আমেরিকান উপন্যাসিক ডিন কোন্টজ রচিত ‘The Eyes of Darkness’(অন্ধকারের চোখ) উপন্যাসটি সাম্প্রতিক সময়ে সারা বিশ্বে ঝড় তুলেছে। বইটি রচিত হয়েছে ১৯৮১ সালে। অনেক পাঠক মনে করছেন বইটিতে ২০২০ সালে করোনা ভাইরাস আগমনের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
তাহলে দেখা যাক বইটিতে আসলে কি আছে। গল্পে বলা হয়েছে একজন মা তার ছেলেকে এক নেতার সাথে ক্যাম্পিং ট্যুরে পাঠিয়েছিলেন। এই নেতা পূর্বে ১৬ বার পাহাড়ে ক্যাম্পিং ট্যুরের নেতৃত্ব দিয়েছে কোন রকম দূর্ঘটনা ছাড়াই। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল ক্যাম্পের কর্মী, নেতা, ড্রাইভারদের কোনো কারণ ছাড়াই মৃত্যু হচ্ছিল। শোকসন্তপ্তা মা ধীরে ধীরে এই সত্যটি মেনে নিতে শুরু করেছিলেন যে, তার ছেলে ড্যানিরও মৃত্যু হয়েছে। তারপর তিনি ক্রোদ্ধ ষাড়ের মতো কোথাও না কোথাও আক্রমণ শুরু করলেন, আবার এও বলে বেড়াতে লাগলেন যে ড্যানি মরেনি। তিনি এ জাতিয় কথা চক দিয়ে বোর্ডে লিখে রাখলেন এবং বিভিন্নভাবে প্রকাশ করতে লাগলেন। ড্যানির মা তার নতুন বন্ধু এলিয়ট স্ট্রাইকারকে সঙ্গে নিয়ে অনুসন্ধানে বেরিয়েছিলেন, আসলে সেদিন কি ঘটেছিল তা জানতে।
রয়টার্সের ভাষ্যমতে, ২০১৯ সালে চীনের উহান শহরে আবিষ্কৃত করোনা ভাইরাস রোগটি এই উপন্যাসে বর্ণিত জীবাণু অস্ত্র ‘উহান-৪০০’ এর সাথে দারুণভাবে মিলে যায়। করোনা ভাইরাসের সাথে উপন্যাসের জীবাণু অন্ত্র ‘উহান-৪০০’ এর কিছু পার্থক্য থাকলেও বলা হচ্ছে কোন্টজ এর উপন্যাসটি মারাত্মক ভাইরাস আগমনের পূর্বাভাস দিয়েছে।
উপন্যাসটির স্ক্রিনশট পৃষ্ঠায়, ডোম্বি নামের একটি চরিত্র একজন চীনা বিজ্ঞানী সম্পর্কে একটি গল্প বর্ণনা করেছে যিনি আমেরিকাতে "উহান -400" নামে একটি জৈবিক অস্ত্র নিয়ে এসেছিলেন।
বিষয়টা বুঝার জন্য ডোম্বি বলেছিলেন, "আপনাকে বিশ মাস পিছিয়ে যেতে হবে। প্রায় তখনই লি চেন নামে একজন চীনা বিজ্ঞানী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন এবং চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বিপজ্জনক নতুন জৈবিক অস্ত্রের একটি ডিস্কেট রেকর্ড নিয়ে আসেন। তারা এটিকে 'উহান-৪০০' বলে। কারণ এটি ওহান শহরের বাইরে তাদের আরডিএনএ ল্যাবে তৈরি করা হয়েছিল এবং এটি গবেষণা কেন্দ্রটিতে তৈরি মানবসৃষ্ট অণুজীবের চারশতম কার্যকর স্ট্রেন ছিল। "
ডোম্বি আরো বলছেন যে, বেশির ভাগ জৈবিক এজেন্টগুলোর তুলনায় ‘উহান-৪০০’ এর গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা রয়েছে। আরো একটি বিষয় হলো এই ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ৪ ঘণ্টার মধ্যে এটি সংক্রমণ ঘটায় এবং আপনি হয়ে ওঠতে পারেন এর বাহক। এটি অবিশ্বাস্য ভাবে সংক্ষিপ্ত সময়। যারা আক্রান্ত হয় তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মারা যায়। ‘উহান-৪০০’ সংক্রমণে মৃত্যুর হার একশ শতাংশ।
কিন্তু করোনভাইরাসের ক্ষেত্রে অনুরূপ ঘটতে দেখা যায় না। প্রথমত, করোনা ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত লোকদের আক্রান্ত হওয়ার পাঁচ দিন পরে এবং সর্বদা প্রায় দুই সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণগুলি বিকাশের প্রবণতা দেখা যায়।
দ্বিতীয়ত, করোনাভাইরাসের মৃত্যুর হার 100% এর কাছাকাছিও নয়।
ভাইরাসটি মারাত্মক হতে পারে, তবে এটি বেশিরভাগ বয়স্ক এবং যারা দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে, কেবল তারাই গুরুতর ঝুঁকির সম্মুখীন হয়।
বিশেষজ্ঞগণ বিশ্বব্যাপী ভাইরাসটির মৃত্যুর হার প্রায় ৩% থেকে ৪% হবে বলে ধারণা করছেন, যদিও তারা এই সংখ্যাটি কমে যাওয়ার আশা করছেন।
করোনা বা কভিড-১৯ ভাইরাসটির প্রথম প্রাদুর্ভাব চীনের উহান শহরে হলেও, এটি যে ল্যাবে তৈরি জীবাণু অস্ত্র তার কোনো দালিলিক প্রমাণ কারো হাতে নেই। যা কিছু প্রচারনা চলছে তা অনুমান এবং গুঞ্জন ছাড়া আর কিছু নয়।