দ্বিতীয় পর্ব
--
হুসাইন (রা.) কে কুফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে
দেখে, অসংখ্য সাহাবী তাকে নিষেধ করেছেন।
বের হওয়ার উপদেশ দিয়েছেন। কেউবা
জোরাজুরিও করেছেন।
নিষেধকারীদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে
আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, আব্দুল্লাহ ইবনে
যুবাইর, আব্দুল্লাহ বিন আমর এবং তাঁর ভাই
মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফীয়া।
.
ইবনে উমার বলেছিলেন:
-হুসাইন! জিবরীল (আঃ) নবীজিকে দুনিয়া ও
আখিরাত- এ দুটি থেকে যে কোন একটি গ্রহণ করার
স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। তিনি আখিরাতকে বেছে
নিয়েছেন। আর তুমি তাঁর অংশ। আল্লাহর কসম!
তোমাদের কেউ কখনই দুনিয়ার সম্পদ লাভে সক্ষম
হবে না। তোমাদের ভালর জন্যই আল্লাহ
তোমাদেরকে দুনিয়ার ভোগ-বিলাস থেকে ফিরিয়ে
রেখেছেন।
হুসাইন তাঁর প্রস্তাবে সাড়া দিলেন না। ইবনে
উমার অশ্রুসজল চোখে বিদায় জানালেন।
.
ইবনে আব্বাস (রা হুসাইনকে বলেছেন:
-মানুষের দোষারোপের ভয় না থাকলে আমি তোমার
মাথা চেপে ধরে বিরত রাখতাম।
.
আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা হুসাইনকে বলেছেন:
-হোসাইন! কোথায় যাও? এমন লোকদের কাছে
যাচ্ছো, যারা তোমার পিতাকে হত্যা করেছে এবং
তোমার ভাইকে আঘাত করেছে?
.
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা বলেছেন:
-হুসাইন তাঁর জন্য নির্ধারিত ফয়সালার দিকে দ্রুত
অগ্রসর হচ্ছেন। আল্লাহর শপথ! তাঁর বের হওয়ার
সময় আমি যদি উপস্থিত থাকতাম, তাহলে কখনই
তাকে যেতে দিতাম না। তবে বল প্রয়োগ করে
আমাকে পরাজিত করলে সে কথা ভিন্ন।
.
আবু সায়ীদ খুদরী (রা.) বলেছেন:
-হুসাইন! তুমি যেয়ো না। আমি তোমার বাবাকে
বলতে শুনেছি: আল্লাহর কসম! আমি তাদের প্রতি
বিরক্ত হয়ে পড়েছি। তাদের প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছি।
তারাও আমার প্রতি বিরক্ত ও ক্রুদ্ধ হয়ে পড়েছে।
তাদের মধ্যে কোনও নিয়ত নেই। সংকল্প নেই।
.
বিখ্যাত কবি ফারাযদাক বলেছেন, আমার সাথে
তার দেখা হয়েছিল। তিনি প্রশ্ন করলেন:
-তুমি কোত্থেকে?
-ইরাক থেকে!
-ইরাকবাসীর অবস্থা কী?
-তাদের হৃদয় আপনার সাথে আছে আর তাদের
তরবারি আছে বনু উমাইয়ার সাথে।
.
হুসাইনের কাছে মুসলিম বিন আকীলের সংবাদ
পৌঁছলো। হুসাইন ফিরে যাওয়ার চিন্তা করলেন।
মুসলিমের সন্তানরা বললো:
-আমরা ফিরে যাব না। আমাদের পিতৃহত্যার বদলা
নেব।
অগত্য হুসাইন সিদ্ধান্ত বদল করলেন। চলতে চলতে
কাদেসিয়া পৌঁছলেন।
ইবনে যিয়াদ হুসাইনের আগমনের সংবাদ জানতে
পেরে, হুর বিন ইয়াযিদ তামীমিকে এক হাজার
সেনাসহ পাঠালো। হুর এসে হোসাইনের সাথে কথা
বললো:
-কোথায় যাচ্ছেন?
-ইরাকে!
-আপনি সেখানে যাবেন না। ফিরে যান। না হলে
সিরিয়াতে যান। না হলে আমাকে তিক্ত কিছু করতে
হবে।
.
হুসাইন তার কথা না মেনে চলতে থাকলেন। হুরও
বাধা-নিষেধ করতে থাকলো। নানাভাবে। হুসাইন
কঠিনভাবে হুরকে ধমক দিলেন। হুর বললো:
-অন্য কেউ এমন কথা আমাকে বললে, আমি অবশ্যই
এর প্রতিশোধ নিতাম।
.
হুসাইন কারবালার প্রান্তরে পৌঁছলেন। সেখানে
ইবনে যিয়াদের বাহিনী তার গতিরোধ করলো।
হুসাইন তখন তিনটি প্রস্তাবের যে কোন একটি
মেনে নেওয়ার আহবান জানালেন।
এক: তাকে ইয়াযিদের দরবারে যেতে দেয়া হোক।
তিনি সেখানে গিয়ে ইয়াজিদের হাতে বয়াত গ্রহণ
করবেন।
হুসাইন জানতেন, ইয়াজিদ তাঁকে হত্যা করতে চায়
না।
.
দুই: অথবা তাঁকে মদিনায় ফেরত যেতে দেয়া হোক।
.
তিন: অথবা তাঁকে কোনও এক সীমান্তের দিকে চলে
যেতে দেয়া হোক। সেখানে তিনি মৃত্যু পর্যন্ত
বসবাস করবেন এবং রাজ্যের সীমানা পাহারা
দেয়ার কাজে আত্ম নিয়োগ করব, যিয়াদের সৈন্যরা কোন প্রস্তাবই মানতে
রাজী হল না। তারা বলল:
-উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ যেই ফয়সালা দিবেন
আমরা তা ব্যতীত অন্য কোন প্রস্তাব মানতে রাজী
নই।
হুর বিন ইয়াজিদ এ অবস্থা দেখে, দলত্যাগ করে
হুসাইনের সাথে যোগ দিলেন। পরে তিনি লড়াই
করতে করতে শহীদ হয়েছিলেন।
.
ইবনে যিয়াদবাহিনীর প্ররোচনায় এ অসম যুদ্ধ শুরু
হয়ে গেল। একে একে সবাই শহীদ হয়ে গেলেন।
বাকী রইলেন শুধু হুসাইন রা.। কেউ চাচ্ছিল না,
হুসাইন তার সামনে পড়–ক। দীর্ঘ সময় একটা
অচলাবস্থার সৃষ্টি হলো। তখন সীমার বিন যুল
জাওশান তার দলবল নিয়ে হুসাইন রা.-কে চারদিক
থেকে ঘিরে ফেলল। তারপর বর্শা দিয়ে আঘাত
করে হুসাইনকে ধরাশায়ী করে ফেলল। তারপর,
সম্মিলিত আক্রমণে হুসাইন রা. শাহাদাত বরণ
করেন।
.
সীমার আরও অগ্রসর হয়ে, হুসাইনের মাথা দেহ
থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলল। কারো কারো মতে, এ
জঘন্য কাজটা করেছে ‘সিনান বিন আনাস আন্
নাখঈ’।
.
চলবে ইনশাআল্লাহ