ফ্রেডরিক পাওলাস(যার হাত ধরে ২য় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানীর পতন শুরু)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
ফ্রেডরিক উইলহেম আর্নেস্ট পাওলাস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম এক জার্মান সেনানায়ক ছিলেন। ম্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোড় ঘুড়িয়ে দেওয়া স্ট্যালিনগ্রাদের যুদ্ধের পরাজিত জার্মান অধিনায়ক ছিলেন ফ্রেডরিক পাওলাস। তিনি জার্মান সেনাবাহিনীর সবোর্চ্চ পদমর্যাদা ফিল্ড মার্শাল র্যা ঙ্ক ধারী একজন অফিসার ছিলেন। তিনি জার্মান আর্মিতে ১৯১০ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ কারি আর্মি গ্রুপ জার্মান সিক্সথ আর্মির অধিনায়ক ছিলেন। অপারেশন ব্লু বাস্তবায়নের জন্য স্ট্যালিনগ্রাদের যুদ্ধে জার্মান সিক্সথ আর্মি পরাজিত হয়। যা ছিলে জামার্নির জন্য ভয়াবহ। স্ট্যালিনগ্রাদে জার্মানি ২,৭০,০০০ জন্য হারায়। ও তার মিত্ররা সব মিলিয়ে ৭,৪০,০০০ হাজার সৈন্য প্রান হারায় স্ট্যালিনগ্রাদের যুদ্ধে।
পাওলাস ১৯৪৩ সালের ১৩ জানুয়ারী স্ট্যালিনগ্রাদে সোভিয়েত বাহিনীর কাছে আত্ম সমর্পন করে। এর পূর্ব দিন ১২ জানুয়ারী হিটলার পাওলাসকে ফিল্ড মার্শাল পদে পদন্বতি দেয়। হিটলার আশা করেছিল পাওলাস আত্ম সমর্পনের পর আত্ম হত্যা করবে। কারন পাওরাসই ইতিহাসের প্রথম জার্মান ফিল্ড মার্শাল যে আত্মসমর্পন করে। আশ্চার্য জনক ভাবে সোভিয়েতদের হাতে বন্দি হবার পরই পাওলাস নাজিদের এক কট্টর সমালোচকে পরিনত হন এবং সোভিয়েতরা এটাকে কাজে লাগায়। সোভিয়েতদের অর্থে চালিত ন্যাশনাল কমিটি ফর ফ্রি জার্মানিতে তিনি যোগদান করেন। যুদ্ধের পর তিনি ১৯৫৩ সালে মুক্তি লাভ করেন। এবং তৎকালিন পূর্ব জার্মানিতে বসবাস শুরু করেন।
প্রথম জীবন
তৎকালীন জার্মান সেনাবাহিনীতে অনেক অফিসারের সন্তানরা ভর্তি হলেও পাওলাস সেনাবাহিনীতে এসেছিলেন এক সাধারন পরিবার থেকে। তার পিতা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। তিনি নৌবাহিনীতে ভর্তি হবার স্বপ্ন নিয়ে ক্রেসলেইন মেরিন একাডেমিতে যান এবং তিনি সেখানে ক্যাডেট হিসাবে ভর্তি হবার অযোগ্য ঘোষিত হন।
পরবর্তিতে তিনি মারবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে ভর্তি হন। এবং সেখানে পড়াশোনা শেষ না করেই জার্মান পদাতিক বাহিনী বা সেনাবাহিনীতে যোগদেন।
সেনা জীবন
মারবার্গ থেকে তিনি কোন ডিগ্রি না নিয়েই তিনি ১৯১০ সালের ফেব্রুয়ারীতে ১১১তম পদাতিক রেজিমেন্টে অফিসার ক্যাডেট হিসাবে যোগ দেন। তিনি ১৯১২ সালের ৪ জুলাই এলিনা রেসট্টি সেলসেওকে বিয়ে করেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পাওলাসের রেজিমেন্ট ফ্রান্স অভিযানে অংশ নেন। এবং তিনি বসন্তে ভসগস এবং এরোস অভিযানে অংশ নেন। পরবর্তিতে অসুস্থতার জন্য তিনি যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে স্টাফ অফিসার হিসাবে যোগদান করেন। তিনি আলপেনকর্পসের স্টাফ অফিসার হিসাবে যোগদান করেন এবং মেসিডেনিয়া, ফ্রান্স, সার্বিয়াতে দায়িত্ব পালন করেন। এবং যুদ্ধের পর ১ লাখ সদস্য বিশিষ্ট জার্মান সেনাবাহিনীতে থেকে যান এবং ক্যাপ্টেন হিসাবে পদদ্বতি লাভ করেন।
অস্ত্রচুক্তির পর পাওলাস ফ্রিকপর্স এর হয়ে যুদ্ধপরবর্তি সময়ে ব্রিগেড এডজুটেন্ড হিসাবে কাজ করেন। তিনি ভার্সাই চুক্তি পরবর্তি সময়ে জার্মান সেনাবাহিনীতে থেকে যান। তানি স্টুডগার্ডের ১৩মত ইনফেন্ট্রি ডিভিশনের কোম্পানী কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তিতে তিনি জার্মান সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পালন করেন। এবং ১৯৩৪ থেকে ১৯৩৫ পর্যন্ত তিনি একটি মটোরাইজ ডিভিশনের কমান্ডার বা জিওসি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এবং ১৯৩৫ সালের অক্টোবরে প্যানজারের হেডকোয়ার্টারে জেনারেল লুটজের চিফ অব স্টাফ হিসাবে হিসাবে যোগদান করেন। এবং হিটলারের সুনজরে আসেন। এই সময় জার্মান জেনারেল লুটজ নতুন করে ৩টি প্যানজার ডিভিশন তৈরি করেন।
১৯৩৮ সালের ফেব্রুয়ারীতে পাওলাস ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদ্বনত্বি পান এবং জেনারেল গুদেরিয়ানের দায়িত্বে থাকা ১৬তম আর্মি কর্পসের দায়িত্ব নেন। যা জেনারেল গুদেরিয়ান আরেক জেনারেল লুটজের কাছ থেকে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। জেনারেল গুদেরিয়ান তার জার্নালে পাওলাসকে একজন আদর্শ সৈনিক, মেধাবী, পরিশ্রমী হিসাবে উল্লেখ করেন। তিনি তার কঠোর মানসিকতার প্রসংসা করেন। যদিও তিনি তার দেশের প্রতি ভালবাসা ও কমান্ডের অভিঞ্জতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি ১৯৩৯ সালে মেজর জেনারেল পদে পদ্বন্বতি পান এবং দশম জার্মান আর্মির দায়িত্ব নেন। দশম আর্মি পরবর্তীতে নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম ও পোল্যান্ড অপারেশনে অংশ নেন। এবং দশম আর্মি পরবর্তীতে সিস্কথ আর্মীতে রুপান্তর হয়।
পাওলাস ১৯৪০ সালে আগষ্টে লে.জেনারেল হিসাবে পদ্বন্বত্বি পান এবং কয়েক মাস পরেই তিনি জার্মান আর্মীর অপারেশন হেডকোয়ার্টারের ডেপুটি চিফ অব স্টাফের দায়িত্ব গ্রহন করেন। তিনি সোভিয়েতের বিরুদ্ধে পরিচালিত অপারেশন বার্বারোসার পরিকল্পনার সাথে জড়িত ছিলেন।
১৯৪২ সালের দক্ষিন রাশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে।
স্ট্যালিনগ্রাদ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোড় ঘুরে যায় স্ট্যালিনগ্রাদের জার্মান বাহিনীর পরাজয়ের মাধ্যমে। জার্মান সেনাবাহিনীর অপারেজয় যে মনোভাব যুদ্ধের প্রথম দিকে গড়ে উঠেছিল স্ট্যালিনগ্রাদে তা ধূলিসাৎ হয়।
১৯৪১ সালের শেষের দিকে পাওলাস ফুল জেনারেল হিসাবে পদ্বন্বত্বি পান। তিনি সেই সাখে নতুন করে সংগঠিত জার্মান সিক্সথ আর্মির অধিনায়ক নির্বাচিত হন। তিনি তার অধিনে থাকা সিক্সথ আর্মিকে ১৯৪২ সালে স্ট্যালিনগ্রাদ দখলের জন্য নেতৃত্ব দেন। এবং ১৯৪২ সালের জানুয়ারীতে তিনি রাশিয়া পৌছান। পাওলাসের সৈন্যরা স্ট্যালিনগ্রাদের দখল নেবার জন্য সোভিয়েত সেনাদের সাথে ৩ মাসের প্রানপনে লড়াই করে এবং ১৯৪২ সালের নভেম্বরে জার্মান সিক্সথ আর্মি স্ট্যালিনগ্রাদের বেশির ভাগ অংশ দখল নিতে সংক্ষম হয়। যদিও দখলের ২ মাসের মাথায় পাওলাস তার পুরো সিক্সথ আর্মিসহ সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে আত্মসমর্পন করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের আর্মি দ্বারা পরিচালিত অপারেশন ইউরেনাসের মাধ্যমে পাওলাসের পরাজয় তরান্বিত হয়।
এডলফ হিটলার পাওলাসকে নির্দেশ দিয়েছিলেন শেষ শক্তি দিয়ে স্ট্যালিনগ্রাদে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে। যদিও তিনি সোভিয়েত আর্মির দ্বারা পুরোপুরি অবরোধের মধ্যে ছিলেন তারপরও তিনি তার শেষ চেষ্টা করেছিলেন সেখানে তার অবস্থান বজায় রাখার জন্য। এই সময় তাকে উদ্ধারের জন্য আর্মি গ্রুপ ডন ফিল্ড মার্শাল এরিখ ফন মনস্ট্যাইনের নেতৃত্বে ডিসেম্বরে অপারেশন পরিচালনা করে কিন্তু রাশিয়ানদের দ্বারা তা সম্পূর্ন ব্যর্থ হয়। ফলে পাওলাসের অধিনে থাকা সিক্সথ আর্মি প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও গোলাবারুদের সংকটে পড়ে। এই সময় পাওলাস হিটলারকে বলেন তিনি সোভিয়েতদের অবরোধ ভেঙ্গে বের হয়ে আসতে পারবেন কিন্তু হিটলার ফিল্ড মার্শাল এরিখ ফন মনস্ট্যাইনের মন্ত্রনায় তার এই কাজ করার অনুমতি দেন নি। এরিখ ফন মনস্ট্যাইন হিটলারকে বলেন এই মহূর্তে একটা কাজই করার আছে তা হলো স্ট্যালিনগ্রাদে অবস্থান করা এবং এটাই সবোত্তম। আমরা তাকে বের করে আনবো। এই সময় অবস্থা এতোই খারাপ দ্বাড়িয়েছিল যে আর্মাড ডিভিশনের কাছে ১২ মাইল যাওয়ার মতো জ্বালানী ছিল। পরবর্তীতে হিটলার তার অবরোধ ভেঙ্গে বের হয়ে যাবার জন্য অনুমতি দিলেও তিনি জ্বালানী স্বল্পতার কারনে তা আর করতে পারেন নি। পরবর্তীতে নতুন আর্মি চিফ অব স্টাফ জেনারেল কূর্ট জিটলার হিটলারকে বলেন স্ট্যালিনগ্রাদ থেকে বের হবার সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। অবরোধ ভেঙ্গে ফেলাও সম্ভব নয়।
পরবর্তী দুই মাস পাওলাসকে নিজের সাথেই যুদ্ধ করতে হয়েছে। তিনি পর্যদুস্ত হয়ে পরেছিলেন সব দিক থেকে, তার কাছে অস্ত্র ছিল না, গোলাবারুদ ছিল না। ছিল না জ্বালানী। তারউপর রাশিয়ান ঠান্ডায় মারা যাচ্ছিল হাজার হাজার জার্মান। তার উপর মরার উপর খারার ঘাঁ হিসাবে ছিল সোভিয়াত রেড আর্মি। এই স্ট্যালিনগ্রাদের যুদ্ধে দুই দলই হারিয়েছিল প্রচুর সৈন্য ও অর্থ।
স্ট্যালিনগ্রাদে পরাজয়ের পর পাওলাসকে জিঞ্জাসাবাদ করছেন ডন ফ্রন্টের সোভিয়াত জেনারেল রোকোভস্তি, মার্শাল ভরনভ, অনুবাদক নিকোলাই ডেয়াটলেঙ্কো।
অবশেষে জানুয়ারীর ৮ তারিখে সোভিয়েত রেড আর্মির ডন গ্রুপের অধিনায়ক জেনারেল কনস্ট্যাইন রকোভস্তি যুদ্ধ বিরতীর ঘোষনা দেন ওবং পাওলাসের নিকট আত্ম সমর্পনের আহ্বান জানান। আত্মসমর্পনে সাধারন দফাসমূহ ছিল যেমন, রেশন দেওয়া, আহতদের স্বাস্থ সেবা, কাওকে পদচ্যুত না করে যার যার সামরিক র্যাহঙ্ক অনুসারে বাসস্থানের ব্যবস্থা করা এবং যুদ্ধের শেষে তাদের ইচ্ছা অনুসারে যেকোন দেশে ফেরত পাঠাবার কথা বলা হয়। জেনারেল কনস্ট্যাইন রকোভস্তি জানতেন পাওলাসতে এই শর্ত মানতে হবে কারন তার কাছে আর প্রতিরক্ষার মত কিছু নেই। তাছাড়া সেই সময় পাওলাসের আশা করার মত কিছু ছিলও না। কারন বিমান যোগে সাহায্য আসার কথা থাকলেও তা আসছিল না। তাছাড়া জার্মান সৈন্যদের বেশির ভাগেরই শীতের জামা-কাপড় ছিল না। তাই পাওলাস হিটলারের কাছে আত্মসমর্পনের অনুমতি চায়। হিটলার সেই প্রস্তাব নাকচ করেন এবং শেষ সৈনিকের জীবন না যাওয়া পর্যন্ত স্ট্যালিনগ্রাদের মাটি ছাড়তে নিষেধ করেন।
জেনারেল পাওলাসের শেষ ভরসা এয়ার সাপ্লাইয়ের আশা ১৯৪৩ সালের ২৫ জানুয়ারী শেষ করে দেয় রাশিয়ানরা। রাশিয়ান এয়ারফোর্সের আক্রমনে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয় স্ট্যালিনগ্রাদের জার্মান এয়ারফিল্ড। সেই সময় রাশিয়ান রেড আর্মি আবার তাকে আত্মসমর্পন করতে বলে। পাওলাস আবার হিটলারের সাথে কথা বলেন, এবং হিটলার তাকে আদেশ করেন মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত স্ট্যালিনগ্রাদের মাটি কামড়ে ধরে রাখতে। সাহায্য আসছে। ৩০ জানুয়ারী পাওলাস হিটলারকে জানান তার সৈন্য বাহিনী যুদ্ধের অসমর্থ হয়ে পড়েছে। তাদের আর সামরিক কমান্ডে ধরে রাখা যাচ্ছে না। সেই দিন হিটলার রেডিওতে পাওলাসের ফিল্ড মার্শাল থেতাবে ভূষিত করেন, হিটলার মনে করেছিলেন এই পদ্বন্বতি পাওলাস স্ট্যালিনগ্রাদের নিয়ন্ত্রন ধরে রাখতে উৎসাহ যোগাবে। তাছাড়া হিটলার খেয়াল করেছিলেন কোন জার্মান ফিল্ড মার্শালের আত্মসমর্পনের রেকর্ড নেই। তিনি মনে করেছিলেন আত্মসমর্পনের পূর্বেই পাওলাস আত্মহত্যা করবেন। যদি পাওলাস তা করেন নি। তাই আজও জার্মান সেনাবাহিনীতে র্ঘনাভরে পাওলাসের নাম উচ্চারন করা হয়।
আত্মসমর্পনের পর স্ট্যালিনগ্রাদের নিজ হেডকোয়ার্টার থেকে বের হয়ে আসছেন বামে ফিল্ড মার্শাল পাওলাস, মাঝে তার এইড কর্নেল উইলিয়াম এডাম এবং ডানে লে. জেনারেল আর্থার স্চিমাড।
কিন্তু হিটলারের সব আশা ভঙ্গ করে দিয়ে পাওলাস ১৯৪৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারী তার স্টাফ অফিসারসহ রেড আর্মির কাছে আত্মসমর্পন করে। এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোড় ঘুরে যায় এই জার্মান পরাজয়ের কারনে। সারা বিশ্বে যে অপরাজেয় জার্মান মনোভাব ঘরে উঠেছিল রাশিয়ানরা তা ধূলিসাৎ করে দেয়। পাওলাসের আত্মসমর্পনের কথা জানার পর হিটলার তার নিজ বাসভবনে জার্মান সেনানায়কদের নিয়ে এক বৈঠক আহ্বান করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সাত জন জার্মান ফিল্ড মার্শাল। তিনি যুদ্ধের প্রথম দুই বছরে সাতজন ফিল্ড মার্শালকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। সেই সভায় হিটরার তার সেনানায়কদের বলেন,
“শান্তির সময়ে জার্মানীতে প্রতিবছর ১৮ থেকে ২০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। তার মত একটা পদে থাকার পর, যার নির্দেশে সাহসের সাথে লড়াই করে ৫০ থেকে ৬০ হাজার সৈন্য মারা গেল। সেই লোক কিভাবে বলিভেশিক শয়তানদের কাছে আত্মসমর্পন করলো।”
খ্রিষ্টধর্মের রোমান ক্যাথলিক মতের অনুসারে পাওলাস আত্মহত্যাকে নিন্দার চোখে দেখতেন। হিটলার যে তার আত্মহত্যা কামনা করছে এটা বুঝতে পেরে তিনি বন্দি অবস্থায় রেড আর্মির জেনারেল পাফারকে বলেছিলেন, “আমি এক বোহেমিয়ান(ভবঘুরে) কর্পোরালের কথায় আত্মহত্যা করবো না।“ উল্লেখ্য হিটলার প্রথম বিশ্বযুদ্ধে একজন কর্পোরালের দায়িত্ব ছিলেন। আরেক সোভিয়াত এনকেভিডি(পরবর্তিতে কেজিবি)কর্মকর্তার কাছে দেয়া জবানবন্দিতে বলেন, হিটলার আমাকে আত্মহত্যা প্ররোচনা দেয়ার জন্যই ফিল্ড মার্শাল উপাধি দিয়েছিল। আমি তার কথায় আত্মহত্যা করার কোন কারন দেখি না। এছাড়া পরাজয় জেনেও আমি আমার সৈন্যদের গুলির মুখে দ্বার করানোর জন্য ক্ষমা চাইছি।”
যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তার ভূমিকা
পাওলাসকে প্রথমে সোভিয়েতদের সাহায্য করার জন্য বলা হলে তিনি র্ঘনা ভরে তা প্রত্যাখ্যান করেন, কিন্তু বিদ্রোহী জার্মান আর্মি অফিসারদের দ্বারা পরিচালিত হিটলারকে হত্যার উদ্দেশ্যে করা ২০ জুলাইএর বোমা হামলা ব্যর্থ হলে জার্মান আর্মির হিটলার বিরোধী অফিসারদের প্রতি হিটলার কঠোর অবস্থান নেন। এসময় তিনি জড়িত আর্মি অফিসারদের মৃত্যু দন্ডাদেশ দেন। হিটলারের এই কার্যক্রম পাওলাস ভালভাবে নিতে পারেন নি, তিনি সোভিয়েতদের অর্থ সহায়তায় পরিচালিত ন্যাশনাল কমিটি ফর জার্মান এ যোগ দেন এবং জার্মানদের আত্মসমর্পনের জন্য আহ্বান জানান। পরবর্তিতে নুরেমবার্গ ট্রায়ালে সে রাজসাক্ষি হন। তিনি সোভিয়েতে ২ বছরের বেশি সময় কারাগারে থাকার পর ১৯৫৩ সালে মুক্তি পান। পাওলাস সোভিয়েত ব্লক ভূক্ত পূর্ব জার্মানীতে বসবাস শুরু করেন।
নুরেমবার্গ ট্রায়ালের সময় এক সাংবাদিক তাকে স্ট্যালিনগ্রাদে আটককৃত ৯৩ হাজার সৈন্যর খবর জানতে চায়। তিনি বলেন, সৈন্যদের পিতা, মাতা, সন্তানদের বলো তারা ভালো আছে। যদিও স্ট্যালিনগ্রাদে আটককৃত ৯৩ হাজার সৈন্যের মাঝে অর্ধেক সাইবেরিয়া যাবার পথেই মারা গেছে, বাকি সবাই মারা গেছে সাইবেরিয়ান প্রিযন ক্যাম্পে আর বাকিরা মাত্র ৬০০০ হাজার বাড়ি ফিরতে পেরেছিল।
১৯৫৩ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত দিনি পূর্ব জার্মানীর ড্রেসডেন শহরে বাস করতেন। তিনি পূর্ব জার্মানীর সেনাবাহিনীর সিভিলিয়ান ইতিহাসবীদের কাজ করতেন। ১৯৫৬ সালে তিনি প্যারালাইজ হয়ে পড়েন। ১৯৫৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারী তিনি ড্রেসডেনে মারা যান। স্ট্যালিনগ্রাদে আত্মসমর্পনের ঠিক ১৪ বছর পর তিনি মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পন করেন। তার মৃতদেহ বেদিনে তার স্ত্রীর কবরের পাশে সমাহিত করা হয় যিনি ১৯৪৯ সালে মারা গিয়েছিলেন। তার স্ত্রী তার স্বামীর শেষ সানিধ্য পেয়েছিলেন ১৯৪২ সালের গ্রীস্মে।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন