প্রিতাশা ,
কেমন আছো ? আশা করি ভালো । পড়াশুনা কেমন চলছে ? ওষুধ খাও তো ?
অপস , কি লিখছি আমি । এসব লেখার অধিকার তো আমার নেই । তোমাকে প্রিতাশা ডাকার অধিকার ও নেই । সেই অধিকার টা তুমি কেড়ে নিয়েছ ।
কিন্তু এক সময় তো সারাক্ষণ প্রিতাশা প্রিতাশা প্রিতাশা বলে ডাকতাম । আমার মুখে ডাক না শুনে তুমি থাকতেই পারতে না । খালি বলতে সারাক্ষণ প্রিতাশা প্রিতাশা ডাকবা , তোমার মুখে শুধু আমার নাম ই থাকবে । আর কারো না ।
কতো আগের ঘটনা এটা ?
বছর দুই ? নাকি আরও বেশি ?
এখন কেন শুনতে চাও না আমার মুখে তোমার নামটা ?
ওই , চিঠির ব্যাপার গুলো মনে আছে ? উফ , পাগলী একটা মেয়ে তুমি । আসলেই । একদিন চিঠি না দিলে সে কি রাগ ! আর চিঠি ও যেনতেন হলে চলবে না , বিশাআআল হতে হবে । আরে মা আমার , প্রতিদিন এতো বিশাল চিঠি লেখা কি সম্ভব ? না , তুমি তো বোঝো না , তুমি নিজে দাও ছোট ছোট চার পাতার চিঠি আর আমাকে দিয়ে লেখাও উপন্যাস ।হুহ।
কতো আগের ঘটনা এটা ?
বছর দুই ? নাকি আরও বেশি ?
এখন কি চিঠি পড়তে ইচ্ছে হয় না ?
রাত ১১টা বাজার সাথে সাথে ম্যাডামের ফোন । এখন কথা বলতেই হবে । আরে কতো বুঝলাম , এই টাইমে একটু কাজ থাকে । ১২টার পর কথা বলি , কিন্তু না , উনি ১১টা বাজেই কথা বলবেন । না বললে আড়ি । আচ্ছা ম্যাডাম কথা বলবো , আড়ি দিতে হবে না ।
কতো আগের ঘটনা এটা ?
বছর দুই ? নাকি আরও বেশি ?
এখন কি ১১টায় কথা বলতে ইচ্ছে করে না ?
প্রতিদিন সকাল সাতটায় রাস্তার ধারে আমি দাঁড়িয়ে থাকতাম । তোমার অপেক্ষা করতাম । তুমি আসতে লেট করে । আমি দূর থেকে রাস্তার মোড়ের দিকে তাকিয়ে থাকতাম । মোড়ের কাছে এসেই দাঁত দিয়ে জিহবায় একটা কামড় দিতে । তারপর হেঁটে এসে আমার খুব কাছে এসে ঘাড় টা কাত করে ফিসফিস করে বলতে ‘’সরি’’ । এরপর ফিক করে একটা হাসি । তোমার এই হাসিটা দেখে ভুলে যেতাম সব । তারপর সেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুই জন রাস্তার দুই প্রান্তে দাঁড়িয়ে থেকে আড্ডা দিতাম । যাওয়ার সময় আলতো করে তোমার হাত টা ছুঁয়ে দিতাম । হাতে গছিয়ে দিতাম একটা চিঠি ।
কতো আগের ঘটনা এটা ?
বছর দুই ? নাকি আরও বেশি ?
এখন কি আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে আড্ডা দিতে ইচ্ছে হয় না ?
আগে ক্লাসে খুব মজা করতাম , তাই না ? চোখে চোখে প্রেম , হা হা হা । সারাক্ষণ ক্লাসে বসে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকতাম । চোখের ইশারায় কথা বলতাম । তুমি গালতে হাত রেখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে , আর আমি দেয়ালে ঠেস দিয়ে । মজা হতো যখন স্যার ক্লাসে থাকতো । মাথা নিচু করে ,চোখ বাঁকা করে , তাকাতেই হবে একজন অন্যজনের দিকে । মাঝে মাঝে আমি চোখ টিপ মারতাম , তুমি অন্য দিকে তাকিয়ে হাসতে । আচ্ছা , হাসি টা আমার দিকে তাকিয়ে দিলে কি এমন হতো শুনি ?
কতো আগের ঘটনা এটা ?
বছর দুই ? নাকি আরও বেশি ?
এখন কি আর চোখের ইশারায় কথা বলতে ইচ্ছে হয় না ?
ফাজিল , বেয়াদপ । আহ , কি বকার ছিড়ি উনার । কিছু হলেও আমাকে বকতে হবে । মাইরা পিট্টা ভর্তা বানাইয়া ফ্রিজে রাইখা দিমু , এরপর ফ্রিজ থেকে বের করে চুলায় রাখুম ।
আরে আবার এতো কঠিন হওয়ার মতো আমি কি করতাম শুনি ? ধেৎ । আমাকে তোমার ঝাড়ি দিতেই হবে প্রতিদিন , নইলে শান্তি নাই । আরে বাবা আমি তো ঠিক মতোই থাকতাম । তাও ক্যান দিতা । অবশ্য আমি তোমার ঝাড়ি শোনার জন্য উন্মুখ থাকতাম । তাই বেশি বেশি করে ..............
কতো আগের ঘটনা এটা ?
বছর দুই ? নাকি আরও বেশি ?
এখন কি আর আমাকে ঝাড়ি দিতে ইচ্ছে হয় না ?
লেইস চিপস আর কিটক্যাট । উফফ তুমি যে কি ছিলা । এসবের পাগল আমি এই প্রথম দেখেছিলাম । তুমি তো তোমার বাবাকে পাগল করে দিতা এসব কিনে দিতে । কিন্তু আমি দিতে চাইলে নিতা না । আরে মা আমার কেনা চিপস চকলেট নিতে কি সমস্যা ছিল তোমার ? প্রতিদিন এসব কিনে দেওয়ার সামর্থ্য তো আমার ছিল । কিন্ত না , তুমি নিবা না মানে নিবা ই না । বাপ রে । কি একগুঁয়ে মেয়ে তুমি ।
কতো আগের ব্যাপার এটা ?
বছর দুই ? নাকি আরও বেশি ?
এখনও কি লেইস আর কিটক্যাট এর পাগল রয়ে গেছ ?
ওই , জানো আমি কিন্তু মেরুন রঙের পাঞ্জাবী কিনেছিলাম । তোমার কথা মতোই । ঈদের সময় পড়েও ছিলাম , কিন্তু তোমাকে তো দেখাতে পারলাম না । মেরুন পাঞ্জাবী কিনতে কি যে ধকল গিয়েছিল । সাইজ আসে তো কালার ভালো না , সাইজ , কালার ঠিক তো কাপড় টা ভালো না । ধেৎ । তাও অনেক কষ্ট করে একটা কিনেছিলাম মেরুন পাঞ্জাবী । ফোনে তোমাকে বলার পর তুমি কি যে খুশী হয়েছিলে , বাপ রে বাপ । তুমিও কিন্তু তোমার সেই কালো জামা পড়ে আমাকে দ্যাখাও নি । ইশ ! একটা অতৃপ্তি রয়ে গেলো । তবে আমি কিন্তু তোমাকে সব সময় ই কালো জামায় কল্পনা করি । উফ , যা দেখতে লাগে না তোমাকে !
কতো আগের ঘটনা এটা ?
বছর দুই ? নাকি আরও আগের ?
আমাকে কি মেরুন পাঞ্জাবী পড়া অবস্থায় দেখতে আর ইচ্ছে করে না ?
তুমি কি এখনো সেই বাদামী হিজাব টা পড়ো নাকি পালটে নতুন নিয়েছ ? জানো , তোমাকে কিন্তু ওই হিজাবে অনেক মানাত । হিজাব পড়লেও যে মেয়েদের এতো টা সুন্দর লাগে আমার জানা ছিল না । এই বাদামী হিজাব টা তোমার ট্রেড মার্ক হয়ে গিয়েছিল , হা হা হা । দূর থেকে এই রঙ টা দেখলেই বুঝতাম । আসছে , আমার কলিজা টা আসছে । কাছে এসে বারবার হিজাবের স্কার্ফ ধরে টানতা । চেহারা ঢাকতা । আস্তিন ঠিক করতা । ধেৎ । তোমার চেহারা বাদে আমি কোন দিন কিছুই দেখতে পাই নি । একটা চুল ও না । আমাকেও কি এতো লজ্জা পেতে হয় ? লজ্জাবতী !
কতো আগের ঘটনা এটা ?
বছর দুই ? নাকি আরও বেশি ?
এখনো কি সেই লজ্জাবতীই রয়ে গেছ ?
আচ্ছা , অনেক লিখেছি । আর ভালো লাগছে না । উপন্যাস টাইপ লিখি নি , হা হা হা , কিন্তু তাও , অনেক লিখেছি । কিন্তু কার জন্য লিখলাম ? তুমি তো আর পড়বে না !
ভালো থেকো প্রিতাশা । নিজের খেয়াল রেখো , টেনশন করো না .......................... ধেৎ, আবার সেই আগের মতো লিখা শুরু করেছি । আমার বিদায় লাইন ও ২০ লাইনে গিয়ে ঠেকত । হা হা হা ।
ভালো থেকো মেয়ে । খুব ভালো ।
তোমার ছন্নছাড়া
এক সময়ের সব কিছু
প্রথম প্রকাশ জুন ৭ , ২০১২ , রাত ১১ টা ৪৫ মিনিটে আমার ফেসবুক নোট