বছর খানেক আগে ইলেক্ট্রিসিটি যাওয়া আমার কাছে একটা আনন্দের বিষয় ছিল । সন্ধ্যা হলেই অপেক্ষা করতাম কখন ইলেক্ট্রিসিটিটা যাবে ।
ইলেক্ট্রিসিটি টা গেলেই দৌড় লাগাতাম লোকনাথ দীঘির পাড়ে । একে ওকে ফোন করে আট দশ জনের একটা দল হয়ে যেতো । উত্তর দিকের বেঞ্চ ও উপর নিচ করে বসে শুরু করতাম আমাদের কাজ ।
কাজ টা হৈল সিগারেট টানা । তখন সবে সিগারেট খাওয়া ধরেছিলাম । এক বন্ধুর সাথে বাজি লেগে টানা তিন টা ‘মোর’ খেয়েছিলাম । এরপর থেকেই মজা লেগে গেলো । শুরু করলাম খাওয়া । প্রতিদিন ই সন্ধ্যা হলে বের হতাম । দীঘির উত্তর দিক টা তুলনামূলক ভাবে নির্জন হওয়ার কারণে তেমন সমস্যা হতো না । আড্ডা দিতাম , আর সিগারেট খেতাম আর সাথে থাকতো আবুল ভাই এর চা । আবুল ভাই এই দীঘির পাড়ে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করতেন । আমরা ছিলাম তার রেগুলার কাস্টমার । আবুল ভাইয়ের সেই মশলা দেওয়া চা’র স্বাদ এখনো মনে পড়ে ।
চায়ে চুমুক দেওয়া আর এরপর সিগারেটে টান দেওয়া যে কত মজার একটা ফিলিংস এর ব্যাপার সেটা তখন বুঝতাম । আহা !!! অহো !!! ( নর্তন কুর্দন এর ইমো )
সিগারেট এর ক্ষেত্রে একটু আভিজাত্য দেখাইতাম । ‘মোর’ কিংবা বাজারে একদম নতুন আসা ‘ব্ল্যাক’ ছাড়া খেতাম না । টাকা পয়সার টান লাগলে বেনসন খেতাম ।
আমি সিগারেট খাই , সেটা আমাদের সাথের ৮ / ১০ জন বাদে কেউ ই জানতো না ।
হ্যাঁ , আরেকজন জানতো । আমাদের এরিয়া এর একটা ক্যাফের মালিক । আমরা যখন ই যেতাম , ওই লোক টা আমাদের ডেকে একটা মোর এর প্যাকেট ধরিয়ে দিতো ।ফ্রি মাল । লোকটার একটা উপকার করেছিলাম বলে উনি আমাদের এটা ফ্রি তে দিতেন । মাঝে মাঝে আড্ডা দিতে ওই ক্যাফে তে যেতাম , আর একটা করে ফ্রি মোর পেতাম ।
চা – সিগারেট খেয়ে বাড়িতে ফেরার আগে ভালো করে কুলি করে , সেন্টার ফ্রেশ খেয়ে মুখের গন্ধ দূর করতাম । ব্ল্যাক খেলে অবশ্য এটার প্রয়োজন পড়তো না ।
সিগারেট খাওয়ার ব্যাপার টা সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে পারলেও একজনের কাছে লুকিয়ে রাখতে পারি নি । অবশ্য তার কাছে কোন কিছু ই লুকিয়ে রাখতে পারতাম না ।
তিনি হৈলেন আমার হোম মিনিস্টার । হোম মিনিস্টারের সাথে একদিন সৌজন্য সাক্ষাৎকারে গিয়েছিলাম উনার গণভবনে । বসে বসে আলাপ করছি , তখন দেখি উনি আমার প্যান্ট এর উচু হয়ে থাকা একটা স্থানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ।
প্রথমে একটু থতমত খেলেও পড়ে বুঝতে পারি যে আমি ধরা খেয়েছি । উনি তাকিয়ে আছেন আমার প্যান্ট এর পকেটের দিকে । পকেটে রাখা সিগারেট এর প্যাকেট । প্যাকেট সাহেব উঁকি দিয়ে আছেন । হোম মিনিস্টার বললেন পকেট এর বস্তু টা বের করতে । প্রথমে আমি গাইগুই করলেও পড়ে বাধ্য হয়ে দেখালাম । উনি আমার হস্তের বস্তু টা দেখেই উনার হস্ত দিয়ে দরজার দিক টা নির্দেশ করলেন । আমি কোন কথা না বাড়িয়ে চলে এলাম । এই মুহূর্তে উনার সাথে কথা বলা মানে নিচের পায়ে কুড়াল মারা , ওয়েল , যেনতেন কুড়াল না । চাইনিজ টাইপ । যেটা কিনা আমাদের সোনার ছাত্রলীগের ছেলেরা ব্যবহার করে । যাই হোক ওই দিন রাতে উনাকে আর সাহস করে ফোন দেই নি । উনিও দেন নাই । যথেষ্ট রেগে আছেন বোঝা যাচ্ছিল । এরপর দিন ফোন দিলেন । নর্মাল কথা বার্তা । এভাবে চলেই যাচ্ছিল দিন । সিগারেট এর কথা কেউ ই তুলতাম না ।
অবশ্য আমিও সিগারেট খাওয়া একটু একটু করে কমিয়ে দিচ্ছিলাম । তবুও হোম মিনিস্টারের এতো বড় একটা ইস্যু তে চুপ করে থাকা টা একটা রহস্যজনক ব্যাপার ছিল । তবে এতে আমি তেমন অবাক হই নি । নারী মাত্রই রহস্যময়ী । উনি উনার নারী ধর্ম পালন করছেন । আমিও এতে ব্যাঘাত ঘটাই নি ।
উনি ক্যান চুপ ছিলেন সেটা বুঝতে পারি ভ্যালেন্টাইন ডে তে । উনি আমাকে শায়েস্তা করার জন্য ভালো একটা দিন খুঁজছিলেন । ভ্যালেন্টাইন ডে তে আমি ঢাকা ছিলাম । যার কারণে উনি আমাকে উত্তম মধ্যম দেন নি । কিন্তু ভার্চুয়ালি ভালোই পিটিয়েছেন ।
রাত ১২টায় ফোন দিয়ে কই আই লাভ ইউ বলবে , শুরু করলো গালি দেওয়া । আমার ভাগ্য ভালো , উনার গালি দুই একটাতে সীমাবদ্ধ ছিল । হারামি , ফাজিল । আর বেশি রেগে গেলে মাইরা পিট্টা ভর্তা বানাই দিমু । ব্যাস ।
যাই হোক , উনি ওই দিন আমাকে বিরাট বড় লেকচার দিলেন । সিগারেট এর কুফল বললেন , সিগারেট না খেলে আমি কি কি অ্যাডভান্টেজ পাবো সেটাও বললেন ।
আমি মন দিয়ে শুনলাম ।
এরপর তিনি মোটামুটি কঠিন এক কথা বললেন । তিনি বললেন ‘ যদি এই ঠোট দিয়ে তুমি সিগারেট খাও , তাহলে এই ঠোট দিয়ে আমাকে চুমু খেতে পারবে না । যে ঠোট সিগারেট খেতে অভ্যস্ত , সে ঠোট আমার ঠোট স্পর্শ করবে , এটা আমি কোন দিন ও হতে দেবো না ‘
এরপর আরেকটু কঠিন কথা ‘ তুমি আমার কসম খেয়ে বল , তুমি আর কোন দিন সিগারেট খাবে না । না না ওয়েট , আমার কসম দিলে তুমি এক মিনিটে ভেঙ্গে ফেলবা । তুমি রিমঝিম এর কসম খেয়ে বল তুমি আর সিগারেট খাবে না ‘
আমি ততক্ষণে মহা ফাঁপরে । মেয়েরা আর কিছু পারুক আর না পারুক , ছেলেদের ফাঁপরে ফেলতে পারে ।
দুইবার ভাবার সময় নেই নি । প্রথমবারেই বলে দিলাম ‘’ঠিক আছে , আমি আর সিগারেট খাবো না’’
উনি রীতিমত চিৎকার করে উঠলেন । আই লাভ ইউ বলে বলে হয়রান উনি ।
এটাই ছিল আমার দ্যাখা ( শোনা ) উনার সর্বশেষ উচ্ছ্বাস ।
আজ মাঝে মাঝে ভাবি আমি ক্যান সিগারেট ছেড়েছিলাম । চুমু খাওয়ার লোভে ? উম! হয়তো । অস্বীকার করবো না , হোম মিনিস্টারের ঠোঁটের প্রতি আমার একটা আকর্ষণ ছিল সর্বদা । উনাকে প্রায় ই বলতাম এটা । উনি শুধু হাসতেন ।
চুমু খাওয়া হয় নি কোন দিন । আগে হাত ধরা তারপর না চুমু খাওয়া :/
সিগারেট ছাড়াই হল সার ! এখন সিগারেটের গন্ধও অসহ্য লাগে ।
আরেকটা কারণ যেটা , সেটা হল ওই রিমঝিম এর কসম টা । এই কসম টা না থাকলে আমি আবারো সিগারেট খাওয়া ধরতাম । মেয়েরা কিছু হলেই কসম দেয় , আর ছেলেদের আঁটকে দেয় । ধুরররর !
তবে এখন ভাবছি আবারো সিগারেট খাওয়া ধরবো । ভার মে জায়ে ও সাব কাসমে । ও সাব ওয়াদে ।
পড়ে ওকে ভালো মতো সব বুঝিয়ে বলে দেবো ।
আশা করি সে আমার কথা বুঝবে ।
হোম মিনিস্টার বলে কথা ।
সব ই তো বুঝেন