লেখালেখির সঙ্গে সম্পৃক্তদের জন্য ফেব্রুয়ারি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। কারণ এই ফেব্রুয়ারি মাসেই আসে বাঙ্গালির প্রাণের বই মেলা। বইমেলাতে শুধু বই বেচা-কেনার ব্যাপার থাকে না; থাকে লেখক, প্রকাশক ও পাঠকদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, মেলবন্ধনের মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এ মেলা এখন কেবল লেখক-প্রকাশকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটি এখন সমগ্র বাঙালি জাতির প্রাণের মেলা, আবেগের মেলায় পরিণত হয়েছে। মহাপ্রাণ চিত্তরঞ্জন সাহা বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে যে বীজ বপন করেছিলেন... তা আজ মহীরুহ। এ মেলা সমগ্র বাঙালির অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে গেছে। এটি এখন বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে একাঙ্গীভূত। যতই দিন গড়াচ্ছে ততই এই মেলার শ্রীবৃদ্ধি ঘটছে, বাড়ছে লেখক ও প্রকাশকের সংখ্যা, সেই সঙ্গে বাড়ছে পাঠকের সংখ্যাও।
লেখালেখি সম্পূর্ণ একটা চর্চার বিষয়। এই চর্চা কিন্তু একদিনেই শুরু হয়ে যায় না। এর জন্যে দীর্ঘ প্রস্তুতি লাগে। অনুপ্রেরণা লাগে, চর্চার ক্ষেত্র তৈরি করতে হয়। অবচেতন মন থেকে লেখালেখির তাগিদ পেতে হয়। আবার শুধু অবচেতন মন থেকে তাগিদ পেলেই তো হয় না, প্রয়োজন হয় অভিজ্ঞতার। সেই অভিজ্ঞতার জন্য বিখ্যাত সব লেখকদের বই পড়তে হয়, সাথে সাথে জীবনটাকে খুব গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। তবেই লেখা প্রাণ পায়। পাঠকের হৃদয়ে স্থান লাভ করে। লেখা ও লেখক আমাদের প্রিয় হয়ে ওঠেন।
তেমনই দুজন প্রিয় লেখক ডি মুন এবং মাহমুদ০০৭ যাদের লেখায় তাদের সযত্ন পাঠাভ্যাস ও সুতীক্ষ্ণ জীবনদর্শনের ছাপ পাওয়া যায়। আর এ কারণেই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পাঠকদের মনে স্থান লাভ করেছেন। সুন্দর শব্দচয়ন এবং প্রাঞ্জল বাক্য গঠন যেমন ডি মুনের গল্পগুলোকে দিয়েছে বৈচিত্রতা। তেমনই মাহমুদ রহমানের গল্পে রয়েছে এক দারুণ আন্তরিক অভিনিবেশ। আর তাই এ দুজন প্রিয় গল্পকারের গল্পগুলো যখন একই মলাটবন্দী হয়ে যায় – তখন তা সত্যিই মনকে আন্দোলিত করে। হ্যাঁ, এবারের বই মেলায় তারা একত্রে প্রকাশ করতে যাচ্ছেন তাদের প্রথম বই – ‘ফাঁদ ও সমতলের গল্প’। ‘ফাঁদ ও সমতলের গল্প’ একটি গল্পগ্রন্থ। এতে আছে দুই জন লেখকের প্রকাশিত-অপ্রকাশিত মোট ১৭ টি গল্প। এস এম মামুনুর রহমানের ১০ টি ও মাহমুদ রহমানের ০৭ টি।
কেন কিনবেন ‘ফাঁদ ও সমতলের গল্প’?
আমাদের জীবন যাপনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে মিশে আছে জ্বালা, যন্ত্রণা, পাওয়া না পাওয়ার বেদনা। বিবাহিত জীবনের সংসারের জ্বালা-যন্ত্রণা, অবিবাহিতদের স্বপ্ন পূরণ না হবার জ্বালা, ভাগ্যাহত যুবকের আশাভঙ্গের জ্বালা, প্রেমে ব্যর্থ হওয়া প্রেমিক কিংবা প্রেমিকার ব্যর্থতার যন্ত্রণা। আছে নাগরিক জীবনের ক্লান্তি অবসাদ। পদে পদে পিছিয়ে পড়ার ভয়। এই সব জ্বালা, যন্ত্রণা আর ক্লান্তি থেকে মুক্ত হবার অন্যতম একটি পথ বই পড়া। বার্ট্রান্ড রাসেল এই সম্পর্কে বলেছিলেন, সংসারে জ্বালা-যন্ত্রণা এড়াবার প্রধান উপায় হচ্ছে, মনের ভেতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে তাতে ডুব দেয়া। কিন্তু মনের ভিতর আপন ভুবন কিভাবে সৃষ্টি করা যাবে? বার্ট্রান্ড রাসেল বলেছেন, বই পড়া। একমাত্র বই পারে আপনার মনের ভিতরে স্বপ্নিল একটি ভুবন তৈরি করে দিতে। ওমর খৈয়াম এর ভাষায় যদি বলতে হয় , " এইখানে এই তরুতলে/ তোমায় আমায় কৌতূহলে/ এ জীবনের যে কটা দিন কাটিয়ে যাব প্রিয়ে/ সঙ্গে রবে সুরার পাত্র/ অল্প কিছু আহার মাত্র/আরেকখানি ছন্দমধুর কাব্য হাতে/ রইবে তুমি আমার পাশে" প্রেয়সীর সঙ্গ হারিয়ে যেতে পারে, রুটি-সুরা ফুরিয়ে যাবে কিন্তু হাতের ছন্দমধুর কাব্য এর বই কিন্তু হারিয়ে যাবে না।
সুতরাং বইপড়া জীবনকে সমৃদ্ধ করার একটি অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। কিন্তু তাই বলে ফাঁদ ও সমতলের গল্প কেন? কারণ পাণ্ডুলিপি পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে বলেই জানি, এটি একটি সুলিখিত গল্পগ্রন্থ। এতে লেখকদ্বয়ের যে ১৭ টি গল্প রয়েছে তা আমাদেরই দৈনন্দিন জীবনেরই গল্প। এতে আছে নাগরিক ব্যস্ততায় আঁটকে পড়ে স্ত্রীর ভালবাসা খুঁজে ফেরা মানুষ ‘রহমত সাহেবের গল্প’। আছে গ্রামীণ জীবনের পাওয়া না-পাওয়া আর সন্তানের প্রতি মমতার পরিস্ফুটনে দুর্দান্ত গল্প ‘ইলিশ’। আছে ‘বেহুদা এক জীবন বয়ান’-এর মত আত্মজিজ্ঞাসার গল্প। গীত গেয়ে জ্বিন ছাড়ানোর ঘটনা নিয়ে গল্প ‘কবিরাজ’ । আছে একেবারে নিম্নবিত্ত এক ভিখারিনীর দুটি করুণ চোখের গল্প। আছে দুজন মানুষের ভালোবেসে কাছে আসার প্রেমের গল্প। আছে দোতরা হাতে নৌকায় দুলতে থাকা আমাদেরই পরিচিত এক বাউলের গল্প। এবং আরো অনেক চমৎকার চমৎকার গল্প। আর তাই ‘ফাঁদ ও সমতলের গল্প’ দুই জনের লেখকের একটি অনবদ্য গল্পগ্রন্থ। খুব শীঘ্রই প্রকাশ পেতে যাচ্ছে একুশে বইমেলায়। আপনার বই কেনার তালিকায় এই বইটি না রাখলে নিশ্চিত অনেককিছু মিস করবেন।
একবার মার্ক টোয়েনের মেঝের ওপর স্তূপীকৃত বই দেখে তার ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু বলেছিলেন, তুমি বইগুলোর জন্য শেলফ জোগাড় করে নাও। মার্ক টোয়েন তার বন্ধুকে প্রতি উত্তরে বলেছিলেন, জ্ঞান- ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার জন্য অন্যদের কাছ থেকে বই এনে তা আর ফেরত না দিয়ে কিভাবে তিনি এই বইয়ের স্তূপ জমা করেছেন। এবং একই কায়দায় শেলফ সংগ্রহ করা তো আর সম্ভব নয়। বই নিয়ে মার্ক টোয়েনের পথ আপনারা কিন্তু ভুলেও অনুসরণ করবেন না, অন্তত ‘ফাঁদ ও সমতলের গল্প’ এই বইটি নিয়ে তো নয়ই। ‘ফাঁদ ও সমতলের গল্প’ বইটি নিয়ে আপনারা সৈয়দ মুজতবার আলীর পথ অনুসরণ করতে পারেন। সৈয়দ মুজতবার আলীর মত আপনিও বিশ্বাস করতে পারেন- বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না।
অনেকক্ষণ তো মনিষীদের কথা বলা হল। এবার চলুন একজন মহা মনিষীর কথা জানা যাক। কেন কিনবেন " ফাঁদ ও সমতলের গল্প " বইটি, এই সম্পর্কে মহা মনিষী প্রবাসী পাঠক বলেছেন, " সময় সল্পতার কারণে এই বইটির সৌজন্য সংখ্যা ছাপানো সম্ভব হয় নি। তাই এই বইটির অমৃত সুধা পান করতে হলে আপনাকে অবশ্য অবশ্যই বই মেলা থেকে বইটি কিনতেই হবে। বই মেলা থেকে বইটি কিনুন আর সাহিত্যের অমৃত সুধা পান করুন। "
বইটির লেখকঃ
মাহমুদ রহমান
এস এম মামুনুর রহমান
বইটির প্রচ্ছদ: শামীম জামান ওয়াহিদ
প্রচ্ছদের পেছনের মন্তব্য দিয়েছেন – মোঃ আজমল হুদা মিঠু
প্রকাশনী: বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ড
বইটির ফেসবুক লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/somotolergolpo
এখানে বইটি সম্পর্কে পাঠকের মতামত দেয়া যাবে। ভালোলাগা জানানো যাবে। সমালোচনা করা যাবে। যা লেখকদেরকে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ করবে। তাই পেজটিতে লাইক দিয়ে ও বন্ধুদের ইনভাইট করে সবাইকে সংযুক্ত থাকতে অনুরোধ করছি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:৩৪