রিমি আজকার খুব ক্ষুতক্ষুতে স্বভাবের হয়ে গেছে। খেতে বসলে বারবার হাত ধোয়। প্রতিটা খাবারে তার পরিচ্ছন্নতা চাই। ঝকঝকে প্লেট, টেবিল সব কিছু উপেক্ষা করে তার সব কিছু অপরিচ্ছন্ন লাগে। নিজের ছোট বোনটাকে আজকার সহ্য হয় না। বাবা মাকে শত্রু মনে হয়। নামাজ পড়তে বসলে, বারবার মনে হয় ভুল হচ্ছে কোথাও! নামাজ হবে না আজ! অজু করা হয়েছে তো ঠিক মত!
কোন কারণ ছাড়ায় আজকাল দাঁত দিয়ে নখ কাটে, একা একা মাথা চুলকায়।
খুব হতাশায় ভোগে অতিরিক্ত পরিচ্ছন্ন এই মেয়েটি। মাঝে মাঝে বলে ফেলে, "অতীত ভবিষ্যৎ সব কিছু শেষ। মৃত্যুই এখন একমাত্র প্রার্থনা। " সেদিন তো ছোট বোন ছাদে যেয়ে দেখে রিমি রেলিং এর উপর দাঁড়িয়ে আছে লাফ দেবে বলে! কি ভয়াবহ!
সেদিন আনাস একটা গোলাপ দিল ওর হাঁতে, ভুল করে গোলাপটা মাটিতে পড়ে গিয়েছিল। রিমি ওটা উঠিয়ে, আবার মাটিতে ফেলল, আবার উঠাল! এভাবে তিন চারবার একই কাজ করল! ব্যাপারটা আনাসের কাছে খুব অবাক লাগল, কিন্তু ওকে কিছু বলল না।
উপরে আলোচিত লক্ষণগুলো "অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার" নামক একটি রোগের লক্ষণ। এক ব্যাক্তির মাঝেই যে এই সকল লক্ষণ দেখা দেবে এমন নয়। আবার সব যে একসাথে দেখা যাবে না, এমন ও না। তবে, এগুলো কিছু সাধারণ লক্ষণ রোগটার। এক এক জনের সিমটম এক এক রকম দেখা দিতে পারে। এই রোগটি গ্রামাঞ্চলে "শুচিবায়ু" রোগ নামে প্রচলিত।
এ রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিরা সাধারাণত অত্যান্ত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখে। তবে রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর এদের মাঝে অদ্ভুত কিছু চিন্তা ঢোকে। নিজেদের চরিত্রের বিপরীত নানান চিন্তা তাদের মাঝে কাজ করে। দেখা যায় যে খুব কাছের মানুষের প্রতি অমঙ্গলকর চিন্তা আসে। সবকিছুতে সন্দেহ হয়। একি কাজ বারবার করার প্রবণতা কাজ করে।
মজার ব্যাপার হল, এ রোগে আক্রান্ত রোগী নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বারবার কাজ করবে। অনিয়ন্ত্রিত মন তাকে দিয়ে করাবে। অর্থাৎ রোগের আক্রমণের পর আমাদের মন আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না!
অনেকে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে থাকে, অনেকে মাথার চুল ছেড়ে, একই কাজ বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে থাকে, বেশ কিছু কাজ এরা প্রতিনিয়ত করতে থাকে। এগুলোকে স্বাভাবিক অভ্যাস বলে এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ নয়। কেননা রোগটি থেকে বেশ বড় সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে পরবর্তীতে।
এসব রোগীরা প্রচন্ড অবসেশনে ভোগে। প্রচন্ড মানসিক অশান্তিতে ভোগে। নিজেকে একা মনে করে। মাঝে মাঝে ব্যাপারটি আত্মহত্যা পর্যন্ত গড়াতে পারে।
বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা ৩ ভাগ এই রোগে আক্রান্ত। এসব রোগীরা কিন্তু পাগল নয়। এরা মানসিক রোগী। তবে শতকরা ৮০ ভাগ বুঝতে পারে না এটা একটি মানসিক রোগ। এবং তারা অধিকাংশই ঠিক সময়ে, সঠিক পদ্ধতিতে চিকিৎসার অভাবে ভয়াবহ পর্যায়ে চলে যায় । এটি "নিউরোসিস" জাতীয় একটি মানসিক রোগ, এবং এর চিকিৎসায় রোগটি সম্পূর্ণভাবে নিরাময় সম্ভব।
মনরোগ বিশেষজ্ঞরা ওষুধ ব্যাবহার করে থাকে এ রোগের চিকিৎসায়। তবে এখন, ‘কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি’র মাধ্যমেও এই রোগ নিরাময় সম্ভব। রোগীর সাথে যথেষ্ট বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে আশেপাশের মানুষের।
অপরেশনেও ভালো হয় ওডিসি। সাম্প্রতিক গবেষণা মতে ১৫ শতাংশ রোগী অপরেশনের মাধ্যমে ভালো হয়েছে। (সূত্রঃ আলোকিত বাংলাদেশ)। "সাইকো সার্জারি"র মাধ্যমে রোগটি সম্পূর্ণ ঠিক হয়ে যায়।
এছাড়াও রোগটির জন্য নানাবিধ চিকিৎসা ব্যাবস্থা আছে। তবে লক্ষণ দেখা মাত্রই রোগীকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে হবে। খুব তাচ্ছিল্যের সাথে ব্যাপারটাকে না দেখার অনুরোধ থাকবে।
আবার বলছি, এই রোগে আক্রান্ত মানুষগুলো পাগল নয়। তাই রোগটি লুকানর কিছু নেই। বরঞ্চ লুকোলে নিজেরই ক্ষতি! সঠিক চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:১২