বোবা কান্না
আবদুল হাকিম নাহিদ
“আমাদের জীবনটা যেন এক চক্রের মতো, এর কখন কোথায় কি হবে তা আমরা কেউ জানি না। যদি জানতাম তবে হয়ত এই জীবনের তরে বেঁচে থাকতাম”- অনামা কবি। সত্যিই জীবন এই চক্রের মতো ঘুরে হাসি কান্না, মায়া মমতা, আনন্দ বেদনা, দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়ে অবিরত ভাবে ঘুরতে থাকে। জীবন থেকে অনেক গুলো সময় পেরিয়ে গেল। চোখ বুঝলেই সু্ন্দর ছোট বেলাটা একটা রঙ্গীন প্রজাপতির মতো উড়তে উড়তে অনেক দূর চলে যায়। যেখানে অনাবিল স্বাধীনতা, ক্লান্তিহীন শৈশব, নিঃশব্দ লুকোচুরি খেলা, শেষ বিকালে ধান ক্ষেতে হারিয়ে যাওয়া, মা বাবার পরম ভালোবাসা, ভাই বোনের স্বার্থহীন স্নেহ। জীবনের এক মহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে আজ আমি একা অসহায়, চরম অসহায়ত্বের চিহৃ ললাটে এঁকে নিয়েছি বাস্তবতার ঘূর্ণিচক্রে পড়ে। পথহারা পথিকের মতো উদভ্রান্ত, নীড়হারা পাখির মতো দিশেহারা, ভূমিহীন প্রান্তিক কৃষকের উদ্বাস্তূ যাযাবর জীবন। বিস্তর শূণ্যতার মাঝে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে চলছি। পৃথিবীর সমস্ত সুন্দর কেমন যেন ম্লান ধূসর মনে হয়। অসুন্দরের কবলে পড়ে আমার সুন্দরের চেতনা গুলো বিধস্ত নিঃশেষ হয়ে গেল বুঝি। আজ দৃষ্টির সীমানায় শুধুই আধাঁর, হৃদয় কোলাহলে কোথাও যে তিল পরিমান আলোর চিহৃ রেখা নেই। চারপাশে শুনতে পাই, জ্বালাময়ী বিদঘুটে সব করুণ সুর। সেই সুরের মূর্চনায় হৃদয় জমিনে বিরহ নামক ভাবের জন্ম দেয়, যে ভাবের হিংস্র স্রোতে ভেসে ভেসে উদ্দেশ্যহীন এক অনন্ত পথের যাত্রী আমি। জানি না! কেন আমি হারিয়ে যাচ্ছি আমার গন্তব্যস্থল হতে, শুধু উপলব্ধি করি, জীবন আকাশের মুক্ত বাতাসে উড়ে চলা স্বপ্নের সব রঙ্গীন ঘুড়ি সুতো ছিড়ে পালিয়ে যাচ্ছে দিগন্তের ওপারে। সারাদিন ব্যস্ত এই পৃথিবীতে নানান ব্যস্ততার মাঝে ডুবে থাকি, তখন অর্পূব কাটে সময়গুলো কিন্ত ব্যস্ত পৃথিবী যখন ধীরে ধীরে নিস্তব্ধ হতে থাকে, তখন আমিও চাই, এই নিস্তব্ধতাকে আমার একান্ত আপন করে নিতে কিন্ত পারি না। তখনই কোন এক অদৃশ্য শক্তি আমাকে গ্রাস করে পেলে। মনে হয় জীবনে অনেক ভুল করে পেলেছি। সামদ্রিক শামুকের মতো কষ্টের মণি বুকে নিয়ে সেই জন্ম থেকে আজও বেঁচে আছি। ছোট মনে এত সব লুকানো যন্ত্রণা, বিষন্তা, একাকিত্ব যা আমাকে বির্মষ করে তোলে। এই যন্ত্রণার উদ্যানে আমার বিচরণ আজন্ম। আমার অন্তঃপ্রাচীর বির্দীণ, সুখগুলো অজস্র কাঁদে, তারপর আমার মাঝে খুঁজে পাই নতুন কষ্টের আধাঁর নিশি। বুঝতে পারি না, জীবনে বেঁচে থাকা মানে কি শুধু কষ্টের মরুভূমিতে বিচরণ নাকি রাতের ঘোর অন্ধকারের প্রহর কেটে প্রভাতের প্রত্যাশা।।