তখন সন্ধা গড়িয়ে রাত। শীতের রাত বলে রাতের
প্রথম প্রহরেই রাস্তা ঘাট ফাকা হয়ে গেছে।
কদিন ধরেই কুয়াশার তীব্রতা বেশী বলে দিনে
সূর্যের দেখা কমই পাওয়া যাচ্ছিল। এর মধ্য হুহু
বাতাস দেয়াতে শীতের তীব্রতা আরো বেড়ে
গেছে। এখন কার রাত গুলো আগের মত আর মাতাল
নয়। নিরব স্তব্ধ! চায়ের দোকানের আড্ডা,
চটপটির দোকানের ভীড় এখন আর আগের মত দেখা
যায় না। ঝালমুড়ি মামাও এখন সন্ধে হলেই
দোকান গুটিয়ে বাসায় ফিরে।
বাসায় বসে গল্প করছি আমি আর আপা। আপার
কোলে দেড় বছরের ছেলে। পড়াশুনার জন্য আমার
আপার বাসায় থাকা। এই বাসার সদস্য আমি ছাড়া
পাঁচজন। আপা ভাইয়া বাবু আমি ও ভাইয়ার ছোট
ভাই ও তার বউ। ভাইয়া অফিস সেরে বাসায়
ফিরলেন হাতে এক কাদি দেশী সবরি কলা নিয়ে।
কলা গুলো দেখতে নিখুঁত। পাকা মিষ্টি ঘ্রান
বেরুচ্ছে। মধ্যমা আঙুলের মত পুষ্ট কলা গুলো যে
কারও লোভ জাগাবে। নরোম মোলায়েম মাখনের
মত মুখে দিলেই গলে যাবে। রাতে সবাই মিলে
খাওয়া দাওয়া সারলাম তখনো কলা রয়ে গেল
চৌদ্দটি! আপা কলার কাদি ডাইনিংয়ে রেখে
দিলেন।
সকালে আপার ডাকাডাকিতে ঘুম ভাংলো। দৌড়ে
ডাইনিংয়ে গেলাম। টেবিল ঘিরে বাসার সবাই
দাঁড়িয়ে আছে। ডাইনিং টেবিল জোড়ে ছড়ানো
ছিটানো আছে কলার খোসা। কোন কলা নেই।
সবাই অবাক চোখে একে অন্যকে দেখছে। সবার
চোখেই জিজ্ঞাসা কলা গেলো কোথায়? আমি
কাঁচুমাচু গলায় কান্নামাখা সুরে বললাম আমি
খেয়েছি!আমি খেতে চাইনি , আমাকে জোর করে
খাইয়েছে! তাই বলে সব গুলো! কেনো? কে
খাইয়েছে? তখন খুলে বললাম গতরাতে ঘটে
যাওয়া লোমহর্ষক ঘটনাটি।
তখন রাত্রি প্রায় একটা। পড়াশুনা শেষ করে
মাত্র শুয়েছি। আমার রুমের জানালা গলে আলোর
মত একটা কি যেনো প্রবেশ করলো। আলোটা
হঠাৎ করে একটা দৈত্যের রুপ নিল! ইয়া বড় বড়
দাঁত, হাতির মত কান, ডাবের মত বড় চোখ!
আমিতো ভয়ে কাঁচুমাচু। আমার গলায় হাত রেখে
বললো আজ তোর জীবনের শেষ দিন। আমার হাত
থেকে তোর রেহাই নেই! এখন বল তোর শেষ ইচ্ছে
কী? আমি ভয়ে বলে ফেললাম কলা খাবো।
দৈত্যটা আমাকে ডাইনিংয়ে এনে বললো খা কলা
খা! আমি ভয়ে সব গুলি কলা খেয়ে ফেললাম! কলা
খাওয়ার পর দৈত্যটা গুনে দেখা শুরু করলো কয়টা
কলা খেয়েছি। কলা গুনা শেষ হলে হঠাৎ রেগে
উঠে কলার খোসা এলোমেলো ছুড়তে লাগলো।
আমার দিকে রাগি চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে
জানালার দিকে রওনা হলো! আমি অবাক হয়ে বলে
ফেললাম চলে যাচ্ছেন? দৈত্যটা বললো যারা
একবসায় দশটার বেশী কলা খায় তাদের আমরা
মারি না। সাংবিধানিক নিষেধাজ্ঞা আছে। এই
বলে সে চলে গেলো। আর আমি ভয়ে কাপতে
কাপতে ঘুমিয়ে গেলাম!
কানে টান খেয়ে বুঝলাম এটা আপার হাত। আপা
সহ সবাই জোরে হাসতে লাগলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:৩৭