চার বিবাহকে জাস্টিফাই করার জন্য, একজন ব্লগার, খন্ডিত ভাবে উদ্দেশ্যমূলক মানুসিকতায় সুরা নিসার ৩ নং আয়াত উত্থাপন করেছেন। সেখানে স্পস্ঠভাবে প্রথমে এতিম মেয়েদের কথা বলা হয়েছে কিন্তু তিনি প্রথম লাইনটা বাদ দিয়ে আয়াতটা পোস্ট করেছেন , যেটা একটা অসততা এবং দু:খজনক বিষয়। এটার প্রতিবাদ করায় তিনি আমার মন্তব্যটাকে ডিলিট করে দেন এবং আমার মন্তব্যের উপর ভিত্তি করে অন্য একজন ব্লগারের মন্তব্যে করেন এবং তিনি গোজামিল দিয়ে একটা উত্তর দেন, যেটা ৪ বিবাহ পন্থিদের বিখ্যাত ফতুয়া। সেই গোজামিলের উত্তর পরে দেওয়া হবে।
এটা সত্য চার বিবাহকে জায়েজ করার জন্য বহু আলেম সুরা নিসার ৩ নং আয়াতকে নিয়ে বিভিন্ন খেলা করেছেন এবং অনেক অনুবাদে ব্রাকেটের (অন্য নারী) বা ইংরেজিতে (Others) শব্দটি বসিয়েছে , সেটা কোরানের অংশ নহে ,নিজের মতামত। তারা শুধু এতিম মেয়ে নহে বরং সব নারীকে বুঝিয়েছে বলে দাবি করে ওনারা, এই দাবি আমরা খন্ডন করবো এখনি। এবার দেখি (৪ --৩) আয়াতের অনুবাদ
আর যদি তোমরা ভয় কর যে, এতীম মেয়েদের হক যথাথভাবে পুরণ করতে পারবে না, তবে সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা
এই আয়াতে শুধু এতিম মেয়েদের ৪টা বিবাহের কথা বলা হয়েছে এবং শেষের অংশে একটা গুরুত্বপূর্ণ আদেশ বা দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে,, আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা
এখন কেউ যদি দাবি করে আমি সবাইকে সমান ভাবে ট্রিট করতে পারবো, সবাইকে আলাদা ঘর বা বাড়ী, সমান অর্থ, সমান সুযোগ সুবিধা, সমান ভালোবাসা দিয়ে রাখতে পারবো কারন আমার এই এই সম্পদ ও প্রতিপত্তি আছে, আমি ভালো মানুষ ইত্যাদি ইত্যাদি।
তাহোলে এই দাবি আল্লাহর কাছে গ্রহন যোগ্য হবে কি? না কারন আল্লাহ সুরা নিসার ১২৯ তম আয়াতে বলে দিয়েছেন,,
তোমরা কখনও নারীদেরকে সমান রাখতে পারবে না, যদিও এর আকাঙ্ক্ষী হও। অতএব, সম্পূর্ণ ঝুঁকেও পড়ো না যে, একজনকে ফেলে রাখ দোদুল্যমান অবস্থায়। যদি সংশোধন কর এবং খোদাভীরু হও, তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।
সুতরাং সুরা নিসার আয়াত ১২৯ নাজিল হওয়ার সাথে সাথে ৪ বিবাহের নির্দেশ বাতিল হয়ে গেছে বা মানসুখ হয়ে গেছে কারন এটা আল্লাহ ই বলেছেন তোমরা সব নারীকে সমান রাখতে পারবা না ।
এবার দেখি কাটমোল্লাদের ব্যাখা যে কোন নারীকে ৪ বিয়ের পক্ষে, যেটা ঐ ব্লগার দিয়েছে কাটমোল্লা ডকট্রিন থেকে,,,
এক শ্রেণীর লোভী মানুষ এতিম কন্যাদেরকে লালন পালনের নামে নিজেদের ঘরে নিয়ে
আসতো এবং কিছুকাল পর ওইসব কন্যাদেরকে বিয়ে করে তাদের সম্পত্তি দখল করতো।
তাদেরকে বিয়ের মোহরানাও প্রচলিত রীতির তুলনায় অত্যন্ত কম দেয়া হতো। এ অবস্থায়
এতিম কন্যাদের ওপর যে কোন অবিচারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এই আয়াতসহ সূরা নিসার
১২৭ নম্বর আয়াত নাজিল হয়। বহু পুরুষ তাদের দ্বিতীয় বা তৃতীয় অথবা চতুর্থ স্ত্রী হিসেবে
এতিম কন্যাদেরকে বিয়ে করতো। আল্লাহ তাদের মর্যাদা রক্ষার জন্য এ সব পুরুষদের উদ্দেশ্যে
বলেছেন, যদি নতুন বিয়ের ইচ্ছে থাকে তাহলে কেন শুধু এতিম কন্যাদের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছ?
অন্যান্য মেয়েদেরকেও বিয়ের প্রস্তাব দাও অথবা অন্তত তোমাদের অধিকারভুক্ত
দাসীদেরকেই বিয়ে কর।
একই সাথে চার জন স্ত্রী রাখা ইসলাম ধর্মে স্বীকৃত। কিন্তু কোন কোন পুরুষ যদি এ আইনের
অপব্যবহার করে,তাহলে এ আইনটি ভালো নয় এমন বলা যাবে না। বরং এটা সমাজের বিশেষ
প্রয়োজন বা চাহিদা মেটানোর প্রতি ইসলাম ধর্মের উদার নীতির প্রকাশ।
এখানে দেখা যাচ্ছে এতিম মেয়েদের ঠকানোর জন্য কিছু মানুষ ( তারা অবশ্যই মুসলমান কারন এই নির্দেশ তো শুধু মুসলমানদের উদ্দেশ্যে) এই কাজ করে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে কারন বাক্যের ভাব তাই বলে। তাহোলে সেই সাহাবিদের নাম কি? এই কাজ সাহাবিদের পক্ষে করা কি সম্ভব নাকি চার বিবাহ জায়েজ করার আষাঢ়ে গল্প। এটা যে ভুয়া কাহিণী সেটা অতি সহজে বোঝা যায়।
সুরা নিসা কোরানের ৪ নং সুরা হোলেও এটা নাজিলের ক্রম অনুযায়ি ৯২ তম সুরা এবং মদিনাতে হিজরত করার পর নাজিলকৃত ৬ নং সুরা , তার মানে মদিনাতে হিজরত করার কিছু দিন পর এই সুরা নাজিল হয় , যখন মক্কাতে স্বয়সম্পত্তি রেখে মদিনাতে হিজরত করা মুসলমানের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩০০/৪০০, এরা সবাই মদিনাতে রিফুজি, থাকা খাওয়ার কোন গ্যারেন্টেড নিশ্চয়তা নেই এবং সেখানে কেউ মক্কা থেকে তাদের সম্পত্তি নিয়ে আসেনি বা আসতে পারেনি --- ঠিক এমন একটা সময়ে , এই সুরা নাজিল হয় । এই অবস্থায় সাহাবাদের খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, এতিম মেয়েদের সম্পত্তি দখল নিয়ে এই ধরনের খেলায় মেতে উঠবে এবং তার চেয়ে বড় কথা মক্কা থেকে হিজরত কোন এতিম সন্তান করেছিল কি ? যেই সাহাবাদের নিজের পায়ের নীচে মাটি নেই তারা এতিম বিবাহের নামে সম্পত্তি দখল করবে অতচ তাদের সব সম্পত্তি মক্কায়। এই ধরনে অসৎ কাজ কি সাহাবের পক্ষে করা সম্ভব ?
সাহাবারা এই ধরনের মানুষ ছিল, এটা চিন্তা করা কি গ্রহন যোগ্য ?
মুল সত্য হোল যুদ্ধ বিগ্রহে অনেক সাহাবা মারা গেলে তাদের সন্তানরা এতিম হয়ে যায়, ঐ এতিম মেয়েদের সেলটার দেওয়ার জন্য মেক্সিমাম ৪ টা এতিম মেয়েকে বিবাহ করার উপদেশ দেওয়া হয়।
এবার যদি তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম শুধু এতিম নহে অন্য মেয়েদেরকেও এই আয়াতে বলা হয়েছে, তাহোল ৪ টা বিবাহ করা যাবে কি? উত্তর,,, না, কারন
সুরা নিসার ১২৯ তম আয়াত নাজিল হওয়ার সাথে সাথে চার বিবাহের নির্দেশ বাতিল হয়ে যায়, যেটা অলরেডি উপরে ব্যাখা করা হয়েছে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৪১