بسم الله الرحمن الرحيم
সকল প্রশংসা আল্লাহর। অসংখ্য দরুদ নাযিল হোক তাঁর নবীর উপর বারবার।
যারা শুধু এতটুকুর উপর ভিত্তি করে হুমায়ূন আহমেদের সমালোচনা করেন যে, তিনি ২য় বিবাহ করেছেন, তাদের জন্য এই লেখা।
যারা ১ম পর্ব পরেছেন,এবার আসুন আমরা একটু অন্যভাবে ভালো মন্দের মানদণ্ড নির্ধারণ করি।
নীতিবিদ্যাতে ব্যক্তি মানুষের কোন ঐচ্ছিক আচরণকে ভাল-মন্দ বা উচিত-অনুচিত সাব্যস্ত করার মানদণ্ডের বিষয়ে নীতিবিদদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। এ বিষয়ে একদল বলেন,মানুষের কোন কাজ ভাল কি মন্দ তা কাজের উদ্দেশ্য দিয়ে মূল্যায়ন করা উচিত। আবার অন্যদলের মতে,কাজের ফলাফলের উপর নির্ভর করে সে কাজের নৈতিক মূল্যায়ন করতে হবে। দু’মতের পক্ষেই শক্তিশালী যুক্তি যেমন রয়েছে তেমনি সেগুলির সমালোচনাও করা যায়।
সকল ঐচ্ছিক কাজের মূল্যায়ন,কাজটির উদ্দেশ্যের দিক থেকে করা উচিত বলে যারা মনে করেন তারা বলেন যে,কোন কাজ ভাল কি মন্দ তা কাজটির উদ্দেশ্যের দিক দিয়ে বিবেচনা করা দরকার। অর্থাৎ কোন কাজের উদ্দেশ্য ভাল হলে কাজটি ভাল আর উদ্দেশ্য মন্দ হলে কাজটি অবশ্যই মন্দ। যেমন: কোন ডাক্তার কোন রোগীর রোগ নিরাময়ের উদ্দেশ্যে তার দেহে অস্ত্রোপচার শুরু করলেন কিন্তু তাতে রোগীটি মারা গেল। এখানে যেহেতু ডাক্তারের উদ্দেশ্য ভাল ছিল সেহেতু কাজটির ফলাফল খারাপ হলেও কাজটি নৈতিকতার মানদণ্ডে ভাল বলে গণ্য হবে। এ মতের শেষ কথা হলো,কোন কাজের মূল্যায়ন ব্যক্তির নিয়ত বা উদ্দেশ্যের উপর নির্ভরশীল,ফলাফলের ভালোত্ব বা মন্দত্ব দ্বারা নৈতিকতার বিচার করা উচিত নয়।
সকল ঐচ্ছিক কাজের উদ্দেশ্যের বদলে ফলাফল দেখে যারা নৈতিক বিচারের পক্ষপাতি তাদের মতের মূল বক্তব্য হলো,‘শেষ ভাল যার সব ভাল তার’। কাজটির উদ্দেশ্য ভাল কি মন্দ তা এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়, বরং কাজের ফলাফল দিয়ে কাজটির নৈতিকতা বা নৈতিক মূল্য বিচার করা উচিত। কাজটির ফলাফল ভাল মানে কাজটি ভাল এবং তা করা উচিত, আর কাজটির ফলাফল মন্দ মানে কাজটি মন্দ এবং তা করা অনুচিত। যেমন: একজন ভিখারি ভিক্ষা চাওয়াতে জনৈক ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হয়ে যদি, তার দিকে পাঁচ টাকার কয়েন আঘাত করার উদ্দেশ্যে ছুড়ে মারেন, এবং ভিখারি যদি ঐ টাকা দিয়ে খাবার কিনে খায় তাহলে কাজটির উদ্দেশ্য মন্দ হলেও ফলাফল ভাল বলে কাজটি নৈতিকতার বিচারে ভাল। এ ব্যাপারে এই লিংকে আলোচনা আছে।
এখানে দ্বিতীয় দলের বক্তব্য স্পষ্ট নয়। আমার মনে হয় সব পাঠক ১ম মতটিকেই পছন্দ করবেন। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ১ম মত অনুসারেই চলি। যে লোকটি কাউকে খুন করলো সেও একটা মানুষ মারলো আবার সরকার যাকে খুনের অপরাধে ফাঁসি দিচ্ছে এখানেও মানুষ মারা হচ্ছে। দুই জায়গাতেই মানুষ মারা হচ্ছে ; কিন্তু এক জায়গায় বলছি খুন আরেক জায়গায় বলছি ফাঁসি ; পার্থক্য কোথায়? ঐ উদ্দেশ্যের মধ্যে। আপনি কাউকে দান করলেন এখানেও আপনি অন্য একজন মানুষকে কিছু টাকা দিচ্ছেন, আবার কাউকে ঘুষ দিচ্ছেন এখানেও আপনি অন্য একজন মানুষকে কিছু টাকা দিচ্ছেন, আবার কাউকে টাকা ধার দিচ্ছেন এখানেও আপনি অন্য একজন মানুষকে কিছু টাকা দিচ্ছেন ; একই কাজ একেক জায়গায় একেক নাম পাচ্ছে কেন? একই কাজ এক জায়গায় ভালো , অন্য জায়গায় খারাপ হচ্ছে কেন? মূলত ঐ উদ্দেশ্যের ভিন্নতার কারণে। পিতা সন্তানকে মারলে হয় শাসন, আর কোন মস্তানে মারলে হয় নির্যাতন; কেন? ঐ মূলত উদ্দেশ্যের ভিন্নতার কারণে।কারো সাথে আপনার বন্ধুত্ব আছে বা ভালোবাসার সম্পর্ক আছে, আপনি এই বন্ধুত্বকে আরো মজবুত জন্য তাকে কিছু দিলেন, এটাকে বলে উপহার; পক্ষান্তরে আপনি যদি কোন স্কুল প্রধানকে কিছু দেন এই জন্য যে তিনি যেন আপনার অযোগ্য ছেলেকে তার প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে নেন, তাহলে এটা হবে ঘুষ । (খেয়াল করুন বলছি "মূলত" কেননা অনেক সময় উদ্দেশ্য এক হলেও অন্য কিছু কারণেও একই কাজের ভিন্ন ভিন্ন নাম ও মান নির্ধারিত হয়।যেমন বিবাহ পূর্ব যৌন মিলন জোরপূর্বক হলে ধর্ষণ আর সম্মতিক্রমে হলে জেনা বা ব্যাভিচার। ধর্মীয় বিচারে উভয়টাই খারাপ কিন্তু নাস্তিকদের বিচারে ব্যাভিচার খারাপ কিছু নয়।)
কিছু কাজ এমন আছে যা মোটামুটি সব যুগে সব সমাজেই খারাপ হিসাবে গণ্য হয়, আর বিপরীত কাজগুলো ভালো হিসাবে গণ্য হয়। যেমন, বিনা দোষে বা বিনা কারণে কারো ক্ষতি করা, মিথ্যা বলা, ধোঁকা দেয়া, বিশ্বাসঘাতকতা করা, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি।
আসুন তাহলে আমরা বের করতে চেষ্টা করি কাজের উদ্দেশ্যের ভালো খারাপের দিক থেকে কারো কাজ মোটামুটি কত প্রকার হয়।
কিছু কাজ আছে ভালো উদ্দেশ্যে করলে ভালো আর খারাপ উদ্দেশ্যে করলে খারাপ। যেমনঃ কাউকে টাকা দেয়া, কোন মানুষের জীবন নেয়া, কাউকে বন্দী করে রাখা ইত্যাদি
কিছু কাজ আছে ভালো উদ্দেশ্যে করলেও ভালো হয় না। তা খারাপ বলেই গণ্য হয়। যেমনঃ চুরি, ডাকাতি । দান করার উদ্দেশ্যে করলেও চুরি ডাকাতি ভালো বলে গণ্য হবে না।
কিছু ভালো কাজও অনেক সময় খারাপ নিয়তের কারণে খারাপ হয়ে যায়। যেমনঃ সতীনের ছেলেকে বেশী করে কোলে করে রাখা যাতে সে ঠিকমত হাঁটা না শিখতে পারে।
কিছু খারাপ কাজ আছে যা ওজর বা ঠেকার কারণে বৈধ হয়ে যায়। যেমনঃ ভিক্ষা করা, প্রাণ চলে যায় মতো পিপাসায় পানি না পেয়ে মদ খাওয়া ইত্যাদি।
এমন হতে পারে যে, একটি কাজ যা সবাই সাধারণত ভালো উদ্দেশ্যেই করে থাকে, কিন্তু কোন লোক তা খারাপ উদ্দেশ্যে করতে পারে। পক্ষান্তরে এমনও হতে পারে যে কোন একটি কাজ যা সবাই সাধারণত খারাপ উদ্দেশ্যে করে, কিন্তু কোন কোন বিশেষ লোক তা ভালো উদ্দেশ্যেও করতে পারে।
যাই হোক বেশী সূক্ষ্মতার দিকে গিয়ে লাভ নেই। এখন যেটা প্রশ্ন সেটা হলো এই যে, যেসব কাজগুলো উদ্দেশ্যের ভিন্নতার কারণে ভালো বা খারাপ হচ্ছে সেসব ক্ষেত্রে আমরা কাজ সম্পাদনকারীর উদ্দেশ্য কিভাবে বুঝি।সাধারণত কেউ তো আর কাজ করার সময় বলে কয়ে করে না যে আমি এই নিয়তে কাজ করছি।
তো মোটামুটিভাবে বলা যায় যে, স্থান কাল পাত্র দেখে, ঘটনার পূর্বাপর দেখে আমরা উদ্দেশ্য ঠিক করি এবং সেই হিসাবে কাজটাকে ভালো বা মন্দ বলি। যেমন ধরুন, আপনি দেখলেন রাস্তায় একজন লোক একটি ভিক্ষুককে কিছু টাকা দিচ্ছে, তখন আপনি নিশ্চয়ই বলবেন যে, লোকটি ভিক্ষুককে দান করলো , নাকি আপনি বলবেন যে লোকটি ভিক্ষুককে ঘুষ দিয়েছে বা লোকটি ভিক্ষুক থেকে ধার নিয়েছিলো, এখন ধার শোধ করেছে। তো এখানে আপনি স্থান কাল পাত্র দেখে বুঝতে পারলেন যে লোকটি কি উদ্দেশ্যে ভিক্ষুককে টাকা দিচ্ছে। যদিও ১০০% নিশ্চিত আপনি বলতে পারেন না যে, সে দান করেছে। এমনও তো হতে পারে অন্য কেউ তাকে টাকা দিয়ে বলেছে, এই টাকাটা রাস্তার ঐ ভিক্ষুককে দিয়ে দিও। তাহলে সে দান করছে না বরং অপরের দান পৌঁছে দিচ্ছে। বাকি আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এতো সূক্ষ্ম হিসাব নিকাশ করি না, দরকারও নেই। কেননা এই সিদ্ধান্ত ভুল হলেও কোন ক্ষতি নেই। এছাড়া এখানে আমি ঐ লোকটা সম্পর্কে একটা ভালো ধারণাই করছি।
কিন্তু যখন আমি কারো কোন কাজ দেখে তার সম্পর্কে কোন খারাপ ধারণা করতে যাব, তখন কিন্তু আমাকে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে, সব সময় স্থান কাল পাত্র দেখে হুট করে কাউকে দোষারোপ করা যাবে না। ধরুন আপনি জানেন পারভেজ সাহেব তার সন্তানকে কোন নামকরা স্কুলে ভর্তি করার চেষ্টা করছেন। এমন অবস্থায় আপনি একদিন দেখলেন যে উনি কিছু উপঢৌকন নিয়ে ঐ স্কুলের হেড স্যারের বাসায় গিয়েছেন, এতটুকুর দ্বারাই কিন্তু আপনি বলতে পারেন না যে, পারভেজ সাহেব স্কুলের হেড স্যারকে ঘুষ দিয়েছে, যতক্ষন না আপনি পারভেজ সাহেবের মনের ভিতরে উদ্দেশ্যটি জানতে না পারবেন। আর এটা আপনি ঐ উপহার দেয়ার মজলিসে উপস্থিত থেকে তাদের কথাবার্তা না শুনলে কখনোই বলতে পারবেন না। ফলে আপনি কখনোই বলতে পারবেন না যে, পারভেজ সাহেব উপহার দিয়েছে নাকি ঘুষ দিয়েছে নাকি অন্য কিছু করেছে।
আপনাকে যদি কেউ বলে যে, নাসিম সাহেবকে দেখলাম রাস্তায় একজন কে কিছু টাকা দিচ্ছে। এখন কাকে দিলো, কেন দিলো তা যদি আপনি জানতে না পারেন তাহলে কি আপনি সারা জীবনেও বলতে পারবেন যে নাসিম সাহেব কি ভিক্ষাই দিলো , না ধার দিলো, না ঘুষ দিলো, না উপহার দিলো।
মোট কথা যে সকল কাজ নাকি বাহ্যিক দিক থেকে একই রকম কিন্তু উদ্দেশ্যের ভিন্নতার কারণে সেগুলো কখনো হয়ে যায় বৈধ, কখনো ভালো, কখনো খারাপ; সেরকম কোন কাজ কাউকে দূর থেকে করতে দেখলে বা শুনলে আমি বিনা প্রমাণে তার উদ্দেশ্যকে খারাপ বলে তার কাজটাকে খারাপ বলতে পারিনা।
আরেকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই যে, একাধিক উদ্দেশ্যে করা যায় এমন কোন কাজকে হয়তো আপনি খারাপ উদ্দেশ্যে করতেই অভ্যস্ত। তাই বলে কি আপনি অন্য কেউ সেই কাজ করলে, সেও সেটা খারাপ উদ্দেশ্যেই করেছে এটা বিনা প্রমাণে বলতে পারেন, কখনোই পারেন না। কিন্তু আমরা এই ভুলটা সব সময় করি। নিজেকে দিয়ে অন্যকে যাচাই করি।
বা ধরুন একাধিক উদ্দেশ্যে করা যায় এমন কোন কাজকে হয়তো আপনার সমাজের মানুষ কোন একটা খারাপ উদ্দেশ্যেই করতে অভ্যস্ত; কিন্তু যদি বর্তমান যুগেরই ভিন্ন চিন্তা ধারার অন্য কোন সমাজের মানুষ , বা অতীতের ভিন্ন চিন্তা ধারার বা আপনার সমাজের চেয়ে উন্নত চিন্তা চেতনার কোন সমাজের মানুষ যদি ঐ কাজটি করে তাহলে আপনি আপনার সমাজের সাথে ঐ ভিন্ন ও উন্নত চিন্তার সমাজের মানুষদের একই পাল্লায় ফেলে একথা বলতে পারেন না যে তারাও এই কাজটি খারাপ উদ্দেশ্যেই করেছে, অতএব তারা খারাপ। (যারা সাহাবীদের সমালোচনা করে তারা এই ভুলটি করে)
মোটকথা
(১) কারো কোন কাজ দিয়ে তাকে খারাপ বলার আগে আমাকে অবশ্যই দেখতে হবে ঐ কাজটি কোন ধরনের কাজ। যদি কাজটি এমন হয় যে উদ্দেশ্যের ভালো খারাপের উপর ভিত্তি করে কাজটি ভালো বা খারাপ হয়ে যায়; তাহলে যেহেতু আপনি কোনদিনও তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে সে নিজে না বলা পর্যন্ত নিশ্চিত হয়ে পারবেন না সেহেতু আপনি কোনদিনও তাকে সেই কাজের উপর ভিত্তি করে খারাপ বলতে পারেন না। এটা হলো তখন যখন নাকি আপনি কাজের স্থান কাল পাত্র সম্পর্কে জানেননা। আর স্থান কাল পাত্র সম্পর্কে জানা থাকলে যদিও কাজের উদ্দেশ্য অনেকখানি বুঝা যায় তথাপি আপনি এর উপর ভিত্তি করে ১০০% নিশ্চিতভাবে কারো কোন কাজকে খারাপ বলতে পারেন না।যেমন উপরে হেড স্যারকে উপহার দেয়ার উদাহরণে আমরা দেখেছি।
(২)আর যদি কারো কোন কাজ এমন হয় যে, সেটা ভালো উদ্দেশ্যে করলেও ভালো হয়না খারাপই থাকে তখনও হুট করে তাকে খারাপ বলে দেয়া যাবে না। দেখতে হবে সেটা তিনি কোন একান্ত ঠেকায় পড়ে , কোন অপারগতার কারণে করেছেন কিনা।
(৩) আরো দেখতে হবে যেই খারাপ কাজটি তিনি করেছেন সেটা কি সর্ব যুগের সব সভ্য মানুষের কাছে খারাপ বলে গণ্য হতো নাকি এটা নিয়ে মতভেদ আছে। যদি মতভেদ হয়ে থাকে আর উনি আপনার আমার সাথে ভিন্ন মত পোষণ করে থাকেন , তাহলে তো আমি আপনি তাকে আমাদের মতের ভিত্তিতে খারাপ বলতে পারিনা। কারণ তার হিসাবে তো তিনি কোন খারাপ কাজ করেন নি। হ্যাঁ, এটা নিয়ে তর্ক হতে পারে যে কার মতটি সঠিক। কিন্তু নিন্দা, সমালোচনা, কঠাক্ষ হতে পারেনা।
(৪)এছাড়া আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল করতে হবে যে, দেখতে হবে কাজের পূর্বাপর, প্রেক্ষাপট , আগে পিছের ঘটনাবলী আমার ভালো করে জানা আছে কিনা সেটাও। কেননা অনেক সময় বাহ্যিক ভাবে দৃশ্যমান খারাপ কাজটির আড়ালে এমন কোন ঘটনা থাকে যেটা না জানার কারণেই মূলত আমাদের কাছে কাজটি খারাপ বলে গণ্য হয়; অথচ ঐ অজানা ঘটনাটি জানতে পারলে তখন আর আমরা সেই কাজটিকে খারাপ বলি না। ইতিহাসবিদরা এই জায়গায় খুব বেশী ভুল করেন। তারা অতীতের কোন ব্যাক্তির বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন , খন্ডিত, অসম্পূর্ণ ঘটনাবলীর আলোকে সেই লোককে খারাপ চরিত্র হিসাবে সাব্যস্ত করেন।তবে যার বেশীরভাগ কাজই খারাপ হিসাবে নির্ভরযোগ্য ইতিহাসে বর্ণিত থাকে, তার কোন একটা বাহ্যিক খারাপ কাজকে আমি বলছিনা যে জোড় করে ভালোর দিকে ব্যাখ্যা করার জন্য। হ্যাঁ, যার বেশীরভাগ কাজ ভালো হিসাবে ইতিহাসে উল্লেখ আছে তার এমন কোন কাজ যেটা বাহ্যিক ভাবে খারাপ অনুভূত হচ্ছে, তবে ইচ্ছা করলে সেটা ভালোর দিকে ব্যাখ্যা করা যায়, সে ক্ষেত্রে আমি বলছি যে, তার সার্বিক অবস্থার সাথে যে ব্যাখ্যা মিলে সেরকম ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা। এমনকি যার সার্বিক অবস্থা ইতিহাসের আলোকে বুঝা যায়না তার ক্ষেত্রেও হয় ভালোর দিকে ব্যাখ্যা করা না হয় চুপ থাকা।বিনা প্রমাণে আমি কারো উপর কোন অভিযোগ আনতে পারিনা।
কিছু উদাহরণের মাধ্যমে আমি এই বিষয়টি স্পষ্ট করার চেষ্টা করছি। আল্লাহ আমাকে তওফিক দান করুন।
১ম উদাহরণঃ কিছু দিন আগে ব্লগার মেহেদী পরাগ একটি পোষ্ট দিয়েছিলেন সাহাবী আবু হুরায়রা(রাঃ) কে নিয়ে। তখন ঘড়িতে জোহরের নামাজের জামাতের সময় চলছিলো। তখন আমি লিখতে চাইনা নিকের একজন ব্লগার মন্তব্য করেছিলেন যে,
"" হাসতাছি কারন সময়টা দেখেন
২২ শে জুন, ২০১২ দুপুর ১:৩৮
নামাজ বাদ দিয়া সামুতে ইসলাম নিয়া পোস্ট দিলেন, জব্বর মুসলিম!""
পরে মেহেদী পরাগ সাহেব জানিয়ে দিলেন যে তিনি সুইডেন থাকেন । দেখেন এখানে নামাজের সময় ব্লগিং করা কিন্তু একজন মুসলিমের জন্য খারাপ কাজই। কিন্তু এখানে এই ঘটনার আড়ালে আরেকটি ঘটনা ছিলো, যা নাকি ঐ সমালোচনাকারী ব্লগার জানতেন না বা ভুলে গিয়েছিলেন। দেখুন একেবারে সুস্পষ্ট বর্তমানের ঘটনার আলোকে একজন ব্যাক্তির সমালোচনা করতে গিয়ে যেখানে ভুল হয়ে যাচ্ছে, সেখানে অসম্পূর্ণ ইতিহাসের আলোকে অতীতের কোন ব্যাক্তির সমালোচনা করতে গেলে কত বড় ভুল হওয়ার সম্ভাবনা। তার উপর সেই ব্যাক্তি যদি হন চিন্তা ও কর্মে সাধারন মানুষের চেয়ে ভিন্ন ও উন্নত তাহলে তো তার কোন বাহ্যিকভাবে খারাপ কাজের সমালোচনায় লিপ্ত হওয়া আরো বেশী অন্যায়।
মেহেদী পরাগ আর আমি লিখতে চাইনা এই দুই ব্লগারের উদাহরণ আনলাম, কারণ এই দুইজনই সাহবীদের ব্যাপারে সমালোচনা করতে গিয়ে আমি যেই ভুলগুলির কথা বলবো সেই ভুলগুলো করেছেন।
২য় উদাহরণঃ একবার এক লোক তার ঘরের জানালার কাছে বসে সামনের বাড়ীর বারান্দার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছিলো । তখন ঐ বারান্দায় ঐ বাসার এক মেয়ে ছিলো । সে সোজা গিয়ে তার বাবা ভাইদের বললো যে পাশের বাড়ির একটা লোক জানালা দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। তখন মেয়েটির বাবা ঐ বাড়ীতে নালিশ দিতে গিয়ে জানতে পারলেন যে, ঐ লোকটি আসলে অন্ধ।
দেখুন, এখানে যতটুকু ঘটনা বাহ্যিকভাবে ঘটেছে তাতে কিন্তু ঐ লোকটি অবশ্যই দোষী সাব্যস্ত হচ্ছে। কিন্তু যখন জানা ঘটনার অন্তরালের ঘটনা যখন জানা গেলো তখন বুঝা গেলো যে লোকটি আসলে কোন দোষ করেনি। তাই বলে আমি বলছি না যে, যাকে ইভ টিজার হিসাবে সবাই জানে তার ক্ষেত্রেও আপনি জোড় করে তার খারাপ কাজকে ভালোর দিকে ব্যাখ্যা করুন। বলছি তার ক্ষেত্রে যার সার্বিক অবস্থা ভালো বা যার সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানা নেই ।
৩য় উদাহরণঃ একবার একজন তার নিজের জীবনের ঘটনা বলতেছিলো যে, সে একদিন তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাসরুমে বসে রয়েছে। কোন কারণে শিক্ষক আসতে দেরী হচ্ছিল। তখন আর একজন ছাত্র বই নিয়ে এসে তাকে বললো যে আমাকে একটি পড়া বুঝিয়ে দেওতো ভাই। তখন সে বললো যে, ভাই আমার খুব ঘুম পেয়েছে, আমি এখন শিক্ষক আসার আগে একটু ঘুমিয়ে নিব। তোমাকে পরে বুঝিয়ে দিব, একথা বলেই সে ঘুমানোর জন্য টেবিলের উপর মাথা রাখলো। তখন অপর ছাত্রটি উঠে,তার সিটে গিয়ে বসে পড়লো। এদিকে যেই না সে চলে গেলো, অমনি ঐ প্রথম ছাত্র টেবিল থেকে মাথা উঠিয়ে পড়তে বসে গেলো। দেখুন এখানে মনে হতে পারে যে, প্রহম ছাত্রটি একটি মিথ্যা কথা বললো, আসলে সে ছাত্রটিকে বুঝিয়ে দিবে না, কিন্তু সরাসরি মানা না করে মিথ্যার আশ্রয় নিলো। কিন্তু এখানেও বাহ্যিক ঘটনার আড়ালে আর একটি ঘটনা আছে। তাহলো, আসলেই ঐ ছাত্রটির ঐ সময় খুব ঘুম পেয়েছিলো, কিন্তু যখনই সে ঘুমানোর জন্য টেবিলে মাথা রেখেছে তখনি তার মনে জাগলো যে, ঘুমালে তো এই সময়টুকু নষ্ট হবে, না ঘুমাবো না। তাহলে দেখা গেলো যে সে মিথ্যা বলেনি। যেটা করেছে সেটা হলো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন। দেখুন এখানে কিন্তু ঘটনা সব জানাই আছে, শুধু মাত্র মনের এক মুহূর্তের পরিবর্তনে কাজটি পাল্টে যাচ্ছে।
চতুর্থ উদাহরণঃ একবার একজন লোক মসজিদের ভিতর ইমাম সাহেবকে তারিখ জিজ্ঞাসা করলে পর তিনি তাকে ঐদিনের তারিখ বললেন; একটু পর মসজিদের মুয়াজ্জিন সাহেব ইমাম সাহেবকে তারিখ জিজ্ঞাসা করলে পর তিনি একটি ভিন্ন তারিখ বললেন। প্রথম লোকটি অনতিদূর থেকে তা শুনতে পেলো। সে ভাবলো যে ইমাম সাহেব মুয়াজ্জিনের সাথে মিথ্যা বলেছে। দেখুন এখানে ঐ লোকটি অন্তরালের যে বিষয়টি ভুলে গিয়েছিলো সেটি হলো, ইমাম সাহেব তো মুয়াজ্জিনকে আরবী তারিখও বলতে পারে। চিন্তা করুন যার নাকি আরবী তারিখ সম্পর্কে জানাই নেই সে কিন্তু সারা জীবনেও এই রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারবে না যে ইমাম সাহেব আসলে মিথ্যা বলেননি। এইজন্য বলছি কারো কোন বাহ্যিকভাবে খারাপ কাজ দেখে হুট করে তাকে নিন্দা করা শুরু করে না দিয়ে আগে ঐ লোকটিকে জিজ্ঞাসা করতে হবে যে ব্যাপার কি ভাই। কিন্তু যদি লোকটি হয় অতীতের তখন তো আর তাকে জিজ্ঞাসা করার কোন উপায় নেই।
এরকম একটি আশ্চর্য ঘটনা দেখুন, অবশ্যই দেখুন এখানে ।
এরকম বহু ঘটনা আপনার জীবনেও নিশ্চয়ই ঘটেছে। মোটকথা আমরা কাউকে তার কোন বাহ্যিকভাবে খারাপ কাজের ভিত্তিতে সমালোচনা করতে গিয়ে চার ধরনের ভুল করি।
১নং ভুলঃ একাধিক উদ্দেশ্যে(ভালো বা খারাপ) যে কাজ করা যায় সে ক্ষেত্রে বিনা প্রমাণে শুধু খারাপ উদ্দেশ্যেই উনি তা করেছেন বলে ধরে নেয়া। এই ভুলটা করার পিছনে কাজ করে ঐ ব্যাক্তির প্রতি আমাদের হিংসা, রাগ, শত্রুতা, ইত্যাদি। কিছু খারাপ মানুষ থাকে যারা সব সময় নিজের সাথে তুলনা করে অন্য ভালো মানুষদের কর্মকে বিচার করে। সে হয়তো একটা কাজ সব সময় খারাপ উদ্দেশ্যেই করে, এখন এটা যে কেউ ভালো উদ্দেশ্যেও করতে পারে এটা তার মাথায় কখনোই আসেনা। তার মনের ভিতরটা আবর্জনা দিয়ে ভরা, সেখান থেকে সুগন্ধ কিভাবে আসবে?
২নং ভুলঃ কেউ হয়তো নিশ্চিতভাবেই কোন একটি খারাপ কাজ করেছে। সেক্ষেত্রে আমরা এতটুকু যাচাই করার আগ পর্যন্ত নিজের মুখকে সামলে রাখতে পারিনা যে, লোকটি কি এই অন্যায়টি কোন একান্ত ঠেকায় পড়ে করেছে কিনা।
৩নং ভুলঃ আবার এটাও যাচাই করে দেখি না যে, এই কাজটি কি তার মতেও খারাপ কিনা। ভাবখানা এমন যে, আমার মতই মত, যেহেতু এটা আমার মত।
৪নং ভুলঃ কেউ হয়তো বাহ্যিকভাবে এমন একটা কাজ করেছে, যেটা ভালো বা খারাপ যেকোন উদ্দেশ্যেই করুক না কেন তা খারাপই থাকে; সেক্ষেত্রে ঐ ঘটনার অন্তরালের আরো ঘটনা না জেনেই আমরা সমালোচনা করা শুরু করে দেই।উপরের উদাহরণগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে একেবারে ক্ষুদ্র পরিসরের দুই তিনজনের সাথে সম্পৃক্ত সহজ সরল ঘটনার ক্ষেত্রেই অন্তরালের ঘটনা অজানা থেকে যাচ্ছে। এখন আপনি চিন্তা করে দেখুন, সেই ঘটনা যদি হয় অতীতের,যদি হয় বিস্তৃত পরিসরের ঘটনা, যদি হয় জটিল ঘটনা সেখানে অন্তরালের ঘটনাসমূহ অজানা থাকার সম্ভাবনাইতো প্রায় শতভাগ।
এই দুই পর্বের আলোচনার উপর ভিত্তি করে আমরা হুমায়ূন আহমেদের ২য় বিবাহের ভালো মন্দ নিয়ে আলোচনা করবো আল্লাহ চাহেতো ৩য় পর্বে।এছাড়া আপনি এই দুই পর্বের আলোচনা মনযোগ দিয়ে পড়ে চিন্তা করলে নবী সাহাবীদের একাধি বিবাহ, বাল্য বিবাহ, সাহাবীদের অন্তরকলহ
ইত্যাদি অনেক প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন ইনশাল্লাহ। ৩য় পর্ব এখানে আছে
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:৩৬