somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বায়োমেট্রিক সীম নিবন্ধন আর মুনকেক ফেস্টিভাল

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সবচে’ বড় বাধার নাম বোধকরি ‘শুণ্য থেকে শুরু’। স্টার্টিং ব্লক থেকে বের হয়ে আশাই কঠিনতম সমস্যা। অন্যথা হয়নি কখনো।

বায়োমেট্রিক সীম নিবন্ধন নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। অন্য যেকোন নতুনের মত, হাজারো মানুষ এর বিরোধিতা করবে, এটাই স্বাভাবিক। জ্ঞানীরা বুঝে শুনে বিরোধিতা করবে। বাকীরা না বুঝে!

অন্য একটি পক্ষ আছে। যারা ভাবছেন, খুব ভাল একটা কাজ হতে যাচ্ছে। পক্ষে যারা আছেন, তাদের বেশিরভাগ মনে করছেন আমাদের দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বায়োমেট্রিক সীম নিবন্ধন একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।

গত ক’দিন থেকে এই সীম নিবন্ধনের বিষয়টা ভাবাচ্ছে। এর পক্ষ বা বিপক্ষ কোনদিকেই নেই। এরপরেও অন্য অনেকের মত মনের গহীনে একটা সরল প্রশ্ন জেগেছে। কেন এই কাজটা করা হচ্ছে?

৯/১১’র পর থেকে সবচে’ আলোচিত বিষয়, জাতীয়/আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা। পশ্চিমের উন্নত দেশগুলো হাজারো নিয়ম করেছে দেশ আর নাগরিকদের জীবনমান নিরাপদ রাখতে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্পেন, বেলজিয়াম, ভারতের মত নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকা পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে মোবাইল ফোনের বায়োমেট্রিক সীম রেজিষ্ট্রেশনের কথা শোনা যায়নি। সেসব দেশেও মোবাইল ফোন রেজিষ্ট্রেশন করতে হয়। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশও তাই। নতুন পার্থক্য শুধু ‘বায়োমেট্রিক’।

বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী যন্ত্র পাঠযোগ্য পাসপোর্ট (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) ছাড়া বিদেশ ভ্রমন এখন প্রায় অসম্ভব। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমাদের বাংলাদেশীদের ভ্রমন অথবা ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার একটা বড় কারন, হাতে লেখা পাসপোর্ট। এর পরের ধাপ এমআরপি। তার পরের ধাপ বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট। অনেক আগে থেকেই এটা জানা ছিল। তারপরেও সময়মত কাজটা শেষ করা যায়নি। বিদেশে অবস্থানরত আমাদের লাখ লাখ শ্রমিক ভাই এ কারনে এখন বিরাট সমস্যার সম্মুখীন। মিয়ানমারের রোহিঙ্গারাও বিভিন্ন ফাঁক-ফোঁকর গলে আমাদের দেশি পাসপোর্ট বেশ সহজেই পেয়ে যাচ্ছে।

নিরাপত্তার আরেকটি বড় উপাদান জাতীয় পরিচয় পত্র। আমরা এখনো ল্যামিনেট করা পুরানো আমলের পরিচয় পত্র বহন করছি। অভিযোগ আছে নীলক্ষেতের মত কিছু কিছু জায়গায় অর্থের বিনিময়ে খুব সহজেই জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায়।

সামাজিক, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্পর্শকাতর পাসপোর্ট কিংবা জাতীয় পরিচয় পত্রের মত জরুরী বিষয় দুটি মোবাইল ফোন কিংবা ফেইসবুকের চেয়ে গুরুত্ত্বপুর্ণ হলেও বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় এখনো নেই।

অসংখ্য গুম বা প্রাণহানীর মত ঘটনা এদেশে আকছার ঘটছে। হত্যা হতে পারে না, এমন কোন জায়গা আর অবশিষ্ট আছে বলে মনে হয়না। ঘরের ভিতর, রাস্তায়, বই মেলায়, শত মানুষের ভীরে, লোকালয়ে কোথায় হত্যা হয়নি? ইসলামী আলেম, খৃষ্টান পাদ্রী, বিদেশী রাষ্ট্রদুত, বরেন্য শিক্ষাবিদ, লেখক, প্রকাশক...... আক্রান্তের তালিকা শুধু দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতরই হবে।

একথা বলা যেতেই পারে, বিদ্যুত, পানি, বাতাসের দুষণ ছাপিয়ে এ মুহুর্তে সবচে’ বড় সমস্যা “হত্যা”। জীবনই যদি না থাকলো, আলো-বাতাসের দরকার কি?

কেন এমন হচ্ছে, কে বা কারা এসব করাচ্ছে? খুব নির্দিষ্ট করে আমরা এখনো জানি না। জানি না, কারণ, মামলাগুলো এগুতে পারেনি। বিচার হয়নি। মোবাইল ফোনের বায়োমেট্রিক সীম নিবন্ধন কি এই সমস্যার সমাধান দিবে? যদি দেয়, ভাল। যদি না দেয়, কিসের অথবা কার নিরাপত্তার কথা শোনানো হচ্ছে দেশের মানুষকে?

বিগত দিন গুলোর নির্বাচনের সময় দেখেছি মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিতে। সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময়ও দেখেছি মোবাইল ফোন, ফেইসবুক অথবা ইন্টারনেট ভিত্তিক বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কার্যকারিতা। তবে, কি বিরোধীদলকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশলগত কারনেই বর্তমান সরকার পাসপোর্ট আর জাতীয় পরিচয় পত্রের চেয়ে মোবাইল ফোনের বায়োমেট্রিক সীম নিবন্ধনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে?

অনেক প্রশ্ন মনের আনাচে মানাচে উঁকি-ঝুঁকি দেয়। বেলায়-অবেলায়। উত্তর নেই কোন। কেন হচ্ছে? কিভাবে হচ্ছে?

যারা ‘কেন হচ্ছের’ বিরোধিতার করছেন, তাদের কাছে উত্তর আশা করছি না। যারা এর পক্ষে আছেন, তারা নিশ্চয়ই বাকীদের যুক্তিগ্রাহ্য কারন দিয়ে বুঝিয়ে বলবেন, কোন কাজটা অগ্রাধিকার পাবে এবং কেন পাওয়া উচিত?

প্রায় আটশ’ বছর আগে (১২৭১-১৩৬৮) মহাচীন শাসন করত মোঙ্গলরা (ইউয়ান সম্রাজ্য)। একশ বছর শাসিত হবার পর, হান’রা ভাবল একটা কিছু করা দরকার। সে সময় মোবাইল ফোন অথবা ফেইসবুকের চল ছিল না। মোঙ্গলদের ফাঁকি দিয়ে কিছু করতে পারা ছিল প্রায় অসম্ভব। হান বিদ্রোহীদের সামরিক নেতা তাঁর সৈন্যদের একটা গুজব ছড়িয়ে দিতে বলেন। বলা হয়, আসছে শীতে ভয়াবহ মহামারি হবে। আর সেটা থেকে পরিত্রানের একমাত্র উপায় মুনকেক খাওয়া। এই বলে তারা মুনকেক বিক্রি করতে থাকে। প্রতিটা মুনকেকের ভিতরে লেখা ছিল “uprising, at the night of Mid-Autumn Festival”। মোঙ্গলরা মুনকেক খেত না। এই সুযোগে হাজার হাজার মুনকেক বিক্রি হয়। চীনা শারদীয় উৎসবের রাতে ভীষন বিদ্রোহ হয়। মোঙ্গলদের পতন হয়। সূচনা হয় মিং সম্রাজ্যের (১৩৬৮-১৬৪৪)।

--------সমাপ্ত---------
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৩৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×