৯.
অন্তর্গত অসুখ বিলাসি স্বপ্নবোনে
নিভুচাঁদ আর মন্থর বায়ুর গ্রীবায়
ঘুমঘোর চোখে জলজ প্রতিমা
স্বপ্নালু অবয়ব মুছে যায় সত্যসভায়!
৮.
ছেঁড়া পাতায় কেবলই সন্ধ্যা, কেবলই টুপটাপ বৃষ্টি
মনের গহীনে কেবলই একটি মাত্র নাম
সূর্যগন্ধা বালুকাবেলায় কথোপকথনে বলেছিলে --
ফের কথা হবে, অলস বিকেলের বঙ্কিম আলোর সমীরণে!
৭.
তুমি ও ছদ্মবেশী
তুমি ও তোমার ছদ্মবেশী পাশাপাশি
একে অপরের দিকে তাকিয়ে
নতমুখী তোমরা দুজন, মিল রেখেছ খোঁপায়
চোখের দ্রাঘিমা ছুঁয়েছে
ধূলোর আস্তরণ, কথা কি বলছ সন্তর্পণে
কি বল নিজ মনে, আপন মনে
তোমাকে ভাঙ্গার কৌশল শিখিয়ে দাও
সন্তর্পণীকা, বিহানের মোরগ জেগে
উঠবার আগে। বলে দাও মধুরতম কথা।
তুমি ও তোমার ছদ্মবেশী পাশাপাশি
একজনের মুখে হাসির রেখা, অন্যজন
কেঁদে সামলে নিচ্ছে নিজেকে।
আমি তোমার হাসির রেখায় উদ্ভ্রান্ত
চোখসমূদ্রজলে ডুবে যাই, হারিয়ে
ফেলি আমার দিশা, কোথায় আমার ঘর
কোন ঠিকানা হতে এসেছি,
কোন অভিমানের খেয়ায় ভাসছে
তোমার চোখসমূদ্র, বলে দাও বাঁধের উপায়।
এই দেখ আমার কাঠের পা, তোমাকে ছেড়ে
যেতে চাইলে কতদূর বা যেতে পারবো।
তুমিও তোমার ছদ্মবেশী পাশাপশি
তোমরা দুজন এক হও। গোধূলি শেষে
আঁধারের কোলে যেমন চাঁদ সূর্য মিলে যায়
একই রেখায়, একই আলোর সমীকরণে।
৬.
শাদাপাতায় একএক করে দাগ কেটে যাই,
কবিতার পংক্তি আসে কিন্তু তুমি আসোনা।
তুমি কোথায় থাকো কোন গহিন বনে,
নিজস্ব ভুবনে? একবার একটি পংক্তি ভাবো,
আমার কবিতাকে ঘিরে!
৫.
ঠোঁটের উপরে তিল। ঠিক যেন তিল নয়, একটা মাছি। খাচ্ছে ঠোঁটের মধু নাক ডুবিয়ে। আমি চুম্বন বিষয়ক বই পড়ছি, চুম্বকের আবেশ খুলে অভিকর্ষজনিত বল কোথায় বেশি, সমূদ্রপৃষ্ঠ থেকে কতদূর কোন মরুরবুকে, পাখি উড়ে গ্যালে পাখনার ঝাপ্টায় ঘরকুনো মনে লাগে যদি হাওয়া বুকের পৃষ্ঠা খুলে যাবে এক এক বোতামফুল।
৪.
নিঃস্বমুখ আমাকে টানে না আর। নিঃসঙ্গতার নদীতে সাঁতার কেটে যাপিত জীবনে পরবাস্তব অস্থিরতায় পায়চারী করে করে, একবিকেলের গল্প এগোয়। তারপর পুণঃরায় মৃদু তিরষ্কারে এগোতে থাকে সূর্যের কালোর নির্মাণ। শব্দসমাজ শব্দঘোর জোছনা বুঝলেও রাত পেরুলেই দিনের দৈন্যতার কাছে বারবার হেরে যায়। নৈঃশব্দ্য আঁকিবুকি করে কর্পোরেট হাউজে।
৩.
অসুস্থ অভিজ্ঞানের প্রত্নতাত্ত্বিক চরিত্র আমি। মেলা শেষের গল্প সাজাই আরোপিত পটভূমিকায়। অবহেলিত সময় দর্পণে আমার অসাধারণ মুকাভিনয়। জলজ আয়নায় নিজের প্রতিকৃতি দেখে ঠা ঠা করে করে হাসি। হ্যাঁ, নিজের অন্তর্গত সুখবিলাস ছড়িয়ে দেই অসংখ্য দেহক্যানভাসে। বিশ্বলোকে প্রাদুর্ভাব ছড়াই প্রেমহীনতার। আমাকে বলা হয় কীট। আমি মেনে নেই। জটায়ু বটের জট বেয়ে ওঠে যাই চরকা কাটা চাঁদের বুড়ির কাছে। ছিনিয়ে নিয়ে আসি জোছনা সেমিজ। পড়িয়ে দেই রাত যখন নেমে আসে এই ধূলোমাখা বাংলার একেবেকে নদীর বুকে। সেই দুধশাদা জোছনায় তুমি যখন নাইতে নামো নাচের মূদ্রায়, আমি তখন গাইতে থাকি হেঁড়ে গলায়।
দৃশ্যত, আমার আচরণ বেমানান। কীট ও গায়ক! দুটো ভিন্ন সত্তার মহীরুহ আমার খুলির প্রকোষ্ঠে বিরাজমান আমার স্বাভাবিক আচরণেও কেউ কেউ আমাকে পাগল ঠাওর করেন। আবার আমার অস্বাভাবিক আচরণ তাঁদের কাছে কাছে স্বাভাবিকতা! না অবাক হই না মোটেও। দৃশ্যখাদকের ভূমিকায় আমার অভিনয় প্রাচীন পেশার একটি। কেবল নীল জোছনায় আমি আমার হই, কেউ কিছু বললে আমার শোনবার সময় নেই। আমি স্নান পুজা আরাধনা বলী উৎসব কোন কিছুর হেরফের হয় না এ সময়।
২.
তটসংলগ্ন যে গোধূলি, সে তুমি কবেই পাড়ি দিয়েছ। আমি অমিতব্যয়ি তাই পড়ে থাকি, জড়সড় ভাবে। কিছু অংকের হিসাব। কিছুই মিলে না। তবু বারবার করি। স্মৃতি আকড়ে থাকি। তুমি আকাশের নীলে সাঁতার কাটা রঙ্গিন মাছ। তোমার পাখনা কেটে চলে অবাক মেঘ। সারি সারি তারা, চাঁদনী অপরূপ কারুকাজে তুমি করো স্মৃতির গরাদ, আমি প্রাচীন জটাধারী। তাই তোমার স্মৃতির পাহারাদার!
১.
চুপচাপ সয়ে যাই, হৃদয়ের পোড়া দাগ পড়ে রয়, একা একা ঘুরি। এখানে সেখানে যাই। মাঝরাতে দহনের ইতিহাসে সাথী হয় নিকোটিন ছাইপাস! ভুলতে চাই, তবু মাঝরাতের সিগারেটের মত জ্বলে ওঠো তুমি; বনিকের বউ। আমার সংগোপনে লুকিয়ে রাখা উপমা!
তোমাকে ঘিরে কবিতার সকল পঙক্তি।-- হ্যাঁ তোমাকে ঘিরেই সকল পঙক্তি, তোমার জন্যই আমার কবিতায় শব্দরা এসে ধরা দ্যায়। মুখ থেকে উচ্চারিত হয় প্রিয়নামের সুমধুর সুর। বাংলা ভাষা আমার কবিতার নাম।
এই পোষ্ট দেয়ার ইচ্ছে ছিলো মাসের শেষে, কিন্তু আজকের দিনে না দিয়ে পারলাম না। আমার কবিতা সেই শহীদদের জন্য যাদের আত্নত্যাগে আজ বাংলায় বলতে এবং লিখতে পারছি।