অধুনা সভ্যতার প্রতিপান্বিত পাদপীঠ আমেরিকার আবিষ্কারক হিসাবে আমরা এতোকাল ধরে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের নাম জেনে এসেছি।এমনকি আমরা এটাও জানি ভাস্কো-ডা-গামা এই উপমহাদেশে সর্বপ্রথম নোঙ্গর করেছিলেন।
কিন্তু বর্তমান আবিস্কৃত গবেষণায় এটা দৃঢ়ভাবে প্রমানিত হয়েছে যে, এসমস্ত পৃথিবী কাঁপানো নাবিকদের পথ দেখিয়েছিলেন মুসলিম সাগর ও ভূবিজ্ঞানীরাই।মুসলমানদের আবিষ্কৃত উপাত্ত ও গবেষণা জ্ঞান নিয়ে তারা ভূ-আবিষ্কারের গোটা কৃতিত্বটাই নিজেদের থলিতে ভরতে চেয়েছেন। আজ যুগান্তকারী প্রত্নতাত্বিক ও বস্তুনিষ্ঠ গবেষনা দ্বারা দিবালোকের মত পরিষ্কার হয়ে গেছে যে,যেকোনো বিচারে এ সকল মহাদেশ আবিষ্কারে দুর্লভ কৃতিত্ব মুসলিম বিজ্ঞানীদেরই।এমনকি খোদ আমেরিকার বিজ্ঞানীরাই তা স্বীকার করেছেন এবং প্রফেসরদের অনুরোধ জানাচ্ছেন যেন আমেরিকার আবিষ্কারক হিসাবে কলম্বাসের নাম না বলা হয়।
কলম্বাস আমেরিকা অভিযানে বেরুবার পূর্বে নানাভাবে মুসলিম বিজ্ঞানীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। দ্বাদশ শতক পর্যন্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের শক্তিশালী ভাষা হিসাবে পরিচিত ছিল আরবি ভাষা।কলম্বাস জানতেন আরবরা সুদীর্ঘ ৫০০ বছর পৃথিবী ভ্রমণ করেছেন এবং এ সম্পর্কে বিস্তর অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান সঞ্চয় করেছেন। পৃথিবীর বিশাল বিশাল শক্তিতে তারা পরাভূত করে শাসন করেছেন শত শত বছর ধরে। বিস্তৃত ভূ-বিজয়ের তাগিদে সত্তাগত জ্ঞান প্রেরণার কারনে মুসলমানরা ভূ-মানচিত্র,পাহাড়সহ নদ-নদীর অবস্থান ও জলবায়ু সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেছেন। ৭১১ থেকে ১৪৯২ ঈসায়ী সাল পর্যন্ত ইউরোপের স্পেন ও পর্তুগালে মুসলিম শাসন অব্যাহত ছিল। এ সময়কার বিকশিত বিজ্ঞান, শিল্পকলা ও সংস্কৃতি ইউরোপকে প্রভাবান্বিত করেছিল দারুণভাবে। আঁধারের বিয়াবনে নিমগ্ন অনগ্রসর ইউরোপকে সভ্য জাতি হিসাবে পরিণত করেন আরব মুসলমানরা।
আঁধারের পরিমন্ডলে লুকিয়ে থাকা বিশ্বের মানচিত্র প্রথম প্রণয়ন করেন আরবরা- যা তাঁতীর ছেলে কলম্বাসকে নতুন জয়ের নেশায় বিভোর করে তোলে। মুসলমানদের লব্ধ জ্ঞানের ফলশ্রুতিতে রচিত অনেক আকর গ্রন্থ তার সিদ্ধান্তে প্রেরণা সৃষ্টি করে। কেননা জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিচিত্র বিষয়ে বিরচিত মুসলমানদের গ্রন্থের বিরাট সম্ভার স্পেন ও পর্তুগালের লাইব্রেরীসমূহে সংরক্ষিত ছিল। ক্যানারী দ্বীপপুঞ্জ পাড়ি দেওয়ার সময় কলম্বাসের কাছে যে দিকদর্শন যন্ত্রটা ছিল সেটা আনুমানিক চারশো বছর পূর্বে আরব বণিকরা ব্যবহার করতো। এছাড়া তার সাথে ছিলো আরবদের আবিষ্কার করা বহু যন্ত্রপাতি। কথা কিন্তু এখানেই শেষ নয়।আশ্চর্যের বিষয় হলো বর্তমানে গবেষণার মাধ্যমে কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারে আরো বিস্ময়কর তথ্য জানা গেছে। আমেরিকা আবিষ্কারে কলম্বাস শুধু মুসলমানদের নানাবিধ জ্ঞানের সহায়তা নিয়েছিলেন তা নয় বরং কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের বহু পূর্বেই আরব মুসলমানরা আমেরিকার মাটিতে পা রেখেছিল। যা আমেরিকাসহ গোটা বিশ্বের মানুষের ভৌগোলিক বিশ্বাসের ভিত্তিমূলকে প্রচন্ড ঝাঁকুনি দিয়েছে। খোদ আমেরিকার মিনেসোটা ডাকোটা এবং উইসকিনসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকগণ ঘোষণা করেছেন, কলম্বাস আমেরিকার প্রকৃত আবিষ্কারক নন। এমনকি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন তারা শিক্ষার্থীদের কাছে আমেরিকার আবিষ্কারক হিসাবে কলম্বাসের নাম উল্লেখ না করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা কেন্দ্র, মিউজিয়াম এবং রাশিয়ার কিছু বিজ্ঞানীও এ অভিমত রেখেছেন যে, আমেরিকার পূর্ব অধিবাসীরা ছিল এশীয়, এমনকি তাদের সংস্কৃতি ও সভ্যতা ছিল প্রাচ্যের। এ তথ্যের সপক্ষে তারা জোরালো প্রমাণ হিসাবে তুলে ধরে রিত্তডী গ্রাণডোর তীরে প্রাপ্ত কিছু নরকঙ্কাল। যেগুলো আরবদের গঠনের সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ।
জার্মানীর নু'রেমবার্গে জন্মগ্রহণকারী নাবিক ও ভূগোলবেত্তা মার্টিন বেহাইম (১৪৩৬-১৫০৭) একটি ভূগোলক ১৪৯২ সালে পৃথিবীকে উপহার দেন।স্মর্তব্য, একই সালে স্পেনের মুসলমানদের পতন ঘটে। এ গোলকে লিখিত আছে ৭৩৪ খৃস্টাব্দে এনটিলিয়া আবিষ্কৃত হয়েছিল এবং অপর্টো থেকে আগত এক ধর্মাধ্যক্ষ এখানে স্থায়ীভাবে বাস শুরু করেন। বেহেইম ব্রাজিলসহ আরো কিছু দ্বীপ চিহ্নিত করেছেন এবং বলেছেন, ১৪১৪ সালে একজন স্পেনীয় পর্যটক এনটিলিয়া ভ্রমণ করেন।(The truth about Columbus : C Duff, London-1936)
উক্ত তথ্য হতে স্পষ্ট বুঝা যায়, কলম্বাসের পূর্বে উল্লিখিত স্থানগুলো আবিস্কৃত হয়েছিল। কিন্তু এনটিলিয়া কোথায় ছিল? কি তার পরিচয়? তার পরিচয় দিতে গিয়ে একটি বিশ্বকোষ লিখেছেঃ
Antilles, great chain of its west indies comprising the Archipelago enclosing The Caribbean sea and G. of Mexico.
অর্থাৎ "এনটিলিয়াস হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বীপসমূহের শৃঙ্গল শ্রেনী,দ্বীপপুঞ্জ
মণ্ডিত সমুদ্রের অন্তর্গত, যা কেরিবিয়ান সাগর ও মেক্সিকো উপসাগর দ্বারা
পরিবেষ্টিত"। উল্লেখ্য, কলম্বাস প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেই পা রেখেছিলেন।
পরবর্তীতে মেক্সিকোর তীরে আবিষ্কৃত কঙ্কালগুলাে আরবী গঠনের সাথে মিলে
যায়। এমনকি কলম্বাস আমেরিকায় পৌঁছে সেখানে আরবীয় রীতিনীতির প্রচলন
দেখতে পেয়েছিলেন। কাজেই বলা যায়, কলম্বাসের বহু পূর্বে সপ্তম শতকের মধ্যে
মুসলমানরা ওখানে পৌছেছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে ব্রাজিল ' শব্দটিও আরবী শব্দ
থেকে উৎপন্ন এবং Antill অর্থের সাথে গভীর সম্পৃক্ত।
কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের কয়েক শতাব্দী পূর্বে কিভাবে মুসলমানরা এ
অঞ্চলে পেীছে গিয়েছিলেন তার বর্ণনা পাওয়া যায় বিখ্যাত ভৌগােলিক আল
ইদ্রীসীর (খৃঃ ১১৮৪) ভ্রমণ বৃত্তান্তসহ আরো কিছু ঐতিহাসিক সূত্র থেকে। এতে
দেখা যায়, আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে অবস্থিত দ্বীপসমূহের অনেকগুলােতে
চতুর্দশ শতকের মধ্যেই মুসলমানরা পৌঁছে দিয়েছিল এবং প্রধানত সমুদ্রের সীমানা
অন্বেষণ করতে গিয়েই তাদের জাহাজ প্রথম আমেরিকার উপকূলে ভিড়েছিল।
রাশিয়ান পঞ্চিতদের বক্তব্য হলাে- It was the Arabs and not the Europians
who first discovered America and that the Arabs had reached Armerica
after ariving in Indonesia." অর্থাৎ ইউরোপীয়রা নয় বরং আরবীয়রা প্রথম
আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলাে এবং আরবীয়রা ইন্দোনেশীয়ায় আসার পর
আমেরিকায় পৌছে।
চলবে....................
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২২