কোথায় চলছে আমাদের সংস্কৃতি!! একদিকে পাড়ায় পাড়ায় মাদ্রাসা, অপরদিকে মহল্লায় মহল্লায় ক্লাবে মদ্যপান, জুয়ার আড্ডা। হজ, হিজাবের উত্থানের সাথে দুর্নীতি, অবৈধ প্রণয়ের মহোৎসব। ভারত খেদাওদের মুখে হিন্দি গান, লুঙ্গি ড্যান্স আর পূজা মণ্ডপে গজল সন্ধ্যা। এক রাতে ওয়াজ মাহফিলের আসরে মশগুল তো অপর রাতে রগরগে হিন্দি ফিল্মের স্বাদ গ্রহণ।
এত গেল সংস্কৃতির সংকরায়ণের কথা। কিন্তু গভীরভাবে দেখলে দেখা যাবে আমাদের সংস্কৃতির মূল ধারা বিশ্বজনীন কালচার থেকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আরব্য রজনীর উপন্যাসের কাল থেকে শুরু করে আমাদের ছোটবেলা পর্যন্ত কন্যাশিশুদের অন্যতম খেলার মাধ্যম ছিল পুতুল। পুতুল বানানো, পুতুলের বিয়ে, সংসার এসব ছিল তাদের নিত্যদিনের ঘটনা। ধর্ম সেখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। কিন্তু এখন মুসলমান সমাজের বাচ্চাদের পুতুল খেলা এক রকম নিষিদ্ধ। যদিও টেডি বিয়ার মনে হয় এ নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত নয়।
বছর ঘুরলে বেশ কিছু ব্যাংক থেকে নতুন ক্যালেন্ডার পাই। আগে এসব ক্যালেন্ডারের বেশিরভাগই হতো বিভিন্ন পেইন্টিং নির্ভর, সেটা কোনো নৈসর্গিক দৃশ্য হোক বা নারীর। এখন খুব কম ব্যাংকই এ ধরনের ক্যালেন্ডার করে, এখন প্রায় সব ক্যালেন্ডারই হয় মসজিদের ছবি বা ক্যালিগ্রাফি নির্ভর। অথচ আগেও আমরা মুসলিম ছিলাম, এখনও মুসলিমই আছি।
সাম্প্রতিক আন্দোলনের পরে একটি বিষয় চোখে পড়ার মতো। ৩৬-এর জুলাইয়ের পর স্কুল, কলেজের শিশুরা নামলো বিজয় আনন্দ করতে। বিজয় আনন্দের মূল ছিল গ্রাফিতি অংকন। ঢাকা শহরে ঘুরে ঘুরে গ্রাফিতিগুলো দেখেছি। গ্রাফিতির সিংহভাগই প্রাণীবিহীন। সেটা অস্বাভাবিক না, হতেই পারে। কিন্তু বেশিরভাগ জায়গায় মানুষের গ্রাফিতিতে যখন চোখ, নাক, মুখের কোনো চিহ্ন পেলাম না, বিস্মিত হলাম তখন। বুঝলাম শিশু-কিশোরদের মনেও চিত্রকলার সাম্প্রদায়িক রূপটি ঢুকে গেছে।
কেউ একে বলবেন ইতিবাচক, কেউ হয়তো বলবেন নেতিবাচক। ইতিবাচক বা নেতিবাচক যাই হোক না কেন, এখান থেকে স্পষ্ট হচ্ছে যে বিশ্ব সম্প্রদায় থেকে আমরা নিজেদের আলাদা করতে শিখছি। এখনও সম্পূর্ণ আলাদা হতে পারিনি, তবে আলাদা হওয়ার এক সংকর কালের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত হচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:১৯