আজকে আমি বিদ্রুপকারীদের মোকাবেলার জন্য হাদিসের ফয়সালা এবং পবিত্র কোরানের ফয়সালা নিয়ে তুলনামূলক একটা আলোচনা করবো । আপনার এই আলোচনার শেষে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কোন পথে মুসলমানদের আগাতে হবে ।
উভয় ফয়সালার মুল উদ্দেশ্য হোল ইসলাম ধর্ম নিয়ে ব্যাঙ্গ বিদ্রুপকে থামিয়ে দেওয়া বা নিস্তেজ করে দেওয়া ।
প্রথমে আমরা হাদিসের উপদেশ দিয়ে ব্যাঙ্গ বিদ্রুপকে নিস্তেজ করে দেওয়া নিয়ে আলোচনা কোরবো , তাহোলে আমরা কিছু হাদিস দেখি --
(১) আবু রাফে নামের এক ইহুদিকে রাসুল (সা.) এ জন্যই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন, সে রাসুল (সা.)-এর বিরুদ্ধে সব সময় কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করত। আল্লামা ইবনে কাছির (রহ.) আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে ইমাম বোখারি (রহ.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন- রাসুল (সা.) আবু রাফেকে হত্যা করার জন্য বেশ কজন আনসারি সাহাবিকে নির্বাচিত করলেন এবং হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আতিককে তাঁদের দলপতি নিয়োগ করলেন। আবু রাফে রাসুল (সা.)-কে কষ্ট দিত এবং এ কাজে অন্যদের সাহায্য করত।
(২) হজরত ইকরামা (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত আলী (রা.)-এর খিদমতে কয়েকজন জিনদিককে (ধর্মদ্রোহী) উপস্থিত করা হলে তিনি তাদের আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেন। এ খবর হজরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর কাছে পৌঁছলে তিনি বলেন, আমি হলে তাদের আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিতাম না। রাসুল (সা.)-এর নিষেধ থাকার কারণে। তিনি বলেন, তোমরা আল্লাহর শাস্তি দ্বারা কাউকে শাস্তি দিও না। তবে অবশ্যই আমি তাদের হত্যা করতাম। কারণ রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি স্বীয় ধর্ম ইসলাম ত্যাগ করবে তাকে হত্যা করো। (বোখারি, জামউল ফাওয়ায়েদ ১/৪৮৪)
জিনদিক ওই সব মোনাফেককে বলা হয়, যারা রাসুল (সা.)-এর জামানার পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত ওপরে ওপরে নিজেকে মুসলমান প্রকাশ করবে; কিন্তু তার অন্তরে থাকবে না ইমানের লেশমাত্র।
(৩) যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করবে তোমরা তাকে হত্যা করো। (কানজুল উম্মাল-১/২৩)
(৪) মুজাহিদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হজরত ওমর (রা.)-এর দরবারে এমন এক ব্যক্তিকে আনা হলো, যে রাসুল (সা.)-কে গালি দিয়েছে। হজরত ওমর (রা.) তাকে হত্যা করেন। অতঃপর বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা বা কোনো নবীকে গালি দেবে তোমরা তাকে হত্যা করো। (আসসারিমুল মাসলুল-৪/৪১৯)
(৫) আল্লাহ তায়ালার কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব ওই ব্যক্তি, যে ইমান আনার পর কুফরি করে। (কানজুল উম্মাল-১/২৩)
(৬) ওই জাতির ওপর আল্লাহর গজব অবতীর্ণ হোক, যারা রাসুল (সা.)-এর চেহারা মোবারককে আহত করে। (কানজুল উম্মাল ৫/২৬২)
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সুতরাং হাদিসের আলোকে বিদ্রুপকারীকে হত্যা করতে হবে , খোবের সাথে প্রতিবাদ করতে হবে , আন্দোলন করতে হবে , জিহাদ করতে হবে ইত্যাদি ।
এবার আমরা দেখব, হাদিসের ফয়সালা অনুযায়ী , বিদ্রুপ প্রতিহত করতে মুসলমান কতখানি সফল হয়েছে ?
প্রথমে কিছু নাস্তিক ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে ।
তারপরে ফলাফল হোল -- বাকি নাস্তিক ব্লগাররা নিরাপদ জায়গায় চলে গেছে এবং ফেক আইডি তৈরী করে , বিদ্রুপ এর মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে । এখন নাস্তিক ব্লগাররা প্রতিদিন বিদেশে বসে ফেসবুকে ইউটিউবে লাইভ শো করছে এবং বিভিন্ন ভাবে বিদ্রুপ করে যাচ্ছে ।
তাদের লাইভে মমিন মুসলমানরা অকথ্য ভাষায় গালাগালি হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তারা থামছে না । এই সব মমিনদের আচরনে তারা আরো আনন্দ পাচ্ছে এবং মহা উৎসাহে তাদের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে ।
হাদিসের ফয়সালা অনুসরন করে এই সব মমিনরা চিৎকার করে যাচ্ছে কিন্তু কিছুতেই বিদ্রুপ থামানো যাচ্ছে না ।
আপনারা নিশ্চয়ই স্প্যানিস বুল ফাইট দেখেছেন , যেখানে একটা গোল চত্বরে একটা শক্তিশালি হিংস্র ষাড় ছেড়ে দেওয়া হয় , তারপর কয়েক জন মেটারডো ভিতরে ঢুকে লাল কাপড় মেলে ধরে ষাড়টা ক্ষেপিয়ে দেয় এবং সাথে সাথে ষাড়টা ক্ষিপ্ত হয়ে শিং বাগিয়েে মেটারডোদের আক্রমণ করে, তার শিং এর একটা আঘাতে নির্ঘাত মৃর্তু কিন্তু শেষ মুহুর্তে মেটারডো ডজ মেরে সরে যায় , কোন ভাবে ষাড় মেটারডোকে আঘাত করতে পারে না । এটাই এই খেলার আনন্দ এবং হাজার হাজার মানুষ এই খেলা দেখতে আসে ।
আপনার কি ভেবে দেখেছেন বিদ্রুপকারিরা হাদিস পন্থি মমিনদের সাথে ঠিক এই ধরনে একটা বুল ফাইট গেম খেলছে । তারা ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ করে এই মমিনদের ক্ষেপিয়ে দিচ্ছে , এরপর তারা চিৎকার চেচামেচি করে হত্যার হুমকি দিয়ে তেড়ে আসছে কিন্তু নিরাপদ স্হানে বসে থাকা বিদ্রুপকারিদের একটা টোকাও দিতে পারছে না এবং এই মাশকার করে তারা মজা লুটাচ্ছে ।
নিত্য দিন নতুন নতুন ইসু নিয়ে এসে বিদ্রুপ করে যাচ্ছে ।
সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি হাদিসের ফয়সালা অনুসরন করে বিদ্রুপকারিদের থামানো যাচ্ছে না এবং তারা স্প্যানিস বুল ফাইটের মত একটা খেলাতে মেতে আছে ।
রসূলকে (স) ব্যঙ্গ করার জন্য উনার আদেশে ২ জন নারী সহ অন্তত: দশজন ব্যঙ্গকারীকে হত্যা হয়, হাদিস অনুসারে - (১) কাব বিন আশরাফ, (২) ইবনে খাত্তাল, (৩) খাত্তালের দুজন নর্তকী বালিকা (ড্যান্সিং গার্লস) ফারহানা ও কারিবা-দের একজন, (৪) আবু রাফে, (৫) হুয়াইরিদ ইবনে লুকাইদ, (৬) কা'ব বিন জুহাইর, (৭) উকবা বিন মুয়ীদ, (৮) নাদার বিন হারিস, (৯) উম ওয়ালিদ ও (১০) আসমা বিনতে মারওয়ান।
এবার আমরা দেখবো বিদ্রুপ মোকাবেল করার জন্য কোরানের ফয়সালা কি এবং কোরান কি বলে
সুরা মোজ্জামেল ( ৭৩--১0 ) কাফেররা যা বলে, তজ্জন্যে আপনি সবর করুন এবং সুন্দরভাবে তাদেরকে পরিহার করে চলুন।
সুরা নিসা আয়াত ১৪0- আর কোরআনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতি এই হুকুম জারি করে দিয়েছেন যে, যখন আল্লাহ তা’ আলার আয়াতসমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও বিদ্রুপ হতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গান্তরে চলে যায়। তা না হলে তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। আল্লাহ দোযখের মাঝে মুনাফেক ও কাফেরদেরকে একই জায়গায় সমবেত করবেন।
সুরা আল আনাম ( ৬--৬৮)
যখন আপনি তাদেরকে দেখেন, যারা আমার আয়াত সমূহ নিয়ে উপহাস করে, তখন তাদের কাছ থেকে সরে যান যে পর্যন্ত তারা অন্য কথায় প্রবৃত্ত না হয়, যদি শয়তান আপনাকে ভূলিয়ে দেয় তবে স্মরণ হওয়ার পর জালেমদের সাথে উপবেশন করবেন না।
সুরা আহযাব ( ৩৩ -৪৮)
আপনি কাফের ও মুনাফিকদের আনুগত্য করবেন না এবং তাদের উৎপীড়ন উপেক্ষা করুন ও আল্লাহর উপর ভরসা করুন। আল্লাহ কার্যনিবার্হীরূপে যথেষ্ট।
সুরা ক্কাফ (৫০-- ৩৯) অতএব, তারা যা কিছু বলে, তজ্জন্যে আপনি ছবর করুন এবং, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে আপনার পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করুন। --
আপানার নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন উপরের কোরানের আয়াত গুলোতে ইগনোর করা, চুপ থাকা, কোন প্রতিক্রীয়া না দেখানো বা পাত্তা না দেওয়ার উপদেশ দেওয়া হয়েছে ।
সুরা আহযাব (৩৩-৫৭) যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি। --- এই আয়াতে শাস্তি দানকারি স্বং আল্লাহ তালা কোন মানুষ নহে ।
দেখুন সুরা হিজরে আয়াত ৯৫ তে আল্লাহ কি বোলছেন -- বিদ্রুপকারীদের জন্য আমিই আপনার পক্ষ থেকে যথেষ্ট"----- সুতরাং এই আয়াত স্পষ্ঠ করে বলেছে বিদ্রুপকারীদের আল্লাহ নিজে শাস্তি দিবেন ।
আল্লাহর দৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অপরাধ সত্ত্বে ও এ অপরাধের জাগতিক কোন শাস্তির বিধান নেই বরং মানুষ যাদেরকে আল্লাহতায়ালার সমকক্ষ দাঁড় করিয়েছে তাদেরকে পর্যন্ত মন্দ বলতে বা গালমন্দ করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন।
ধর্মঅবমাননার ধৃষ্টতার আরেকটি উদাহরণ দেখুন- পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন- ‘তাদের যখন বলা হত, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তখন তারা ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করত এবং এরা বলত, আমরা কি এক উন্মাদ কবির কথায় আমাদের উপাস্যদেরকে পরিত্যাগ করব?’ (সুরা সাফফাত: ৩৬) এখানে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য বিষয় হলো, সবচেয়ে সম্মানিত, নবীকূল শিরোমণি, খাতামান্নাবেঈন রাসুলকে (সা.) ধৃষ্টরা ‘উন্মাদ’ বলার আস্পর্ধা দেখিয়েছে (নাউযুবিল্লাহ)। তা সত্ত্বেও এক্ষেত্রে আল্লাহপাক কোন জাগতিক শাস্তি প্রদানের বিধানের উল্লেখ করেননি।
বিশ্বনবীর (সা.) বিরুদ্ধে কাফেররা বিভিন্ন সময় কটূক্তি করতো (নাউযুবিল্লাহ)। এ সম্পর্কে কোরআনে উল্লেখ আছে যে, ‘এরা বিস্ময়বোধ করছে যে, এদেরই নিকট এদেরই মধ্য হতে একজন সতর্ককারী এসেছে এবং কাফেররা বলে, ‘এ তো এক জাদুকর, মিথ্যাবাদী।’ (সুরা সাদ: ০৪) এর কয়েক আয়াত পরেই আল্লাহতায়ালা আদেশ দিয়ে বলছেন-‘এরা যা বলে তাতে তুমি ধৈর্য ধারণ কর। আর প্রবল শক্তির অধিকারী আমাদের বান্দা দাউদকে স্মরণ কর। নিশ্চয় সে আল্লাহর দিকে সব সময় বিনত থাকতো।’ (সুরা সাদ: ১৭)
লক্ষ্য করুন, উপরোক্ত আয়াতগুলোতে কাফেররা মহানবীকে (সা.) উন্মাদ এবং যাদুগ্রস্থ ব্যক্তি (নাউযুবিল্লাহ) বলা সত্ত্বেও আল্লাহতায়ালা তাদের বিরুদ্ধে জাগতিক কোন শাস্তির কথা উল্লেখ করেননি। এছাড়া পূর্বের নবীদের (আ.) ক্ষেত্রেও আল্লাহপাকের একই আদেশ ছিলো।
মূলত রাসুল অবমাননার কাজটি এমন গর্হিত এক অপরাধ যার শাস্তি আল্লাহ স্বয়ং নিজ হাতে রেখেছেন আর অপর দিকে তিনি তার রাসুলকে ধৈর্য ও উপদেশ প্রদানের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
কোরানে বাণী গুলো হোতে দেখতে পেলেন আল্লাহ বিদ্রুপকারিকে হত্যা করা কোন নির্দেশ দেন নি এবং তিনি নিশ্চিত করেছেন , বিদ্রুপকারির শাস্তি শুধু মাত্র তিনি দিবেন ।
তিনি আরো উপদেশ দিয়েছেন , বিদ্রুপকে উপেক্ষা করতে হবে , ইগনোর কোরতে হবে ,কোন ভাবে যেন তাদের পাত্তা দেওয়া না হয়।
এবার আমার এই উপদেশ প্রয়োগ করে ফলাফল কি হতে পারে সেটা নিয়ে একটু আলোচনা করি ।
মনে করুন মমিনরা কোরানের উপদেশ পালন করে , বিদ্রুপকারিদের কথাকে পাত্তা দিচ্ছে না বা উপেক্ষা করছে বা ইগনোর করছে এবং তাদের গায়ে আঘাত করছে না কারন আল্লাহ বলেছেন তিনি নিজে এদের শাস্তি দিবেন ।
এর পরে যেটা হবে বিদ্রুপকারিরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে এবং তারা দেখবে তাদের স্প্যানিস বুল ফাইট স্টাইলে গেম খেলা আর জমছে না কারন মমিনরা ক্ষিপ্ত হয়ে হত্যা করতে তেড়ে আসছে না । তাদের মাশকারা কোন কাজ করছে না ।
এখন দেখা গেল কোরানের নির্দেশ অনুসরন করার জন্য বিদ্রুপকারিরা নিস্তেজ হয়ে গেল এবং ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ বন্ধ হয়ে গেল ।
কোরানের উপদেশ অনুসরন করে অমুসলিমরা কি ভাবে ব্যাপক ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ বন্ধ করে দিয়েছে , সেটা সবাই জানেন । এখানে উল্লেক্ষ অমুসলিমরা সব সময়ে তাদের ধর্মের ব্যাঙ্গ বিদ্রুপকে উপেক্ষা করে , ইগনোর করে , পাত্তা দেয় না, যার জন্য বিদ্রুপকারিদের পক্ষে তাদের নিয়ে স্প্যানিস বুল ফাইট স্টাইলে গেম খেলা সম্ভব হয় না ।
এখন নিশ্চয়ই আপনারা বিদ্রুপ মোকাবেলা হাদিসের ফয়সালা এবং কোরানের ফয়সালার পার্থক্যটা কি বুঝতে পারছেন । আপনারা এখন নিশ্চয়ই হাদিস গুলোর মেরিট কোরানের আ্য়াত সাথে তুলনা করে বুঝতে পারছেন ।
এখন মুসলমানরাই ঠিক করুন তারা কোরানের পথে থাকবেন , নাকি কোরান উপেক্ষা করে হাদিসের পথে থেকে বিদ্রুপ মোকাবেলা করবেন। ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০২২ ভোর ৫:৩১