তো গেলো একটার কথা।আপনি টিভি দেখেন আর এমন একটা সাবানের এড দেখান যেখানে চামড়া দেখানো হয় না? ইন্টারন্যাশনাল লাক্সের কিছু এড দেখে তো প্রথমে যে কারো মনে হবে তিনি একটা শরীরের বিজ্ঞাপন দেখছেন,যে শরীরটা বাজারে কিনতে পাওয়া যেতে পারে এবং ক্যাটরিনা কাইফ নামক সেই দেহপসারিণী আপাতত তার দেহের Demo প্রদর্শন করছে,বাকিটা জায়গামত দিবে আর কী! মাঝে মাঝেই কনফিউজড হতে হয়,আমরা আসলে সাবানের এড দেখছি নাকি নারী শরীরের।
লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার ছিলো,আছে এবং থাকবে।মেয়েরা নিজেদের সতীচ্ছেদ করিয়ে সুপারস্টার হবে,আর বঙ্গদেশীয় মানুষজন বাহবা দিবে।সাদা চামড়ার জয়গান যতোদিন চলবে,নারী সৌন্দর্য্য বলতে যতোদিন কেবল বাহ্যিক চামড়ার রঙকেই স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে ধরবে,ততদিন বহুজাতিক কিংবা দেশীয় কসমেটিকস কোম্পানী জাঁকজমক ব্যবসা করে যাবে আমাদের মেয়েদের দেহ দিয়েই।আমাদের ছেলেরা উল্লসিত হবে সেইসব নারী দেহ থেকে এবং বাথরুমে ____________ __। আর মেয়েরা স্বপ্ন দেখবে ঐ অবস্থানে যাওয়ার। নিজের সবকিছু বিসর্জন দিয়ে হলেও সুপারস্টার গোছের কিছু হওয়ার। এগিয়ে যাও,হে! —
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:২০