(আড্ডার ইংরেজী ভার্সনে প্রকাশিত হয় সেপ্টেম্বর 25, 2005)
আড্ডার আসরে আমার ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক কোন এজেন্ডা নেই। বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী চিন্তাধারায় যে অসংগতি ও দেউলিয়াত্ব বিরাজ করছে তা তুলে ধরাই হচ্ছে আমার লেখার পটভূমি। মৌলবাদী ও চরমপন্থী দল হিসেবে জামাতী ইসলামীর অপকর্ম ,ইসলামী বিশ্বাস ও অনুশীলনের অপব্যাখ্যা আমাদের ধর্ম বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিকতার সবচেয়ে বেশী ক্ষতিসাধন করেছে।
জামাত তার ইসলামী আন্দোলনের উৎস ও প্রেরণা লাভ করেছে পাকিস্তানী কথা সাহিত্যিক মওদুদীর (1903-1979) লেখা থেকে। ইসলাম সম্পর্কে মওদুদীর কোন একাডেমিক যোগ্যতা নেই। কিন্তু তার লেখার মধ্যে রয়েছে উগ্র উদ্দীপনা ও উন্মাদনার উৎস। বিশেষতঃ জামাতীরা মওদুদীর লেখা পবিএ কোরআনের অনুবাদ "তাফহীমুল কোরআন' কে পাঠ্যবই হিসেবে পড়ে থাকে ও গবেষণার জন্য তথ্যসূএ হিসেবে ব্যবহার করে। এই উপমহাদেশের অধিকাংশ ইসলামী চিন্তাবিদ মওদুদীর লেখাকে ভ্রান্ত ও ইসলামবিরোধী হিসেবে মত দিয়েছেন। যে কোন শিক্ষিত মানুষ এসব ব্যাপার নিয়ে লেখা যথেস্ট বই পএ বাজারে পাবেন, কারণ মওদুদীর লেখা বই পএ ইসলামে নবুয়ত ও রাসুলুল্লাহ'র (সাঃ) প্রদর্শিত পথ নিয়ে অহেতুক বিতর্কের অবতারণা করেছে। মওদুদী ও তার শিষ্য গোলাম আজম উভয়ই কোন রকম ধমীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই কেবল সংকীণ ধর্মীয় বিশ্লেষণ ও মোহাচ্ছন্ন লেখার কৌশল দিয়ে ধর্মীয় উন্মাদনা ও বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছেন। বিশেষত: জামাতী ও শিবির কমর্ীরা এসব লেখা পাঠ্য হিসেবে তোতা পাখির মতো আওড়ায় যা জন্ম দেয় ধমর্ান্ধতা ও উগ্রতার যার সাথে প্রকৃত ইসলামী বিশ্বাস ও অনুশীলনের কোন সম্পর্ক নেই।
দার্শনিকভাবে, মওদুদী চিন্তাধারা গড়ে উঠেছে ইবনে তাইমিয়ার কট্টর ইসলামী চিন্তাধারার উপর। বর্তমানে সৌদী আরব ও বেশ কিছু আরবদেশে তাইমিয়ার ধারণার সূএ ধরে ইসলামী মৌলবাদের জন্ম নেয়। তাইমিয়া ওয়াহাবী আন্দোলনের পথপ্রদর্শক ও ইসলামী বিশ্বাসে অপ্রয়োজনীয় নতুনত্বের (বিদায়াত) সূচক। আমাদের ধর্মে ইসলামী রাজনৈতিক দল বলে কোন আলাদা ধমর্ীয় বিধান নেই যার এই উপমহাদেশীয় সূচক হচ্ছেন মওদুদী ও তার উওরসূরী গোলাম আজম ও জামাতী দল।
জামাতীরা 'রাজনৈতিক ইসলামকে' ধমর্ীয় বিশ্বাসের মূল শেকড় বলে বিশ্বাস করে যেখানে ধর্মীয় উগ্রতা ও জঙ্গীপনা তাদের চিন্তা ও আচরণকে চালিত করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একবার কিছূ অন্ধলোককে হাতী স্পর্শ করে তার বিবরণ দিতে বললে প্রত্যেক অন্ধ হাতীর যে অঙ্গকে স্পর্শ করেছে, হাতীকে দেখতে সেই অঙ্গের মতো বলে বর্ণনা করে। জামাতীরা হচ্ছে সেসব অন্ধের মতো যারা ইসলামকে কেবল উগ্র রাজনৈতিক ইসলাম হিসেবে চালিয়ে দিতে চেয়েছে যা ইসলামের শান্তিপূর্ণও সহনশীল চিএকে কালিমালিপ্ত করে। ইসলাম শিখায় শান্তি, এখানে হানাহানির কোন স্থান নেই।
বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে সচেতন ও অগ্রসর চিন্তার জনগোষ্ঠী জামাতীদেরকে বাংলাদেশে পাকিস্তানী ঘাতকদের দোসর হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর বাইরে তারা আর কোন ঐক্যবদ্ধ সামাজিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে যারা এদেশে ধমর্ীয়ভাবে জামাতী চিন্তার অন্তঃসারশূণ্যতা প্রমাণ করেছেন তারা তাদের লেখাকে সহজবোধ্যভাবে বৃহওর জনগোষ্ঠীর কাছে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই দুই মেরুর অভিন্ন পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতার সুযোগের সদ্ব্যবহার করে জামাতীরা পরগাছার মতো আমাদের জাতীয় জীবনে নীরবে স্থান করে নিয়েছে। স্বাধীনতাপ্রেমী বাংলাদেশীরা কখনো দীর্ঘদিন প্রতারিত হয়নি। জনগণ বিপথগামী জামাতীদেরকে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে ছুঁেড় ফেলতে অবশ্যই এগিয়ে আসবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০