somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হে শ্বেতশুভ্র বেশধারী ‘দরবেশ’ এখন তোমার কী হবে

১০ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বড় ইচ্ছা হচ্ছিল তাকে নিয়ে একটি কবিতা লিখি। শিরোনাম ঠিক করে দুটো চরণও লিখেছিলাম এভাবে- 'হে শ্বেতশুভ্র বেশধারী/দাড়ি, মোচ আর কেশধারী'। কিন্তু একটি ঘটনা দেখার পর আর এগোতে পারলাম না। কারণ কবিতার অমর্যাদা হবে।

আমার নায়ককে একদিন রাত ৮টার দিকে দেখলাম একটি বাড়ির সামনে একা দাঁড়িয়ে ভয়ে কাঁপছেন। তার দামি গাড়িটি ৮-১০ গজ দূরে। ড্রাইভার স্টার্ট দিয়ে সাহেবের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু সাহেব আসতে পারছেন না। ৩-৪টা নেড়ি কুত্তা তাকে ঘিরে ধরে ঘেউ ঘেউ করছে। আশপাশে লোক নেই। সম্ভবত ড্রাইভারও ভয় পাচ্ছে অথবা তার মালিকের দুর‍বস্থায় তামাশা দেখছে।

একটু দূরে দাঁড়িয়ে আমিও কিছু একটা করব বলে ভাবছিলাম। এমন সময় বাড়ির দারোয়ান এগিয়ে এসে তাকে রক্ষা করল।

কবিতা লিখতে গিয়ে আমার কুত্তার কথা মনে হলো। আমরা এদের যতই খারাপ বলি না কেন প্রকৃতি কিন্তু এদের অসাধারণ কতগুলো ক্ষমতা দিয়েছে। এরা ভালোমন্দ মানুষ চিনতে পারে। বিশেষত চোর-ডাকাত। এরা নাকি কবরের আজাবও শুনতে পায়। এ জন্য ভুলেও কোনো কুত্তা কবরস্থানে সচরাচর যায় না। গেলেও করুণ সুরে চিৎকার করে কাঁদে।

আমার নায়ককে যেভাবে কুত্তায় সমাদর করছিল তাকে নিয়ে কবিতা রচনায় আমার আর রুচি হলো না। আমার নায়ক ইদানীংকালে সফেদ-সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে ঘুরে বেড়ান। তার চুল, দাড়ি ও মোচও অস্বাভাবিক সাদা। এসব পোশাক-আশাকে এবং মুখশ্রীতে মানুষের প্রতি একধরনের অসাধারণ ভক্তিভাব চলে আসে।

কিন্তু তাকে দেখলে রাজ্যের সব ঘৃণা, বিরক্তি আর অভিশাপ মন থেকে বের হয়ে আসে। আমার কবিতার নায়ক বোধহয় তা বুঝতে পারেন। আর এ জন্যই তিনি আরও বেপরোয়া, দুর্দান্ত এবং দুর্দমনীয় হয়ে উঠছেন। রাষ্ট্রশক্তির সঙ্গে তার দহরম-মহরম সর্বকালে এবং সব সময়ই ছিল। তিনি জানেন রাজপুরুষদের দুর্বলতা। তাই তো রাজাজ্ঞা পেতে তার দেরি হয়নি কখনো। নিজের অপকর্ম কীভাবে ঢেকে রাখা যায় তার বহু উপায় তিনি জানেন।
কিন্তু সাম্প্রতিককালে কুকর্ম আর পাপের পাত্র পরিপূর্ণ হয়ে উপচে পড়ছে। পাপের নহর দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও প্রবাহিত হচ্ছে। মিডিয়া মোগল রুপার্ট মারডককে তিনি দেখেছিলেন কয়েকটি তরুণীসহ ইংল্যান্ডের নর্থ হ্যাম্পশায়ারে। তখন থেকেই তার মনে বিচিত্র সব রঙ খেলাধুলা করছে।

নিজের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মেয়েরা কয়েক মাসের বেশি কেন চাকরি করতে চায় না, তা তিনি এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না। মাঝেমধ্যে মনে হয় সবকিছু ছেড়েছুড়ে দরবেশ হয়ে যাবেন। বিশেষ করে যখন নিজের প্রিয়তমা কন্যার করুণ মৃত্যুর কথা স্মরণ করেন। কিন্তু ইদানীংকালে দরবেশ শব্দ শুনলে তার চোয়াল কেন জানি প্রচণ্ড শক্ত হয়ে যায়। রাতে ঘুম আসে না।

রাজধানীর ক্যাপিটাল মার্কেটের ধারে কাছ দিয়েও তিনি হাঁটেন না। আকাশ ও বাতাস থেকে অসংখ্য মানুষের আহাজারি তার কানে ভাসতে থাকে। নির্বোধের মতো কতগুলো মানুষ নাকি আত্মহত্যা করেছে। তাদের প্রেতাত্মা অনেক দিন ঘুমের ঘোরে জ্বালাতন করত। ভয়ে তিনি সারা রাত ড্রইংরুমে আলো জ্বেলে কেবল টিভি দেখতেন।

অবশেষে এক জ্যোতিষীর পরামর্শে সুইজারল্যান্ড থেকে কালো রংয়ের একটি বিড়াল কিনে এনেছেন। রাতে বিড়াল নিয়ে ঘুমানোর পর প্রেতাত্মার উৎপাত আর হচ্ছে না।
ক্যান্টনমেন্টকে তার ভীষণ ভয়। তার ঘনিষ্ঠরা পরামর্শ দিয়েছেন ওদিকে ভুলেও যাবে না। কারণ, জুনিয়র অফিসাররা নাকি তাকে দেখলে কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলবে। রাজ্যের লাখ লাখ পরিবারের মতো জুনিয়র কর্মকর্তারা সর্বস্ব হারিয়েছেন কেবল তার জন্য।

ক্ষমতার কেন্দ্রে যেসব লোক তাকে সমীহ করত তারা আজ ফিরেও তাকায় না। বিশেষ করে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোড় নেওয়ার পর থেকে শরীর-স্বাস্থ্য ভালো যাচ্ছে না। মন বলে তো কোনোকালেও কিছু ছিল না। তাই ওটা ভালোমন্দ হওয়ার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু যেহেতু দেহ আছে তাই ওটা নিয়ে একটু ভাবতে হয় বইকি?

এসব ভাবতে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া-নাওয়া হারাম হয়ে গেছে। গায়ের রঙ ও কাপড়ের সাদা রঙ কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। ইদানিং সাদা রঙের জন্য তার মায়া হচ্ছে। রঙটির ভাবগাম্ভির্য ও পবিত্রতা নষ্ট না করলে এমন কী ক্ষতি হতো।

আর মানুষেরও যে কী হয়েছে! সব সময় সস্তা সেন্টিমেন্ট নিয়ে চলে। সাদা মানে পবিত্র। সাদা মানে শান্তির কবুতর। অথচ কুকুর, ভল্লুক, সিংহ, হাতি এমনকি শুয়োরের রঙও যে সাদা হতে পারে তা কেউ বলে না।

আমি নিজে আমার কবিতার নায়ককে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। কেমন যাবে তার আগামীর দিনগুলো! কিংবা কী হবে তার বা তার মতো বহুরূপী শ্বেতশুভ্র বেশধারী এবং দাড়ি, মোচ আর কেশধারীদের।

লেখক--গোলাম ম‍াওলা রনি: সংসদ সদস্য, পটুয়াখালী-৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×