৫ই মে ২০১৩ ৷
বাংলার ইতিহাসে আরো একটি কালো অধ্যায় রচিত হয়েছিলো ৷ তাওহীদী জনতার স্বতস্ফূর্ত ঈমানী জাগরণের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী সৈরাচারের কাপুরুষোচিত বর্বর গনহত্যা ও দমন-পীড়নের নজীর হয়ে থাকবে এ দিনটি ৷ হেফাজতে ইসলামের ডাকা এ দিনের 'ঢাকা অবরোধ' কর্মসূচিতে রাজধানীর ছয়টি প্রবেশপথে লক্ষ লক্ষ তাওহীদী জনতা শান্তিপূর্ণ অংশগ্রহণ করে ৷
অবরোধ শেষে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল শাপলা চত্তরের মহাসমাবেশে যোগদানের লক্ষ্যে উল্লেখিত ছয় স্থানের সমবেত জনতা যাত্রা শুরু করে ৷ আল্লাহর যিকর ও তাকবীর ধ্বনিতে মুখরিত সাদা-শুভ্র ঈমানী কাফেলার এ যাত্রা যেন শান্ত কিন্তু অনিঃশেষ এক জনস্রোত ৷ ছয়দিক থেকে বহতা নদীর মতো এগিয়ে আসা পবিত্র ও শান্তিপূর্ণ এ জনস্রোত শাপলা চত্তরের মোহনায় মিলিত হওয়ার পূর্বেই এর একটি শাখা আক্রান্ত হয় দুর্বৃত্তদের আক্রমণে ৷ আওয়ামী দুর্বৃত্তদের এ আক্রমণই উন্মাতাল করে তোলে শান্ত বয়ে চলা জনতার স্রোতকে ৷ এভাবেই সূচনা উত্তেজনার ৷
তারপরের ইতিহাস নারকীয় তান্ডবের ৷ নজীরবিহীন বর্বরতার ৷ বুলেটের আঘাতে তাওহীদী প্রাণ কেড়ে নেয়ার ৷ আর স্বাধীন বাংলার ইতিহাসে রেকর্ড নারকীয় হত্যাকান্ডের ৷ পেশী শক্তি আর বুলেটের জোরে ক্ষমতাসীন দাম্ভিকের দল পৈশাচিক বিজয়োল্লাস করতে পারে ৷ কিন্তু ইতিহাসের নির্মম বাস্তবতা হলো এ দাম্ভিকতা ও পৈশাচিকতাই পতনের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয় ৷
৫ই মে দুপুর ৬ই মে ভোর পর্যন্ত চলা শাপলা চত্বর ট্রাজেডি ঈমানদার মানুষের হৃদয়ে স্মরিত হবে স্বাধীন বাংলার নতুন বালাকোট হিসেবে ৷ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অবমাননার বীরুদ্ধে ফুঁসে ওঠা ঈমানদার মানুষের শহিদী রক্তে ঢাকার রাজপথ যেভাবে রঞ্জিত হয়েছে বালাকোট প্রাঙ্গণে সাইয়েদ আহমদ শহীদ ও তার সহোযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের সাথেই কেবল তার তুলনা চলে ৷
১৮৩১ এর ৬ মে বালাকোটের প্রান্তরে উপমহাদেশের আযাদী আন্দোলনের বীর শহীদানদের শাহাদাৎে বাহ্যত মনে হয়েছিলো ঈমানদারদের পরাজয় আর বৃটিশ বেনিয়াদের বিজয় হয়েছে ৷ কিন্তু ইতিহাস বলে ভিন্ন কথা ৷ সেদিনের বীর শহীদদের আত্মদান যেমন যুগ যুগ ধরে মহান স্বাধীনতার চেতনা সমুন্নত রেখেছে লাখো মানুষের হৃদয়পটে আর দ্রোহের আগুন জ্বেলেছে সাম্রাজ্যবাদী বৃটিশের বিরুদ্ধে, তেমনি ২০১৩ এর ৬ই মেও যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের মানুষের মনে একদিকে যেমন জ্বালবে ঈমানী চেতনার প্রোজ্জ্বল মশাল তেমনি ইতিহাসের ঘৃণিত খুনি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে বর্তমান ক্ষমতাসীন মহল ৷
যতদিন এই পৃথিবী থাকবে, ততদিন এই রক্তাক্ত স্মৃতি মোছা যাবে না ৷ মোছার নয় ৷ বাংলাদেশ ও বিশ্ব মুসলিম ইতিহাসে এই দিন অমলিন হয়ে থাকবে ৷ আমরা শুধু কুরআনের ভালোবাসায় সেদিন একত্র হয়েছিলাম ৷ আমরা সেদিন শুধু রাসূলে আরাবীর ইশকে শাপলায় ছুটে গিয়েছিলাম ৷ আল্লাহ! তুমি সাক্ষী ৷ ক্ষমতার মোহে বুদ হয়ে থাকা এ সম্প্রদায় ও তার পেটোয়াবাহিনীর বিরুদ্ধে নালিশটা তোমার দরবারেই তোলা রইলো ৷