ঢাকাই মসলিন ।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
ঢাকাই মসলিন আর নেই। কিন্তু মসলিন এখনো ঢাকার গর্বের প্রতীক। কেবল ভারতীয় শাসকের অন্ত:পুর নয়, মসলিন মাতিয়ে রেখেছিল রোমান সাম্রাজ্য, মধ্যপ্রাচ্য, চীন এবং ইউরোপের বাজার। ১৮৫১ সালে লন্ডনের প্রদর্শনীতে মসলিন বিপুল প্রশংসা লাভ করে, সেখানকার পত্র পত্রিকায়ও বেশ আলোচনা হয় ঢাকাই মসলিন নিয়ে। মসলিন আজ নেই, তবে মসলিনের ঐতিহ্য নিয়ে টিকে আছে জামদানী।
কথিত আছে যে চল্লিশ হাত লম্বা এবং দুই হাত চওড়া মসলিন সাধারণ আংটির ভেতর অনায়াসে প্রবেশ করানো যেত। মসলিন তৈরিতে যে বিশেষ সূতা ব্যবহৃত হত তার এক পাউন্ডের দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াইশ মাইল হত।
নামকরণ
মসলিন বাংলা, ফারসী বা সংস্কৃত শব্দ নয়; উৎপত্তির বিষয়টি পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। ইরাকের মসূলে এক ধরনের সূক্ষ্ণ বস্ত্র তৈরি হত; এর সাথে তুলনা করে ঢাকাই মসলিনের নামকরণ হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
তৈরি
ঢাকা এবং এর আশেপাশের এলাকাগুলোয় তাঁত শিল্পের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। এই তাঁত শিল্পের চরম উৎকর্ষের একটি প্রমাণ হিসেবে হাজির করা যায় মসলিনকে। ফুটি নামে বিশেষ ধরনের তুলা থেকে মসলিন তৈরি হত। অবশ্য অন্য তুলাও ব্যবহৃত হত। আর্দ্রতা মসলিন বুননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাই অনেক তাঁতী নৌকায় বসে বুননের কাজটি করতেন। আবার সূতার সূক্ষ্ণতাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত বাড়ির কাজে হাত দিতে শুরু করেনি এমন শিশুরা সূতা তৈরির কাজ করত। তাদের নরম হাতে সূতার সূক্ষ্ণতা বজায় রাখা সহজ হত।
অবশ্য সব মসলিন একই রকম হত না। কাপড়ের সূক্ষ্ণতা, পুরুত্ব, উপাদান, ইত্যাদির ওপর মসলিনের দাম নির্ভর করত। বলাবাহুল্য অভিজাতরা সেরা মসলিনটি বেশি দামে কিনে নিতেন।
বিভিন্ন নাম ছিল বিভিন্ন ধরনের মসলিনের:
-মলমল-সূক্ষ্ণতম বস্ত্র
-ঝুনা- স্থানীয় নর্তকীদের ব্যবহৃত বস্ত্র
-রঙ্গ- স্বচ্ছ ও জালিজাতীয় বস্ত্র
-আবি-রাওয়ান- প্রবাহমান পানিতুল্য বস্ত্র
-খাস- বিশেষ ধরনের মিহি বা জমকালো
-শবনম- ভোরের শিশির
-আলাবালি- অতি মিহি
-তনজিব- দেহের অলঙ্কার সদৃশ
-নয়ন সুখ- দর্শন প্রীতিকর
-বদন খাস- বিশেষ ধরনের বস্ত্র
-শিরবন্দ-পাগড়ির জন্য
-কামিজ- জামার কাপড়
-ডোরিয়া- ডোরা কাটা
-চারকোণা- ছককাটা বস্ত্র
-জামদানি- নকশা আঁকা
হারিয়ে যাওয়া
সে সময় মোঘল সম্রাট ও স্থানীয় নওয়াবদের পৃষ্ঠপোষকতায় মসলিন শিল্পের বেশ প্রসার ঘটে। তারা মসলিনের বড় ক্রেতাও ছিলেন। মসলিন বাণিজ্যের জন্য ঢাকায় বিভিন্ন ইউরোপীয় বণিকের আগমন ঘটে। সে সময় ঢাকায় ইউরোপীয় পণ্যের বিশেষ চাহিদা না থাকায় ইউরোপীয়রা নগদ টাকা এবং সোনা-রুপা নিয়ে আসতে থাকে। তবে ধীরে ধীরে স্থানীয় শাসকগণ রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় পড়ার কারণে মসলিনের পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ হয়, অভিজাত ক্রেতাও হারায় ঢাকাই মসলিন। পলাশীর যুদ্ধের পর কোম্পানী এবং কোম্পানী নিযুক্ত দেশীয় কর্মচারীদের নিগ্রহ তাঁতীদের অবস্থাকে আরও শোচনীয় করে তোলে।
এ সময় ইউরোপীয় বস্ত্রকে সুবিধা দিতে বৈষম্যমূলক শুল্ক ব্যবস্থা চালু করা হয়। এছাড়া শিল্পের উন্নতিও মসলিনের পতন ডেকে আনে। কথিত আছে যে ঢাকাই মসলিন উৎপাদন বন্ধ করতে তাঁতীদের আঙ্গুল কেটে নেয়া হয়েছিল।
বিশেষ তথ্য
সে সময় ভারতে প্রস্তুতকৃত অন্য সূক্ষ্ণ বস্ত্রও ইউরোপে মসলিন নামে পরিচিত ছিল। তবে ঢাকাই মসলিন তার গুণের কারণে বিশেষ জায়গা করে নেয়।
==========
সংগৃহীত।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন