somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'অবদমিত অভিমান'-একটি স্বপ্ন পুরণের কাহিনি: বইমেলায় আমি-পর্ব ০১

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পেশাগত ট্রেনিং-এ ঢাকার বাইরে ছিলাম। ভেতরে কিছুটাকি অস্থির ছিলাম? ঠিক তেমন নয়। যতক্ষণ ট্রেনিং এ ছিলাম ততক্ষণ খুব মনোযোগ দিয়েই ট্রেনিং করেছি। কিন্তু দিন শেষে বিছানায় গা এলিয়েছি যখন তখন মন চলে যায় মেলায়। নিজের একটা বই, নিজের সন্তানসম। দেখার জন্যে একটুও কি মন আকুলিবিকুলি করেনি? গ্যারান্টি দিয়ে 'না' বলতে পারি না। মনতো আকুলিবিকুলি করবেই। ৩ তারিখ মাঝরাতে ঢাকায় যখন এসেছি তখন প্রাণের মেলা ঘুমুচ্ছে।


বইমেলায় ঢুকতেই বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্র-এর উত্তরেই ১ নম্বর প্যাভিলিয়নটি জানান দিচ্ছে সময় প্রকাশনের উন্নত বাঁধাই, ঝকঝকে ছাপার অক্ষরের বইগুলোর উপস্থিতি।


ডিসপ্লে এই বোর্ডটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আমি শুধু ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম চারপাশ।

জনাব ফরিদ আহমেদ, সময় প্রকাশন-এর সত্ত্বাধিকারী ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় বাংলা একাডেমিতে পাবলিকেশন এর প্রথম ব্যাচের ক্লাসের রিসোর্স পারসন হিসেবে। বেলা শেষে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত এই আমি ক্লাসে গিয়ে পড়ার বদলে চোখ লুকিয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সত্যিই একজন ভালো বক্তা, একজন উপস্থাপক হিসেবে ফরিদ আহমেদকে পুরো নম্বর দিতে হবে। খুব প্রানবন্ত ক্লাস করেছিলাম সেদিন। পরবর্তীতে আর কথা হয়নি। তাঁর মনে থাকার কথাও না আমাকে। তারপরও এমন একজন মানুষের প্রকাশনা সংস্থায় নিজের বই প্রকাশ হোক খুব করে চাইতাম। কারণ আমার কাছে এই ভদ্রলোককে কখনোই 'বাণিজ্যিক প্রকাশক' মনে হয়নি বরং 'নান্দনিক প্রকাশক' মনে হয়েছে। যেখানে সৃষ্টিশীলতার বিকাশ লাভের সুযোগ অবারিত।
কেমন লিখি জানি না। চেষ্টা, সাধনা চলছে। তবে এর মধ্যে তিনটা ছোটখাট পুরস্কার জুটে গেছে গল্পের ঝুলিতে ২০১৬ এবং এই জানুয়ারিতে। ২০১৬তে পাওয়া পুরস্কার দুটোই মূলত সময় প্রকাশন-এর বিজ্ঞপ্তি দেখে সেখানে লেখা জমা দিতে সাহস জুগিয়েছে আমায়।


বইমেলায় গিয়ে দেখি প্রকাশক সাহেব প্যাভিলিয়নে স্বয়ং আছেন।
জনাব ফরিদ আহমেদ আমায় অবাক করে দিয়ে ১০ কপি 'লেখক কপি' দিলেন।
আমি প্রত্যাশা করিনি যে, ১টির বেশি সৌজন্য কপি পাবো। তাই আমার কাছে পাওয়াটা অনেক বড়। যদিও এটি আমার প্রথম বই নয়। কিন্তু আমি প্রত্যাশাশূন্য মানুষ। অন্যের কাছ থেকে কিছু পাবো এবং পেয়ে খুশি হবো এমন মানসিকতাকে নিয়ন্ত্রণ করেছি আরো আগেই। তাই না পেলে কোন কষ্ট, ক্ষোভ থাকে না। কিন্তু পেয়ে গেলে পড়ে খুশি হতে দোষ কী!

এবার বইমেলা থেকে অবদমিত অভিমান এবং ধরে রাখা কিছু স্মৃতি


বিবিসি বাংলা রেডিওতে নতুন লেখকদের সম্পর্কে, তাঁদের বই সম্পর্কে, বইয়ের প্রচার সম্পর্কে কথা বললে নামী প্রকাশনা সংস্থার সত্ত্বাধিকারীগণ, কথা বললেন বাংলা একাডেমির পরিচালক এবং আমিও একটু বলার সুযোগ পেয়েছি।

'অবদমিত অভিমান' সময় প্রকাশন থেকে নির্বাচিত নতুন লেখক হিসেবে প্রকাশিত আমার প্রথম গল্পের বই। সেই দিক থেকে লেখক হিসেবে আমি নতুন বলাই বাহুল্য।
নিজেকে ভাঙতে গড়তে আরো অনেক সাধনা চালিয়ে যেতে হবে। যেতে হবে বহুদূর...
বইমেলায় নতুন লেখকরা কতোটা সুযোগ পাচ্ছেন?
নতুনদের বইয়ের কয়টা রিভিউ/আলোচনা/সমালোচনা আসে দৈনিক পত্রিকায় যতটা পুরোনোদের আসে...এখানে দায় কিছুটা কি গণমাধ্যমেরও না?
যারা বই পড়ছেন তারা পড়ে মতামত কি আর কারো সাথে বিনিময় করছেন? আমার মতো নবীন লেখকের মতামত সহ নামকরা লেখক, প্রকাশকের অনেক কথাই উঠে এসেছে এখানে।

বিবিসি বাংলা রেডিও: ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ এ প্রকাশিত
বইমেলায় নতুন লেখকরা কতটা সুযোগ পাচ্ছেন? -অনলাইন প্রতিবেদন
৯ ফেব্রুয়ারিতে পরিক্রমায় প্রচারিত প্রতিবেদন
এবং ৯ ফেব্রুয়ারিতে প্রচারিত পরিক্রমায় প্রচারিত প্রতিবেদন।


৭১ টেলিভিশনে প্রচারিত খবরে 'অবদমিত অভিমান'-সময় প্রকাশন থেকে প্রকাশিত বই। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

অটোগ্রাফ সাথে ফটোগ্রাফ
যখন প্যাভিলিয়নে ছিলাম তখন পরিচিত কেউ বই নিতে এলে তার সাথে ছবি তোলার সুযোগ হয়েছে। সেখান থেকেই কিছু এখানে স্মৃতি হিসেবে আটকে রাখলাম।
১.




সহব্লগার ইখতামিন গিয়েছিলেন মেলায়।
৪.


৫.



অপরিচিত যারা
পরিচিতরা অনেক কারণেই বই কিনে। কিন্তু অপরিচিতরা কেন বই কিনবে?
ঘটনা ১: প্যাভিলিয়নে বসে আছি। একজন পাঠক 'অবদমিত অভিমান' এর ফ্রন্ট কভার পেজ-এর ফ্ল্যাপটা পড়ে জিজ্ঞেস করলেন এই ফ্ল্যাপ কে লিখেছেন? সেখানে থাকা বিক্রয় সহযোগিরা বলতে পারেন নি। কিন্তু আমি দূর থেকে মনে মনে বলছিলাম ওটা লিখেছেন সময় প্রকাশন-এর সম্পাদক জনাব মঈন আহমেদ। বইটি তিনি সাথে করে নিয়ে গিয়েছেন শেষ পর্যন্ত। আমি আড়াল থেকেই দেখলাম। জানি না কে সে!

ঘটনা ২:
তিনি নতুন কারো বই খুঁজছিলেন। থাকেন প্রবাস কানাডায়। বয়স কতো হবে? ত্রিশ এর নিচে বা কাছাকাছি হবে।
বইটি উল্টে পাল্টে শেষ পর্যন্ত সাথে করে নিয়ে গেলেন।

ঘটনা ৩:
তিন জন এসেছে। হাতে 'অবদমিত অভিমান' ফ্ল্যাপের লেখা পড়ার পরই হোক বা আর কোন কারণে হোক তিনজন বেশ আলোচনায় মেতে উঠলেন বইটি নিয়ে। আমি শুনতে পাইনি। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না কী কারণে আলোচনা বই নিয়েই। শেষ পর্যন্ত ছবি তুলে অটোগ্রাফ নিয়ে গেলেন। দুজন কুড়িগ্রাম থাকেন, একজন মুন্সিগঞ্জ।

'অবদমিত অভিমান' কিছু কথা
আমাদের খুব কাছের মানুষগুলো যখন অপরিচিত হয়ে যায়...অথবা প্রত্যাশিত জীবন যখন অপ্রত্যাশিত যন্ত্রণায় ভরে উঠে তখন শোনার মতো কেউই থাকে না। থাকে না কাছে, থাকে না পাশে। তেমন করে যার শোনার কথা ছিল, যার বোঝার কথা ছিল সেইতো হয়ে উঠে অপরিচিত।
এই অপরিচিত মনোজগতটা ভরে উঠে চাপা অভিমানে। সেখান থেকে কেউ নিজেকে উঠিয়ে আনতে পারে আর কেউ হারিয়ে যায় ইতিহাসের পাতা থেকে।
সেই প্রকাশ না করা অভিমানগুলো নিয়েই তৈরি হয়েছে মূলত 'অবদমিত অভিমান'।
এই অভিমান কখনো নিজের সন্তানের উপর, কখনো বন্ধু, কখনো একই ছাদের নিচে বাস করা 'স্বামী' নামে পরিচিত মানুষটির সাথে আবার কখনো রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সমাজের অব্যবস্থা আবার কখনোবা মায়ায় জড়ানো স্নেহের কোন মানুষ বা শ্রদ্ধায় জড়ানো কোন সম্পর্ক।
এসব নিয়েই আমার গল্প সংকলনের বই 'অবদমিত অভিমান।

ব্লগিং-এ অবদমিত অভিমান
প্রায় সারে পাঁচ বছরের বেশি হতে চলল। ব্লগটাকে ভালোবেসে আটকে গেছি। তাই আমার গল্পের বইয়েও এর ছাপ পড়েছে। চেষ্টা করেছি একটা গল্পে ব্লগ নিয়ে পাঠক গোষ্ঠীর কাছে কিছু কথা পৌঁছে দিতে। যেনো তারা গল্পের ছলেও জানতে পারেন ব্লগটা আসলে কী...আর সেই গল্পটা সামহোয়্যারইন-এর ব্লগারদেরকেই উৎসর্গ করে নিজের মনের প্রশান্তি কিছুটা হলেও পাওয়ার চেষ্টা করেছি।


►বইয়ের নাম: অবদমিত অভিমান
লেখক: আরজু নাসরিন পনি
প্রকাশক: ফরিদ আহমেদ, সময় প্রকাশন
মূল্য: ১৫০ টাকা (বইয়ের গায়ে লেখা মূল্য), ১১৫ টাকায় পাওয়া যাবে।
প্রাপ্তিস্থান: বইমেলায়- বইমেলায় ঢুকতেই হাতের বামে 'সময় প্রকাশন'-এর প্যাভিলিয়ন নং ১
মেলার বাইরে শোরুম: প্লাজা এ. আর (৪র্থ তলা), সোবাহানবাগ মসজিদের পাশে ধানমন্ডি, ঢাকা।
অনলাইনে পাওয়া যাবে:রকমারিডটকম, বইমেলাডটকম

আজ এই পর্যন্ত...পরবর্তীতে সময় পেলে আরো লেখার ইচ্ছে আছে।
কষ্ট করে পোস্ট পড়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।

পর্ব-০১ এ থাকছে নিজের বইয়ের কথা, স্বপ্ন পূরণের কথা।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৪০
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×