somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুসাইন (রা ়) এর শাহাদাত!

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দ্বিতীয় পর্ব
--
হুসাইন (রা.) কে কুফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে
দেখে, অসংখ্য সাহাবী তাকে নিষেধ করেছেন।
বের হওয়ার উপদেশ দিয়েছেন। কেউবা
জোরাজুরিও করেছেন।
নিষেধকারীদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে
আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, আব্দুল্লাহ ইবনে
যুবাইর, আব্দুল্লাহ বিন আমর এবং তাঁর ভাই
মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফীয়া।
.
ইবনে উমার বলেছিলেন:
-হুসাইন! জিবরীল (আঃ) নবীজিকে দুনিয়া ও
আখিরাত- এ দুটি থেকে যে কোন একটি গ্রহণ করার
স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। তিনি আখিরাতকে বেছে
নিয়েছেন। আর তুমি তাঁর অংশ। আল্লাহর কসম!
তোমাদের কেউ কখনই দুনিয়ার সম্পদ লাভে সক্ষম
হবে না। তোমাদের ভালর জন্যই আল্লাহ
তোমাদেরকে দুনিয়ার ভোগ-বিলাস থেকে ফিরিয়ে
রেখেছেন।
হুসাইন তাঁর প্রস্তাবে সাড়া দিলেন না। ইবনে
উমার অশ্রুসজল চোখে বিদায় জানালেন।
.
ইবনে আব্বাস (রা:) হুসাইনকে বলেছেন:
-মানুষের দোষারোপের ভয় না থাকলে আমি তোমার
মাথা চেপে ধরে বিরত রাখতাম।
.
আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা:) হুসাইনকে বলেছেন:
-হোসাইন! কোথায় যাও? এমন লোকদের কাছে
যাচ্ছো, যারা তোমার পিতাকে হত্যা করেছে এবং
তোমার ভাইকে আঘাত করেছে?
.
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) বলেছেন:
-হুসাইন তাঁর জন্য নির্ধারিত ফয়সালার দিকে দ্রুত
অগ্রসর হচ্ছেন। আল্লাহর শপথ! তাঁর বের হওয়ার
সময় আমি যদি উপস্থিত থাকতাম, তাহলে কখনই
তাকে যেতে দিতাম না। তবে বল প্রয়োগ করে
আমাকে পরাজিত করলে সে কথা ভিন্ন।
.
আবু সায়ীদ খুদরী (রা.) বলেছেন:
-হুসাইন! তুমি যেয়ো না। আমি তোমার বাবাকে
বলতে শুনেছি: আল্লাহর কসম! আমি তাদের প্রতি
বিরক্ত হয়ে পড়েছি। তাদের প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছি।
তারাও আমার প্রতি বিরক্ত ও ক্রুদ্ধ হয়ে পড়েছে।
তাদের মধ্যে কোনও নিয়ত নেই। সংকল্প নেই।
.
বিখ্যাত কবি ফারাযদাক বলেছেন, আমার সাথে
তার দেখা হয়েছিল। তিনি প্রশ্ন করলেন:
-তুমি কোত্থেকে?
-ইরাক থেকে!
-ইরাকবাসীর অবস্থা কী?
-তাদের হৃদয় আপনার সাথে আছে আর তাদের
তরবারি আছে বনু উমাইয়ার সাথে।
.
হুসাইনের কাছে মুসলিম বিন আকীলের সংবাদ
পৌঁছলো। হুসাইন ফিরে যাওয়ার চিন্তা করলেন।
মুসলিমের সন্তানরা বললো:
-আমরা ফিরে যাব না। আমাদের পিতৃহত্যার বদলা
নেব।
অগত্য হুসাইন সিদ্ধান্ত বদল করলেন। চলতে চলতে
কাদেসিয়া পৌঁছলেন।
ইবনে যিয়াদ হুসাইনের আগমনের সংবাদ জানতে
পেরে, হুর বিন ইয়াযিদ তামীমিকে এক হাজার
সেনাসহ পাঠালো। হুর এসে হোসাইনের সাথে কথা
বললো:
-কোথায় যাচ্ছেন?
-ইরাকে!
-আপনি সেখানে যাবেন না। ফিরে যান। না হলে
সিরিয়াতে যান। না হলে আমাকে তিক্ত কিছু করতে
হবে।
.
হুসাইন তার কথা না মেনে চলতে থাকলেন। হুরও
বাধা-নিষেধ করতে থাকলো। নানাভাবে। হুসাইন
কঠিনভাবে হুরকে ধমক দিলেন। হুর বললো:
-অন্য কেউ এমন কথা আমাকে বললে, আমি অবশ্যই
এর প্রতিশোধ নিতাম।
.
হুসাইন কারবালার প্রান্তরে পৌঁছলেন। সেখানে
ইবনে যিয়াদের বাহিনী তার গতিরোধ করলো।
হুসাইন তখন তিনটি প্রস্তাবের যে কোন একটি
মেনে নেওয়ার আহবান জানালেন।
এক: তাকে ইয়াযিদের দরবারে যেতে দেয়া হোক।
তিনি সেখানে গিয়ে ইয়াজিদের হাতে বয়াত গ্রহণ
করবেন।
হুসাইন জানতেন, ইয়াজিদ তাঁকে হত্যা করতে চায়
না।
.
দুই: অথবা তাঁকে মদিনায় ফেরত যেতে দেয়া হোক।
.
তিন: অথবা তাঁকে কোনও এক সীমান্তের দিকে চলে
যেতে দেয়া হোক। সেখানে তিনি মৃত্যু পর্যন্ত
বসবাস করবেন এবং রাজ্যের সীমানা পাহারা
দেয়ার কাজে আত্ম নিয়োগ করব, যিয়াদের সৈন্যরা কোন প্রস্তাবই মানতে
রাজী হল না। তারা বলল:
-উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ যেই ফয়সালা দিবেন
আমরা তা ব্যতীত অন্য কোন প্রস্তাব মানতে রাজী
নই।
হুর বিন ইয়াজিদ এ অবস্থা দেখে, দলত্যাগ করে
হুসাইনের সাথে যোগ দিলেন। পরে তিনি লড়াই
করতে করতে শহীদ হয়েছিলেন।
.
ইবনে যিয়াদবাহিনীর প্ররোচনায় এ অসম যুদ্ধ শুরু
হয়ে গেল। একে একে সবাই শহীদ হয়ে গেলেন।
বাকী রইলেন শুধু হুসাইন রা.। কেউ চাচ্ছিল না,
হুসাইন তার সামনে পড়–ক। দীর্ঘ সময় একটা
অচলাবস্থার সৃষ্টি হলো। তখন সীমার বিন যুল
জাওশান তার দলবল নিয়ে হুসাইন রা.-কে চারদিক
থেকে ঘিরে ফেলল। তারপর বর্শা দিয়ে আঘাত
করে হুসাইনকে ধরাশায়ী করে ফেলল। তারপর,
সম্মিলিত আক্রমণে হুসাইন রা. শাহাদাত বরণ
করেন।
.
সীমার আরও অগ্রসর হয়ে, হুসাইনের মাথা দেহ
থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলল। কারো কারো মতে, এ
জঘন্য কাজটা করেছে ‘সিনান বিন আনাস আন্
নাখঈ’।
.
চলবে ইনশাআল্লাহ
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×