সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ ইহা নিতান্তই একটি ফান পোস্ট। নিজ দায়িত্বে প্রবেশ করিবেন। প্রবেশ করিবার পর কেউ আশাহত, মর্মাহত, ব্যাথিত, হিংসিত, ক্রোধান্বিত, আপসোসিত হইলে লেখক কোনক্রমেই দায়ী থাকিবে না। অপ্রাপ্ত বয়স্করা প্রবেশ করিতে পারিবেন কিন্তু অপ্রাপ্ত মনস্কদের প্রবেশ না করাটাই শ্রেয়।
সামহোয়্যার ইন ব্লগের ব্লগাররা একে অন্যের সাথে এক অদৃশ্য মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ থাকেন। সারা বছর ধরেই ব্লগে একে অপরের সাথে লেখার মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করেন। কিন্তু ঈদের সময় এলেই কিছু দিনের জন্য সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা যায় না। ঠিক এবারের ঈদের ছুটিতেও অনেকেই গ্রামের বাড়ি গিয়েছেন ঈদ উদযাপন করতে। অনেকেই এই কারণে ব্লগে আসতে পারেন নি। তাই বলে কি আমারা তাদের ঈদ উদযাপনের গল্পগুলো জানা থেকে বঞ্চিত থাকব? চলুন দেখি জেনে নেই, এবারের ঈদ কোন কোন ব্লগারের কেমন কাটল।
প্রথমেই জানা যাক ব্লগার জাফরুল মবীন ভাই ঈদ উদযাপনের গল্প। আমাদের প্রিয় ব্লগার জাফরুল মবীন ভাইকে খুঁজতে খুঁজতে যখন আমাদের প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত। তখনই আমরা তাকে দেখতে পাই উদ্ভট আকৃতির একটি যন্ত্র হাতে নিয়ে ফলের দোকানের সামনে ঘুরাঘুরিরত অবস্থায়। মবীন ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলার আগে আমরা তার কার্যক্রম কিছুক্ষন পর্যবেক্ষণ করি। উনি একটি করে ফল নিচ্ছেন এবং তার হাতের উদ্ভট যন্ত্রের ভিতর ঢুকিয়ে কিছুক্ষন নাড়াচাড়া করছেন। সাথে সাথে যন্ত্রের মনিটরে কিছু উপাত্ত ভেসে আসছে। কৌতূহল বশত প্রথমেই মবীন ভাইকে যন্ত্রটা সম্পর্কে জিজ্ঞাস করি।
জাফরুল মবীনঃ আর বলবেন না ভাই, এটা ভুলের কারণে মহা আবিস্কার হওয়া একটি যন্ত্র। ফরমালিনঃচেনা বিষের অচেনা উৎস্য উদ্ঘাটনে এই যন্ত্রের জুড়ি মেলা ভার। আপনাদের ভাবী এই যন্ত্রের উদ্ভাবক। আমি যতই বলি, আম-লিচুতে প্রাণনাশী মাত্রায় ফরমালিনঃএকটি বৈজ্ঞানিক অবাস্তবতা। আপনাদের ভাবী তা বিশ্বাস করতেই চায় না। আপনাদের ভাবী এখন নিয়ম করে প্রতিদিন সকাল বিকাল আমাকে ফরমালিনযুক্ত খাদ্য আমাদের দেহের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর তা বুঝাচ্ছে।
প্রবাসী পাঠকঃ ভাবী তো অনেক সচেতন, এই ব্যাপারটা তো অনেক ভালো। ফরমালিন এর ব্যাপারে আমাদের সকলেরই সচেতন হওয়া দরকার।
জাফরুল মবীনঃ আর সচেতন! সব বিষয়ে সচেতন হলে তো কথাই ছিল। এই তো কয়েকদিন আগে, অনলাইন আন্তর্জাতিক ফটো প্রতিযোগিতায় ছবি পাঠিয়ে জিততে পারেন লক্ষ থেকে কোটি টাকা প্রাইজমানি বিজ্ঞাপন দেখেছে। এখন সে এই প্রাইজমানি জেতার জন্য দিনরাত রূপচর্চা নিয়ে ব্যস্ত। প্রতিদিন নতুন নতুন কসমেটিক কিনে আনার জন্য এখন আমি শুধু শপিং সেন্টারগুলোতে যাওয়া আসা করছি। আমি যতই বুঝানোর চেষ্টা করি, কসমেটিকসে বিষঃরূপচর্চা নাকি সেলফ পয়জনিং সে তা বুঝতেই নারাজ। উল্টো সে আমাকে নিরাপদ রূপচর্চা-একটি বৈজ্ঞানিক উপস্থাপন সম্পর্কে লেকচার দিচ্ছে। এখন বলুন ভাই, সব ব্যাপারে সে কি সচেতন?
প্রবাসী পাঠকঃ মবীন ভাই, ভাবীর যুক্তিগুলো কিন্তু অমূলক নয়। ভাবী কেমিক্যাল বিহীন প্রাকৃতিক প্রসাধনী ব্যবহার করতেই পারেন। তারপর বলুন ঈদের সময়টা কেমন কাটল?
জাফরুল মবীনঃ ঈদের সময়টা তো আরও খারাপ গেছে ভাই। আপনার ভাবী প্রায় চল্লিশ পৃষ্ঠার বাজারের লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে বলল, যাও বাজার নিয়ে আসো। লিস্টের কিছু কিছু আবার পাওয়া যায় না। যেমন ধরুন, বাংলাদেশের বাজারে দারুচিনি পাওয়া যায় না! আবার আমার শ্বশুর বাড়ির আত্মিয়দের জন্য পান সুপারি আনতে বলেছে। ক্যান্সারের- ভয়াবহ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ, তার উপর পান-সুপারি সেবনে রয়েছে ক্যান্সারসহ মারাত্মক সব স্বাস্থ্যঝুঁকি! আমি যখন এই কথা আপনাদের ভাবীকে বললাম, সে সন্দেহ করছে আমি খরচ বাঁচানোর জন্য এগুলো বলছি। সন্দেহ করা যখন রোগ হয়ে দাঁড়ায় তখন অনেক সমস্যা। আপনার সঙ্গে কথা বলতে বলতে অনেক দেরী হয়ে গেছে। সময়মত বাসায় ফল নিয়ে না ফিরলে আবার কেয়ামত হয়ে যাবে। জানেন তো , কিয়ামত একটি বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা। যাই হোক যদি সম্ভব হয়, আমাদের কষ্টের কথা একটু ব্লগে লিখবেন। মানুষ আমাদের কষ্টের কথা জানুক। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
মবীন ভাইয়ের করুণ কাহিনী জানার পর আমরা ছুটে চলি সদা হাস্যজ্জল কাভা ভাইয়ের কাছে তার ঈদের অভিজ্ঞতা জানার জন্য। কাভা ভাই এবার পরিবারের সবাইকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপন করছেন। মনে মনে একটা ভয় কাজ করছিল, গ্রামের মুক্ত হাওয়ায় উনি হয়ত ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনেক জায়গায় হয়ত তাকে খুঁজা খুঁজি করতে হবে। কিন্তু আমাদের সব শঙ্কা দূর হয়ে গেল উনার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেই। কাভা ভাইকে বাড়িতেই পাওয়া গেল তার ল্যাপটপের সামনে। এ ট্রু ব্লগার! ঈদের ছুটিতেও উনি ব্লগে একটিভ। কাভা ভাইকে ঈদের এই সময়েও ব্লগে থাকার জন্য অভিনন্দন জানালাম। কিন্তু উনি যা বললেন তা শুনে আমাদের বিস্মিত হতে হল।
কাল্পনিক_ভালোবাসাঃ আরে না ভাই, ব্লগে নেই। ফটোশপে কিছু কাজ করছি। দেখুন, ফাঁস হয়ে গেল বিভিন্ন ব্লগারদের দুর্লভ সব স্ক্রীন শর্ট। এর সঙ্গে চলুন জেনে নিই বিভিন্ন ব্লগারের মাল্টি নিক গুলো। আরও আছে কপি পেষ্ট পোষ্ট। এগুলো প্রকাশ হওয়া অত্যন্ত জরুরী কারণ- সহজ সরল কথাঃ দূর্জন বিদ্যান হলেও পরিতাজ্য।
প্রবাসী পাঠকঃ ঈদের দিনটা কেমন কাটালেন কাভা ভাই?
কাল্পনিক_ভালোবাসাঃ ঈদের দিন তো ভাই চরম ব্যস্ত ছিলাম। সকালে ঈদের নামাজ শেষে কোরবানি নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। ফেসবুকে থাকার পাশাপাশি মাংস কাটার খোঁজ খবর নিয়েছি। আমাদের ভোজনরসিক-তা, গরুটির মুক্তি কবে? এটা খুব ভাবাচ্ছিল। তাই বলে মাংস খাওয়া কম হয় নি। একেবারে হাতের কব্জি ডুবিয়ে খেয়েছি, বলতে পারেন পয়সা উসুল।
প্রবাসী পাঠকঃ ঈদের বিনোদন সম্পর্কে কিছু বলুন কাভা ভাই?
কাল্পনিক_ভালোবাসাঃ বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল এবং দর্শকদের বিনোদন তো এখন যন্ত্রণার আর এক নাম। আগে অনুষ্ঠানের মাঝে বিজ্ঞাপন দেখতাম আর এখন বিজ্ঞাপনের বিরতিতে অনুষ্ঠান দেখি। আগে কত সুন্দর সুন্দর অনুষ্ঠান হত। যেমন ধরুন ছায়াছন্দে- তুমি আজ কথা দিয়েছ, এই রকম কত ভালো ভালো গান দেখাত। এখন ভাই সবই অতীত। আগামী ঈদে দর্শকদের জন্য আমি নিজেই কাল্পনিক ফিচারিং রসুই ঘরঃ লইট্টা মাছের শুঁটকি ভূনা এবং একটি স্বর্গীয় খাবারের রেসিপি নামে একটা ফানি রান্নার অনুষ্ঠান করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
প্রবাসী পাঠকঃ একজন সিনিয়র ব্লগার হিসাবে ব্লগ সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন কাভা ভাই।
কাল্পনিক_ভালোবাসাঃ দেখুন ব্লগিং আমার অন্যন্ত পছন্দের একটা বিষয়। ব্লগ নিয়ে আমি অনেক চিন্তা ভাবনাও করি। ব্লগকে আবারো প্রাণবন্ত করতে আমার অনেক প্লানও আছে। আমাদের কিছু কিছু ভুল ছিল যা আমরা এখনই শুধরে নিতে পারি। ব্লগারস' রিভিউঃ সাম্প্রতিক সময়ে যারা বেশ চমৎকার লিখছেন, এই ধরনের পোস্টগুলো আসলে এখন আর প্রয়োজন নেই। এখন প্রয়োজন ব্লগের নতুন সিন্ডিকেটের জন্য সদস্য আহবান করা। সাথে সাথে সামুর ব্লগারদের জন্য উন্মুক্ত চাপাবাজী প্রতিযোগিতা আয়োজন করা এবং লুল, লুলামী এবং শ্রেষ্ট লুল নির্বাচন করা। এই কাজগুলো যত দ্রুত করা যাবে তত দ্রুত ব্লগ চাঙ্গা হবে। আমি নিজেই অবশ্য একটি শিক্ষামুলক পোষ্টঃ ক্যাচাল ক্যাচালের আদ্যোপান্ত এবং কিছু টিপস তৈরি করে রেখেছি। আশা রাখি এই পদক্ষেপগুলো নিলে ব্লগ উপকৃত হবে।
প্রবাসী পাঠকঃ আপনার লেখালেখি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি-
কাল্পনিক_ভালোবাসাঃ লেখালেখির বিষয়ে বলতে গেলে বলতে হয়- জনৈক তরুনী, বিড়ম্বনা এবং অতঃপর ইচ্ছে খাতায় কিছু অর্থহীন প্রলাপ, আহবান এবং আক্ষেপ। অদেখা ভূবনে বাস করা আমার গল্পের প্রিয় মৃত প্রেমিকাকে নিয়ে কিছু সত্য এবং সহজ কথা লেখার চেষ্টা করা। লেখালেখি করতে হলে আশেপাশের সব কিছু সুক্ষভাবে দেখতে হবে। আমাকেও অনেক কিছু দেখতে হয়েছে, যেমন- লুঙ্গি বিড়ম্বনা এবং আমাদের তালগাছ দর্শন। এই সব অভিজ্ঞতা আমাকে লিখতে উৎসাহিত করেছে।
প্রবাসী পাঠকঃ বাহ! দারুণ। লেখালেখি সম্পর্কে আপনার............
কাল্পনিক_ভালোবাসাঃ থামেন তো ভাই, বহুত প্যাচাল পারছেন। এইবার যান তো ভাই। হয়ত আরো কিছুক্ষন আড্ডা দেয়া যেত। কিন্তু আমাকে এখন যারা বিয়ে করতে যাচ্ছেন তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ন বিষয়ঃ পাত্র পাত্রী নির্বাচন এবং যারা ছ্যাঁক খেয়েছেন বা খেতে যাচ্ছেন বা যারা এমনি এমনি খান, তাদের জন্য কিছু কথামালা লিখতে হবে। অবসর সময়ে আবার আইসেন তখন আড্ডা দেয়া যাবে। ঈদ মোবারক! সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
কাভা ভাইয়ের বাসা থেকে এসে আমরা চলে যাই সরাসরি মহান ব্লগার ডি মুন এর বাসায়। ডি মুন ভাই ঈদ উদযাপন করতে রাজশাহি থেকে ঢাকা এসেছেন। মুন ভাইকে খুঁজে পেতে আমাদের খুব একটা কষ্ট করতে হয় নি। কারণ মুন ভাই ঢাকার বাসায় ঢুকার পর থেকে আর একবারের জন্যও বাসা থেকে বের হয় নি। তবে কি কারণে তিনি নিজেদের ফ্ল্যাট থেকে একবারও বের হয় নি এটা একটা রহস্য। এই রহস্য উন্মোচনের জন্য অপেক্ষাকৃত কম মহান ব্লগার মাহমুদ ভাইকে সে ফ্ল্যাটে পাঠানো হলেও মাহমুদ ভাইয়ের কাছ থেকে আশানুরূপ কোন সংবাদ পাওয়া যায় নি। যদিও গোপন সুত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মাহমুদ ভাই নিজেও সেই ফ্ল্যাটে দুই দিন ছিলেন এবং তিনি নিজেও একবারের জন্য বের হয়ে আসেন নি।
প্রবাসী পাঠকঃ মুন ভাই কেমন আছেন? ঈদ কেমন কাটলো?
ডি মুনঃ মেঘপ্রেমে নিষ্ক্রান্ত জীবন আমার, অন্ধকার বেলকনিতে দাড়িয়ে অর্থহীন নিগূঢ় প্রলাপ কিংবা বিক্ষিপ্ত বচনে জটিল জলে আবর্তিত একটি সাধারণ আটপৌরে গল্প। কল্পনার আনন্দ কিংবা এলেবেলে ভাবনার মিশ্রণে প্রতিষ্ঠিত সত্যের বিপরীতে দাড়িয়ে চলছে জীবন আমার। ঈদের আনন্দগুলো আমার কাছে অনর্থক ঘুমকাব্য। কখনো মনে হয় গল্প ও কবিতার গল্প, আবার কখনো গল্প নয় কবিতা, কখনো আষাঢ়ের বিষণ্ণ চিরকুট ।
প্রবাসী পাঠকঃ মুন ভাই একটু সহজ ভাষায় যদি বলতেন, তাহলে বুঝতে সুবিধা হত।
ডি মুনঃ ধুর মিয়া, দিলেন তো মুড টা নষ্ট করে। সহজ ভাষায় শুনতে হলে একেবারে মেধাহীন ব্লগার প্রবাসী পাঠকের কাছে যান। আমার কাছে কেন আসছেন? আমি মহান ব্লগার ডি মুন, আমাকে সাহিত্যের ভাষায়ই কথা বলতে হবে।
প্রবাসী পাঠকঃ সরি মুন ভাই, আমি আসলে ওভাবে বলতে চাই নি। যাই হোক আপনি আপনার মত করেই বলুন। মুন ভাই আপনার ছ্যাকা খাওয়ার বিষয়টা নিয়ে যদি কিছু বলতেন।
ডি মুনঃ আহ! কষ্টের কথা মনে করিয়ে দিলেন ভাই। মানুষ হয়ে যেহেতু জন্মেছি দুঃখ কষ্ট, আনন্দ বেদনা সবকিছু নিয়েই জীবন। আমার প্রেম এসেছিলো বৃদ্ধ বটগাছটার নিচে। আমার চারুলতা, সে যেন ছিল আমার ইচ্ছেদেবী। তাকে নিয়ে স্বপ্ন রাজ্যে যুগল ভ্রমণ করতাম। ইচ্ছে ছিলো, নদীর বুকে ডুবসাঁতার কাটবো তাকে নিয়ে। অপেক্ষার অসুখে সুখের ছোঁয়া খুঁজে পেতাম, কেননা ভালোবাসা মানেই আবেগের পাগলামি। সব সময় চিন্তা করতাম সুখের এই মায়া নদী কেমনে যাব বাইয়া। কিন্তু হায় একদিন সবকিছুর অবসান ঘটল। সেই মেয়েটি এর চেয়ে নিকটতর হ'ল না, আমাকে নিঃসঙ্গতার পাত্র বানিয়ে দূরে চলে গেল। এখন সে শুধুই নিহত স্মৃতির বিষাদ। ফুসফুসে গাঢ় অন্ধকার জমাট বেধেছে আজ, আমার স্বপ্নের জানালায় নাগরিক দেয়াল উঠেছে অনেক দিন হলো। তোমার চলে যাওয়া যেন কবিতার চলে যাওয়া। আকাশে অথবা সমতলে আজও তোমায় খুঁজি, এখনো তোমার জন্য কবিতা লিখি। বড্ড জানতে ইচ্ছা হয় আমার জন্য তোমার কিছু সময় হবে?
প্রবাসী পাঠকঃ মুন ভাই আপনি হয়ত বুঝতে ভুল করেছেন। রান্না করার সময় যে আপনি হাতে ছ্যাকা খেয়েছিলেন, আমি সে কথা জানতে চাচ্ছিলাম। যাই হোক প্রেমের ছ্যাকা খাওয়ার কথাগুলো নিজেই যখন বলে দিলেন তখন ধন্যবাদ জানাতেই হয়।
ডি মুনঃ ধুর ভাই। আপনি দেখি সাক্ষাৎকার নিতেও জানেন না। একটু খোলাসা করে বলবেন না। আমি কি বুঝে, কি নিয়ে কথা শুরু করলাম। এখন তো আমার সব গোপন কথা ফাঁস হয়ে গেল। আপনার সঙ্গে এখন আর কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। আর হ্যা, লেখা প্রকাশ করার সময় কিছু কাট ছাট করে দিয়েন।
স্বপ্নবাজ অভি ভাইকে সকাল থেকে খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে বিকাল বেলায় ধানমণ্ডি এসে খুঁজে পাই। অভি ভাইকে দেখলাম প্র্যাকটিস নিয়ে ব্যস্ত। এই ব্যস্ততার মাঝেই তার সাথে সামান্য কিছু কথা বলার সুযোগ হয় আমাদের।
প্রবাসী পাঠকঃ শুভ বিকাল। ঈদ কেমন কাটালেন অভি ভাই?
স্বপ্নবাজ অভিঃ দুঃখপ্রহরী কালপুরুষের কখনো বিকেল হয়না ! আর ঈদ সে তো , নাগরিক জীর্ণতা , যথারীতি রাত্রিযাপন , অযত্নে ফেলে রাখা মশালটির কথা আর ব্যাক্তিগত আলাপন !
প্রবাসী পাঠকঃ ঈদ এলেই আপনাকে কঠোর প্র্যাকটিস করতে দেখা যায় এর কারণ তা কি?
স্বপ্নবাজ অভিঃ কোন এক পূর্ণিমায় আর শ্রাবণের শেষ বিকেলে হাওয়ায় ভাসতে থাকা ঘুড়িগুলো আমার বলতে হলে আপনাকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তা অর্জন করতে হবে। এর আগে ঈদের পর পর সামহোয়্যারইন বিবাহিত বনাম অবিবাহিত ব্লগার সিরিয়াস ক্রিকেট ম্যাচ ছিল। এবার ঈদ স্পেশাল : ব্লগারদের অংশগ্রহণে ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা প্রীতি ম্যাচ হচ্ছে। তাই জয়ের জন্য কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। আর বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা আজিব ধরণের কয়েকটি মানসিক রোগ এ আক্রান্ত। তাই একটু বাড়তি প্র্যাকটিস করে নিচ্ছি। আর আপনি আর্জেন্টিনা দলের গোল রক্ষক হয়ে প্র্যাকটিস না করে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেরাচ্ছেন কেন? জলদি প্র্যাকটিসে আসুন।
প্রবাসী পাঠকঃ না মানে অভি ভাই, আর্জেন্টিনা দলের ম্যানেজার মামুন ভাই আমাকে আজ তার সাথে দেখা করতে বলেছেন। তাই রাতের গাড়িতে সিলেট যাচ্ছি।
স্বপ্নবাজ অভিঃ অকে তাহলে যান। আর সবাইকে আমার পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাবেন। ম্যাচের শেষে আর্জেন্টিনার জয় এবং ঈদের আনন্দ একসাথে সেলিব্রেট করব।
আমাদের এবারের গন্তব্য নয়নাভিরাম সিলেট। কিছুদিন আগে কাভা ভাইয়ার পোস্টে সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের এবারের ভ্রমণে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে বেশি আকর্ষণ করছে চির তরুন ব্লগার মামুন রশিদ ভাই ( যদি ছলে বলে কৌশলে চির তরুন থাকার ফর্মুলাটা জানা যায়)। মামুন রশিদ ভাইকে খুঁজে পেতে আমাদের আসলে কন কষ্টই হয় নি। সিলেট শহরে নেমে শুধুমাত্র আমরা মামুন ভাইয়ের বাসার ঠিকানাটা একজনকে দেখাই। উনি ঠিকানাটা দেখেই আনন্দে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন, আপনারা চির তরুন মামুন ভাইয়ের বাসায় যাবেন। আপনারা কষ্ট করবেন কেন? আমি আপনাদের পৌঁছে দিচ্ছি। এই থেকেই আমরা আঁচ পাই, মামুন ভাই শুধুমাত্র ব্লগেই সকলের প্রিয় নয়। ব্যক্তিজীবনেও উনি অসম্ভব জনপ্রিয় একজন মানুষ। মামুন ভাইকে বাসায়ই পেয়ে গেলাম, উনি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
প্রবাসী পাঠকঃ মামুন ভাই , ঈদ মোবারক। কেমন আছেন? ঈদ কেমন কাটলো?
মামুন রশিদঃ এইতো ভাই, আল্লাহর রহমতে খুব ভালো কেটেছে। আপনাদের দোয়ায় আমাদের জীবনে বিয়োগান্তিক কোন কিছুর স্থান নেই। সব সময় সুললিত সুরে জীবনের সপ্তসুর বেজেই চলেছে। আপনারা এত কষ্ট করে আমার মত একজন সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন এতে আমি অনেক খুশি হয়েছি।
মামুন ভাইয়ার সঙ্গে আমরা আড্ডায় ব্যস্ত হয়ে উঠলাম। মামুন ভাই আমাদের বরফকুঁচি মিক্সড ফ্রুট ডেসার্ট বানিয়ে যেভাবে জিতে নিয়েছিল 'বেস্ট রেসিপি ফর ইফতার' অ্যাওয়ার্ড সেই গল্প শুনাচ্ছিল। এর মাঝেই গরুর ভুনা মাংস এবং চালের গুড়ির রুটি নিয়ে ভাবী প্রবেশ করলেন। এমনিতেই ভ্রমনের ক্লান্তি এবং তার উপর পেটের মধ্যে ডাইনোসরের বাচ্চার দৌর ঝাপ চলছিল। ভাবীর হাতের বানানো স্বাদের খাবার এর উপর একেবারে হামলে পরলাম। ভাবী মিড নাইট টকিঙ এ যোগ দেয়ার পর থেকে আলাপচারিতায় একটু ভিন্নতা আসলো। আপনারা যারা ইতিমধ্যে জাফরুল মবীন ভাইয়ের অংশটা পড়েছেন তারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমরা অলওয়েজ ভাবীদের পক্ষের লোক।
প্রবাসী পাঠকঃ ভাবী মামুন ভাইয়ার বিরুদ্ধে আমাদের কিছু অভিযোগ আছে, উনি আমাদের আপন মনে করেন না। দেখেন না, কেমন আপনি আপনি করে সম্বোধন করছেন।
ভাবীঃ আরে ওর কথায় তোমরা কিছু মনে করো না। বোকা মানুষ অতশত কি আর বুঝে। এই যে দেখছো না আমি কত সুন্দর তোমাদের তুমি করে বলছি।
প্রবাসী পাঠকঃ এই জন্যই তো আপনি আমাদের কাছে মামুন ভাইয়ার চেয়েও আপনজন।
মামুন রশিদঃ সাবধান হও পারমিতা! এদের মিষ্টি মিষ্টি কথায় তুমি যদি গোলে যাও তাহলে কিন্তু সামনে তোমার জন্য অমানিশাকাল অপেক্ষা করছে । মানুষজন একে অন্যকে হাড়ে হাড়ে চিনে। আর আমি এদের স্ট্যাটাসে- কমেন্টে চিনি। এরা যে কি পরিমাণ দুষ্টু তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।
ভাবীঃ সাবধান। আমার দেবরদের সম্পর্কে কোন নেগেটিভ কথা বলবে না। তুমি গল্পে গল্পে আত্মপরিচয় খোঁজো আর আমি খুঁজি হৃদয়ে হৃদয়ে। ওদের মত ভালো আর কেউ হতেই পারে না।
প্রবাসী পাঠকঃ থ্যাংকস ভাবী। ভাবী, মামুন ভাইয়ার ব্লগিং নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?
ভাবীঃ আমি তো খুব পজিটিভ ভাবে দেখি। ও যতক্ষণ ব্লগিং করে আমি শান্তিতে একটু টিভি দেখতে পারি। আর ব্লগিং এর মান নিয়ে যদি বলো তাহলে বলব শুন্য। বাংলা সাহিত্যের চিরায়ত 'লুল' নায়কদের নিয়ে সিরিজ লিখেছে, বাংলাদেশের সিনেমা : সর্বকালের সেরা দশ নিয়ে সিরিজ লিখেছে কিন্তু আমাদের সিরিয়াল নিয়ে কিছুই লিখে নি। এখন বলো , তাকে কি ভালো নাম্বার দেয়া যায়। আবার দেখো, ব্লগারস স্যাটেয়ার ড্রামাঃ সামু রাজার দ্যাশে লিখেছে- এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে লেখার কি দরকার। আমাকে নিয়ে গেলেই তো আমি সামুর সাম্রাজ্য দখল করে দেই। তবে আশার কথা কি জানো, তোমাদের ভাইয়া আমাকে কথা দিয়েছে সামনের মাসেই আমাদের সিরিয়াল নিয়ে একটা সিরিজ লিখবে। তখন হয়ত তাকে পাশ মার্ক দিতে পারি।
মামুন রশিদঃ আপনারা আমার কাছে এসেছেন নাকি আপনাদের ভাবীর কাছে এসেছেন তা বুঝতে পারছি না। আর সাক্ষাৎকার আমি দিলাম নাকি আপনাদের ভাবী দিল তাও বুঝতে পারছি না। যাই হোক, আপনার মুল্যবান সময় থেকে মাত্র দশ মিনিট সময় চাইছি । সামু ব্লগের সবাইকে জানাচ্ছি ঈদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আনন্দে, সাফল্যে এবং সুস্থতায় কাটুক আপনাদের জীবন।
ব্লগারদের ঈদের অভিজ্ঞতা এবং অনুভূতি জানার জন্য আমাদের এই কার্যক্রমে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করতে হয়েছে মাহমুদ ভাইয়ের জন্য। এমনিতেই তিনি একজন বন্ড এজেন্ট, তার উপর মাঝে মাঝেই মোবাইল ফোন বন্ধ করে ডুব দেয়ার অভ্যাস আছে। মাহমুদ ভাইয়ের সঠিক অবস্থান জানার জন্য আমাকে এক লিটার পানিতে এক ছটাক আদা মিশিয়ে খেতে হয়েছে। আদাজল খেয়ে মাঠে নামার পরই মাহমুদ ভাইয়ের অবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। মাহমুদ ভাইকে পাওয়া যায় আর এক ব্লগার ডি মুন ভাইয়ের বাসায়। যতদূর জানতে পারি, মাহমুদ ভাই গত দুই দিন যাবত মুন ভাইয়ের বাসায় অবস্থান করছেন। কিন্তু এক বারের জন্যও বাড়ি থেকে বের হন নি। এই নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে উনি বিচক্ষণতার সহিত প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। যদিও ঝাতির কাছে এটা মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন এই দুই দিন তিনি কি করেছেন? আশা করা যায় একদিন এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।
প্রবাসী পাঠকঃ ঈদের সময়টা কেমন কাটলো?
মাহমুদ০০৭ঃ ঈদের সময়টা অনেক ভালো কেটেছে। অনেকটা মিক্স প্যাকেজ - অণুগল্প , চোঙ্গা গল্প , অনুপদ্য , কবিতা , আউলা মনের বাউলা কথন সব কিছুর মিশ্রন আর কি। চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জে এসে পরিবারের সবার সাথে ঈদ উদযাপন করলাম, ঈদের জামাত, কোরবানি। রেগুলার সে মোবাইল নাম্বারটা ব্যবহার করি তা বন্ধ করে অন্য গোপন একটা নাম্বার দিয়ে তার সাথে কথা বলা। সব মিলিয়ে অসাধারণ।
প্রবাসী পাঠকঃ গোপন মোবাইল নাম্বার ব্যাপারটা ক্লিয়ার হল না মাহমুদ ভাই।
মাহমুদ০০৭ঃ ওহ ম্যান,কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেলেছি! এটা আসলে ভুলে বলে ফেলেছি। আপনারা আবার অন্য কিছু মনে করে বসবেন না যেন। সবচেয়ে ভালো হয়, এই অংশটা এডিট করে কেটে দিবেন প্লিজ।
প্রবাসী পাঠকঃ ঈদের এই ছুটিতে কি কি করলেন?
মাহমুদ০০৭ঃ এই ছুটির সময়ে তার সাথে দেখা করার কথা ছিল। সেই উদ্দেশ্যে রওইয়ানাও দিয়েছিলাম। ওহ ম্যান, আবার কি বলছি! এই লাইনটাও বাদ যাবে ভাই। আসলে এই ছুটিতে লেখালেখি নিয়ে অনেক ব্যস্ত ছিলাম। বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখা সিন্দুক থেকে আউলা মাথার বাউলা কথনগুলো বের করে এনেছি। লেখায় এবার ম্যাজিক দিয়ে গল্প - ফাঁদ পাতার ব্যবস্থা করেছি। দায় সারা লেখা না, একেবারে ইলিশ টাইপ। ঐ যে ফিলিপ্স বাত্তির টিভি এড এর মত। মাছের রাজা ইলিশ আর গল্প লেখকের রাজা মাহমুদ ০০৭।
প্রবাসী পাঠকঃ ভাই ছন্দ তো মিলল না।
মাহমুদ ০০৭ঃ আরে ভাই দিলেন তো, গল্প -মাটি করে। ছন্দের মিল দিয়া কি করবেন, ধুইয়া পানি খাইবেন। ছন্দ না দেখে ভাবটা দেখেন। মনে রাখবেন আমাকে দিয়ে গল্প - হবেই। এই মুহূর্তে ভাই খুবই ব্যস্ত আছি। মাথায় নতুন একটা গল্পের থিম এসেছে। এখনই লেখা শুরু করতে হবে। সবাইকে ঈদের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। মুন ভাই, আমার গোপন সিমটা কোথায়? ওহ সরি, আমার গল্প লেখার খাতাটা কোথায়?
মাহমুদ ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা যাই এহসান সাবির ভাইয়ের কাছে তার ঈদ অভিজ্ঞতা জানার জন্য। সাবির ভাই ব্যস্ততার কারণে অনেকদিন যাবত ব্লগে অনিয়মিত। তার সঠিক অবস্থান ট্রেস করাটা আমাদের জন্য কিছুটা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। আমরা যখন সাবির ভাইকে খোঁজ দ্যা সার্চ করছিলাম। তখনি মনে পড়ল সাবির ভাইয়ার কৃষ্ণচূড়া গাছ নিয়ে দুর্বলতার কথা। সঙ্গে সঙ্গেই আমরা কৃষ্ণচূড়া গাছের সন্ধানে নেমে পরি। অবশেষে আমাদের খোঁজাখুঁজির অবসান হয়। পেয়ে যাই আমাদের কাঙ্ক্ষিত কৃষ্ণচূড়া গাছ। একটু সামনে এগুতেই আমাদের কানে ভেসে আসে - এই সেই কৃষ্ণচূড়া গানটি। তখন তো আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত এ আর কেউ নয় মাদের সাবির ভাই।
প্রবাসী পাঠকঃ অবশেষে আপনাকে খুঁজে পেলাম সাবির ভাই।
এহসান সাবিরঃ আমারে আমি, রাতজাগা কোন দিনে; দিনক্ষন হারায় খুজি সারাক্ষনে । আমাকে খুঁজে পেতে আপনাদের মনে হয় অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এই ভালোবাসার প্রতিদান কি করে দেব? আপাতত লাল কৃষ্ণচূড়ার শুভেচ্ছা নিন।
প্রবাসী পাঠকঃ কৃষ্ণচূড়া নিয়ে আপনার এত দুর্বলতার কারণ কি জানতে পারি?
এহসান সাবিরঃ দেখুন আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে - হলুদ কৃষ্ণচূড়া। আমাদের একটু সচেতনতা বাঁচিয়ে রাখতে পারে কৃষ্ণচূড়া গাছটিকে। মনে করুন, ব্লগ থেকে যখন একটি ভালো পোস্ট ড্রাফট হয়ে যায় তখন যেমন শূন্যতার সৃষ্টি হয়। তেমনি প্রকৃতিতেও শুন্যতার সৃষ্টি হয়। আমাদের এই অবহেলার শাস্তি আমাদের একদিন পেতে হবে। শুধু কৃষ্ণচূড়া নয় আমি প্রকৃতিকে ভালোবাসি। আমার বাড়ির ছাদের গাছগুলো হয়তো দেখেছেন। গাছেদের সঙ্গে আমার আড্ডা আড্ডা চলে। এই গাছ আমায় শিক্ষা দেয় , বিশুদ্ধ হও অথবা হারিয়ে যাও। এখানেই স্রষ্টার কাছে প্রার্থনায় চোখ বুঁজে রই। এখানে কবিতায় সন্ধা হয় । প্রকৃতির কাছাকাছি এলেই বারবার একটি কথাই মনে হয়- হয়ে যাক নীল কষ্টগুলো আকাশের রং , মেঘ হয়েই ভেসে যাক তার কাছে নীল ভালবাসা হয়ে।
প্রবাসী পাঠকঃ মুগ্ধ হয়ে গেলাম সাবির ভাই। ভালোই তো আছেন তাহলে প্রকৃতির সাথে।
এহসান সাবিরঃ হ্যা ভাই , এই তো আমি ভালোই আছি। তবে একটা সমস্যা হচ্ছে। জানেন তো কিছু দিন আগে সামুতে একটা ভুতের উদ্ভব হয়েছিল। সেই ভুতটা ইদানিং আমাকে খুব বিরক্ত করছে। আমরা সবাই মিলে আসুন সামুর ভুত'টা কে ধরি। আর আমার পক্ষ থেকে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাবেন।
সবশেষে আমাদের গন্তব্য ছিল সুদূর নীলফামারী। আমিনুর ভাইয়ের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য এতটা দূরের পথ আমরা পারি দেই। যতক্ষনে আমরা আমিনুর ভাইয়ার বাসায় পৌছাই ততক্ষনে আমাদের শরীরের শেষ শক্তিটুকুও প্রায় শেষের পর্যায়ে। শরীরের শেষ শক্তিটুকু দিয়ে দরজায় নক করে অপেক্ষা করছি। দরজা খুলে আমিনুর ভাই আমাদের সামনে আসা মাত্রই বিশাল একটা ধাক্কা খেলাম। এই রকম অবস্থায় আমিনুর ভাইকে দেখব, তা কখনো কল্পনাও করি নি। আর্জেন্টিনার জার্সি পরিহিত অবস্থায় আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন সয়ং আমিনুর ভাই। বিস্ময়ের প্রথম ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠেই প্রথম প্রশ্ন করলাম, আপনার এই অবস্থা ক্যামনে হইল আমিনুর ভাই?
আমিনুর রহমানঃ ( হাহাকার ধ্বনি তুলে ) ভাই আমারে বাঁচা। তোরা আসছিস, আমি বুঝি এইবার বেঁচে যাব। তোদের ভাবী জোর করে আমাকে সকালে বার্সিলোনার জার্সি আর বিকালে আর্জেন্টিনার জার্সি পড়াচ্ছে। আমি তো একেবারে শেষ হয়ে গেলাম রে। বন্যাপীড়িত মানুষের সাহায্যার্থে - রাইচ বাকেট চ্যালেঞ্জ যেমন ভাবে করা হয়েছিল। ঠিক তেমনি করে আমাকে তোদের ভাবীর এই অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য কোন ইভেন্ট খোল তাড়াতাড়ি।
প্রবাসী পাঠকঃ ভাই একটু শান্ত হোন আগে। কি হইছে খুইল্যা বলেন?
আমিনুর রহমানঃ ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেই বললাম, আমি চলে এসেছি। তখন পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। ফ্রেস হয়ে একটু টিভির সামনে বসলাম। টিভিতে তখন বার্সিলোনার খেলা দেখাচ্ছে। আমি চ্যানেল চেঞ্জ করে শিশুদের গান এর অনুষ্ঠান ধরলাম। এই চ্যানেল চেঞ্জ করাটাই আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো। তোদের ভাবীর এই অত্যাচার তখন থেকেই শুরু। আমাকে এখন সব সময় বার্সিলোনা আর আর্জেন্টিনার জার্সি পরে থাকতে হচ্ছে।
ঠিক সেই সময়েই বসার ঘরে ভাবী প্রবেশ করলেন। আমরাও যেন একটু হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমিনুর ভাইয়ের মধুর শাস্তি দেখে ততক্ষনে আমাদের চোখে আনন্দের জল চলে আসার মত অবস্থা। ভাবীকে সালাম দিয়ে কুশলাদি জানতে চাইলাম।
ভাবীঃ আরে প্রবাসী পাঠক তুমি আসাতে অনেক খুশি হয়েছি। এই ঈদটা আমার জন্য অনেক স্পেশাল, একে তো তোমরা এসেছ তার উপর দেখ তোমাদের ভাইকে আর্জেন্টিনার জার্সি পড়িয়ে রেখেছি।
আমিনুর রহমানঃ দ্যাখ ভাই, জার্সি দিবে তো ভালো কথা। অন্তত মেসির জার্সি দিলেও তো মনে একটা সান্তনা থাকত যে এই মুহূর্তের বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের জার্সি পড়েছি। কিন্তু দ্যাখ, তোদের ভাবী দিয়েছে মাশ্চারানোর জার্সি।
ভাবীঃ দেখো ভাই, তোমাদের ভাই কি বলে? আজ পর্যন্ত টাক মাথার মেসিকে দেখেছো? তোমাদের ভাইয়ের জন্য মাশ্চারানোর জার্সিই উপযুক্ত, ঠিক কি না বল?
প্রবাসী পাঠকঃ অবশ্যই ভাবী আপনার কথার উপর কোন কথা নাই। এবারের ঈদ কেমন কাটল আপনাদের?
আমিনুর রহমানঃ আর ঈদ ভাই, আমার মত কারো যাতে ঈদ না কাটে, ঈদ যেন হয়ে উঠে সকলের জন্য আনন্দের।
ভাবীঃ( উচ্চস্বরে ) কি বললা?
আমিনুর রহমানঃ না মানে বললাম, এবারের ঈদে প্রতিটি শিশুর মুখে হাসি ফুটে উঠুক।
ভাবীঃ তোমারা কি করো, তোমাদের ভাই ফেসবুকে মেসি, আর্জেন্টিনা আর বার্সিলোনার বিপক্ষে স্ট্যাটাস দেয় কিভাবে? সব কাজ যদি আমাকেই করতে হয়। তাহলে আমার এত বিশাল দেবরের সৈন্য দল কি করবে?এখন থেকে এই ধরনের স্ট্যাটাস দিলে সরাসরি আমার কাছে বলবা। দেখবা তোমাদের ভাইয়ের প্রোফাইল পিকচারে থাকবে মেসির ছবি আর আর্জেন্টিনার গ্রুপ ফটো থাকবে কভার ফটোতে। চলো আগে ভিতরে আসো, তোমাদের খাবার দাবারের ব্যবস্থা করি।
অগত্যা কি আর করা, আমিনুর ভাইকে সান্তনা দেয়ার বদলে ভাবীর হাতের রান্না করা সুস্বাদু খাবার খাওয়ার জন্যই চলে গেলাম। আমিনুর ভাইদের বাসা থেকে চলে আসার সময় আমিনুর ভাই কানে কানে একটা কথাই বললেন, আমার মুখ বন্ধ এখন তোরাই এই ভাইটার জন্য কিছু একটা কর। আর সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে দিস।
বিঃদ্রঃ পোস্টে উল্লেখিত দৃশ্য বর্ণনা এবং কথোপকথন সম্পূর্ণ কাল্পনিক।
উৎসর্গঃ সাধারণত ব্লগের পোস্টগুলো আমরা আমাদের ব্লগারদেরকেই উৎসর্গ করে থাকি। কিন্তু এই পোস্ট এর উৎসর্গ একটু ব্যতিক্রম। এই পোস্ট তিন জন ভাবীকে উৎসর্গ করা হল। যাদের কথাগুলো এই পোস্টে বর্ণনা করা হয়েছে। আপনারা সব সময় ভালো থাকুন। ভাইয়াদের পাশে থেকে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যান। এবং এই মুহূর্তে মামুন ভাই, আমিনুর ভাই এবং মবীন ভাইয়ের মার খাওয়ার হাত থেকে আমাকে বাঁচান। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।