দর্পণ
দর্পণে আমাদের বিপরীত রূপ দেখায়। তবুও কি অদ্ভুত! হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে থাকি মিথ্যে আমাদের দিকে। কতোটা মোহ মিথ্যায়, কতোটা পলিশ করি মিথ্যের অবয়বে!
১.
যায় আবার আস
কী চমৎকার!
আহা কিভাবে কী ভেবে
দিন কেটে যায়!
স্মৃতি
আমি ক্রমশ ক্ষয়ে যাচ্ছি
ক্ষয়ে যাচ্ছে আমার সকালের রোদ্দুর
বেড়ে যাচ্ছে দুপুরের আয়ু
শেষ হয়ে যাচ্ছে কিংশুক রাত
আর উর্বর শরীরের মাস্তুল
ভেঙে পরছে বারবার!
নিকোটিন ভোর হতেই
তোমার কনীনিকায় কেমন শীতল ছায়া
সময়ের সাথে সাথে স্মৃতির অবয়বে
ক্যামন ভুল সময়!
তৃপ্তির ঢেকুর তোলে কিছু সময়
তবুও কেমন প্রাণবন্ত
আজ ইথার থেমে যাওয়া সময়ে!
স্মৃতি; তবুও তার পথ ধরে রয়।
২.
আমাকে ভিজিয়ে দিলে তুমি
ভিজিয়ে দিলে চিকুরের প্রান্তদেশ।
আমি গোলাপী তরলে মিশে যাই
তোমার ছোঁয়ায়! তোমার
ছোঁয়াচে অসুখে আমি হই বিবাগি।
হে অচ্ছ্যুত সকাল তুমি অন্ধকার
ঝেরে ফেল; আমি তোমার
গতরে কামিনী ঘ্রাণ মাখিয়ে
একলব্যের তুমুল নিশানায়
ছুটে আসবো তোমার ঠিকানায়!
আমাকে ভিজাও, তোমার
সাথে মিশিয়ে দাও চরম অবহেলায়!
তোমার অভিমানে নতমুখী হই,
নিজেকে বিলাই তোমাতে!
৩.
তুমি থাকো তোমাকে নিয়ে, তোমার সঙ্গীদের নিয়ে
আমি একা আছি, খুব আছি!
বিষাদ পাখির পালকে গাছ আঁকি, হয় সে স্থিরতার আধার!
আমাকে আশ্রয় দেয়, দেয় আসমুদ্রহিমাচলের হাওয়া, কোমাল ছায়ায়
ঘুমিয়ে পড়ি; তবুও তোমার স্বপ্নের রেলগাড়ি
কু ঝিকঝিক আওয়াজ তুলে চড়ে বেড়ায় স্বপ্নঘোরে!
৪.
একসময় বৃষ্টি প্রীতি খুব ছিল। দেখা যেত কয়েকদিন বৃষ্টি না হলেই আমার হাসফাঁস শুরু হয়ে যেত। সেই দিনগুলোতে হঠাৎ এক সময় আবিষ্কার করলাম আমার একটা টি-শার্ট ছিলো যার সাথে বৃষ্টির গোপন সম্পর্ক রয়েছে! হয়তো প্রকৃতি ঋতুবতী হলে আমার সে টি-শার্ট বুঝতে পারত আর আমাকেও ভিজিয়ে নিত, বৃষ্টির কোমললোবানে! সেই জলজঘ্রাণে এভাবে কতোদিন ঘুমিয়ে পড়েছি আর হলুদ নীল বিষাদ পাখিতে ডুবে গেছি!
কিভাবে কখন এক আটপৌর জীবনের সাথে সখ্যতা হয়ে যায় বৃষ্টির, যা কেবল অসংলগ্ন কোরাসে মেতে উঠে, আর সেই থেকে টি-শার্ট এর সাথে ছাড়াছাড়ি!
৫.
হে সকাল- তুমি অভ্যস্থ চায়ের কাপে
প্রতিদিন এক এক সিঁড়ি ভেঙে চলো
অচেনা পথে অচেনা কোন মুখের সন্ধানে!
ধোঁয়া উঠা কাপে সকাল তুমি হয়ে যাও অপরের বধূ!
তুমি বুঝি প্রতিনিয়ত বোল পাল্টাও?
হয়ে যাও বুঝি আর সবের? আমার থেকে
কতোক্রোশ দূরে যাবে? আর কতদিন তুমি
আলকাতরা রাতের মুখপাঠ লিখবে?
আমাকে শিখাও তোমার পাঠ নিয়ম!
আমিও রাতপাখি হয়ে খেঁজুরের মরা ডালের
মতো চাঁদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলব!
সকাল তোমার বইতেও আসুক আমার রোজনামচা,
অন্ধকারের পান্ডুলিপি যেমন সূর্যগন্ধা আলোতে হয়!
বসন্ত
বসন্ত আসছে?-- গাছের পাতারা তাই
আনন্দের পসরা সাজিয়ে শীতের কাঁপুনিতে
হেলে যাচ্ছে দুলে যাচ্ছে। এক এক করে
হলুদের নির্জাস বুকে নিয়ে ঝরে যাচ্ছে সকাল বিকেল।
রাতের দীর্ঘশ্বাস ক্রমশ বাড়ছে, অথচ
দিন আসে না, শৈত্য প্রবাহ বাড়ে
এলোমেলো হাওয়া বয়, তবু কী অসম্ভব একাগ্রতায়
বসে থাকে, শীত যাবে বসন্ত আসবে...
ধানপাতা সবুজে চারপাশ হবে ধানগন্ধ্যা
আর মৌমাছির পাখা ছড়াবে ফুলের পরাগ
হবে এক ইউটোপিয়ান খামার; সুখ সমগ্র।
অথচ ফাগুন আসে না চারপাশে আগুন ধরে না...
গেলো বসন্ত চেখে দেখে নাই
মধুফুল একে একে চলে গেলো; নির্জাস ছড়ানো
ফুল ও পাখি হারিয়ে গেলো বেসামালে...
পার্ফেকশনিস্ট বসন্তের প্রতীক্ষায় হারিয়ে
গেলো সুখের সব সমীরণ; যা এসেছিলো খুব করে
আগত বসন্তে সব পাবে ভেবে সব খুইয়ে দিলো
এসে গেলো গোরখাদকের বাহুমূলে!
৬.
আমি জানি আমার আচরণে তুমি মর্মাহত
অথবা কিছুই না, কেবল আমার মানস পটে
আমারি কথাগুলো হয়তো তোমাকে ভেবে
বের হয়ে আসে ছন্নছাড়া জীবনের গোধূলি আলোয়।
তোমাকে ভেবে সারাদিনমান বসে থাকি
চুপ করে থাকি, তোমাকে দেখি অথবা না দেখি
তোমার আলোতে আলোরিত হই কিন্তু প্রকাশ করি না!
এই ক্লিশে রাত্রির প্রান্তভাগে এসে বলি--
কেবল তোমাকে শুধু তোমাকে ভেবেই মরি
তুমি জানো বা না জানো, তোমাতে আমি
খুন হয়েছি; প্রভাত দেখার আগে তোমাকেই বলি স্বপ্ন!
সমাপ্তি
শুরু করেছিলাম
তোমাকে ছুঁয়ে, তীব্রতম উচ্ছ্বাস নিয়ে
তোমার গোলাপ নির্যাসে
ডুবে গিয়েছিলাম। তারপর থেকে
ডুবছি তো ডুবছি...!
৭.
বিশ্বাস ও স্বপ্নভঙ্গের দংশনে
আমাদের দেখা হয়ে যায়
বিশেষত দাবা বোর্ডে...!
৮.
দিন শুরু হয়েছিলো তোমাকে ভেবে
তোমাকে নিয়ে, তোমার সাথে কথোপকথনে
সারাদিনের রিমঝিম বৃষ্টির ছন্দপতনে
মন্থর বাতাসে তুমি ভেসে গেলে
মেঘের আড়ালে, আর আমি ঘাসজীবি
মনুষ্য জীবন নিয়ে ঘুর্ণিবাতাসের মতো
ঘুরে বেড়ালাম জীবনের পরতে পরতে
তবুও জীবনপৃষ্ঠায় অন্ধকার, রাত এসে যায়
ভোর হয় না; দীর্ঘশ্বাসের পাতা উল্টোয় না!
৯.
পুলসেরাত বিষয়ক ভাবনা আসে,
ভাবনায় আসে দঙ্গলে ভরা হাঁটা পথ।
প্রাচীন পৃথিবীতে মিহির তবু বিলায়
আলোর উৎসব; তবুও আসে বেনামী গল্প
বেনামের ইত্যকার ইতিবৃত্ত!
১০.
অনায়েসে তোমাকে বলে ফেলতে পারি মনের কথা
বলে ফেলতে পারি তোমাকে নিয়ে যতো কবিতা
অথচ দ্যাখো কেমন চুপচাপ একাকী বসে আছি,
নিথর হয়ে ভাবছি এলোমেলো শব্দ, কবিতার পংক্তি।
১১.
শব্দজট চারদিকে
তবুও শব্দের খোঁজে
তোমারি অবয়বের চারপাশে
আমার ঘোরাঘুরি!
১২.
পুনশ্চঃ অনেক কিছু বলার থাকে
তবুও বলে ফেলতে হয় বিদায়ের কথা
হয়তো হবে না আর কোন কথা
হয়তো এভাবেই শেষ হয়ে যায়
হয়তো এভাবেই ফেলে যেতে হয়
পড়ন্ত আলোর সব সুখভোগ
অদেখার হাতছানি তবুও টেনে
নিয়ে যায়; পুনশ্চঃ সব পরে থাকে।
১৩.
তোমার অমাবশ্যায় আমি চন্দ্রাহত!
১৪.
তোমার নামে আদ্যক্ষর মিলে গেলে কোথাও
স্থির তাকিয়ে রই, তুমি হয়তো স্পর্শাতিত
নিজের মধ্যেই থাকো, তোমার নেশাতুর চোখে
চোখ পড়ে গ্যালে হয়ে যাই নির্বাক শ্রোতাহীন!
১৫.
কথা কী হলো কিছু চুপচাপ, না সব এলোমেলো
কথা কী তবে নৈঃশব্দবতীর আরাধণা
শিল্পের অনুক্ত প্রাচীন মানবের গুহাচিত্র!
আমি আঁকি ফুলের সমাবেশ গুহার দেয়ালে দেয়ালে
তুমি এসে দেখে যাও নৈঃশব্দবতী, আমার
ইবাদতে কতোটা আছো তুমি, তুমি কতোটা কী।
১৬.
ভুলের বৃত্তায়ন চক্রাকারে চলতে থাকে একই ভুল একই লেনদেন!
১৭.
মোহভংগের পাখিরা গান গায়
বিষণ্ণ মনে শুনি তাদের আলাপচারিতা!
১৮.
শিরোনামহীন কবিতা তুমি, আশ্রিত শব্দের পদ বিন্যাস!
১৯.
তুমি বেলকনিতে একা; হাত বাড়িয়ে দিয়েছ মেঘের আঁচলে
টুপটাপ বৃষ্টির মন্থন তোমার হাতে।
ফুল খেলছে, হাওয়া উড়ছে, বুনো উচ্ছ্বাসে কস্তুরী ঘ্রাণ তোমার বুকে!
রাত তার গ্রীবা ছুঁয়ে, চাঁদের মন্থর গতিতে
চলে যায় কাকডাকা ভোরে ...
এখানে চৈত্রের দুপুর; তোমার আঁচল ঢেকে রেখেছে তোমার পদ্মমুখ!
ইথারে রাতজাগা ক্লান্তি তাই চুপচাপ একাকী বসে রয়, বিষণ্ণ বদন!
আমি রাস্তা পেরেনোর অঙ্ক কষি,
তুমি রেড সিগন্যাল রেড সিগন্যাল বলে তেড়ে ওঠো!
সরল গানিতিক হিসেবে চলে আসে দ্বি-ঘাত, ত্রি-ঘাত সমীকরণ!
২০.
ঘুমেশ্বর, ঘুমদেবী বেছে নিয়েছেন মরণের পথ!
২১.
শব্দদের একাকীত্ব পেয়ে বসে আমাকে
যেন সহস্রাব্দ জুড়ে শব হয়ে আছে
নির্ঘুম রাতের তারারা!
২২.
পথ ক্রমশ দীর্ঘ হয় পথিকের পায়ে
সকালে আধুলি ভাঙ্গিয়েছে কিছু
ঋণ বাড়ে ধীরে; ক্ষান্ত বিকেল আসে বিবেকের কাছে
ক্যাকটাস কাঁটায় জলাধারের গল্প!
২৩.
গোপন আছ, গোপনে থাকবে
গোপনে চলে যাবে
এই শীত বসন্ত কেউ কিছু টের পাবে না
অবাধ্য বন্যা কেবল জানে তোমার কথা
বাঁধ দেয়া হয়ে গেছে
সামনের বর্ষায় তোমার এলোপাথারি ঢেউয়ে
বাঁধ ছোঁবে, তবুও পাবে না দেখা মনুষ্যবসতির
গোপন আছ, গোপনে চলে যাও।
২৪.
বিরতির দীর্ঘশ্বাস ক্রমশ বাড়ছে
এইসব দুইশত চল্লিশ মিনিট হয়তো কিছুইনা
অংকের হিসাবে কয়েক মুহূর্তমাত্র
ব্রীড়াবতীর ঘোমটা ক্রমশ বাড়ছে
নেকাবের আড়ালে চলে যাচ্ছে সব
মৌন মুখর সন্ধ্যা অথবা ক্যান্ডেললাইট ডিনার!
২৫.
সময় ফুরিয়ে গেছে হয়তো
হয়তো চলে যাওয়াটা স্বাভাবিক
তবুও কি সময় হয়েছে চলে যাওয়ার?
তবুও কেন চলে যায় নিয়তির হাত ধরে...
২৬.
না না আর তাকাবো না তোমার দিকে
দিব্যি করে বলছি আর তাকাবো না
একবার তাকিয়ে সহস্রাধিক বছরের চাওয়া পূরণ হয়েছে
ভাবছ, মিথ্যে বলছি, তবে তুলে নাও
তোমাড় আঁচলের শেফটিপিন।
কোন দ্বিধা করো না, প্লিজ প্লিজ তুমি উপড়ে নাও দুচোখ আমার
চোখের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়েছে---
তোমাকে দেখেছি প্রশস্থ নয়েনে
একবার দেখেই এ দুচোখ আর কিছু দেখেনি।
বিশ্বাস না হয় তো এ চোখ দুটি নিয়ে যেতে পারো
দেখবে, ঠিকঠাক তোমার অবয়ব এঁকে ফেলবো
একটানে ক্যানভাসের স্বপ্নে!
২৭.
আমি ক্রমশঃ তলিয়ে যাই তলিয়ে যাই কেবল তলিয়ে যাই
নিশিথীনির জড়ায়ুতে জড়িয়ে যাই তলিয়ে যাই
অন্ধকার আলোর জন্মদাত্রী--
আমি তাই কেবল তলিয়ে যাই
অন্ধকারের ঘর্মে হারিয়ে যাই
একবুক শ্বাস নেই, তারপর পুনরায়
তলিয়ে তলিয়ে যাই, অন্ধকারে তলিয়ে যাই
অন্ধকার আলোর জন্মদাত্রী--
আমি তাই ডুবে যাওয়া অসুখের অতলে
অন্ধকারের নিজস্ব স্বত্বায় তলিয়ে যাই
জন্মদাত্রীর কোলে শুয়ে পরি, গড়াগড়ি করি
মিশে যাই, এক মূর্চ্ছনায় তলিয়ে যাই
আলোর পিতা হতে, কেবল মন্থন করে যাই সময়!