আমি অব্যাক্ত অনুভূতি নিয়ে ভাবি। পথের শেষ -শুরু দিক-বিদিক জ্ঞ্যান শূন্য হয়ে হাঁটছিলাম। কোথ থেকে একটা প্রায়ভেট কার এসে ব্রেক চাপল ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। বুঝে ওঠার কথাও না। আমি চার খানা স্লিপিং পিল শরীরে গেঁথে নিয়ে রাস্তায় নেমেছি।হাঁটা শুরুর আগে আমার কোন একটা গন্তব্য ছিল। ক্যাম্পাসে বন্ধুদের খুনসুটি, রাস্তায় ভিক্ষারী কে দেওয়া টাকার আলাদা ব্যাগ বের করতেই বন্ধুরা দানশীল বলে চিল্লিয়ে উঠবে, আমি উপভোগ করব ওদের হাঁসি গুলো, ছাঁদে বসে আকাশ দেখব, বারান্দায় বাতাসে চুল উড়াব আর সামনের বারান্দা'র ছেলেটার ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা দেখব।মা চিল্লাবে, বাবা মন খারাপ দেখে রাতে এক সাথে কফি খাবে, তখন ডিসকাশন চলবে সাহিত্য নিয়ে, গানের তাল সুর নিয়ে, পলিটিক্স, খেলা, বিপ্লব আরো কত কি! গন্তব্য ছিল ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা মারা, বকবক গল্পে ঝড় তোলা ছেলেটার কথা আস্তে আস্তে বান্ধবীর কানের কাছে বলা, এই মহূর্তে মুঠোফোনে ভেসে ওঠা ছোট্ট ক্ষুদে বার্তা আর আমার চোখে এক রাশ উচ্ছাস! গন্তব্য গুলো কত সুন্দর ছিল!
এখন আমি হাঁটছি রাস্তার মাঝ বরাবর। আমি অপরিকল্পিত। আমার নার্ভ গুলো বিশ্বাস ঘাতকতা করে চলছে আমার সাথে। সব আস্তে আস্তে অকেজ হয়ে যাচ্ছে। আমার মৃত্যুর ইচ্ছে নেই, তবু খুব কাছ দেখে দেখতে ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে। এই যে ঝিমঝিম হিপনোটিজম, এটা আমাকে শান্তি দিচ্ছে। আমি চৌরাস্তার মাঝেখানে দাঁড়িয়ে আছি সমস্ত অভিমান, অপমান, অভিযোগ ভুলে , নির্লিপ্ত দু টো পাথর আশেপাশের কোলাহল দেখে না, অসীম দেখছে, অবচেতন মনে হারিয়ে যাওয়ার বিলাসিতা।
১
কাল রাতের শেষ কনভারশেসন মনে আছে?
-আমি সব হারিয়ে বসে আছি। একটা বার কথা বলবে আমার সথে? খুব দরকার। কত দিন তোমার অপার্থিব আওয়াজ শুনি না বলো তো!!!
তুমি কিছুতেই রাজি্না। যদি সুইসাইড করি, তুমি তো ফেঁসে যাবে! তাই দূরে ছুড়ে দিলে। অনভূতির সমস্ত নাটক শেষ করে।
হা হা হা হা। আরে বোঁকা ছেলে জীবন কে এতটা ভালোবাসা মেয়েটা নিজেকে নিয়ে হারিয়ে যেতে পারে সকলের অগোচরে,তবে পৃথিবী কখনো পৃথিবী ছাড়ে না। সাহস নেই আমার। জীবন কে অকারণে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছি যে!
তুমি অস্বীকার করেছ সমস্ত সম্পর্ক, হোক না সেটা অবাস্তব। নিজেকে আজকাল প্রস্টিটীউট ভাবতে বসা মেয়েটা জানে, এখনো কোণ পুরুষের স্পর্শ না পাওয়া শরীরটাতে ঠিক কতটা ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছে কিশোরী মন।
তোমার ধারণা নেই। তুমি চলে গেছে। প্রিয় মানুষ কাছের মানুষ শব্দ গুলোর খুব ভীরে। তুমি হারিয়ে গেছ।
তোমার চোখ আর আওয়াজ টা নেশা ছিল আমার। কত অনুরোধ এই আওয়াজ টা শেষ বার শুনতে চাওয়ার!!!! অবশেষে? না। ভালো থাকার প্রার্থণা রয়ে গেল আমার ভাগে।
যাও চলে। আমি ফিরে দেখবনা। আমি হারাচ্ছি আমার সব। এক এক করে কাউন্ট ডাউন শুরু। হারাচ্ছি বন্ধুদের আড্ডা। হারাচ্ছি টোই টোই করে সারা শহর ঘুড়ে বেড়ান শুক্রবার।
আমি চার টে স্লিপিং পিল বুকে গেথে বেড়িয়েছি। এইত দু ঘন্টা হলো প্রায়। নাকি এক ঘন্টা? আচ্ছা, আমি এখন কোথায়? চৌরাস্তার মোরের ওই স্মৃতির দোকান টাই?
২/
আমার মাঝে লুকিয়ে থাকা জ্ঞ্যান শূন্য আমিটা প্রকৃতস্থ হয়ে শরীরে হানা দেই। চোখে গেথে গে্ছে চারখানা স্লিপিং পিল। আমি এখন হ্যালুশিনেশনে ভুগছি। দূরে দেখতে পাচ্ছি বেশ লম্বা, শ্যাম বর্ন , খোঁচা খোঁচা দাড়ি, চোখে কালো ফ্রেমের চশ্মা । একটা ছেলে । আর আমার সামনে একটা ট্রাক। ওটা থেমে আছে, না আমি থেমে আছি? কি জানি! আচ্ছা সময় থেমে গেলে দারূন হত না? তোমাকে নিয়ে যেতাম দেড় বছর আগে, সমস্ত স্মৃতি মুছে দিতাম। এরপর তোমাকে নিয়ে পারি জমাতাম জোঁছনায়।
ছেলেটাকে না ভ্রম চোখে তোমার প্রতিচ্ছবি লাগছে। হ্যা। সেই তুমি, আমার অস্বীকৃত ভালোবাসা, বা ঘনিস্ট কিছু অবছায়া। তুমি এগিয়ে আসছো, না ট্রাক টা? বুঝতে পারছি না ঠিক! হা হা হা। দারূন পাল্লা দিচ্ছ তো তোমরা!
তারাতারি এসো প্লীজ। আমার আর শক্তি নেই হাঁটার। নার্ভ গুলো প্রতিষোধ নিচ্ছে। পা টা না হটাৎ পাথর হয়ে গেল।ট্রাক টা আমাকে মেরে ফেলবেনা তো? জানো আমি না মরতে চাই না। তোমাকে দূর থেকে দেখে বাঁচতে চাই।
৩/
রাস্তায় লোক জড়ো হয়ে গছে । ট্রাক ড্রাইভার উলটো রাস্তা দিয়ে পালিয়েছে। ট্রাক টা পড়ে আছে। লম্বা, শ্যামলা, কবি কবি চেহারার এক যুবক চিৎতার করে হেল্প হেল্প বলে কাঁদছে। এম্বুলেন্সের অসুস্থ আওয়াজ আগমনি বার্তা।
৪/
নিলীম শুয়ে আছে হাসপাতালের বেডে। গু্টিশুটি মেরে । সেন্স ফিরেছে। ব্লিডিং থেমেছে। ছুটি পেতে বহু বাঁকি। অবস্থা একেবারে যে ভালো তা না।
অবচেতনে বালিকার হাত খুঁজতে চাইছে হারান বিশ্বাস। স্বপ্ন গুলো। অপমান, অভিমান ভেঙ্গে দিক কেউ এসে। আবার ম্যাজিকের মত সব ঠিক হয়ে যাক । সানি একটা চাকরী পাবে্, ওকে একটু একটু করে সুস্থ করে তুলবে, এরপর ভালোবাসা দিয়ে ভরাবে সমস্ত ক্ষোভ, রূপকথার রাজপুত্রের মত উড়িয়ে নিয়ে যাবে ওই ছোট্ট দু'কামড়ার , বিশাল বারান্দা আলা দেশে। যেখানে বারান্দা'র প্রতিটা স্বপ্ন পূরন হবে।
ভাবনা। বাস্তবে এর অস্তিত্ব নেই। সানি ভালো থাকবে এক ঘেয়ে জীবন, তার প্রাক্তন প্রেমিকার স্মৃতি আর নতুন করে শুরু করা কোণ স্বাপ্নিক ফানুস কণ্যার অজস্র ভালোবাসায়। নিলীম বেঁচে থাকবে হয়ত ভয়াবহ স্মৃতি নিয়ে। বুকে গাথবে স্লিপিং।বারবার।
নি্লীমের স্বপ্নে সানি এখন ব্যাস্ত বন্ধুদের মত্ত আড্ডায়, কিংবা প্রেমিকার অগোছালো চুল গোছাতে, সুখি জীবনের স্বাদ নিচ্ছে। নাকি সেই অপ্রাপ্তি নিয়ে একা ছাঁদে চুপটি করে বসে তারা দেখছে?
৫/ বেশ ঠান্ডা চারপাশ। নিলীমের অবস্থা ভালো না। হটাৎ ব্লিডিং শুরু। রক্ত লাগবে। কে জেন ম্যানেজ করে দিয়ে গেছে এতদিন রক্ত। আজ পাওয়া যাচ্ছে না কোন ডোনার।
বাবা চুপ করে বসে আছে। মৃত্যু কম দেখেননি জীবনে।আপাতত কতটা স্বাভাবিক হতে পারে ১৮ বছরের আদুরে মেয়েটার শেষ নিশ্বাঃস চিন্তার বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনায় আছেন।
মা কথা বলছেনা। অতি শোকে মানুষ পাথর হয় নিশ্চয়?
কেউ খেয়াল করেনি প্রতিদিন একটা যুবক চাঁদর পেঁচিয়ে কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকত।খোঁচা খোঁচা দাড়ি, কবি কবি চেহারা।
অবশেষে সকলের সব জল্পনা কল্পনা থামল। নিলীম ছোট্ট বাচ্চাদের মত হাঁসি মাখা মুখে তাঁকিয়ে আছে। ডাক্তার আলত করে চোখের পাতা বুজে দিল।
৬/
কেবিন থেকে কাঁন্নার আওয়াজ ভেসে আসছে।
বাইরে দাঁড়িয়ে আছে জিন্স, টি শার্টের উপড়ে চাঁদর প্যাচান একটা পাথর মোম। চোখের জ্বল লুকনোর জিনিস। লুকোতে হয়।
আবেগ ভয়াবহ জিনিস। সব শেষ করে দেই। চুপচাপ ভালো থাকতে বুকে পাথর লাগে, সে পাথরটা মঝে মঝে চোখে পৌঁছায়।
পথরের দুটো চোখ আছে। চোখ দুটো এখন ঘুমিয়ে থাকা রাজকণ্যাকে দেখছে।
পাথর কে এবার হাঁটতে হবে।তাকে যেতে হবে। বহুদূর পথ নির্বাসনের। চার টে স্লিপিং পিল নিয়ে ঘুম পথ চলতে হবে কাল। যে মেয়েটি কেবিনে নিস্প্রাণ হয়ে খুব অভিমান নিয়ে শুয়ে আছে, তার সব অভিমান ভেঙ্গে এবার অনন্তে বিলীন হতে হবে দুজনকে এক সাথে। চার টে স্লিপিং ড্রাগের নেশায়।