।। । যারা ‘পু’ এনেছিল । ।।
- আলাউল হক
।। এক ।।
ঢাকা শহরের কোন এক বাসায় সামনে একটি আম গাছ আছে । এই আম গাছে বাস করে দুই কাক দম্পত্তি । একদিন স্বামী কাক স্ত্রী কাককে বলে ,
‘’ ওগো শুনছ , পু ‘’ ।
স্ত্রী কাক ক্যাও করে বলে উঠে
‘’ পু কি আবার ? ‘’
‘’ পু হল পু*কি ‘’
স্ত্রী কাক নাক সিটকে বলে
‘ যাহ্ , কি যে বলে । হতেই পারে না । ‘’
স্বামী কাক বিজ্ঞের মত মাথা দুলিয়ে বলে
‘’ হ্যাঁ , ঠিক ই । পু তে পুকুর হয় , পুরষ্কার হয় ‘’
‘’ তা হটাত আমাকে পু বললে কেন গো ? ‘’ স্ত্রী কাকের কন্ঠে জিজ্ঞাসা ।
স্বামী চোখ টিপে বলল
‘’ চ তে চুমু দাও , তোমাকে প তে পু মানে বোঝাচ্ছি ‘’
স্ত্রী কাক কপট রাগ দেখিয়ে বলে ‘’ যাহ্ দুষ্ট ‘’
স্বামী কাক স্ত্রী কাকের রাগের তোয়াক্কা না করে কুত করে চুমু খেয়ে পু মানে বলা শুরু করলো ।
‘’ ওই যে আমাদের ডিজিতাল সরকার , কি এক কারণে যেন ইউটিউব বন্ধ করে দিয়েছিল । এ জন্য অনেকে ভিডিও দেখতে পারতো না । অনেকে নানান রকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিল । দেশের প্রযুক্তিবিদরা সরকারের এই সিদ্ধান্তে নাখোশ হলেও সরকার তাদের তোয়াক্কা করে নি । কিছু কিছু ছ্যাচড়া পোলাপান প্রক্সি ইউজ করে ইউটিউব দেখত । কিন্তু তা কি সাধারণ মানুষের পোষে ? ‘’
স্ত্রী কাক বলে , ‘’ হ্যাঁ খুব খারাপ অবস্থা । এরপর ? ‘’
পুরুষকাক বলে , ‘’হ্যাঁ এরপর কিছুদিন আগে অনলাইনে এক লোক ক্যু করার বুদ্ধি বের করে । এ লোক নাকি আবার অনলাইন সেলেব্রেটি । তার ফ্যানকুল ও আছে । সিটিএন নামক চ্যানেলে তরুণ রাত্রী অনুষ্ঠান উপস্থাপন করে । ‘’
স্ত্রী কাক বলে উঠে , ‘’ সিটিএন কি ওই ভুটকি সাহা’র চ্যানেলটা ? ‘’
পুরুষকাক বিরক্ত হয়ে বলে ‘’ কথার মাঝে ভুটকিকে না আনলেই কি নয় ? শুনো যা বলছিলাম । ওই লোকটার নাম সূর্য । না ইয়ে সূর্যের ই কোন একটা নাম হবে । তো এই লোক ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিলো । সেটা হল ‘পু’ । সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসতে ৮ মিনিটের উপরে লাগে , কিন্তু এই সূর্যের স্ট্যাটাস ৮ মিনিটে পুরাই আগুণ ধরাই দিলো । সবাই জিজ্ঞেস করতে লাগলো , সূর্য ভাই পু কি , পু কি । তখন সূর্য ভাই বললেন , পু একটি অর্থহীন শব্দ । যার যা ইচ্ছে সেরকম অর্থ করতে পারে । এই পু হল ইউটিউব খোলার প্রতিবাদ । সে বলে সবাই যেন স্ট্যাটাস এ পু দেয় , তাহলে ইউটিউব খুলে যাবে । এতদিন এতো কথায় ইউটিউব খুলে নাই , এখন ফেসবুকে পু মেরে কিভাবে খুলবে ? এই টাইপ প্রশ্ন নিয়ে এলো কিছু ডিজুস পুলাপাইন । তখন সূর্য ভাই ব্যাখ্যা করলেন , সবাই পু পু পু করতে থাকলে নাকি পু এর গন্ধ সরকারের এক্সট্রা সেনসেটিভ নাকে লাগবে আর তারা ভুল বুঝতে পেরে ইউটিউব খুলে দেবে । ‘’
স্ত্রী কাক খিক খিক করে হেসে বলে , ‘’এহহ , বেকুব নাকি । এটা কোন কথা ? নিশ্চয় সবাই খুব হেসেছে ? ‘’
‘’ না , সবাই হাসে নি । ওই যে বললাম না সেলেব্রেটি । সুতরাং ফ্যানকুল আছে । ওরা তো ধুমসে পু পু করেছে । সারা ফেসবুক পু পু ময় । আবার কয়েকজন হাসি তামাশা করেছে । পু কে পু*টি , পু*া মারা আরও অনেক কিছু বলেছে ‘’
স্ত্রী কাক আবারো হাসি শুরু করে । কাক এই হাসি বিমোহিত হয়ে দেখে ।
।। দুই ।।
অনলাইন সেলেব্রেটি সূর্যবাবু ল্যাপির দিকে তাকিয়ে ঝিম মেরে আছেন । ইউটিউব খুলছে না । উনার মেজাজ কিঞ্চিত খারাপ । উনার আইডিয়াবাজ মাথার দরজা খুলার চেস্টা করছেন । কিছুক্ষণ পর কিচকিচ করে উনার মাথার আইডিয়া খুলল । উনি ফেসবুকে লগইন করলেন । করে লিখলেন ‘পু’ । মিনিট খানেকের মধ্যে বেশ কিছু লাইক আর কমেন্ট । পু পু পু । কি এই পু ভাই ? সূর্যবাবু সন্তুষ্ট । প্ল্যানের প্রথমভাগ কাজ করেছে । উনি বিশাল করে লিখলেন , পু মানে হেন , পু মানে তেন । সুতরাং সবার প্রতি অনুরোধ , পু পু পু । প্লিজ পু পু করেন সবাই । ৫০ জন ব্যক্তি যারা আমার মত বুদ্ধিমান তারা পু পু করেন । মুহূর্তে ফেসবুকের বুদ্ধিমান বুকার রা নিজ নিজ ওয়ালে পু পু করতে লাগলো । সূর্যবাবু তখন বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন । তার ঘুম পাচ্ছে । কাল আবার বাচ্চু খাপো’র রায় । সকাল সকাল উঠতে হবে । অনলাইন ক্যু শুরু করে দিয়ে সূর্যবাবু প্রশান্তির ঘুম ঘুমালেন ।
।। তিন ।।
বাচ্চু খাপোর ফাঁসি । চারিদিকে উল্লাস । সূর্যবাবুর দিমাগ কি বাত্তি আবারো জ্বলল । ইস্যু , পাইছি ইস্যু । খচাখচ শব্দ তুলে সূর্য সাহেব ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন । ‘’ পু পু পু । বাচ্চুর ফাঁসির দিনে বঙ্গবন্ধুর কথা মনে পরে । সরকার ইউটিউব খুলে দাও , ভাষণ শুনবো । পু ‘’
সূর্য সাহেব ভেবেছিলেন স্ট্যাটাস হিট করবে । এবং হল ও তাই । হিট করলো । কিন্তু ঋণাত্মকভাবে । কয়েকজন নব্য হাম্বালীগ এবং অতি চুষিল পাবলিক এসে তাদের পারিবারিক শিক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে লাগলেন । তাদের দেখাদেখি আরও কয়েকজন শুরু করলেন গালিগালাজ । মা বাবা কে টেনে আনা হল পু এর মাঝে ।
‘’ ইশ ইশ ইশ , এটা কোন কথা বল গো । খুব খারাপ ‘’ স্ত্রী কাক হাহাকার করে ঊঠে ।
‘ হ্যাঁ খুব খারাপ । এভাবে কারো বাবা মাকে নিয়ে গালিগালাজ করা উচিত না । তবে হ্যাঁ , উক্ত ইস্যুতে পু আনা একদম উচিত হয় নি ‘ স্বামী কাকের প্রতিউত্তর ।
‘ হ্যাঁ গো । তা ঠিক বলেছ । উনার মত একজন পরিচিত ব্যক্তি এমনটা করলেন কি করে ? ‘’
‘ কি জানি গো । উনি যা ভালো মনে করেছেন , তাইই করেছেন । আসলে কে কখন কি করে , কখন কার মুখোশ খসে পড়ে কে জানে । ‘
‘’ কিসের মুখোশ গো ? ‘’
‘’ তা বুঝবে না । বাদ দাও ‘’
‘’ ঠিক আছে , দিলাম বাদ । আচ্ছা তোমার বন্ধু ব্যাঙ্গমা কেমন আছে ? অনেকদিন দেখি না ‘’
‘’ ও ব্যঙ্গমা! আনিষূল হক্ক এর ব্যঙ্গমার কথা বলছ ? ‘’
‘’ হ্যাঁ হ্যাঁ , সেইই সেইই । কই আছে সে ? ‘’
‘’ কই আর থাকবে । আছে চিপাচাপায় । আনিষূল সাহেবের মতই ঘান দিয়ে বেড়াচ্ছেন । একে ওকে অনুসরন করো । হেনতেন । ওইটা একটা ভন্ড । মুখোশ খসে পড়বে । সবার মুখোশ খসে পড়বে । দিন যতই এগিয়ে আসবে রাজাকারদের ফাঁসির , সব ভন্ডদের মুখোশ খসে পড়বে । ‘’
।। পরিশিষ্ট ।।
# নিত্তান্তই মজা করে লিখা । জীবিত , বা মৃত কিংবা ভবিষ্যতে জন্ম নেবে এমন কারো সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয় । তা নিত্তান্তই পুতালীয় ।
# সবার প্রতি শ্রদ্ধাসহ প্রতিটা লাইন লিখা হয়েছে । ব্যক্তিগতভাবে নেওয়ার কিছু নেই ।
#কোন প্রকার ফালতু ট্যাগামি গ্রহণযোগ্য নয় ।
# পু সৃষ্টিকর্তা সফল । সবার মুখে মুখে পু । স্ট্যাটাসে পু , কমেন্টে পু । তাকে পু , মানে পুরো অভিনন্দন ।
# পু । পু । পু । ইউটিউব খুলো হে , চিচিং ফাঁক ।
মূল পোস্ট সংরক্ষিত এখানে