ফুটবল......! এক আবেগের নাম, এক অফুরন্ত ভালোবাসার নাম। একটি অনন্যসাধারণ খেলার নাম ফুটবল, যেটিকে ঘিরেই কিছু মানুষের সব পাগলামি, আবেগ দেখানো আর এটিকে ঘিরেই বেড়ে উঠা। কিছু মানুষের জন্য এটি আবেগের চেয়েও বেশি কিছু!এদের মধ্যে আমিও একজন। ফুটবল ই আমার ভালোবাসা, ফুটবল আমার সব। সারাদিন যে ফুটবল নিয়ে পড়ে থাকি আর ভার্চুয়াল জগতে ফুটবল নিয়ে মাতামাতি করি সেই ফুটবল সম্পর্কে আমরা কে কতটুকু জানি?
ইংরেজিতে একটি কথা আছে-
"Football? Are you talking about feelings? "
হ্যা, ফুটবল খেলাটা একটা ফিলিংস, যারা ফুটবল ভালোবাসে তারাই কেবল এই ফিলিংস উপভোগ করতে পারে। শুধু ফুটবল ম্যাচ দেখার মধ্যেই এই ফিলিংস সীমাবদ্ধ নয়, বরং এই ফুটবল নিয়েই সকল আলোচনা সমালোচনা! তর্ক- বিতর্ক, আড্ডা আবার কখনোও বা ঝগড়া। ফুটবল খেলাটা এমন ই।
ফুটবল এগারো জনের দুটি দুলের মধ্যে একটি বায়ুপূর্ণ চামড়ার বলকে পা ও মাথার সাহায্যে পরস্পরের গোলসীমানার দিকে নিক্ষেপের খেলা। বাংলাদেশে ফুটবল বলতে অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল বা সকারকেই বোঝানো হয়ে থাকে। ফুটবল মাঠ আয়তাকার এবং দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে তার মাপ ৯০-১১০ মিটার × ৪৫-৯০ মিটার। মাঠের দুইপ্রান্ত রেখা বা গোললাইনের মাঝামাঝি স্থানে ৭.৩২ মিটার
ব্যবধানে দুটি খুঁটি বা গোলপোস্ট থাকে।
গোলপোস্টের উচ্চতা ২.৪৪ মিটার এবং এর ওপরে আড়াআড়িভাবে একটি ক্রসবার থাকে। প্রতিটি গোলপোস্ট থেকে ৫.৫ মিটার দূরত্বে স্থাপিত এবং ৫.৫ মিটার দীর্ঘ দুটি সরল রেখাকে আরেকটি সরলরেখা দিয়ে যুক্ত করে চিহ্নিত করা হয় গোল এরিয়া। একইভাবে গোলপোস্ট থেকে ১৬.৫ মিটার দূরত্বে চিহ্নিত এলাকাকে বলা হয় পেনাল্টি এরিয়া। একটি আদর্শ ফুটবলের পরিধি ৬৮.৫-৭১ সেন্টিমিটার এবং এর ওজন ৪০০ থেকে ৪৫০ গ্রাম। মাঠের খেলায় প্রত্যেক দলে এগারো জন করে খেলোয়াড় থাকেন। এদের মধ্যে একজন থাকেন গোলকিপার, নিজেদের পেনাল্টি সীমানার ভেতর তিনিই কেবল হাত দিয়ে বল ধরতে পারেন। এক পক্ষের গোলবারের ভিতর দিয়ে বল চলে গেলে প্রতিপক্ষ একটি গোল পায়।এভাবে ৯০ মিনিটের খেলায় যে পক্ষ বেশি গোল পায় তাকে জয়ী ঘোষণা করা হয়।বল মাঠের বাইরে গেলে লাথি মেরে বা হাত দিয়ে নিক্ষেপ করে আবার খেলা শুরু করতে হয়। খেলা পরিচালনার জন্য একজন রেফারি ও দুজন সহকারী রেফারি থাকেন।বর্তমানে গোলবারের পিছনে আরোও একজন একজন করে রেফারি থাকেন, গোল হয়েছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য।
ফুটবল খেলা কোন দেশে কখন প্রথম চালু হয় সে সম্বন্ধে ঐতিহাসিকরা একমত নন। কেউ বলেন চীন, কেউ গ্রিস, কেউ রোম, কেউবা ইংল্যান্ডকে ফুটবল খেলার আবিষ্কারক মনে করেন। তবে রোমানরাই ফুটবল খেলাকে ইউরোপের সঙ্গে প্রথম পরিচয় করিয়ে দেয় এবং এ খেলার বিস্তৃতি ও জনপ্রিয়তা দান করে।ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ফুটবল ইংল্যান্ডে প্রবেশ করার পর থেকে এর প্রচার, প্রসার ও জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ১৮৪৮ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রথম ফুটবলের জন্য আইন-কানুন প্রণয়ন করে। পরবর্তীকালে এর আরও পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন ঘটে এবং ফুটবলের জন্য একটি পরিপূর্ণ নীতিমালা তৈরি হয়। তাই ইংল্যান্ডকে আধুনিক ফুটবলের জনক বলা হয়।
তারাই ফুটবলকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয় এবং জনপ্রিয় করে তোলে। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে পৃথিবীতে ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়ে। ১৯০৪ সালের ২১ মে প্যারিসে ইউরোপের ৭টি দেশের প্রতিনিধিদের বৈঠকে ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল দ্য ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ফিফা) গঠিত হয়। ১৯৩০ সালে আয়োজন করা হয় বিশ্বকাপ ফুটবলের। উরুগুয়ে প্রথম বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করে। অলিম্পিকে ফুটবল অন্তর্ভুক্ত হয় ১৯০৮ সালে, এশিয়ান গেমসে ১৯৫১ সালে, ইউরোপিয়ান কাপ চালু হয় ১৯৬০ সালে, বিশ্ব ক্লাবকাপ ১৯৬০ সালে এবং এশিয়ান ক্লাব ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ ১৯৬৭ সালে।
বিশ্ব ফুটবলে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য যাদের নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে তাদের মধ্যে রয়েছেন ব্রাজিলের পেলে, আর্জেন্টিনার দিয়াগো ম্যারাডোনা, নেদারল্যান্ডসের ইয়োহান ক্রুইফ, হাঙ্গেরির ফেরেংক পুসকাস,জার্মানির ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, ফ্রান্সের মিশেল প্লাতিনি, পর্তুগালের ইউসেবিও, ইংল্যান্ডের স্ট্যানলি ম্যাথুজ, প্রমুখ। মহিলা ফুটবলারদের মধ্যে রয়েছেন ব্রাজিলের মহিলা পেলে খ্যাত মার্তা, ইংল্যান্ডের বেভারলি রেঞ্জার, যুক্তরাষ্ট্রের মিয়া হ্যাম প্রমুখ।
ফুটবল নিয়ে লিখতে গেলে শেষ হয়েও শেষ হবেনা, কারন এটিই আমাদের আবেগ, ভালোবাসা! একজন পিউর ফুটবল ফ্যান কখনোই এই ফুটবলের মায়া ত্যাগ করতে পারবেনা। কারন-
" Football is in our blood, Football is in our Heart "
ফুটবল খেলাটা রক্তের সাথে মিশে গেছে, দেহে যতদিন রক্ত প্রবাহিত হবে ততদিন এই ফুটবল আমাদের প্রাণে থাকবে। সকল ফুটবল ফ্যানদের উদ্দেশ্যে আমার এই লেখাটি....
©আহমদ আতিকুজ্জামান।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৬ ভোর ৪:০৩