somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বসন্ত হৃদয়ে আজ আমার ( গল্প )

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৮:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ফারিয়ার ফোন পেয়েই ঘুমটা ভাঙল। মনটা পুলকিত হয়ে উঠল। কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না। জরুরী তলব। (নিশ্চয়ই নতুন কোন ঝামেলা হয়েছে)

ভেন্যুঃ ডেসটিনেশন-২, কফিশপ। সময়ঃ গোধূলি।

হাতে কোন টাকা নেই, কি যে করি? মাঞ্জারকে বললাম কিছু টাকা ধার দিতে।

মাঞ্জারঃ তুই এক কাজ কর তোর ভাইকে লিখে দে নতুন টিউশনি শুরু করেছিস, এই মাসে টাকা বেশি লাগবে।
আমিঃ কেন?
মাঞ্জারঃ আরে! নতুন টিউশনি। টিউশনিতে যেতে আসতে আলাদা কস্ট আছে না? নতুন শার্ট, প্যান্ট, পারফিউম, রিলেটেড বই এই সব এর জন্য আর কি! বলেই হাসতে লাগল।

[ গত বছর ভুল করে ঘর ভারা-৫০০, মেস ভাড়া -৫০০ লিখে খরচের হিসেব মিলিয়েছিলাম, সেই থেকে সময় পেলেই বন্ধুরা রসিকতা করতে ছাড়ে না ]

আমিঃ ভাইয়ের টাকায় তো আর পড়াশুনা কর না চান্দু! বুঝবে কি করে? মাস শেষে আমার মত হিসেব দিতে হত, তাহলে বুঝতে! কত ভুট্টায় কত পপকর্ণ!

ভাইয়ার কাছে চিঠি? মনে হয় এপ্লিকেশন দিতে হয়। গ্রান্ট হবে কিনা সেই চিন্তা, বিভিন্ন জায়গায় এপ্রুভ, ... দিন আগে জানানো। ওহ! বিরাট ঝক্কি ঝামেলার কাজ!

ফারিয়ার মোবাইল নেই এর জন্য উপর ওয়ালাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ধুম্রশলাকা খুঁজতে লাগলাম। ব্রেইনে একটু ধোঁয়া দেয়া দরকার। প্যাকেট উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে দেখলাম কোথাও কিছু নেই। শুধু ছাই জমে আছে।

একটা ছেঁড়া দশ টাকা পকেটে নিয়ে দিচক্র যান নিয়ে বের হলাম গোধূলির আগে আগে। কফি-শপে গিয়ে মিলিত হলাম। ফারিয়া বলল বার্গার খাওয়াও। আমি একবার ফারিয়ার মুখের দিকে আর একবার পার্স এর দিকে তাকিয়ে ১টা অর্ডার দিলাম। ফারিয়ার পার্সটাই ভরসা।

ফারিয়াঃ আমরা মানুষ ২ জন, একটা অর্ডার দিলে কেন?
আমিঃ মা এসিডিটির জন্য বাইরের খাবার খেতে নিষেধ করেছে
ফারিয়াঃ আর আমার সাথে প্রেম করতে বলেছে? বলে একটু হাসল। ( আমি থ হয়ে গেলাম, এই মেয়ে বলে কি? )। দেখি তোমার মানিব্যাগটা আমার কাছে দাও।
আমি ইতস্তত করতে করতে মানিব্যাগটা এগিয়ে দিলাম। ফারিয়া ছেঁড়া নোটটা বের করে আমার নাকের সামনে ঝুলাতে লাগল। আমি লজ্জায় কিছু বলতে পারলাম না।

ফারিয়াঃ আরে আমার ভ্যাগাবন্ড! কি দেখে যে তোমার প্রেমে পড়েছিলাম! ২ টা অর্ডার দাও। আমি পে করব।
আমিঃ কি জন্য ডেকেছ, বল।
ফারিয়াঃ বা রে! তোমাকে বুঝি ডাকা যাবে না! তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিল তাই!
আমিঃ এর জন্য তো ফার্স্ট ভেন্যুই ( ল্যাম্পপোস্ট ) যথেষ্ট ছিল। আর এটা তো তোমার ইমেজের সাথে যায় না।
ফারিয়াঃ কোনটা?
আমিঃ একসাথে বসা, গল্প করা। তোমার তো মনে হয় রাজ্যের বাধ্যবাধকতা । রিকশায় ঘোরা যাবে না, অন্য মেয়ের দিকে তাকানো যাবে না।
ফারিয়াঃ তা তোমার মতে কেমন হওয়া উচিৎ?
আমিঃ কন্টাক্ট এফেয়ার
ফারিয়াঃ সেটা আবার কি? বহু কবিতা উপন্যাস পড়লাম, কোথাও তো এর অস্তিত্ত পাই নি! স্বরচিত নাকি?
আমিঃ অনেকটা তাই?
ফারিয়াঃ তা আপনার এটা কি রকম শুনি একটু! [ ফারিয়া ভালভাবে শোনার জন্য এগিয়ে বসল ]
আমিঃ বুঝলে না? ক্লোজ কন্টাক্ট আর কি! হাতে হাত, ঠোঁটে ঠোঁট।
ফারিয়াঃ অসভ্য!

আহ! মেয়েদের মুখে এই অসভ্য কথাটার কোন তুলনা হয় না। আর প্রেমিকার মুখে তো কথাই নেই!

কিন্তু ফারিয়া সেদিনের কথা কিছু বলছে না কেন? কোন সমস্যা হয়েছে বলে তো মনে হচ্ছে না। হেসে হেসে কথা বলছে। হাসলে এই মেয়েটিকে যে কি সুন্দর লাগে! তা কি এই মেয়েটি জানে?
আমিঃ (ভয়ে ভয়ে) সেদিনের কথা কিছু বলছ না যে?
ফারিয়া হঠাৎ উচ্চ শব্দে হাসতে লাগল। আমি অবাক হয়ে গেলাম, কি রে! পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি? আজকের আচরণ, হাসি, কথাবার্তা প্রথম থেকেই কেমন যেন অস্বাভাবিক লাগছে। কি আর বলব ! নারীর মন দেবতারাই নাকি বুঝতে পারে না, আর আমি তো সাধারণ মানুষ।
ফারিয়াঃ সেদিন পালিয়েছিলে কেন? বাবা তো আসেইনি!
আমিঃ তুমিই তো বললে।
ফারিয়াঃ পালাতে তো বলি নি। দেখছিলাম আমার বয়ফ্রেন্ড কতটা সাহসী?

ফারিয়াকে তো বলতে পারব না, আপনাদের চুপি চুপি বলে রাখি, আমার সাহস অতি নিম্ন পর্যায়ের। ফারিয়াকে দেখলেই আমার পালপিটেশন শুরু হয় , মনে হয় বুকের ভেতর ডেথ মেটাল বাজছে। ওর কণ্ঠস্বরে একটা উষ্ণ শিহরন ছুটে চলে শরীরে। আর ওর বাবার কথা শুনলে তো আত্নরাম খাঁচাছাড়া অবস্থা!

ফারিয়াঃ কি হল কথা বলছ না কেন?
আমিঃ ভাবছি
ফারিয়াঃ কি ভাবছ?
আমিঃ কি নিয়ে ভাবব তাই আপাতত ভাবছি
ফারিয়াঃ দেখ আমার উপর ফিলসফি অ্যাপ্লাই করবে না, এসব সস্তা রসিকতা আমার ভাল লাগে না। বি স্মার্ট।
আমিঃ তাহলে পরদিন ফোন করলে না কেন?
ফারিয়াঃ তুমি তো মিসকল দাও নি, তাই!

[মিস কলের নিয়মটা তো আপনাদের বলা হয় নি। আমি মোবাইল থেকে ৩ বার মিস কল দেই। কোন প্রবলেম না থাকলে ফারিয়া ব্যাক করে। কথা শুরু হয়। সম্বোধন তুমি থেকে তুইএ আসলেই বুঝতে পারি কেউ এসেছে। তখন লেখাপড়ার কথা শুরু হয়। এভাবেই চলছে মোবাইলহীন ডিজিটাল প্রেম।]

আমিঃ তাই বলে তুমি এই কাজ করলে?
কিছু না বলে ফারিয়া হাসতে লাগল। এই হাসির সামনে কিছুই করতে পারি না । এই হাসিটুকু মলিন করার ক্ষমতা আমার নেই । কেন তা আমি জানি না । জানতে চাইও না ।

মুখে শুধু বললাম “প্লিজ হাসবেনা! ওই হাসি দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকে না! পাবলিক প্লেসে কি করে বসি ঠিক নাই!”
ফারিয়াঃ (কপট রাগে ভ্রু কুচকাল) বাবার কথা শুনেই যে অবস্থা! (হাসি...)
আমিঃ নারী জাতি বড়ই নিষ্ঠুর। সুন্দরী মেয়েরা আরও বেশি।
ফারিয়াঃ আবার?

আজ ফারিয়াকে বেশ সুন্দর লাগছে। সে আহামরি সুন্দরী নয়, তবে চেহারায় মাধুর্য আছে। হাস্যময়ী, সাবলীল কথন ভঙ্গি, সম্মোহনী দৃষ্টি। তার অকৃত্রিম সরলতা আর মায়াবি চোখ দুটিতে আশ্চর্য আলোর ঝলকানি! কিন্তু আজ কেন যেন মনে হচ্ছে এই ফারিয়াকে আমি চিনি না।

ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক
বসন্ত হৃদয়ে আজ আমার..


সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:১০
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঢাকায় শান্তিতে বসবাসের জায়গাগুলো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩০ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:৪৪






ঢাকায় শান্তিতে বসবাস করা যায় যেসব এলাকা: একটি বাস্তবভিত্তিক পর্যালোচনা

ঢাকা, বাংলাদেশের রাজধানী শহর, জনসংখ্যা ও যানজটের দিক থেকে অন্যতম ব্যস্ততম নগরী হলেও এখানকার কিছু কিছু এলাকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হেজেমনি, কাউন্টার-হেজেমনি ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক যুদ্ধ !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩১ শে মে, ২০২৫ রাত ১২:২৪


একটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে নিঃশব্দ অথচ গভীর যুদ্ধ চলে তার ইন্টেলেকচুয়াল সেক্টরে। গোলা-বারুদের বদলে এখানে অস্ত্র হয় কলম, টকশো, নাটক, পাঠ্যবই, এবং ইউটিউব। বাংলাদেশে এই হেজেমনি বহুদিন ছিল প্রথম আলো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে দলীয় সরকার কখনই জনগণের সরকার হয় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে মে, ২০২৫ রাত ১২:২৫



সবাই মিলে দেশ স্বাধীন করলেও আওয়ামী লীগ সেটা স্বীকার করলো না। সেজন্য তারা বাকশাল নামে একদলীয় শাসন শুরু করে ছিল। কিন্তু সেনা বিদ্রোহে তাদের বাকশালী শাসনের অবসান ঘটে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রস্থান-পথ কঠিন হয়ে গেছে মুহাম্মদ ইউনূসের

লিখেছেন কবির য়াহমদ্্, ৩১ শে মে, ২০২৫ রাত ২:২৪



অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের (৮ই আগস্ট ২০২৪ থেকে চলমান...) প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতা ছাড়ার পথ কঠিন হয়ে গেছে।

এমনিতেই তার পদ ছাড়ার প্রবল অনাগ্রহ, তার ওপর আছে ক্ষমতা গ্রহণের পরের মাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৃষ্টি ঝরছে সারাদিন

লিখেছেন সামিয়া, ৩১ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৪



ইচ্ছা ছিল প্রথম আষাঢ়ে ছাদে যাবো
বৃষ্টি দেখতে,
যাওয়া হয় নাই।
বৃষ্টি তো আর ক্যালেন্ডার দেখে আসে না।
সে কখনো মাসের আগেভাগেই দরজায় কড়া নাড়ে,
আবার কখনো হুট করে হাওয়ায়
হালকা জলছবি আঁকে।

বৃষ্টি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×