প্রতিবছর ভাষার মাস এলেই আমরা একুশের
চেতনায় উৎফুল্ল ও উদ্বেলিত হয়ে উঠি। কারন
ভাষা আন্দোলনের হাত ধরেই আমরা অর্জন
করেছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমরাই
পৃথিবীতে একমাত্র মাতৃ ভাষার জন্য রক্ত
দিয়েছি। তাই ফেব্রুয়ারি এলেই আমাদের আবেগে
ভাষাপ্রেম প্রবল ঝঞ্ঝায় উথাল করে দুলে ওঠে।
চেতনা ও হৃদয়ের গভীরে আলোড়ন তোলে। ভাষার
মাস নিয়ে, একুশের
চেতনা নিয়ে সারাদেশে আলোচনা, সেমিনার ও
সিম্পোজিয়ামের জোয়ার
বয়ে যায়। দেশের বুদ্ধিজীবী ও লেখকশ্রেণি
পত্রপত্রিকায় নানা ধরনের ও বহুমাত্রিক প্রবন্ধ-
নিবন্ধ লেখা শুরু করেন। এবারও এর কোনো
ব্যতিক্রম হবে না।
কিন্তু কথা হচ্ছে, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বা
একুশের চেতনা সংক্রান্ত আমাদের চিন্তা ও
ভাবনা প্রকৃতার্থে কতটা মৌলিক ও গভীরতর হয়
তা আলোচনার দাবি রাখে। এক্ষেত্রে লক্ষণীয়
যে, বামপন্থী ও সেক্যুলার শ্রেণির ইতিহাসবিদ,
লেখক ও
বুদ্ধিজীবীরা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস
সম্পর্কিত প্রবন্ধ-নিবন্ধ বা কলাম লিখতে গিয়ে
ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্ত পরিপূর্ণভাবে উল্লেখ
ও উপস্থাপনের ব্যাপারে সীমাবদ্ধ
বা অনুদার হয়ে থাকেন। বস্তুতপক্ষে ভাষা
আন্দোলনের উৎপত্তি ও উৎসের ইতিহাসকে আজ
মনে হয় অতি সচেতন ও সূক্ষ্মভাবেই খণ্ডিত করা
হচ্ছে।
সেইসব তথাকথিত প্রগতিশীলদের অনেকেই
বায়ান্ন’র রাষ্ট্রভাষা
আন্দোলন ২১শে ফেব্রুয়ারির মিছিল দিয়েই
তাদের লেখা শুরু করেন।
অথচ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বছর তথা ১৯৪৭-এর
দেশবিভাগের বছরই ভাষা আন্দোলন
আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় তমদ্দুন মজলিসের
উদ্যোগে। এ সংগঠনটির পুরো নাম ছিল
পাকিস্তান তমদ্দুন মজলিস। আমাদের
দেশ তখনো পাকিস্তান থেকে পৃথক না হওয়ায়
সংগঠনটির নামের আগে ‘পাকিস্তান’ শব্দটি ছিল।
কথা হচ্ছে,
বায়ান্ন’তে যারা মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন, যারা
পাক হানাদারের বুলেটবৃষ্টির মুখে শহীদ হলেন-
সেদিন তাদেরকে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব ও
দিকনির্দেশনা দিয়েছিল কারা বা কোন সংগঠন?
কেন ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের মহানায়ক
প্রেন্সিপাল আবুল কাশেম, মাওলানা ভাসানী,
মাওলানা তর্কবাগীশ, মাওলানা আখরাম খা,
মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী,প্রে
ন্সিপাল ইব্রাহিম খা সহ আলেম ও ইসলামিক
মনীষাদের অবদান কেন ভাষার আলোচনা তে নেই।
সেদিন যারা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শরিক
হয়েছিল। তারা কার বা কোন সংগঠনের অধীনে ও
নির্দেশনায় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে একাট্টা হন?
কোন সংগঠনের উদ্দ্যোগ ও উদ্যমের মাধ্যমে
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের
সূচিত ও ভেগবান হয়? সেই উত্তর কোথায় আজ?
নতুন প্রজন্মকে সেই সংগঠন ও ব্যক্তিদের ভাষা
আন্দোলনের অবদানের গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস জানতে
দেয়া হচ্ছে না কেন? কেন আলেমদের উর্দুভাষী
বা উর্দু প্রেমি বলে বিভাজনেরর দেয়াল তৈরি
করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এমন কি মাদরাসার পাঠ্য
বইয়েও কেন সেই ইতিহাস নেই? অথচ ভাষা
আন্দোলনের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রেখে ৫২ ভাষা সংগ্রামে চালকের আসনে যারা
ছিলেন সেই মোল্লা মৌলভীদের সাথে আজ
আমাদের পরিচয় নেই কেন? পরিচয় নেই চেপে
রাখা সেই ইতিহাসের কারো সাথেই। কোন
অপরাধে? কার অবহেলাতে?
গাম্য প্রবাদ আছে, কার পরিচয়ে খাও তুমি ঠাকুর
চিন না।
চলবে...