সৃষ্টিকর্তা আমাদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, মেধাও তিনিই দিয়ে দিয়েছেন কিন্তু তার বিকাশ ঘটেছে আমাদের "মা" এর হাত ধরে। পরিবারের বড়দের হাতেই শুরু হয়েছে অক্ষর চেনার কাজ, আমাদের পাঠ্যগত শিক্ষার শুরু গ্রামের বা শহরে অবচেতন মনে কাজ করে যাওয়া নানা শিক্ষকের মাধ্যমে। বাংলাদেশে বর্তমানে অনেক দামী দামী স্কুল রয়েছে কিন্তু আমরা যারা ২৩+ বা তারও বেশী তাদের ৮০% ভাগই শিক্ষক বলে পায়েছি কিছু অদ্ভুত মানুষদের, যারা লাঠি হাতে আমাদের অ আ চিনতে শিখিয়েছে, পড়তে শিখিয়েছে। আদিকালের বই ঘেটে ইতিহাস পড়িয়েছে, জানিয়েছে পৃথিবী জয়ের কাহিনী, স্বপ্ন দেখিয়েছে বড় হবার।
ছোটকালের সেই প্রাইমারী স্কুল শেষ করার যুগ পাড়িয়ে গেছে, মাধ্যমিকের শিক্ষকদেরও ছেড়ে এসেছি অনেক বছর আগে। উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ছাড়ারও বছর ছয়েক পাড় হয়ে গেছে। এখন আমরা আর তাদের পড়ানো সেই বইগুলো পড়িনা, আমাদের হাতে এখন অনেক মোটা মোটা বই থাকে, থাকে ইন্টারনেট সম্বলিত দামী ফোন। আমরা চাইলেই দেখি ফেলি অজানা অনেক তথ্য, কিন্তু সেই অবহেলিত মানুষগুলোর কথা কি কখনো ভাবেছি, একবারও কি খোজ নিয়েছি তারা কেমন আছে?
বিশ্ব বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক মারা গেলে আমরা কালো ব্যাচ ধারণ করি, কোন শিক্ষককে অপমান করা হলে বিচারের দাবীতে রাস্তায় নামি, স্লোগানে মুখে ফেনা তুলি। আমি বলছি না এগুলোর কোনটা খারাপ, বা করা উচিত না, কিন্তু একবারও কি ভেবেছেন আমাদের যারা এতো বড় হবার স্বপ্ন দেখালো তারা কেমন আছেন?
তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশের বাইরে উচ্চ পদে কর্মরত আছেন অনেকে, দেশে কর্মরত আছেন অনেকে, অনেকর নামের সামনে ড:, ইন্জিনিয়ার, নেতা, মন্ত্রী সহ বসেছে অনেক বিশেষণ। যাদের অনেকেই এসি রুমে বসে কোটি কোটি টাকার হিসাব করে, ব্যঙ্কে টাকার সংখ্যাটা কম নয়। কিন্তু আমাদের মেধার কারিগরদের অবস্থা দিন দইন আরো খারাপ হয়ে চলছে। যারা তাদের কর্মস্থল থেকে বিরতি নিয়েছেন তাদের শেষ বয়সে বার্ধক্যেজনিত কারণে ঔষুধ কেনার টাকাটা মেটাতেও অনেকের কষ্ট হয়। মহান কারিগরদের কেউ মারা গেলেও আমরা জানতে পারি না, কালো ব্যচতো দুরের কথা।
আমি জানি না কি করে তাদের খেয়াল রাখতে হবে, কি করা যেতে পারে। কিন্তু এবার সেই মাদ্রাসায় গিয়ে দেখেছি, আমার সময়ের তিনজন শিক্ষক মারা গেছেন। যাদের দুইজনই বার্ধক্যজনিত কারণে, বাকী একজন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তাই অবসর নিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন পেনশনের টাকায় নিজের চিকিৎসা করাবেন, কিন্তু হয়নি। কারণ জানেন, তিনি সাতমাস ঘুরেও নিজের সেই টাকা তুলতে পারেন নি বরং শেষ জীবনে এমন চক্কর কাটতে কাটতে ত্যাগ করেছেন শেষ নি:শ্বাস।
এমনভাবে অবহেলায় আমাদের কতো শিক্ষক যে কষ্টে ইহলোক ত্যাগ করেছেন তা জানা নেই। তারা এতোটাই হতোভাগা যে অবসর শেষে যে কারো বাসায় কাজ করবেন তাও সম্ভব নয়, কারো কাছে হাত পাতবেন তা তারা কখনোই পারবেন না। কিন্তু উর্ধগতী মুল্য, বিশেষ করে যদি কারো নিজের অন্য কোন সম্পদ না থাকে বা সন্তান না থাকে, তবে? তাদের জীবনের পাতাগুলো কেমন হবার কথা একবারও ভেবেছেন?
যারা আমার লেখা পড়েন তারা ভালো করেই জানেন, গুছিয়ে লেখার অভ্যাস বা ক্ষমতা কোনটাই আমার নেই। তারপরও লিখে যাই, জানিনা আপনাদের কিছু বুঝাতে পারলাম কিনা?