কবিতায় এপার ওপার ৩ এর সূচীপত্র আর মলাটের নিরবতা ভেঙ্গে মুখরিত করতে থাকল মোহরকুঞ্জের দূর্বাঘাস।
মলাটবদ্ধ কোন বইয়ে এটাই আমার প্রথম কোন ছাপার অক্ষরে কবিতা প্রকাশ পেল। যার মাধ্যমে দুই বাংলার এই মেলবন্ধন। কিছু উচ্ছ্বাসী কিছু নবীন কিছু তুখোড় কবিদের ভিড়ে এই যাত্রা।
মোহরকুঞ্জঃ বাংলাদেশ বইমেলা কলকাতা ২০১৮ এর স্থান।
৪ নভেম্বর ২০১৮, বিকেল থেকে রাত হ্যা সময়টা উল্লেখ করছি কারণ এটা কোন সাধারণ সময় নয়, এই সময়ের মাঝে যে ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের এক মেলবন্ধন হয়েছিল তা কি কেউ আমরা আগে কখনো ভাবতে পেরেছি, আসলেই না। বাংলাদেশ বই মেলা কলকাতা ২০১৮, মোহরকুঞ্জ হয়ে গেল ঐতিহাসিক সময়ের সাক্ষী, দুই বাংলার কাঁটাতারের বেড়া আর সীমান্তের পাহারা কোন কিছুর ই আর কোন চিহ্ন ছিল বলে মনে হয়নি। শুধুই কবিতা শুধুই এক বাংলা আর একঝাক তারুণ্যের কবিতার শব্দে বর্ণে একাত্ব হয়ে যাওয়ার এক মোহময় লগ্ন। কবিতায় এপার ওপার নিয়ে যে সেতুটি গড়া হয়েছে তার পুরো পিলার কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাদেক সরওয়ার যার উপর দিয়ে আমরা পেয়েছি এক সীমাহীন বন্ধুত্বের বিশাল আঙ্গিনা, নিজেকে বড়ই ক্ষুদ্র মনে হয় এই প্রয়াসের কাছে, আমার কলকাতায় যাওয়ার কথা ৬/৭ তারিখের দিকে, হঠাত সাদকের ফোন কলকাতা থেকে, ভাই আপনি যেহেতু আসবেন এক কাজ করেন ৩ তারিখ রওনা দিয়ে দেন, ৪ তারিখ বিকেলে আমরা যারা কবিতায় এপার ওপারের লেখক সবাই এক সাথে আড্ডা দেব। আমি আর কোন কিছু না ভেবেই হ্যা বলে দিলাম, জানিনা কোন ভাল লাগা থেকে। তবে এ ভালোলাগা বৃথা যায়নি।
আমি ভাবতেও পারিনি এমন এক আন্তরিক ভাল লাগায় ভরপুর এক আড্ডা অপেক্ষা করছে। সাদেকের সাথে আমার এর আগে ফোনে কথা হলেও এই প্রথম সরাসরি সাক্ষাত, সাদাতের (সামু ব্লগার ও বর্তমানে আমাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় তরুণ লেখক ও নির্মাতা সাদাত হোসাইন) মত আমিও বলি ও যে কি কাজ করেছে কবিতায় এপার ওপার করে সেটা ও নিজেও ও মনে হয় জানেনা।
কবিতায় এপার ওপার এবারের টা নিয়ে ৩য় সংকলন বের হল, এর আগের ১ ও ২ নিয়ে এত বেশি হইচই হয়নি কিন্তু ৩য় সংখ্যায় এসে ব্যাপার টা কতটা ভালোবাসার বই হয়ে গিয়েছে সেটা সাদেক টের পেয়েছে কবিতা পাঠানোর সংখ্যা দেখে। প্রথমে ৩০-৩৪ জনের লেখা ছাপা হবে ঠিক করলেও সেটা শেষ পর্যন্ত ঠেকেছে ৬৭ জনে, বোঝাই যাচ্ছে এ ভালোবাসা ফিরিয়ে দেয়ার মত না। হ্যা সেটাই হল শেষ পর্যন্ত।
আমি কলকাতা পৌঁছলাম ১২ টায় হোটেলে উঠে সাদেক জানালাম ভাই চলে আসছি, সে বলল ৩ টা থেকে আমার একত্রিত হওয়া শুরু হবে, আপনি চলে আসেন।
এর আগে বহুবার কলকাতা গেলেও এবার ই প্রথম আমি বই মেলায় যাচ্ছি হ্যা শুধুই বই মেলায় কবিতার এপার থেকে ওপারে আর কিছু না। মনের ভেতর একটা চাঁপা উত্তেজনা নিয়ে মেলায় রওনা হলাম, আধা ঘণ্টায় পৌঁছে গেলাম। ৪ তারিখ মোহরকুঞ্জ দুপুরের শুরুতে হালকা পাতলা ভিড় স্টল গুলোর সামনে। সাদেকের সাথে প্রথম দেখা সেখানেই দেখতেই জড়িয়ে ধরল ভাই, এর পর নানান কথা সাথে ছিল জয় নন্দী।
কবিতায় এপার অপার-৩ এর সূচীপত্রের এক বিশাল টিম একে একে মলাটের নিরবতা ভেঙ্গে মুখরিত করতে থাকল মোহরকুঞ্জের দূর্বাঘাস। সবাই আসতে লাগল। রুদ্র গোস্বামী, অভীক রায়, সুজয়নীল বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বারিষওয়ালা, পল্লবী নন্দন, নবারুণা গাঙ্গুলী, অনুব্রতা গুপ্ত, স্বাস্ত্যনীক বৃৎনিকাস, সনজু আইচ, রশ্মি বসু, অহিদ্রিলা, অঙ্কুর মজুমদার, শবনম পারভিন, নিবেদিতা রায়, শ্রীজিতা দাস আরও অনেকে, এক তারার হাট হাসি আড্ডায় মুখর হতে হতে মুগ্ধতা বেড়েই চলছে। এ মেলা যেন কেবল কবিতার মেলা।
ছবিঃ দুই বাংলায় সমান জনপ্রিয় আমাদের কবি পিয়াস মজিদ
কোন ভাবেই মনে হচ্ছে না যে এই মানুষ গুলোর সাথে প্রথম দেখা। এই সব ভালোবাসার কি নাম দেয়া যায়, আমার জানা নেই শুধু জানি আত্মার এই মেলবন্ধন এমন এক সুতোয় বাঁধা পড়েছে যার থেকে আমরা কেউ কখনো আলাদা হতে পারব না। বুকের ভেতর কোথায় যেন একে অন্যের সাথে শীতের মত জাঁকিয়ে বসেছে, কিছু কুয়াশা কিছু উষ্ণতা এক চাঁদরে মুড়ে রেখেছে, সামনে এক উদ্দিপ্ত আগুন যার পানে আমরা চেয়ে আছি এক নতুন স্বপ্নের দিশা নিয়ে, প্রায় তের চৌদ্দ বার কলকাতা এসেছি কেবল এবার ই দেশে ফিরতে দীর্ঘশ্বাস গুলো অনেক বেড়ে গিয়েছে, আমি আর তা লুকাই না, চোখের কোণে চিকচিক করা জলটা ঝাপসা করে দিচ্ছে অপরিসীম মুগ্ধতার ফেলে আসা স্মৃতি গুলো। এই মুগ্ধতার কোন শেষ নেই, এই মায়ার কোন কমতি নেই, এখন আর বলতে পারছিনা কলকাতা থেকে ঢাকায় ফিরছি শুধুই বলা যায় ঘর থেকে ঘরে ফিরছি। সব গুলো ভাল থেকো এমন ভালো যেন খুশিতে চোখে জল আসে।
ছবিঃ বর্তমানে তরুণ কবিদের মাঝে তুমুল জনপ্রিয় কবি অভীক রায়।
ছবিঃ আমরা অনেকে ও কবি রুদ্র গোস্বামী (হলুদ পাঞ্জাবী)
ছবিঃ মেলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী আমাদের শিশু একাডেমীর সদস্যরা।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৫০