আমি মুখচোরা প্রকৃতির মানুষ। হৈ-হুল্লর কিংবা যেখানে মানুষ সমাগম বেশি সে্খানে পারত পক্ষে যাইনা। সারাদিন অফিসেই কে্টে যায়। সন্ধ্যা্র পর হয়তো কোন বইয়ের পাতা উল্টোই কিংবা ঘুমোই। গত বই মে্লায় একজন নতুন লেখকে্র সাথে পরিচয় ঘটে। মানে নাম জানতাম না এমন একজনের বই কিনি। বইটির নাম ছিলো ''পরার্থ ভাবনা।'' একটা প্রবন্ধে্র বই। প্রবন্ধের বই সাধারণত খটমটে হয় তাই প্রবন্ধের বই কিনি না। তেমন পড়িও না। কিন্তু কী কারণে যেন ওটা কিনে ফে্লি।
বইটির বিষয়বস্তু ছিলো আমাদের বর্তমান সময়ে মানব সৃষ্ট নানান দূর্যোগ যা আমাদেরকে আমাদের অনস্তিত্বেের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এবং এই সমস্যা থেকে উৎরানোরও একটা পথ দেখিয়েছন। বইটা পড়ার পর ইচ্ছে হলো এই লেখকে্র অন্য বইগুলোও সংগ্রহ করি।
অন্যান্য বইয়ে্র খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পারি তিনি আসলে কবি। বাজার ঘুরে ওনার কবিতার বইয়র নাম জানা গে্লেও ওনার কোন কবিতার বই বাজারে পায়নি। মনটাই কে্মন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। এবছর মে্লায় যাইনি বলা চলে। গতকাল বিকেলে গিয়েছিলাম এলিফ্যান্ট রোডে একটা শার্ট বানানোর জন্য। ভাবলাম মেলা থেকে একটু ঘুরে আসি। যেই ভাবনা সেই কাজ। যেহেতু সাথে কেউ ছিলো না তাই ঘুরে সব স্টলেই বই দেখছিলাম। কাশবন প্রকাশনে্র স্টলে এসে সেই লেখক মীর ইউসুফ আলীর কবিতার বই -- দারুচিনি দ্বীপে একদিন কাব্যগ্রন্থটি পেয়ে যাই। সাথে সাথেই কিনে ফে্লি। তারপর আরোকিছুক্ষণ মে্লায় ঘুরে বাসায় চলে আসি।
বইটার পাতা উল্টোতেই প্রথম কবিতাটার শিরোণাম হলো মুখবন্ধ। পড়ে ফে্লি। পড়ার পর মনে হলো যিনি পরার্থ ভাবনা লিখতে পারেন তার দ্বারাই এমন প্রার্থনা সম্ভব!
''সকালের প্রথম সোনালি আলো পৌঁছে যাক বিপন্নের অন্তরে
তার চোখে মুখে ভেসে উঠুক আনন্দের ছটা
অন্ততঃ এতটুকুও যেন তার প্রাপ্য হয়
হে স্রষ্টা হে অন্তর্যামী।''
--- মুখবন্ধ
কবিদের কিছু সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকে। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই হয়তো উঠে এসেছে এই পঙক্তিমালা---
বদরের মৃত্যু ভাষাহীন করেছে আমায়
মনে হয় দেশ ছেড়ে পালাই
পালিয়ে যাবো কোথায়
না আছে সুস্থ দেশ
না পরদেশ।
সর্বত্র মর্যাদাহীন হয়ে বেঁচে আছি
নষ্ট রাজনীতির বেড়াজালে।
বদর নিরীহ বাসচা্লক,
পরবর্তী গন্তব্যের জন্য
বাস থামিয়ে সিটের ওপর
গভীর ঘুমে চিন্তার অতলে বিশ্রামে ছিল।
ধর্মঘটিরা পে্ট্রোল ঢেলে বাসে আগুন দিল
বদর তাতে অঙ্গার হলো, ভস্মীভূত হলো।
একটি অধিকার রক্ষায় আরেকটি অধিকারের মৃত্যু হলো।
বদরেরমৃত্যুর জন্য হরতাল হবে না।
ছালামত আলী নিখোঁজ,
তার উদ্ধারের জন্য হরতাল চলতে থাকবে।
একদিন নয়, দুদিন নয়, লাগাতারও হতে পারে।
কে এই আলী, জন্ম, ইতিহাস, বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন,
রাজনৈতিক কর্মকান্ড?
আলো দেয় না।
এখন তিনিই আমাদের নেতা, মুক্তির পথ দেখান
কি বিচিত্র সে্লুকাস, এই দেশ।
পরিমাপ--- মীর ইউসুফ আলী
যে আঘাত করে
তার উপহার নিতে নেই
যে অসম্মান করে
তার দেয়া ফুল নিতে নেই
যে সমর্থন করে না
তার করুণার চোখে তাকাতে নেই।
যে বিশ্বাস করে না
সে্খানে কিছুইতো থাকেনা অবশেষ
অথচ অনুরাগে্র দোহাই দিয়ে
আপেল বাগানে্র বসন্তে্র কথা বলা হয়।
কিছু না পাওয়াও কিছু পাওয়া
এসবই পাওয়া হয়েছে জীবনের প্রবাহে
উজ্জ্বল বৃষ্টির জলে স্নাত হয়ে
ঝরে পড়া পাপড়ির সুগন্ধে।
জীবন প্রবাহে্র উপর দিয়ে যা ঝরে পড়েছে
প্রসারিত হয়েছে
যা নবায়িত হয়েছে বসন্তে
অন্ধকারের ঢাকনা সরিয়ে
জীবনকে মাপার মাপকাঠি এগুলো নয়
গজ ফিতে কিলোমিটার দিয়ে জীবনকে মাপা যায় না
না যায় তা দিনক্ষণ মাস ওজন দিয়ে
না তা পথের দূরত্ব অতিক্রম দ্বারা
একটি সতেজ জীবন্ত ফুল হতে পারে জীবনে্র মাপকাঠি।
বৈভবের রঙ, গন্ধ ছড়িয়ে
ঝরে গিয়ে সমৃদ্ধির মহত্ব রাখে ফুল
তুমি বোধ হয় বহুদূর থেকে আমায় শুনতে পাও
নৈঃশব্দে্র কথা বলে জানিয়ে রাখলাম কথা।
এভাবে চলে আসে মৃত্যুরচিহ্ন আরোও অনেক কবিতা যা মনও মনের দেয়ালে প্রতিনিয়ত আঘাত করে যায়। বিবেককে দংশন করে একটা মানুষে রূপান্তরিত হতে পাঠককে তাড়িত করে।
কেউ বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে চলে যেতে পারেন কাশবন প্রকাশনে্র স্টলে। স্টল নাম্বার ১৪১।