১৯২২ এর শীতকালে নিউইয়র্কের ইস্ট ওয়ান ফোর ওয়ান, সেভনটিনথ স্টৃটের পুরনো বাড়ির একটি ফ্লোরে ইয়েল ইউনিভার্সিটির দুই গ্রাজুয়েট বৃটন হ্যাডেন এবং হেনরি রবিনসন লুস নিয়ে আসেন কয়েকটি চেয়ার ও টেবিল। বাড়ির ওই ফ্লোরের ভাড়া ছিল মাসে ৫৫ ডলার ৭০ সেন্ট। তারা দুই বন্ধু সেখানে এসে একটি নতুন নিউজ ম্যাগাজিন প্রকাশের জন্য টাকা তোলার প্রসপেক্টচাস লেখা শুরু করেন। চিন্তা ভাবনা করে এই ম্যাগাজিনের নাম তারা দেন - টাইম।
ওই সময় অনেক ম্যাগাজিনই আমেরিকায় ছিল। যেমন লিটারারি ডাইজেস্ট। কিন্তু এসবের আয়তন ছিল বড়, বাগাড়ম্বর ছিল বেশি। হ্যাডেন এবং লুস বিশ্বাস করতেন এই ধরনের কোনো মোটা ম্যাগাজিন পড়ার সময় নেই ব্যস্ত প্রফেশনাল মানুষদের। সুতরাং এমন একটা ম্যাগাজিন দরকার যেখানে সপ্তাহের সব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার বিবরণ থাকবে। তবে তার ভাষা হতে হবে ঝরঝরে। প্রশ্ন হলো, ম্যাগাজিনের মতামতটা কি হবে ? হ্যাডেন ও লুস মনে করেন, কোন বিষয়ে কোন মত হবে, কোন ইসুটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক সেটা বিবেচনা করারও স,য় আমেরিকানদের নেই। সুতরাং সেটাও স্থির করে দেবেন সম্পাদকরাই। তারাই আমেরিকাকে দেবেন খবর এবং খবরের মানেটা যে কি সেটাও তারাই স্থির করে দেবেন।
হেনরি আর লুস এর জন্ম হয়েছিণ চায়নাতে। সেখানে তার পিতামাতা প্রেসবিট্যারিয়ান মিশনারি হযে কৃশ্চিয়ান ধর্ম প্রচারে গিয়েছিলেন। আমেরিকা তার কাছে ছিল সুদূর এক স্বদেশ দেখানে অনেক সুযোগ আছে, সুবিধা আছে, যেখানে সোনার হরিণ ধরা যায়।হেনরি আর লুস কে তার বন্ধুরা হ্যারি নামে ডাকতেন। আমেরিকা সম্পর্কে হ্যারির এ বিশ্বাস আমৃত্যু ছিল এবং তার প্রকাশনা সম্রাজ্য থেকে প্রকাশিত সব কিছুতেই এ বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়।
বৃটন হ্যাডেনকে তার বন্ধুরা বুট নামে ডাকতেন। বুট আর হ্যারি সহপাঠী এবং প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন হচকিস স্কুুল এবং পরে ইয়েলে তারা তাদের নিজস্ব পত্রিকা ডেইলি নিউজ এর উঁচু পদে ছিলেন। যখন আমেরিকা প্রথম মহাযুদ্ধে যোগ দেয় তখন তারা এই ইউনিভার্সিটির দৈনিক পত্রিকাটিতে আমেরিকার জাতীয়তাবাদ প্রচার করতেন। তাদের এই সাফল্য ও সুনামের ফলে ইয়েলের সব প্রভাবশালী ছাত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন যেটা পরে তাদের পত্রিকা প্রকাশনায় খুব সাহায্যে আসে। ইয়েল এখনো প্রভাবশালী। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ দুজনই ইয়েলের ছাত্র। বুট ও হ্যারি এই দুই বন্ধুর আইডিয়া এবং অ্যমবিশন ছিল বেশি, ডলার ছিল কম। ইয়েন কানেকশন তাদের কাজে আসে।
টাইমের প্রথম সংখ্যাটি বের হয় ৩ মার্চ ১০২৩ এ। এক বছর ধরে দুই বন্ধুপ্রস্তুতি নেন এবং এক লাখ ডলার তোলার চেষ্টা করেন। ডলার সংগ্রহে তারা আংশিকভাবে সফল হন। তাদের কর্মচারীদের মধ্যে ছিলেন পার্টটাইমাররা।
প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যায় ছিল ২৮ পৃষ্টা যার মধ্যে ছয় পৃষ্ঠা ছিল বিজ্ঞাপন। প্রথম সংখ্যায় অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ছিল রুড উপত্যকায় ফরাশি দখল, রাশিয়াতে দুর্ভিক্ষ এবং আমেরিকায় মদ নিষিদ্ধকরণের ভূলভ্রান্তিগুলো।
ডিসেম্বরের মধ্যেই পত্রিকাটি ব্যবসায়িকভাবে ভালো করতে থাকে। লুস মনে করেন, বিয়ে করে সংসারের খরচ মেটানোর সামর্থ তার হয়েছে। শিকাগোর এক সুন্দরী নারী লিলা রস হটজ কে তিনি বিয়ে করেন।
গোড়ার দিকে সব সম্পাদকীয় দায়িত্ব পড়ে হ্যাডেন এর ওপর। আর্থিক বিষয়ের চার্জে ছিলেন লুস।
বিশ্বখ্যাত টাইম স্টাইল সৃষ্টি করেন হ্যাডেন। তার যুক্তি ছিল, পাঠকের উৎসাহ ধরে রাখার জন্য ফ্যাক্ট দিলেই চলবে না, অলংকৃত ফ্যাক্ট দিতে হবে। তবে সেই অলংকার এমন বেশি যেন না হয় যাতে পাঠক মনে করে ফ্যাক্ট হিয়ে গিয়েছে ফিকশন। অর্থ্যাত, ফ্যাক্ট আর ফিকশন - সত্য এবং কাল্পনিক ঘটনার মাঝামাঝি একটি অবস্থান নিতে হবে।
হ্যাডেন স্থির করে দেন টাইমে যেসব ঘটনার রিপোর্ট হবে তার একটি শুরু থাকবে, মধ্র অংশ থাকবে এবং শেষ থাকবে। যেমন থাকে গল্পে। তিনি আরো চান, যখনই সম্ভব তখনই এর মধ্যে থাকবে কিছু সাসপেন্স। লক্ষনীয় যে, বাংলাদেশ সম্পর্কে টাইমের কভার স্টোরি শুরু হয়েছে নাটকীয়ভাবে এবং শেষটা হয়েছে নাটকীয় লাইনে।
টাইমের ভাষাও হয় ব্যতিত্রমী। যেমন, কোন ব্যক্তি বলেন না, বিড়বিড় কনে, তিনি ফিশফিশ করেন, তিনি কর্কশ চিৎকার করেন। আর কোন ব্যক্তি কথা লেখার সময়ে তার কিছু বর্ণণাও দিতে হবে। যেমন তিনি ছিলেন হালকা পাতলা গড়নের, মোটাসোটা, প্রখর বুদ্ধি সম্পন্ন, তর্কবগীশ। এ রকম কিছু বিশেষণ।
টাইম সেই ব্যক্তিটিকে পছন্দ করলে তার হাটা সম্পর্কে লেখা হবে, তিনি মার্চ করলের অথবা দৃঢ় পায়ে এগিয়ে গেলেন। টাইম তাকে অপছন্দ করলে লেখা হবে, তিনি খুড়িযে চললেন অথবা টলতে টলতে এগোলেন।
এসব স্টাইলে কথনকার বিদগ্ধ আমেরিকানরা ভ্র“ কুঁচকালেও টাইমের সার্কুলেশন বেড়ে যায়।
টাইমের এই ভাষা মেশিন (ল্যাঙ্গুয়েজ মেশিন) আজো কাজ করছে। বলা যায়, টাইমের ভাষা অন্য সব পত্রিকার চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
টাইমের এসব ছিল হ্যাডেনের সৃষ্টি। এতে লুসের সমস্যা হচ্ছিল। কারণ তিনও সৃজনশীল তবে অন্যদিকে। লুস মুগ্ধ হয়েছিলন পত্রিকা তথা মিডিয়ার শক্তি দেখে এবং তার আয় করার সম্ভাবনা দেখে।
১৯২০ এর শেষ দিকে লুস আরেকটি ম্যাগাজিন প্রকাশের প্লান করেন যার লক্ষ্য হবে বিজনেস স¤প্রদায়। প্রথকে ছিক হয় এর নাম হবে পাওয়ার। পরে এটি প্রকাশিত হয় ফরচুন নামে। আজো এই ম্যাগাজিনটি ব্যবসা বানিজ্য, শিল্প বিষয়ে সবচেযে বেশি প্রভাবশালী রূপে স্বীকৃত।
ডিসেম্বর ১৯২৮ এ হ্যাডেন এর ইনফ্লুয়েঞ্জা হয় এবং মুদই মাস পরে তিনি মারা যান। জন মার্টিন নামে এক ব্যক্তিকে লুস ম্যনেজিং এডিটর করেন। তবে লুসই যে সার্বিক কন্ট্রোলে ছিলেন সে বলা বাহুল্য।
হ্যাডেনের মৃত্যুর পর টাইমের খবরের ভাষা একই থেকে যায়। তবে টাইমের দুটি বড় পরিবর্তন হয় পলিসিতে। এক. টাইম ব্যবসার দিকে খুব মনোযোগী হয় ক্ষংে সাফল্য অর্জন করে।
দুই. তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের দিকে টাইম মনোযোগী হয় এবং খুব আক্রামণাত্মক সব লেখা প্রকাশ করতে থাকে। টাইমের কাছে সোভিয়েট নেতা স্টালিন ছিলেন ইটালির ফ্যাসিস্ট নোত মুসোলিনির চেয়ে অনেক ভয়ংকর।
টাইমের রক্ষণশীলতা এক পর্যায়ে গণ বিচ্ছিন্নতায় পরিণত হয়। ১৯৩০ এর দশকে আমেরিকার মন্দ অবস্থা বা গ্রেট ডিপ্রেশন এর সময়ে টাইম লেখে, মানুষ যদি যথেষ্ট কাজ এবং ঈশ্বরে কাছে প্রার্থনা করে, তাহলে মন্দা অবস্থা কেটে যাবে। যারা না খেয়ে আছে, সেটা তাদেরই দোষ।
টাইমের স্টাইল ও নিউজ পরিবেশনে পক্ষপাতিত্বকে অনেকেই সমালোচনা করেন। কিন্তু টাইমের আকর্ষণীয় প্রেজেন্টশন এবং শ্লেষাত্মক ভাষা পাঠককে নেশাগ্রস্তের মতোই আটকে রাখে। টাইম নতুন নতুন শব্দ আবিষ্কার ও প্রয়োগ করতে থাকে।
যেমন কাউকে বিরাট কিছু বোঝাতে টাইম মোঘল শব্দটা ব্যবহার শুরু করে। স্টিভেন স্পিলবার্গের বর্ণনা হবে শুধু মুভি পরিচালকই নয়, সিনেমামোগুল রূপে। এই উপমহাদেশ থেকে আরো কিছু শব্দ তারা নয় এবং স্থায়ীভাবে ডিকশেনারিতে স্থঅন করে দেয়। যেমন পন্ডিত। একজন বিশিষ্ট সাহিত্য সমালোচকের বর্ণনা তারা দিরত পারে লিটারারি পন্ডিত রূপে। ব্যবসার ক্ষেত্রে টাইকুন শব্দটি টাইমই প্রথম শুরু করে। যেমন বিজনেস টাইকুন বা নেতৃত্বস্থানীয় ব্যবসায়ী।
সেক্স এবং স্ক্যন্ডালও টাইমের পৃষ্ঠায় স্থান পেতে থাকে। ওই সময়ে ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড এবং আমেরিকান নারী ওয়ামিস সিমসনের রোমন্স ও পরবর্তী ঘটনা টাইম বিস্তারিতভাবে কভার করে। কিন্তু লুস যে তখন ্েলয়ার বুল ব্রোকা-র সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত হয়েছিল সেটা চেপে যায়। লুস ডিভোর্স দেন তার স্ত্রীকে।১৯৩৫ এ এসব ঘটনায় লুস জড়িয়ে পড়ায় টাইমকে তখন বেমি সময় দিতে পারেননি। তাতে টাইমের ক্ষতি হয়নি। কারণ ততদিনে টাইম একটি মেশিন হিসেবে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।
টাইমের এ শক্তির ওপবে নির্ভর কের লুস প্রকাশ করেন লাইফ ম্যাগাজিন। লাইফ দীর্ঘকাল ধরে খুব সফল হলেও টিভির আগমনে নি®প্রভ হয় হয়ে যায়। লাইফ ছিল ছবি নির্ভর। টিভির সচল ছবির কাছে লাইফের ছবি অচল হয়ে যায়।
টাইমের সাংবাদিকতাকে লুস বলেন গ্র“প জার্নালিজম। এর ধরণটা ছিল এরকম :
সাপ্তাহিক এডিটোরিয়াল মিটিং এ লেকক সম্পদকরা নিউজ স্টোরির জন্য তাদের আইডিয়া পেশ করবেন। গ্রহণযোগ্য আইডিয়াগুলো পৌছে দেয়া হবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধীমান সব রিসার্চারদের কাছে। তারা ফ্যাক্ট সংগ্রহ করলেন এবং ইন্টারভিউ করবেন। তারপর তাদের লেখা যাবে একজন সম্পাদকের কাছে। তিনি নতুনভাবে সব কিছু লিখবেন এবং টাইমের ভাষা প্রয়োগ করবেন। তারপর সেটা যাবে ম্যানেজিং এডিটরের কাছে ফিনিশিং টাচ দেয়ার জন্য। তারপর আবার সেটা ফিরে যাবে সে ই রিসার্চারের কাছে সব ফ্যাক্ট লাইন বাই লাইন চেক করার জন্য। তরপর সেটা যোবে পৃন্টারের কাছে।
টাইম আরেকভাবে বিশ্বখ্যাত হয়ে ওঠে। তারা প্রতি বছরের সেরা মানুষ বা ম্যান অফ দি ইয়ার নির্বাচিত করে। এখন অবশ্য তার নাম হয়েছে পারসন অফ দি ইয়ার। কারণ একজন নারীও নির্বাচিত হতে পারেন। পারসন অফ দি ইয়ার নির্বঅচনে টাইমের অন্যতম মাপকাঠি হলো, যে ব্যক্তি বছরের সংবাদ সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছেন তিনি হতে পারেন পারসন অফ দি ইয়ার।
টাইমের প্রথম ম্যান অফ দি ইয়ার ছিলেন আমেরিকান পাইলট চার্লস লিন্ডবার্গ যিনি ১৯২৭ এ প্রথম একা প্লেনে নিই ইয়র্ক সিটি থেকে প্যারিস পর্যন্ত ননস্টপ ফ্লাই করেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট তিনবার ম্যান অফ দি ইয়ার হন। হিটলারও হন। ১৯৭৯ এ হন আয়াতুল্লাহ খোমেনি। প্রতি বছরই এসব মনোনয়ন বিশ্ব জুড়ে বহু তর্কের সূচনা করে।
২০০০ সালের শেষে টাইম শতাব্দীর সেরা ব্যক্তিকে নির্বাচিত করে। টাইমের মতে, ২০০০ শতাব্দীর সেরা ব্যক্তি ছিলেন বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট ইইনস্টাইন। দ্বিতীয় স্থানে যুগ্নভাবে নির্বাচিত হন মহাত্মা গান্ধী ও রুজভেল্ট।
১৯৬৭ তে ৬৯ বছর বয়সে হ্যারি লুস পরলোক গমন করেন। তার স্ত্রী ক্লেয়ার লুস টাইমের ভার গ্রহণ করন। তিনি রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি রূপে আবির্ভুত হন এবং ইটালিতে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত হন। ক্লেয়ার লুস মারা যান ১৯৮৭ তে ।
১৯৮০ তে টাইমের বিশ্বব্যাপী সার্কুলেশন প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫,৭০০,০০০ এ পৌছে। তারা ১১ টি আঞ্চলিক সংস্করণ, ১১৯ টি মেট্রপলিটান সংস্করণ এবং আমেকিরায় ৫০টি রাজ্য সংস্করণ প্রকাশ করতে থাকে।
নব্বই দশকে টাইমের শক্তি আরো বেড়ে যায়। ইতিমধ্যে তারা ওয়ার্নার ব্রাদার মুভি কোম্পানি ও স্টুডিও কিনে নেয়। তাদের কোম্পানির নাম হয় টাইম - ওয়ার্নার ।
টাইম এখন বিশ্বের কয়েকটি দেশ থেকে একযোগে প্রকাশিত হচ্ছে। বাংলাদেশে যে টাইম পাওয়া যায় সেটা হংকংয়ে সম্পাদিত হয় এবং ছাপা হয় সিঙ্গাপুরে। টাইম এশিয়ার সম্পাদক উইলিয়াম গৃন। মধ্যবয়সী এই এডিটরের জন্ম হয়েছিল ম্যানচেস্টারে। টাইমে প্রকাশিত রচনার একটি বৈশিষ্ট হলো, কভার স্টোরি বাদে অন্য সব লেখাই সাধারণ এক থেকে তিন পৃষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। টাইমের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, পত্রিকা প্রকাশের তারিখ বা ডেটলাইন অ্যাডভান্স থাকে।
সুত্র - যায়যায়দিন