গল্পকার নই, তাই ঐ বস্তুটি সহজে আসে না৷ কাজেই একটি বাস্তব ঘটনা বলি৷ বহুদিন ধরেই ভাবছি লিখব এ সম্পর্কে, তথ্য নেব, কিন্তু পারছি না৷
রোকেয়া হলে বছর খানেক আগে আমার এক বন্ধুর ঢোকার সুযোগ হয়েছিল_ ঠিক ঢোকা নয়, যাবতীয় তথ্য ঘেঁটে ঘেঁটে পড়ছিল রোকেয়াদের জীবনসংবাদ৷ সেই সূত্রে একটি সংবাদও পেয়েছিলাম আমি, শুনে আঁতকে উঠেছিলাম। ঘটনাটি সামান্যই_ ষাটের দশকের একটি মেয়ের কথা৷ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল সে, কিন্তু করতে পারেনি৷ একেতো ষাটের দশকের উত্তাল রাজনৈতিক আবহ, তার উপর শিল্প-সংস্কৃতির চর্চার বিকাশোন্মুখ যুগ_ এসব বহু কারণ হয়তো প্রভাব ফেলেছিল, না হলে ফাঁসির দড়ি ঝুলিয়ে ঝুলে না-পড়ে , দড়ির নিচে বসে কেন সে ভাববে?
মেয়েটি_ তাকে মেয়েই বলি যেহেতু শেষ পর্যন্ত এটিই তার পরিচয়, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো সে ছিল এস.এম.হলের ছাত্র৷_ অনাবাসিক নয়, আবাসিক। প্রথম দুবছর কাটার পর তাকে রোকেয়া হলের আবাসিক ছাত্রী করা হয়েছিল৷_ মেয়েদের হলে যাওয়ার, কক্ষেপ্রবেশ করার চাপা উত্তেজনা আছে প্রায় সকল ছেলেরই_ যারা দূরে থেকে দেখে_ একঝাক রুমে নীরবে কিংবা ব্যস্ত পদেক্ষেপ ফেলছে কোন নারী_ উদ্ধত বুকে, পর্দাহীন৷ কিন্তু একেবারে মেয়েদের হলেই এটাচ হবে_ একই রুমে থাকবে দিনের পর দিন এবং রাত, একই বাথরুম, টয়লেট ব্যবহার করবে, টয়লেটে রাখা ঝুড়িতে অন্যদের মতো সে ফেলবে অনাবশ্যক প্যাড_ সে কি কখনো ভেবেছিল?
আমরা যারা পুরুষ_ বা বলা যায় এখনো পুরুষ আছি_ তারা কি ভাবতে পারি আমাদেরই একজন পূর্বতনকে, যে একই সঙ্গে দুটো লিঙ্গের ভাগ্য বা যন্ত্রণা ভোগ করেছিল? একজন নারী পুরুষ হয়ে উঠলে কেমন অনুভব করবে জানি না, যেহেতু আমি নারী নই, কিন্তু আমারই মতো একজন পুরুষ একদিন যদি হঠাত্ আবিষ্কার করে সে ক্রমশ নারী হয়ে উঠছে, তাদের মতো পোশাক পরছে, নেল পালিশ মাখছে, মুখে ডাল মাখানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাহলে দড়ি নিয়ে গাছে ঝুলে পড়া কতটা-যে স্বাভাবিক আমি বুঝি।_ এই সেদিনই দেখেছিলাম, কোন এক বিদেশি পুরুষ গর্ভে সন্তান পুষছে, কবে কোন এক পত্রিকায় পড়েছিলাম মাতৃহীন সন্তানকে দুধ খাওয়াতে কোন এক পিতা হরমোন সেবন করছে_ সেদিন আশ্চর্য হইনি_ যেহেতু এসব সংঘটিত হয়েছিল তাদের ইচ্ছায়৷ নেটে সুইজারল্যান্ডের ৩৯ বছর বয়সী এক পুরুষের নারী হওয়ার কাহিনী পড়েছিলাম, নারীত্বকে সে নাকি বেশ উপভোগও করছিল৷ বিয়ের জন্য বরও খুঁজছিল সে৷ সেটি হয়তো সুইজারল্যান্ডে সম্ভব যেখানে নারী আর পুরুষ সামাজিক শক্তিসূত্রের নিয়ন্ত্রণের খুব কাছাকাছি৷ কিন্তু যেখানে পুরুষ হওয়াটা শক্তিসূত্র ধারকের চিহ্নায়ক, সেখানে যে-ছেলে একবার ভোগ করেছিল পুংলিঙ্গের স্বাদ_ নারীকে যে জেনেছিল দৃষ্টিনন্দনের অথবা চুম্বনের সামগ্রী, ভোগ হিসেবে যাকে পেয়েছিল সে_ তার অবস্থানে দাঁড়িয়ে সে দেখবে এখন তার স্তন মর্দন করে, ঊরু ভেদ করে তাকে ভোগ করছে তারই মতো আরেক পুরুষ! নিজের পুরুষ সত্তাটিকে এই প্রথম সে যখন অনুভব করতে দেখে অপরের মাঝে, তার কাছে কি এটা বীভত্স মনে হয়?