আমাদের সমাজের প্রেক্ষাপটে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রুজি রোজগারের দায়ীত্ব স্বামীর আর স্ত্রী ঘর সামলান। আমি আমার পরিচিত অনেক শিক্ষিত/ ডাক্তার /ইঞ্জিনিয়ার মেয়ে দেখলাম, বিয়ের পর প্রায় সবাই গৃহবধু। এই যে মেয়েগুলোর পিছনে তাার বাবা-মা, সরকারের অর্থ ব্যয় হলো তার প্রায় সবটাই গিয়ে পানিতে পড়লো। এই দোষ যে শুধু সেই মেয়েদের তা না, সমাগ্রীক ভাবে সমাজের সবার। অনেকে বলবেন একজন শিক্ষিত মা পরিবারের জন্যও জরুরী। সে কথা আমিও মানি কিন্তু তার জন্য কতখানি শিক্ষার প্রয়ােজন, ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার অনার্স/ মাস্টার্স পর্যন্ত নিশ্চয় না। কাজেই আমাদের দেশের মেয়েদের এসব ডিগ্রির বেশীর ভাগটাই শেষ পর্যন্ত অপচয় হয়।
যা হোক মূল বিষয় সেটা না । আমাদের দেশে বিয়ের বাজারে বিসিএস ক্যাডার/ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার/ ব্যাংকার পাত্রদের অনেক ডিমান্ড। যদি একজন বিসিএস ক্যাডার এর কথা ধরি তাহলে তার জীবনের শুরু সহকারী সচিব হিসাবে ( ক্যাটগরি ভেদে পদবীর ভিন্ন নাম)। সহকারী সচিব হতে না হতেই তার বিয়ের বাজারে দারুণ চাহিদা তৈরী হয়ে যায়। অবিবাহিত কন্যা এবং তার আত্মীয় স্বজন তার চারপাশে ভিড় করেন। সেই ভিড়ের মধ্যে থেকে দেখে শুনে বেছে তিনি একজন স্ত্রী নির্বাচন করেন। তার জন্য সেই মেয়েটিই তখন সবচেয়ে সেরা। বিয়ে হয়ে এসে স্ত্রী হয়ে যান গৃহিনী এবং মৃত্যুর্যন্ত তিনি সেই একই পোস্টে অর্থাৎ গৃহিনী'ই থেকে জান, বাড়ার মধ্য স্ত্রীটির শুধু বয়সটি বাড়ে ।
অপর দিকে কর্তা ব্যাক্তিটি প্রোমোশন পেতে পেতে সহকারী সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব, উপ সচিব, যুগ্ম সচিব, থেকে অনেকে অতিরিক্ত সচিব , সচিব পর্যন্ত হয়ে যান। প্রতি পদোন্নতির সাথে সাথে তার অর্থ, বিত্ত্ব, রুচি, আভিজাত্য অনেক ক্ষেত্রে প্রলোভন বৃদ্ধি পেতে থাকে।
আর ঘরের স্ত্রীটি আন প্রোমোটেড গৃহিনীই থেকে যান। স্বামী -স্ত্রীর পারষ্পরিক বন্ধনটা দৃঢ এবং চরিত্র উত্তম না হলে আস্তে আস্তে সম্পর্কে ফাটল ধরে। উত্তর উত্তর পদোন্নতি এবং প্রলোভনের ফলে ঘরের স্ত্রীটি তখন কর্তার কাছে পানশে হয়ে যায়। এখান থেকেই শুরু হয় সংসারের নানা টানাপোড়ন। কর্তাটি সামাজিক ভয়ে তার আনপ্রোমোটেড স্ত্রীটিকে ত্যাগ করতে পারেন না। কিন্তু তার বিচরণ শুরু হয় প্রোমোটেড আপার ক্লাসের রমনীদের সাথে। এ অবস্থায় প্রথম দিকে সংসারে অশান্তি এর পর কারও কারও ক্ষেত্রে বিচ্ছেদ। যাদের সংসার টিকে থাকে তাদের বেশীর ভাগ সংসারে স্বামী- স্ত্রী কেউ কারও পারসোনাল লাইফ নিয়ে ইন্টারফেয়ার না করার এক অলিখিত চুক্তিতে উপনিত হন। আন প্রোমোটেড স্ত্রীটি বিত্ত্ব বৈভবে ডুবে নিজের কষ্টটা ভুলিয়ে রাখেন আর কর্তা ব্যক্তিটি জড়িয়ে পড়েন একট্রাম্যারিটাল এক্টিভিটিজে।
***আমাদের দেশের এ ধরণের সংসারে সবার যে একই পরিণতি হয় তা না, তবে এই সংখ্যাটি আশঙ্কাজনক।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৫