somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপরিচিতা (গল্প)

১৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রুমের ভিতর ভ্যাপসা গরম। তাই রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে এল এলিন। নির্মল বাতাস বইছে, সেই সাথে বেলি ফুলের সুগন্ধ। অপরূপ মনোরম পরিবেশ। লাইটার জ্বালিয়ে সিগারেট ধরাতে যাবে ঠিক তখনই মেয়েটির দিকে চোখ পড়ল। ছোট্ট একটি শিশুর সাথে খুন-সুটি করছে।

কথা বলার লোভ সামলাতে পারল না এলিন। কাজিনের বিয়েতে এসেছে সে। মেয়েটি হয়তবা তাদের কোন আত্নীয় কিংবা কারো বান্ধবী হবে। সাহস করে এগিয়ে গেল। টুক-টাক কথা হতে থাকল। মেয়েটির রেসপন্স বেশ ভাল।

এলিনঃ চলুন না সামনে থেকে হেঁটে আসি।
মেয়েঃ উঁহু, মা বকবে।

সেই সাথে হাসি, পরিতৃপ্তির হাসি। এলিনকে অপমান করার পরিতৃপ্তি। মুখের মনোরম হাসিটি যেন তার স্বভাবসিদ্ধ। তার সবকিছুই যেন মনোমুগ্ধকর।

অন্ধকার থেকে জোরালো বাতাস তাদের মুখের উপর আছড়ে পড়তে লাগল। মেয়েটির সাদাসিধে পোশাক আর ধূসর চিন্তা মনে আসতেই একটা ভয় মেশানো উল্লাসে তার অন্তর যেন নেচে উঠল। মেয়েটি তার হাত চিবুকে রাখল। ছোট্ট গ্রামে গ্রীষ্মের রাত্রির উষ্ণতা আর বিচিত্র গন্ধে বাতাস মুখরিত।

মেয়েটির নাম তখনো অজানা রয়ে গেল। মেয়েটি তার পরিচয় গোপন রেখেই পরদিন চলে গেল।

মেয়েটিকে বিদায় দিয়ে আনন্দ চিত্তে ঘরে ফিরে এল এলিন। নিজেকে পাখির মত হাল্কা মনে হচ্ছিল। তা সত্ত্বেও কী যেন একটি পরিবর্তন ঘটেছিল। মেয়েটি নেই, রুমটিকে কেমন যেন শুন্য মনে হচ্ছিল। অথচ মেয়েটি যতক্ষণ ছিল সব কিছুতেই প্রাণের ছোঁয়া ছিল। মেয়েটির অস্তিত্ব সর্বত্র, তবুও কেমন যেন শুন্য। এলিনের নাকে তখনও মেয়েটির পারফিউমের গন্ধ লেগে ছিলো। কথার ফাঁকে ফাঁকে তার ছিঁড়ে ফেলা গাছের পাতাগুলো এখনও ছড়িয়ে আছে। অথচ মেয়েটি নেই। এলিনের হৃদয় বেদনায় মোচড় দিয়ে উঠল।

তাড়াতাড়ি একটি সিগারেট ধরিয়ে রুমের ভিতর পায়চারি করতে লাগল। এখন সে কি করবে? এই আকস্মিক আর অপ্রত্যাশিত প্রেমকে সে তাড়াবে কেমন করে? ভেবেছিল সিগারেট তার যন্ত্রনা কাতর মনকে সুস্থ করে দিবে। কিন্তু তার বদলে মানসিক অবস্থা আরও বিষাদঘন হয়ে উঠল।

তার জীবন থেকে মেয়েটি চলে গেল? এতক্ষনে হয়ত অনেক দূরে চলে গিয়েছে। আচ্ছা তার কথা কি মেয়েটির মনে পড়বে? কোন এক অলস প্রহরে?

স্মৃতিপটে খুটিনাটি ঘটনা ভেসে উঠতে লাগল। মিষ্টি কণ্ঠস্বর মনে পড়তে লাগল। সুখের অনুভুতিগুলো এখনও যেন প্রতিটি শিরায় নেচে বেড়াচ্ছে। কিন্তু আরেকটি নতুন অনুভুতি অন্য সকল কিছুকে ছাড়িয়ে তাকে উতলা করে তুলছিলো। অদ্ভুত বোধাতীত অনুভুতি, মেয়েটি যখন সাথে ছিল তখন সে বুঝতে পারে নি। গতকাল এ ধরণের অনুভুতি ছিল বলে তার আদৌ মনে পড়ছে না। মেয়েটির সান্নিধ্য তাকে আবিষ্ট করে রেখেছিল।

এলিনের হৃৎপিণ্ডটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। জীবনটা এখন তার কাছে কেমন যেন নীরস আর একঘেয়ে। পেয়ে হারানোর যন্ত্রণা সে কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না।

গতকাল বেশ কয়েকবার মেয়েটির নাম জানতে চেয়েছিল। মেয়েটি প্রতিবারই হেসে বলেছিল, “আমি কে তা আপনার জানার দরকার কি?”

অদ্ভুত! সে অস্ফুট কন্ঠে বলে উঠল। তার মুখে মৃদু হাসি, চোখ দুটি আবেগে অশ্রুসজল। মেয়েটির কথাগুলো তার মনে গুন গুন করতে লাগল। আপন মনে বলে উঠল “রহস্যময়ী নারী”।

চেনা নাই, জানা নাই ঠিকানাও বলে নাই
তবু তারে দুই নয়নে খুঁজিয়া বেড়াই


[প্রখ্যাত রুশ লেখক ইভান বুনিনের ''সানস্ট্রোক'' গল্প অবলম্বনে]
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৩ রাত ২:০৭
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×