somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুসাইন (রা.) এর শাহাদাত!

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথম পর্ব
--
ষাট হিজরী। ইয়াযিদ বিন মুয়াবিয়ার জন্যে
বায়আত নেয়া হচ্ছে। তার বয়েস তখন বেয়াল্লিশ।
মদীনার দু’জন মানুষ তখনো বাইআত দেননি। হযরত
হুসাইন ও আবদুল্লাহ বিন যুবায়ের (রা.)।
.
ইয়াযিদের প্রতিনিধি আবদুল্লাহ ইবনে
যুবায়েরের কাছে বাইয়াত চাইল:
-আমি এই রাতটা ভেবে দেখি! পরে জানাবো।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রাতের আঁধারে মদীনা
ছেড়ে মক্কার দিকে পা বাড়ালেন।
.
এবার হুসাইন (রা.)-এর কাছে বাইয়াত চাওয়া
হলো:
-আমি গোপনে বাইয়াত দেব না। দিলে প্রকাশ্যে
দেব।
-ঠিক আছে।
তিনিও রাতের বেলা মক্কার পথ ধরলেন।
.
এ ছিল বাহ্যিক সূচনা। তবে বাইয়াত না পেছনে,
দু’জনের চিন্তার গোড়াটা ছিল আরেকটু আগে।
হযরত হাসান (রা.) সন্ধি করেছিলেন মুযাবিয়া
রা.-এর সাথে। তখন চুক্তিকে ঘিরে তিনটা
চিন্তার উদ্ভব ঘটেছিল:
ক: এ-চুক্তি পুরোপুরি পরিত্যজ্য। কারন হাসান
বৈধ খলীফা। আর মুয়াবিয়া খলীফা নন।
.
খ: এ চুক্তি বৈধ। তবে এর মেয়াদ হাসানের মৃত্যু
পর্যন্ত।
.
গ: এ চুক্তি বৈধ। তবে এর মেয়াদ মুয়াবিয়ার মৃত্যু
পর্যন্ত।
.
হুসাইন ও আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের ছিলেন তৃতীয়
মতের অনুসারী। তাই তারা মনে করতেন, ইয়াযিদ
খিলাফাহর দাবীদার হতে পারে না। তবে হাসান ও
মুয়াবিয়ার চুক্তিতে হুসাইনকে পরবর্তীতে খলীফা
বানানোর কোনও ধারা ছিল বলে নির্ভরযোগ্য
ইতিহাসে কোনও তথ্য নেই।
.
সংবাদটা কূফায় পৌঁছলো। কুফাবাসীরা উৎসাহিত
হয়ে উঠলো। তারা শুরু থেকেই মুয়াবিয়া বিরোধী
ছিল। এখন হলো ইয়াযিদ বিরোধী। চিঠির পর
চিঠি আসতে শুরু করলো। তারা হুসাইন (রা.)কে
নানাভাবে বোঝাতে চাইল, তারা খুবই বিশ্বস্ত।
ইয়াযিদের প্রতি তাদের কোনও শ্রদ্ধা নেই।
বাইয়াতও নেই। প্রায় পাঁচশত চিঠি পাঠাল।
প্রতিটি চিঠিতেই এক কথা:
= আমরা আপনাকে বাইয়াত দিয়েছি। আর কারো
সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ নেই।
.
হুসাইন রা. চাচাত ভাই মুসলিম বিন আকীলকে
পাঠালেন। অবস্থা যাচাই করার জন্যে। মুসলিম
কুফায় এসে হানি বিন উরওয়ার ঘরে আতিথ্য গ্রহণ
করলেন। লোকের দলে দলে এসে বাইয়াত হতে শুরু
করলো।
তখন কূফার আমীর ছিলেন নু‘মান বিন বাশীর।
তিনি এসব দেখেও না দেখার ভান করে রইলেন।
ইয়াযিদের কাছে সংবাদ পৌঁছে গেল। পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণের জন্যে ওবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদকে
কুফার গভর্নর করে পাঠালো। ইবনে যিয়াদ ছিল
মূলত বসরার গভর্নর। এখন কুফার দায়িত্বও তাকে
দেয়া হলো।
.
যিয়াদ রাতের বেলা কুফায় প্রবেশ করলো। মুখোশ
পরাবস্থায়। কুফাবাসী মনে করলো, হুসাইন
এসেছেন। ইবনে যিয়াদ সালাম দিতে দিতে
হাঁটছিল। তারাও সাগ্রহে উত্তর দিতে শুরু করলো:
-ওয়া আলাইকুমুস সালাম হে রাসূলের নাতি!
ইবনে যিয়াদ বুঝতে পারলো, অবস্থা গুরুতর।
শান্তচিত্তে গভর্নর প্রাসাদে চলে গেল। সাথে
সাথেই তার আযাদকৃত দাস ‘মা‘কিল’কে পাঠাল।
শহরের খবরখবর জানার জন্যে। সে খোঁজ করতে
করতে হানি-এর ঘরে উপস্থিত হয়ে বাইয়াত গ্রহন
করলো। সে নিজের পরিচয় দিল:
-আমি হিমস থেকে এসেছি। এই নিন হাদিয়াস্বরূপ
তিন হাজার দীনার!
মা‘কিল এরপর আরও কয়েকদিন মুসলিমের কাছে
থেকে গেল। সব খবর বিস্তারিত জানার পর
একদিন সুযোগ বুঝে পলায়ন করে ইবনে যিয়াদের
কাছে চলে এল।
.
.
অসংখ্য মানুষ বাইয়াত গ্রহণ করেছে। মুসলিম বিন
আকীল এবার মক্কার খবর পাঠালেন। হুসাইন রা.
ইয়াওমুত তারবিয়া (জিলহজ্বের আট তারিখে)
মক্কা থেকে রওয়ানা দিলেন।
.
ইবনে যিয়াদ তৎপর হয়ে উঠলো। হানি বিন
উরওয়ার ঘরে এসে প্রশ্ন করলো:
-মুসলিম কোথায়?
-আমি জানি না।
ইবনে যিয়াদ এবার মা‘কিলকে ডেকে পাঠালো।
তাকে দেখিয়ে হানিকে জিজ্ঞেস করলো:
-দেখো তো একে চিনতে পারো কি না?
হানি বুঝতে পারলো, মাকিল আগের বার তাদেরকে
ধোঁকা দিয়েছিল। সে ইবনে যিয়াদের লোক হয়েই
এখানে এসেছিল। এখন আর কিছু করার নেই। ভুল
যা হওয়ার আগেই হয়ে গেছে।
তাকে আবার প্রশ্ন করা হলো:
-মুসলিম কোথায়?
-আল্লাহর কসম! তিনি যদি আমার পায়ের নিচেও
থাকতেন, তবুও আমি পা ওঠাতাম না।
ইবনে যিয়াদ হানিকে আঘাত করলো। বন্দী করার
আদেশ দিয়ে মুসলিমের সন্ধানে বেরিয়ে পড়লো।
.
আবু মুসলিমের কাছে সংবাদ পৌঁছে গেল। তিনি
চার হাজার লোক নিয়ে ইবনে যিয়াদের প্রাসাদ
ঘেরাও করলেন। কুফাবাসীরাও তার সাথে যোগ
দিল।
ইবনে যিয়াদের কাছে তখন কুফার অনেক
গন্যমান্য ব্যক্তি ছিল। তাদেরকে ইবনে যিয়াদ
বললো:
-তোমরা তোমাদের লোকদেরকে মুসলিম থেকে
আলাদা করো। না হলে ইয়াযিদের বাহিনী এসে
তোমাদেরকে ছিঁড়ে খুঁড়ে খাবে।
.
ইবনে যিয়াদ আরও নানাভাবে ভয় দেখালো।
নেতাদেরকে প্রভূত উপহার-উপাচার দিয়ে হাত
করে ফেললো। নেতারা বের হয়ে নিজের
অনুসারীদেরকে নিয়ে যেতে শুরু করলো। শেষ
পর্যন্ত মুসলিম বিন আকীলের সাথে মাত্র ত্রিশ
জন বাকী থাকলো। বিকেল হতে হতে তারাও সরে
পড়লো।
.
মুসলিম সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়লেন। পুরো কুফা
সুনসান। তিনি একা একা রাস্তায় রাস্তায়
হাঁটছেন। কেউ আশ্রয় দিতে রাজী নয়। ভেবে
পাচ্ছিলেন না কোন দিকে যাবেন। একটা দরজায়
গিয়ে টোকা দিলেন। দরজা খুলল কিনদা গোত্রের
এক মাহিলা।
-কী চাই?
-আমি মুসলিম বিন আকীল। একটু খাবার পানি
হবে?
পানি দেয়া হলো। এদিকে মহিলার ছেলে গিয়ে
ইবনে যিয়াদের লোকদেরকে খবর দিল। তারা এসে
মুসলিমকে বন্দী করে নিয়ে গেল।
.
সত্তরজন লোক এসে বাড়িটা ঘিরে ফেললো।
মুসলিম বের হয়ে বীরের মতো তাদের সাথে
লড়লেন। কিন্তু অবশেষে বাধ্য হয়ে আত্মসমর্পন
করলেন। ইবনে যিয়াদের সামনে উপস্থিত করা
হলো।
-তুমি কেন কুফায় এসেছ?
-হুসাইনের পক্ষে বাইয়াত নেয়ার জন্যে।
-তোমার ওপর কি ইয়াযিদের বাইয়াত ছিল না?
আমি এখন তোমাকে হত্যা করবো!
-আমাকে একটুখানি সময় দাও। আমি একটু ওসিয়ত
করতে চাই!
-ঠিক আছে!
.
মুসলিম বিন আকীল দরবারে উপস্থিত সবার দিকে
তাকালেন। চোখ পড়লো উমার বিন সাদ বিন আবী
ওয়াক্কাসের ওপর:
-আপনিই এখানে আমার নিকটাত্মীয়। আপনাকে
শেষ ওসীয়ত করে যাই!
মুসলিম তাকে নিয়ে ঘরের এক কোনে চলে গেলেন:
-আপনাকে আমার একটাই ওসীয়ত! আপনি যে
কোনও মূল্যে হুসাইনের কুফায় আগমন ঠেকান।
মুসলিম তাকে একটা ছোট্ট চিরকুটও দিলেন।
তাকে লিখলেন:
-আপনি পরিবার-পরিজন নিয়ে ফিরে যান।
কুফাবাসী আপনার সাথে মিথ্যা বলেছে। আমার
সাথে মিথ্যা বলেছে। আর মিথ্যাবাদীর মতামতের
কোনও মূল্য নেই।
.
মুসলিম বিন আকীলকে শহীদ করে দেয়া হলো।
সেদিন ছিল আরাফার দিন। জিলহজ্জের নয়
তারিখ। হুসাইন (রা.) এর আগেই মক্কা ছেড়ে
বেরিয়ে পড়েছিলেন।
.
চলবে ইনশাআল্লাহ
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৫০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×