দাবা খেলায় চাল পরিবর্তন করা গেলেও জীবনের খেলায় সুযোগ একটাই। তবে ঠিকমত চালতে পারলে ঠিকই জেতা যায় শুধু নৌকা বিসর্জন দাও। দাবার বিশেষ খেলা ওংকারে আবার হারের মাঝেই জয়।
সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত "শতরঞ্জ কি খিলাড়ি" এরপর প্রথম বলিউডে দাবা খেলাকে বিশেষ স্থানে রেখে কোন ফিল্ম হল। আর পন্ডিতজি চরিত্রের অমিতাভ এখানে দাবার ঝুনা খেলোয়াড়। দাবা তার পারিবারিক জীবনের সাথে এত অতপ্রতভাবে জড়িয়ে আছে যে তার একমাত্র মেয়ে মানুষের বাসায় গিয়ে দাবা খেলাও শেখাত। কিন্তু পৃথক দুর্ঘটনা কেড়ে নেয় পন্ডিতের স্ত্রী, কন্যা দুজনকেই। আর পন্ডিত হারায় তার দুই পা। এখন সারাদিন ছোট ছোট ছেলে মেয়েকে নিজ বাড়িতে দাবার খেলা শিখিয়েই সময় কাটে তার।
তবে খুব বেশি হিন্দি সিনেমা দেখিনি যেখানে শুরুই হয় রোম্যান্টিক কোন গান দিয়ে (সুরকার শান্তনু মৈত্রর পরিণীতার গানের কথা মনে করায়)। পুলিশ অফিসার দানিশের বিয়ে, অতঃপর শিশুসন্তানের বাবা হওয়া। আকস্মিক দুর্ঘটনায় সুখের সংসার তছনছ হয়ে যাওয়া। শোকে ম্রিয়মাণ দানিশের প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠা। এবং নায়কোচিত নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দেয়া। ওয়াজিরের শুরুটা অনেকটাই গত বছরের “বদলাপুর”কে মনে করায়।
৩ মনভাঙ্গা মানুষের মিলিত হওয়া এবং নিজেদের সুখদুঃখে একে অপরকে সঙ্গ দেয়া। আরেকজন দানিশের স্ত্রী। দুর্ঘটনাটির পেছনে দানিশের দায় থাকায় তিনি আলাদা হয়ে যান।
অমিতাভ বচ্চন আর ফারহান আখতারের Wazir দেখতে বসলাম অনেকটাই হুট করে। বলিউডের মেগাস্টার্ওয়ালা ফিল্মে অরুচির কারণেই কোন প্রত্যাশা রাখিনি। তবু বিধু বিনোদ চোপড়া (parineeta, kareeb, mission kashmir) আর বিজয় নাম্বিয়ার (shaitan) এর মত লোকজন যথাক্রমে লেখক আর পরিচালকের আসনে থাকলে অচেতনভাবেও কিছুটা আশা তৈরি হয়। এবং দেখার সময় কখনও কখনও উপভোগও করছিলাম ১০৬ মিনিটের মুভিটা। কিন্তু সমস্যাগুলা চলে এসে মজা নষ্ট করে দিচ্ছিল।
যাই হক, তথাকথিত রিভেঞ্জ ঘরানার ফিল্মের সাথে ওয়াজিরের তফাত হচ্ছে এখানে নায়কের পাগলামি, জেদ নেই। বরং নায়ক শান্ত স্থিরভাবে কেইস সল্ভ করার চেষ্টা করে। তাকে লাইনে আনে ওই দাবা খেলা কিংবা খেলোয়াড়। দুজনেরই লক্ষ এক। তাই ধরে নিয়েছিলাম আসল দোষীকে ধরতে সূক্ষ্ম অনুসন্ধানী গোয়েন্দাগিরি থাকবে। রাজনীতির মার প্যাচ থাকবে।
নাহ, অত জটিলতা নেই। ডাইরেক্ট একশন বেশি দেখা গেল। ব্রেইন সবসময় চালু রাখলে টুইস্টটাও ধরতে পারবেন অনেকে আগেভাগেই। তবু মন্দ হত না যদি না মুভির পেইসিং, চিত্রনাট্য আর পরিচালনায় দম থাকত।
বেশিরভাগ বলিউড ফিল্মেরই একটা প্রবণতা পুরা মুভির আইডিয়াটাকে ম্লান করে দেয় – টুইস্ট খোলাসা করার সময় এক চরিত্র আরেক চরিত্রকে বলে বলে বোঝায় যে বুঝছ? তুমি যেটাকে ক ভাবছ সেটা আসলে ঘ। কেন ভাই? আরেকটু চাতুর্যের সাথে সম্পাদিত দৃশ্যের ঝুরি দিয়েই তো চমকটা দেয়া যায়। পাবলিককে এত গন্ডমূর্খ না ভাবলেও হয়। ওয়াজিরের এন্ডিং এখানেই পুরা ফিল্মের ইফেক্টকে ফ্ল্যাট করে দেয়। পরিচালকের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন জাগে। এর বাইরে অবাস্তব সংবর্ত গল্প তো আছেই। ফ্ল বের করে শেষ করা যাবেনা এতই অযৌক্তিক লেখনী।
তাই রিয়েলিস্টিক থ্রিলারের চিন্তা বাদ দিয়ে দেখলে উপভোগ করা যাবে। কেননা মুল চরিত্রে ফারহান আখতার তার ক্যারিয়ার সেরা অভিনয় করেছে। বিশেষ করে প্রথমভাগটাই বেশি ভাল ছিল। সাইলেন্ট দুখী স্ত্রী চরিত্রে অদিতি রাওর প্রাণবন্ত অভিব্যক্তি ছারাও প্রতিটা দৃশ্যে তাকে লেগেছেও দারুন সুন্দর। ফারহানের সাথে তার রসায়ন ভাল ছিল। তিন মুলচরিত্রের মেলবন্ধন মুভির লাগাম ধরে রাখতে সাহায্য করলেও একটু পরপর ব্যাকগ্রাউন্ডে রোম্যান্টিক গান মুভির গতি থ্রিল দুটাই ব্যাহত করছিল। যে কারনে ১০৬ মিনিট মনে হয়েছে আড়াই ঘণ্টা।
সিনেমাটোগ্রাফি ভাল হলেও আহামরি কিছু ছিল না। আবহ সংগীত ভাল ছিল। একশন ডিজাইন বাস্তবতাবিবর্জিত। সংলাপ খারাপ না। তবে সবই অমিতাভকে দেয়া।
এই বস অভিনেতা সব চরিত্রকেই অন্য লেভেলে নিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। তাই তার ঝুলিতে সংলাপ যাই হোক, জমতে বাধ্য। আবার সেখানেই ওইধরনের সংলাপ অভার দা টপ ড্রামাটিকও মনে হতে পারে।
পার্শ্ব চরিত্রে মাদ্রাস ক্যাফের “বালি” চরিত্রের সে জোস অভিনেতা আর জন আব্রাহামকে পুরাই ওয়েস্ট করা হয়েছে, খল চরিত্রে মনভ কলকে প্রমিসিং চরিত্র দিলেও তার পরিনতির লেখনীও ছিল হতাশাজনক। জনের মত আরেক ছোট চরিত্রে নিল নিতেন মুখেশ সারপ্রাইজিং, কিন্তু আবারও নট এনাফ রাইটিং।
আমার গেডিংঃ B-
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১৬ ভোর ৪:২১