somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

থ্রিজি-র যুগে পা (কিন্তু বাস্তবতা)

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



যেভাইে হোক আমরা স্বপ্ন দেখি এবং সেজন্যই আমরা মনে করি যে আমাদের দেশে থ্রিজি প্রচলনের স্বপ্নও পূরণ হবে। কিন্তু এই স্বপ্নটির সুফল যাতে পুরো জাতি পেতে পারে তার জন্য আরো কিছু প্রাসঙ্গিক করণীয় রয়েছে যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হতে পারে। আমরা লক্ষ করেছি, থ্রিজি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবার পরও যেসব খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তাতে আমাদের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। আমরা যেন দেখতে পাচ্ছি যে, থ্রিজির ইপ্সিত ফলাফল আমরা পাচ্ছি না। কোনো প্রযুক্তি যখন তার যাত্রা শুরু করে তখন তাতে সাধারণ ও প্রাথমিক ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে যাবে সেটাই স্বাভাবিক। পরীক্ষামূলকভাবে থ্রিজি চালুতে এটা হতেই পারে। প্রাথমিকভাবে সেইসব সমস্যা হয়েছেও। টেলিটককে তাদের বেস স্টেশনে বিদ্যুৎ পেতে কষ্ট করতে হয়েছে। থ্রিজির কভারেজ নিয়ে সমস্যা হয়েছে। টেলিটকের অনেক সিম কাজ করেনি, সেগুলো বদলাতে হয়েছে। এখনো অভিযোগ আছে যে কোথাও সংযোগ মেলে, কোথাও মেলে না। তবে কারো কারো অভিজ্ঞতা ভালো। মিরপুর এলাকার একজন ডাক্তার বন্ধু টেলিটকের থ্রিজির গতির দারুণ প্রশংসা করেছেন। টেলিটককে ধন্যবাদ দিতে হয় কারণ প্রতিষ্ঠানটি থ্রিজি প্রসারের জন্য অব্যাহতভাবে বিজ্ঞাপনও দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু টিভিতে প্রচারিত তাদের প্রথম বিজ্ঞাপনটি দেখে আমার সেটিকে বিজ্ঞানের কল্পকাহিনীই মনে হয়েছে। এটি যে কেমন করে থ্রিজিকে প্রকাশ করছিল সেটি আমি মোটেই অনুভব করিনি। পুরো বিজ্ঞাপনটিতে কেন একজন সাধারণ মানুষ থ্রিজি ব্যবহার করবে তার কোনো প্রতিফলন ছিল না। তবে এখন একটি বোবা মেয়েকে নিয়ে ভিডিও কলের যে বিজ্ঞাপনটি প্রচার করা হয় সেটি অসাধারণ, মনোগ্রাহী ও চমৎকার। তবুও থ্রিজি নিয়ে যেমন আগ্রহ তৈরি হবার কথা তেমনটি অনুভব করতে পারছি না। এর একটি অন্যতম কারণ হলোÑ এদেশের মানুষ এখনো জানে না থ্রিজি তার কোন কাজে লাগবে। সীমিত কভারেজও একটি বড় কারণ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই বিষয়ে কোনো মিডিয়াতেই তেমন কোনো আলোচনা নেই। দেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো একেবারেই নীরব রয়েছে এই প্রযুক্তি নিয়ে।

আমার বিশ্বাস, যদি প্রসঙ্গটি নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা না করা হয় এবং এর সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে ব্যাপক পর্যালোচনা না করা হয় তবে থ্রিজির বিষয়টি খেই হারিয়ে ফেলতে পারে। আসুন আমরা আলোচনা করি থ্রিজির প্রয়োজনীয়তা কী সেটি নিয়ে।

আমি সংক্ষেপে অতি প্রয়োজনীয় কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারি।

ক) ভয়েস কলের পরিপক্বতা : থ্রিজির প্রাথমিক যে সুফল মোবাইল ব্যবহারকারীরা পাবেন সেটি হলো বিদ্যমান মোবাইল প্রযুক্তির উন্নয়ন। আমরা এখন যে ২.৫ জির মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করছি থ্রিজি তার চাইতে উন্নত মানের ভয়েস কল দেবে। কল ড্রপ কমবে ও নেটওয়ার্কের শক্তিও বাড়বে। কথা অনেক স্পষ্ট হবে। থ্রিজির বাড়তি সুবিধা হলো যে এটি বিদ্যমান ২জি ও ২.৫ জির সঙ্গে কম্পাটিবল। ফলে আমরা নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করবো বলে পুরোনোটাকে ফেলে দিতে হবে না।

খ) ভিডিও কল : থ্রিজির ব্যান্ডউইদথ অনেক বেশি বলে এর সহায়তায় ভিডিও কল করা যাবে। এর ফলে বস্তুত ভিডিও কনফারেন্স ছাড়াও ভিডিও সারভাইলেন্স, নিরাপত্তা এসব অনেক বিষয়ে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে।

গ) মোবাইল টিভি : থ্রিজি নেটওয়ার্কে মোবাইল ফোনে টিভি দেখার বিষয়টি যুক্ত হচ্ছে। ফলে যে কেউ যেখানে থ্রিজি নেটওয়ার্ক আছে সেখানে তার মোবাইল ফোনে টিভি দেখতে পাবেন। সবগুলো না হলেও বেশ কটি টিভি চ্যানেল এর মাঝেই থ্রিজিতে তাদের সম্প্রচার অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। আমি ৬ ডিসেম্বরের পত্রিকায় টেলিটকের বিজ্ঞাপন দেখেছি যে তারা ওয়াপ পোর্টাল তৈরি করে তা দিয়ে বিনামূল্যে বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের চতুর্থ ওয়ানডে খেলা দেখার ব্যবস্থা করেছে।

ঘ) ব্রডব্যান্ড : থ্রিজির সবচেয়ে বড় সুযোগটি হলো ইন্টারনেট বিষয়ক। এই নেটওয়ার্ক যেমন মোবাইল ইন্টারনেটে ব্যবহার করা যায় তেমনি এর মডেম দিয়ে কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। বাংলাদেশে প্রায় তিন কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর পৌনে তিন কোটিই ইন্টারনেট মোবাইলের সহায়তায় ব্যবহার করে থাকে। এদের সবচেয়ে বড় সমস্যার নাম স্পিড। বস্তুত জিএসএম নেটওয়ার্ক দিয়ে কোনোমতে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। কিন্তু অডিও ভিজুয়াল ডাটা বা গ্রাফিক্স আপলোড-ডাউনলোড করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান জিএসএম নেটওয়ার্ক মোটেই কার্যকর নয়। থ্রিজি দ্রুতগতির ইন্টারনেট প্রদান করতে পারে বলে ব্যবহারকারী একে তার মতো করে ব্যবহার করতে পারে।

থ্রিজির ইন্টারনেট আরো একটি বাড়তি সুবিধা দেবে। এর ইন্টারনেট ব্যবহার করে ওয়েবকাস্ট, রেডিও ইত্যাদি সম্প্রচার করা যাবে। ফলে আমরা ইন্টারনেট টিভি বা ইন্টারনেট রেডিওর যুগেও পা রাখবো।

সার্বিকভাবে এই কথাটি খুব সহজেই বলা যায় যে, প্রচলিত মোবাইল যুগ থেকে থ্রিজি আমাদের তথ্য মহাসরণির একটি প্রশস্ত সড়কে স্থাপন করেছে। এই প্রশস্ত সড়কটি আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সকল ক্ষেত্রেই অতি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিকতা, প্রশাসন, শিল্পসহ এমন কোনো খাত পাওয়া যাবে না যাতে এই প্রযুক্তির প্রভাব পড়বে না।

তবে একটি বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকার প্রয়োজন রয়েছে। দুনিয়াতে এখন থ্রিজির যুগ সমাপ্তির পথে। যদিও টেলিটক তার যাত্রা এই প্রযুক্তি দিয়ে শুরু করেছে তথাপি অন্য অপারেটররা হয়তো থ্রিজির বদলে ৪জি নিয়ে ভাবতে পারে। আমি মনে করি সেটি খুবই সঙ্গত একটি চিন্তা ভাবনা হতে পারে। হাতের কাছে নতুন প্রযুক্তি থাকলে পুরোনো প্রযুক্তি নিয়ে সামনে যাবার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

আমি প্রত্যাশা করবো সরকার কোনো একটি নির্দিষ্ট প্রযুক্তির ওপর লাইসেন্সের বিষয়টি না দেখে তরঙ্গ ব্যবহারের বিষয়টি দেখবে। এর ফলে লাইসেন্স প্রাপ্তরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রযুক্তি গ্রহণ করতে পারবে। কেউ ইচ্ছে করলে থ্রিজি ব্যবহার করবে, কেউ ব্যবহার করবে ৪জি। হয়তো কেউ ৫জি পর্যন্ত যাবার কথা ভাববে। কেউ কেউ এই প্রশ্ন করে থাকেন যে আমরা কেন সরাসরি ৪জিতেই চলে যাই না। বস্তুত পক্ষে আমাদের সরাসরি ৪জিতে যাবার সমস্যা হলো যে সেটি ২জি কম্পাটিবল নয়। ৪জি নেটওয়ার্ক ৩জি কম্পাটিবল হলেও ২জি কম্পাটিবল না হবার ফলে ৪জি শুরুতে একেবারেই সীমিত হয়ে যাবে। আমাদের কোটি কোটি ২জি গ্রাহক ৪জিতে উত্তরণ ঘটাতে পারবে না। প্রযুক্তিগত বিষয় ও বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে আমাদের সম্ভবত আগে থ্রিজির প্রসার ঘটাতে হবে এবং তারপর ৪জির দিকে যেতে হবে।

আরেকটি বিষয়ে আমাদের নীতিনির্ধারকদের সতর্ক হবার অনুরোধ করছি। থ্রিজির প্রসারের অন্যতম একটি বাধা হলো কনটেন্ট। বাংলাদেশের ২জি মোবাইল গ্রাহকরা নিজেরা কথা বলতে পারে বলে কনটেন্ট নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। এতে রিং টোন ডাউনলোড করার ব্যবস্থা আর গানের রাজ্য তৈরি করেই অপারেটররা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছেন। কিন্তু থ্রিজির গ্রাহকরা কেবলমাত্র কথা বলাতেই তুষ্ট থাকবেন না। তাদের জন্য বাংলা ভাষার কনটেন্ট দরকারÑ বাংলাদেশের কনটেন্ট দরকার। কেবলমাত্র থ্রিজি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হলেই সেটির প্রতি মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়বে তেমনটি প্রমাণিত হয়নি। সামনের বছর যখন থ্রিজির প্রকৃত স্বাদ আমরা পেতে যাবো তখন যেন পর্যাপ্ত বাংলা ও বাংলাদেশী কনটেন্ট পাওয়া যায় তার দিকে এখনই নজর দিতে হবে। খুবই দুঃখজনকভাবে এই কথাটি বলতে হচ্ছে যে সরকারের কোনো পর্যায় থেকেই কনটেন্ট বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না।

আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশটি গরিব বলে প্রযুক্তিতে আমাদের পিছিয়ে থাকাটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বরং এটিই স্বাভাবিক যে গরিব দেশের জন্য উন্নততর প্রযুক্তির বেশি প্রয়োজন।

সর্বশেষ : এই লেখাটি যখন প্রস্তুত করা হয় তখন থ্রিজির সর্বশেষ খবরটি হলোÑ ২৩ ডিসেম্বর ১২ রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে, যাতে থ্রিজির গাইডলাইন চূড়ান্ত হবে এবং জানুয়ারি মাসে এর নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। আমি কামনা করি সরকার এই দিনপঞ্জিটিকে বাস্তবায়ন করবে
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:৩৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারীনীতি ইস্যুতে তথাকথিত চুশীলদের নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৪ ঠা মে, ২০২৫ সকাল ৮:৫৩

নারীনীতি ইস্যুতে তথাকথিত চুশীলদের নিয়ে কিছু কথা



ইদানিং নারীনীতি নিয়ে দেশে নানা তর্ক-বিতর্ক চলছে। আলেম-ওলামা এবং ইসলামপন্থীরা যখন পাশ্চাত্যঘেঁষা নারীনীতির সুপারিশকে দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রত্যাখ্যান করলেন, তখনই মূলত এই আলোচনার বিস্তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারদের হতে হবে দেশের চিন্তাশীল সমাজের অগ্রনায়ক

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৪ ঠা মে, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৬

আমার ৭ বছর ১১ মাসের ব্লগিং ক্যারিয়ারে ১০,০৭৩টি কমেন্ট করেছি। প্রতি পোস্টে গড়ে যদি ২টা করে কমেন্ট করে থাকি, তাহলে, আমি কম করেও ৫০০০টি পোস্ট পড়েছি। এর অর্থ, বছরে প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের শাহেদ জামাল- ৭৮

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা মে, ২০২৫ দুপুর ২:৩৭



আমার বন্ধু শাহেদ। শাহেদ জামাল।
খুবই ভালো একটা ছেলে। সামাজিক এবং মানবিক। হৃদয়বান তো অবশ্যই। দুঃখের বিষয় শাহেদের সাথে আমার দেখা হয় মাসে একবার। অথচ আমরা একই শহরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকার অটোরিকশা

লিখেছেন শামীম মোহাম্মাদ মাসুদ, ০৪ ঠা মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৪

সেদিন একটা রিপোর্টে দেখলাম ঢাকা শহরে প্রায় ২০ লাখ রিক্সা রয়েছে। এর মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিক্সার সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ! ২০১৯ সালের একটা জরিপে রিক্সার সংখ্যা ছিলো ১৩ লাখ। তার মানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৃষ্টির ঋণ....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৪ ঠা মে, ২০২৫ রাত ৮:২৭

সৃষ্টির ঋণ....

মধ্য দুপুরে ডেল্টা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে সিএনজি, বাইক, উবার কিছুই পাচ্ছিনা। অনেকটা পথ হেটে বাংলা কলেজের সামনে বেশকিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে একটা রিকশা পেয়েছি....ঘর্মাক্ত ষাটোর্ধ কংকালসার রিকশাওয়ালাকে দেখে এড়িয়ে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×