ঠোঁটের ওপর হাল্কা গোঁফ, মুখে দাড়ির জঞ্জাল, চোখে তীক্ষ দৃষ্টি, অবিন্যস্ত লম্বা চুলের ওপর চ্যাপ্টা গোলাকৃতির একটা টুপি বসানো। এক নজর দেখেই বলে দেওয়া যায়, এ ছবি আর দশটা চবির চেয়ে একেবারেই ভিন্ন, চিবর মানুষটিও তা-ই। অন্যায়, নিপীড়ন আর শোষণবিরোধী সাম্যবাদেও প্রতীক এই মানুষটি। যে মানুষ ভেঙ্গে দিয়েছেন দেশকালের সীমানা। যে মানুষ প্রতীক হযে উঠেছেন বঞ্চিত মানবতার। তাঁর নাম চে গুয়েভরা।
আজ থেকে ৪০ বছর আগে আর্জেন্টিনার এই বিপ্লবী নেতা আততায়ীর গলিতে নিহত হন। কিন্তু চে’র সেই ছবি, তাঁর সেই চেতনা আজও মানুষের হৃদয়পটে অম্লান হয়ে আছে। শুধু কি হৃদয়ে ? টিশার্ট, দেয়াল আইসক্রিমের মোড়ক, সিগারেট, কোথায় নেই তাঁর ছবি! চে গুয়েভারা রীতিমতো একটা ব্রান্ড। এবং এই ব্রান্ডের লোগো হচ্ছে চে’র সেই বিখ্যাত ছবি, যার অর্থ পরিবর্তন। ছবিটি যুদ্ধ ও বিশ্বয়ানবিরোধী তথা পরিবেশবাদেও প্রতীক হয়ে উঠেছে। বললেন, চিত্র বিশ্লেষক ত্রিশা জিফ।
চে গুয়েভারার যে ছবি বিশ্ববাসীর কাছে এত সমাদৃত, সেই ছবির নেপথ্যে রয়েছে আরেক কাহিনী। ১৯৬০ সালের ৫ মার্চ ছবিটি তোলেন আলবের্তোর কোর্দা। কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রোর দপ্তরের আলোকচিত্রী ছিলেন তিনি। সেদিন চে গুয়েভারার হাভানায় একট গণ শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। ঠিক তার এক দিন আগেই হাভনা বন্দরে বোমা ও বিস্ফোরণবোঝাই একটি ফরাসি মালবাহী জাহাজ বিস্ফোরিত হয়। ভয়ানক সেই বিস্ফোরণে কিউবার ৮০ জন নাগরিক নিহত হন। শেষকৃত্যানুষ্ঠানে কোর্দার ক্যামেরার ফ্লাশ ঝিলিক দিয়ে ওঠে। ফ্রেমবন্দী হয় পৃথিবীর সর্বকালের সেরা আলোকচিত্র।
কোর্দা চে ঘুয়েভারার সেই ছবির ক্যাপশানে লিখেছিলেন, ‘ক্রুব্ধ ও বিষন্ন বীর যোদ্ধা’ সেদিন চে’র অভিব্যাক্তি বর্ণনায় এর চেয়ে বেশি কিছু লেখার প্রয়োজন ছিল না ।
এরপর ছবিটি চলে যায় কোর্দার ব্যক্তিগত স্টুডিওতে। দীর্ঘ এক বছর সেই ছবি কোথাও প্রকাশিত হয়নি। কোর্দার স্টুডিওতে যাঁরা আসা যাওয়া করতেন, তাঁদেও চোখেই পড়েছে দেয়ালে ঝুলে থাকা ক্রুব্ধ, বিষন্ন এক বিপ্লবীর ছবি।
এরই মধ্যে সাতটা বছর কেটে যায়। ইতালীয় বামপন্থী একজন প্রকাশক ও বুদ্ধিজীবি চে’র ছবিটি দেখে আকৃষ্ট হন। গিয়াংগিয়াকোমো ফেলত্রিনেল্লি ছবিটি নিয়ে আসেন ইতালিতে। প্রথমবারের মতো চে’র পোস্টার ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে দেয়ার কৃতিত্ব তাঁরই। ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেদেশ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে ছাপা হওয়ার পর ছবিটি ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়।
ত্রিশা জিফ বলেন, ‘চে গুয়েভারার তখন অন্তিমশয়নে। তাঁকে হত্যার প্রতিবাদে প্রথম বিক্ষোভ মিছিল হয় ইতালি মিলানে। ধীরে ধীরে সেই আন্দোলনের গতি সঞ্চার হয়। প্যারাগুয়ে ও ফ্রান্স ছাড়াও চে’র হত্যঅর বিরুদ্ধে আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে সমগ্র ইউরোপে। লোকে শোষণ ও বৈষমের অবসান চায়, চায় পরিবর্তন। চে’র ছবিটি সেই পরিবর্তনেরই প্রতীক। ’ কিন্তু লাতিন আমেরিকার চে গুয়েভারা মুখায়ব মানে হচ্ছে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রতীক।
- বিদেশী পত্রিকা অবলম্বনে