দাবি : ইহুদী নাসারা কোরান গবেষণা করে সব কিছু আবিষ্কার করেছে ।
জী এই দাবি আমাদের হুজুর আলেম মমিনরা সব সময়ে করে থাকে , এটা নিয়ে অনেক রকমের তর্ক আছে কিন্তু ইহুদী নাসারা যে কোরান গবেষণা করে তাদের ধর্মকে ব্যাঙ্গ বিদ্রুপকে মোকাবেলা করে নিজেদেরকে ব্যাপক বিদ্রুপের হাত থেকে রক্ষা করেছে , সেটা আজকে প্রমাণীত ।
ভাই সব আপনারা কখনো দেখেছেন, হিন্দুদের কোন প্রতিবাদ করতে , যখন কেহ তাদের দেবদেবিকে গালাগালি করে বা তাদের পূজার মু্র্তি গুলোকে ভেংগে ফেলে । আমাদের দেশের হুজুরা ওয়াজ মহফিলে কি ভাবে তাদের ধর্মকে গালাগালি করে , সেটাতো আপনারা জানেন , কিন্তু তারা কোন টু শব্দ করে না বা এক কথায় এই সব গালাগালিকে পাত্তা দেয় না ।
বাংলাদেশের হিন্দুদের পরিষদ কিন্তু খুব প্রভাবশালী এবং যেহেতু বর্তমান সরকার ভারতের পাচাটা দালাল , তাই তাদের প্রভাব অপরিসীম । এরা ইচ্ছা করলে ধর্ম অবমাননার মামলা করে এই সব বিদ্রপকারী হুজুরদের বারোটা বাজাতে পারে কিন্তু তারা এই বিষয়কে পাত্তাই দেয় না ।
এবার দেখুন খৃষ্ঠান বৌদ্ধ বা আরো অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে তারা কি করে বিদ্রুপ গালাগালির সামনে । এটা অবাক ব্যাপারে তারা চুপ , টু শব্দ করে না পাত্তা দেয় না ।
আপনার কি মনে করেন তারা তাদের ধর্মকে ভালো বাসে না ? অবশ্য ভালোবাসে । তারা কি কষ্ঠ দু:খ পায় না ? অবশ্যই পায় , অবশ্যই তাদের রাগ হয় কিন্তু তারা নিরব থাকে এবং বিদ্রুপকে কোন পাত্তা দেয় না ।
কি বুঝলেন ? কিছু বুঝলেন ?
জী পবিত্র কোরানে ঠিক এই ভাবে বিদ্রুপকারীকে ইগনোর করতে বলেছে , যেটা হিন্দু, খৃষ্ঠান, বৌদ্ধরা করে কিন্তু মুসলমানরা এই ব্যাপারে কোরানের নির্দেশের ধারে কাছে যায় না বরং অনুসরন করে কিছু হাদিসকে ।
মনে রাখবেন যত প্রতিক্রীয়া প্রকাশ্য দেখাবেন গালাগালি তত বাড়বে । বিদ্রুপকারীরা যখন দেখবে বিদ্রুপ করলে মুসলমানরা মাতে না বা ক্ষেপে না বা কোন প্রতিক্রীয়া দেখায় না, তখন তারা চুপ হয়ে যাবে । এই পন্থা অবলম্বন করার জন্য আল্লাহ তালা পবিত্র কোরানে বেশ কয়েকটা আয়াত নাজিল করেছেন ।
বিদ্রুপকারীরা খুব মজা পায় যখন দেখে মুসলমানরা খুব ক্ষেপে যায় , তাই বার বার ক্ষেপাতে চায় এবং এর ভিতরে তারা আনন্দ পায় ।
অমুসলিমরা যে ভাবে বিদ্রুপকে পাত্তা দেয় না , ঠিক সেই ভাবে কোরানে উপদেশ দেওয়া আছে ।
মনে করুন আপনাকে বল্টু বোললে আপনি খুব ক্ষেপে যান , মারতে তেড়ে যান , মারামারি শুরু করেন , তখন দেখবেন আপনার আসে পাশের মানুষ সুযোগ পেলে আপনাকে বল্টু বলে রাগাবার চেষ্ঠা করবে এবং এটাই তাদের আনন্দ , আপনি যত ক্ষেপবেন তাদের তত আনন্দ ।
এবার মনে করেন আপনি বল্টু বলাকে আর পাত্তা দিচ্ছেন না , রেগে যাচ্ছেন না , হেসে এড়িয়ে যাচ্ছেন অথবা বোলছেন আমি বল্টু হোলে তুই হলি টল্টু হেল্টু , তখন দেখবেন আপনাকে আর বল্টু বলে কেউ ক্ষেপাচ্ছেনা ।
কারন আপনার আসে পাশের মানুষ যখন দেখবে আপনি ক্ষেপছেন না , তখন তারা বল্টু বলা বন্ধ করে দিবে ।
জী ঠিক এই ভাবে বিদ্রুপকে পাত্তা না দিয়ে মোকাবেলা করার উপদেশ কোরানে দেওয়া হয়েছে ।
মনে রাখবেন যত ক্ষেপবেন তত বিদ্রুপ বেড়ে যাবে , কারন বিদ্রপকারীরা রেগে গেলেই আনন্দ পায় ।
এবার দেখি কোরানের আয়াত কি বলে
সুরা মোজ্জামেল ( ৭৩--১0 ) কাফেররা যা বলে, তজ্জন্যে আপনি সবর করুন এবং সুন্দরভাবে তাদেরকে পরিহার করে চলুন।
সুরা নিসা আয়াত ১৪0- আর কোরআনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতি এই হুকুম জারি করে দিয়েছেন যে, যখন আল্লাহ তা’ আলার আয়াতসমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও বিদ্রুপ হতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গান্তরে চলে যায়। তা না হলে তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। আল্লাহ দোযখের মাঝে মুনাফেক ও কাফেরদেরকে একই জায়গায় সমবেত করবেন।
সুরা আল আনাম ( ৬--৬৮)
যখন আপনি তাদেরকে দেখেন, যারা আমার আয়াত সমূহ নিয়ে উপহাস করে, তখন তাদের কাছ থেকে সরে যান যে পর্যন্ত তারা অন্য কথায় প্রবৃত্ত না হয়, যদি শয়তান আপনাকে ভূলিয়ে দেয় তবে স্মরণ হওয়ার পর জালেমদের সাথে উপবেশন করবেন না।
সুরা আহযাব ( ৩৩ -৪৮)
আপনি কাফের ও মুনাফিকদের আনুগত্য করবেন না এবং তাদের উৎপীড়ন উপেক্ষা করুন ও আল্লাহর উপর ভরসা করুন। আল্লাহ কার্যনিবার্হীরূপে যথেষ্ট।
সুরা ক্কাফ (৫০-- ৩৯) অতএব, তারা যা কিছু বলে, তজ্জন্যে আপনি ছবর করুন এবং, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে আপনার পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করুন। --
আপানার নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন উপরের কোরানের আয়াত গুলোতে ইগনোর করা, চুপ থাকা, কোন প্রতিক্রীয়া না দেখানো বা পাত্তা না দেওয়ার উপদেশ দেওয়া হয়েছে ।
দেখুন ঠিক ঐ কাজ গুলো করে অমুসলিমরা হাতে নাতে কেমন ভাল ফলাফল পাচ্ছে । ওয়াজ মহফিলের হুজুরদের হাজারো বিদ্রুপকে তারা পাত্তা দিচ্ছে না ।
সুরা আহযাব (৩৩-৫৭) যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি। --- এই আয়াতে শাস্তি দানকারি স্বং আল্লাহ তালা কোন মানুষ নহে ।
দেখুন সুরা হিজরে আয়াত ৯৫ তে আল্লাহ কি বোলছেন -- বিদ্রুপকারীদের জন্য আমিই আপনার পক্ষ থেকে যথেষ্ট"----- সুতরাং এই আয়াত স্পষ্ঠ করে বলেছে বিদ্রুপকারীদের আল্লাহ নিজে শাস্তি দিবেন ।
এখন দেখুন একে মুসলমানরা বিদ্রুপকারীকে পাত্তা না দিয়ে , পাত্তা দিচ্ছে না বা ইগনোর করছে কোরানের নির্দেশ এবং আরো দেখা যাচ্ছে আল্লাহ তালার উপরে তাদের আস্থা নেই , যেখানে আল্লাহ নিজেই বোলছেন তিনি নিজে বিদ্রুপকারীদের শাস্তি দিবেন , সেই নিশ্চয়তাকে ও এই সব মুসলমানরা ইগনোর করছে ।
এবার দেখি মুসলমানরা কোরানের উপদেশকে উপেক্ষা করে, ২৫০ বৎসর পরে সংকলিত হাদিস পড়ে, বিদ্রুপকে মোকাবেলা করতে গিয়ে, বিদ্রুপ মোকাবেলা করাতে কতখানি সাফল্য পেয়েছে ।
হাদিসের উপদেশ মেনে নিয়ে , যদি ইসলাম ধর্মকে কেউ যদি বিদ্রুপ করে তখন সাথে সাথে মুসলমানদের ঈমাণী জোস শত গুণ বেড়ে যায়, রীতিমত জেহাদের হুংকার দেয় , খুন করে ফেলা , জালাও পোড়াও সহ মিটিং মিছিল সমাবেশ শুরু করে ।
বিদ্রুপকারীরা ঠিক এই জিনিসটাই চায় , এতেই তাদের যত আনন্দ এবং কিছু দিন পর পর তারা আবার আরেকটা মাশকারা করে এবং সাথে সাথে ডিজারেবেল রেজাল্ট, তারা পেয়ে যায় ।
বিদ্রুককারীরা হিন্দু খৃষ্ঠান বৌদ্ধ সহ অন্য ধর্মকে নিয়ে মাশকারা করতে গিয়ে, খুব হতাশ কারন তারা দেখে , আমরা এদের যত গালাগালি করি, মাশকারা করি, তারা পাত্তাই দেয় না এবং আমরা আনন্দ পাই না । যেহেতু মুসলমানরা রিয়েক্ট করে তাই মাঝে মাঝে তাদের সাথে মাশকারা করে একটু মজা লুটাই ।
এখন দেখতে পাচ্ছেন মুসলমানরা হাদিসের উপদেশ অনুসরন করে বিদ্রুপ মোকাবেলা করতে গিয়ে কি ভাবে নাজেহাল হচ্ছে ।তারা বার বার ক্ষিপ্ত হয়ে জালাও পোড়াও সহ প্রতিবাদ করছে এবং বিদ্রুপকারীরা আড়ালে থেকে আট্টহাসি হেসে গুড়িয়ে যাচ্ছে এবং কিছু দিন পর পর আবার আরেকটা মাশকারা কোরছে । এই ভাবে কখনো বিদ্রপকারীকে থামানো যাবে না , যতই চেষ্ঠা করেন ।
অথচ ইহুদী নাসা পৈতালিকরা কোরানের উপদেশ অনুসরন করে , কি ভাবে নিজেদেরকে ব্যাপক বিদ্রুপের হাত থেকে রক্ষা করছে ।
পরিশেষে বোলতে চাই ইহুদী নাসা পৈতালিকরা কোরান গবেষণা করে , বিদ্রুপ মোকাবেলা করার পন্থা আবিষ্কার করে এবং প্রয়োগ করে , নিজেদের কি ভাবে ব্যাপক বিদ্রুপের হাত থেকে রক্ষা করছে ।
বিদ্রপকারীদের আনন্দ, যখন তাদের টার্গেট রিয়েক্ট করে , রাগান্নিত হয় । যত রাগ দেখাবেন ততই বিদ্রুপের শিকার হবেন । পাত্তা দিবেন না বিদ্রুপকারী হতাশ হয়ে চুপ হয়ে যাবে এবং এটাই কোরানের উপদেশ ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৬