somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"মজার স্কুল:পথশিশু ও আমরা কতিপয়" ও ভাগ্য বিড়ম্বনার স্বীকার চার তরুণ-তরুণীর গল্প

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবিতে আটক চার তরুণ-তরুণী। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে এরা সবাই মানব পাচারের সাথে জড়িত, তবে আসলেই কী তাই? জানতে শুরু করতে ২০১৩ সালের কিছু ঘটনা দিয়ে।

মজার স্কুলের জন্ম/প্রতিষ্ঠা ১০ই জানুয়ারী, ২০১৩। অদম্য বাংলাদেশ ফাউণ্ডেশনের উদ্দোগে চালু হওয়া কতিপয় কিশোরের এই সমাজসেবা কার্যক্রম অল্প দিনেই পথশিশুদের আস্থার মাধ্যম হয়ে উঠে। প্রথম দিকে শাহবাগে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম অল্প সময়েই মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। ২০১৩ এর ফল উৎসবের পর পরই এটিএন বাংলায় তাদের নিয়ে একটি বিশেষ সাক্ষাতকার প্রকাশ হয়, যা নতুনদের তাদের সাথে যুক্ত করে। ডিসেম্বর মাসে তারা আগারগাও এ নতুন একটি শাখা(২য়) খুলে। ২০১৪ তে কমলাপুরে আরও একটি শাখা হয়। এগুলোর মাঝে শুধু আগারগাও এর শাখাটির একটি রুম ছিল, বাকীগুলো মাদুর পেতে চলত। তার মাঝেও বাচ্চাদের শেখানো, গল্প বলা, সচেতনতা মূলক ভিডিও দেখানোর কাজগুলো চলত। এই সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়মিত পেতে কম ভালোবাসা দেখাতে হয়নি, এই ভালোবাসায় অনেক আবদার এসেছে। তখনই না হলেও তাদের আবদারগুলো অধিকাংশেই পূরণ করা হয়েছে, কারণ ছাত্রদের দ্বারা পরিচালিত এই সংগঠনটি তাদের হাত খরচের টাকায় চলত। সংগঠনটির প্রধান আরিফ ভাই তরুনদের শিখিয়েছেন কীভাবে সিগারেট কেনার টাকা দিয়ে মানুষের ভালোবাসা জয় করা যায়। (আমার জানা মতে সংগঠনটির নিয়মিত ভলেন্টিয়ারদের কেউ ধুমপান করেন না।)

পথশিশুদের নিয়ে কাজ করে যাওয়া এই সংগঠনটি ২০১৪ এর ২রা ডিসেম্বর পথশিশুদের জন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেন, যার নাম দেয়া হয় বায়ান্নো। এই আশ্রয়কেন্দ্র নিয়ে ফেসবুকে তাদের পোস্ট ছিল
"গত দুই বছরের পরিশ্রমের ফসল , পথশিশুদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র যার নাম আমরা দিয়েছি " বায়ান্নো " অনেক গুলো ছোট মানুষের অনেক বড় স্বপ্ন পূরণ হলো । পূর্ণতার অপেক্ষায়"
তাদের স্বপ্ন পূরনের সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে অনেকে। আগারগাও এর স্কুলে ২০১৪ এর ডিসেম্বরে বাচ্চাদের মাঝে ChildrenAid , UK শীত বস্ত্র বিতরণ করে এবং বাটা এর তরফ থেকে প্রতিটি শিশুকে জুতা(স্কুল সু) দেয়া হয়। ২০১৫ অর্থাৎ এই বছর তৃতীয় বছরে পদার্পণ হিসাবে আলোচলার যোফ দিয়েছিলেন অন্যরকর গ্রুপের সোহাগ ভাই, এভারেস্ট জয়ী মুহিত ভাই ও আরিফ রহমান। মজার স্কুলের কার্যক্রম দেখতে ২০১৪ এর শুরুতে জাফর ইকবাল স্যারও যোগ দিয়েছিলেন।

বর্তমানে তারা শাহবাগ, রামপুরা, সদরঘাট ও আগারগাও এ তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ বছর ফল উৎসবে তারা ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে ১৪০০ এর বেশী শিশুকে ফল দিয়েছে। ফল উৎসবটিতে(জুন/জুলাই-রমযানের ঠিক আগে) আমিও ছিলাম, উৎসবের আগে তাদের উৎসব সংক্রান্ত কর্মশালায় যোগ দিয়েছিল। সেখান থেকে কিছু শেয়ার করছি।

২০১৬ এর শুরুতেই ঢাকার পথশিশুদের জন্য একটি বাস নামানোর কথা ছিল, যা প্রতিনিয়ত পথশিশুদের শিক্ষাদানের জন্য ঘুরে বেড়াবে। সেই সময়ে জেনেছিলাম শেল্টার হোম বায়ান্নোর কথা। সেখানে থাকা ১০ শিশুর কথা, যারা রাস্থা থেকে সেখানে এসেছে। তারা সেখানে তিনবেলা খাবার খেত, নামায পড়ত, টিভি দেখত, খেলত। বিনোদনের সব ব্যাবস্থাই ছিল সেখানে, তাদের সেই বাসায় টিভি, ফ্রিজ ও ফ্যান সবই কেউ না কেউ অনুদান দিয়েছে। সর্বশেষ কম্পিউটারও পেয়েছে তারা, যা দিয়ে বাচ্চাদের টাইপিং ও অন্য কাজ শেখানো হতো, যা তাদের সাবলম্বী করে তুলবে। মূলত এই ছিল "বায়ান্নো" নামে এই প্রজেক্টের মূল উদ্দেশ্যে।

শুধু যে তারাই এমন টা নয়, নানা সময়ে তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন অনেকে। মজার স্কুল : পথশিশু আর আমরা কতিপয় এর ফেসবুক পেজ ঘাটলেই বুঝবেন শিশুদের জন্য তারা কি না করেছে। এতোগুলো শিশুর জন্য প্রতিদিন কিছু খাবারের ব্যবস্থা করা, খাবার আগে হাত ধোয়ানো সহ অনেক কিছু।

গ্রেফতারের মূল কারণ
সংগঠনটি এই বছরের জানুয়ারীতে সরকারিভাবে নিবন্ধন পায়, তাই ডিসেম্বরে শুরু হওয়া "বায়ান্নো" সম্পর্কে তাদের ধারণা থাকার কথ ছিল। যেখানে দশটি শিশুকে রাখা হয়েছিল। এই ১০ জনের প্রতিটি শিশুই পথশিশু, যারা বিভিন্ন রাস্তায় থাকত। প্রথমে তাদের ২-৩মাস দেখা হয় তারা স্থান বদল করে কিনা, না করে থাকলে তাদের বলেই নিয়ে আসা হয় এই বাসায়। এভাবে ধীরে ধীরে ১০জন শিশুকে কারিগরি শিক্ষা দেবার জন্য আনা হয়।
এমন নয় যে তারা আটক ছিল, তাদের নিয়ে নানা সময় ঘুরতে যাওয়া হয়েছে, তারা খেলার জন্য নেমেছে। সর্বশেষ গত ঈদে তাদেরকে নিয়ে চিড়িয়াখানা ঘুরে আসে সবাই। এই ১০টি শিশুই ভালো ছিল, আনন্দে ছিল।
যে মিজান এর চাচার অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, সে নিজের ঠিকানাও ঠিক করে বলতে পারেনি। কিন্তু এখন সে তাকে আটকে রাখার কথা বলছে, যা সবাইকে অবাক করেছে। মিজান ছাড়া বাকী ৯টি শিশুই আবারও সেই বাসায় ফিরতে চায়।

আমরা যারা এই মজার স্কুলের সাথে যুক্ত তারা সবাই যুবক-যুবতী। তাই আইনি পক্রিয়ার বিষয়টি তেমনভাবে কখনো ভেবে দেখিনি। বাসায় কোন এনজি এর বোর্ড ছিল না, স্থানীয় থানার অনুমতিপত্র ছিল না।
কিন্তু এলাকার সবাইতো সেই বাচ্চাদের চেনার কথা, তারা গত ছয়মাস ধরে সেখানে আছে। অথচ এলাকার সবাই বিষয়টি প্রাথমিক অবস্থায় অস্বীকার করে গেছে। তাছাড়া মিজান এর চাচার মিজানকে খুজে পাবার ঘটনাটিও জানা যায়নি। পুলিশ যখন অভিযান চালিয়েছিল তখন সেই বাসায় আরিফ ভাই, জাকিয়া আপু, মিজান ভাই ও বাসায় সেই ভাইটি বাচ্চাগুলোর দেখভাল করছিল তাদের গ্রেফতার করে।

মজার স্কুলের পরিচিতি অনেক বেশী, তাই হয়তো আশেপাশে খোজ নিলে বা তাদের কথা শুনলে রিমান্ডে নেবার দরকার হতো না। আদালতে বিচারকও তাদের কথা না শুনেই পুলিশকে রিমান্ডের অনুমুতি দিয়ে দেয়। ডিএমপি এর ফেসবুক পেজে এই চার জনের ছবি "মানব পাচারকারী" হিসাবে প্রচার হলে মানুষের তীব্র ঘৃণা তাতে লক্ষনীয়।
ডিএমপি তাদের পোস্টে উল্লেখ করে, 'প্রাথমিক ভাবে তারা নিজেদের মানব পাচারকারী হিসাবে স্বীকার করেছে", অথচ এমনটি কখনোই হাবর কথা নয়। তাদের কথা শুনে যদি জাফর ইকবাল স্যার, মুহিত ভাই বা বিভিন্ন মিডিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হতো তবেই হতো তাদের মানব পাচারকারী হিসাবে প্রকাশ পেতে হতো না।

আমরা সবাই জানি পুলিশ কতোটা একটিভ, সেখানে ১২ তারিখে গ্রেফতার, ১০তারিখে আদালতে পেশ ও ১৪-১৫ তারিখে রিমান্ড নিয়ে আমার কিছুটা সন্দেহ হয়। তারপর ফেসবুকে "আরিয়ান আরিফ ও জাকিয়ারা মানব পাচারকারী নয়" ইভেন্টে আমিনুর ভাই উল্লেখ করেছেন পুলিশ ৬-৭লাখ টাকা চেয়েছিল, যদিও সত্যতা তিনিই জানেন। কিন্তু আমার মনে হয়, মানব পাচারকারীদের টার্গেটে পড়ে গেছেন এই "মজার স্কুল" এর কর্মীরা।

যাই হোক গতকাল পুলিশের উদ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছে একদল প্রতিনিধি, তারাও ভালো কিছুর আস্বাস দিয়েছেন। অনেক জায়গা থেকেই আমাদের পাশে থাকার ও কাজের প্রশংসা পাওয়া গেছে।

পথশিশুদের নিয়ে একটি ছবি ব্লগ করা হয়েছে যেখান থেকে "মজার স্কুল" নানা কার্যক্রম জানতে পারবেন।
মজার স্কুলের ছবি ব্লগ
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:২১
১৮টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৃষ্টির ঋণ....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৪ ঠা মে, ২০২৫ রাত ৮:২৭

সৃষ্টির ঋণ....

মধ্য দুপুরে ডেল্টা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে সিএনজি, বাইক, উবার কিছুই পাচ্ছিনা। অনেকটা পথ হেটে বাংলা কলেজের সামনে বেশকিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে একটা রিকশা পেয়েছি....ঘর্মাক্ত ষাটোর্ধ কংকালসার রিকশাওয়ালাকে দেখে এড়িয়ে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

হেফাজত ইসলামের মহাসমাবেশ: প্রধান ইস্যু কি কেবল নারী সংস্কার কমিশন বাতিল ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা মে, ২০২৫ রাত ১১:১৪


হেফাজত ইসলাম মে মাসের তিন তারিখ এক বিশাল সমাবেশ আয়োজন করে। সমাবেশ থেকে সরকারের কাছে প্রায় বারো দফা দাবী তুলে ধরা হয়। সরকার যদি বারো দফা দাবী মেনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ভাঙ্গা ল্যাপটপ

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৫ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:০৬


শুক্রবার রাতে আমার মনে হলো, আমি আমার ল্যাপটপে লিনাক্স ওএস সেটআপ দেব। যদিও আমি সারা জীবন উইন্ডোজ ব্যবহার করে এসেছি এবং লিনাক্স সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না। রাতে শুয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বৈপ্লবিক ছন্দ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৫ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:১২




বছর তিনেক আগে রাজু ভাস্কর্যের সামনে উড়ন্ত ভঙ্গিতে ছবি তুলেছিলো একটা মেয়ে। তার নাম ইরা।

ইরার ওই ছবিটাই হওয়া উচিত বাংলাদেশের মেয়েদের প্রতীক। আমাদের মেয়েদের মেধা আছে, অদম্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের ইসলামিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম ও তার আসল বাস্তবতা

লিখেছেন নীল আকাশ, ০৫ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭







বাংলাদেশের ইসলামিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার নামে যে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো দেশের মানুষের সাথে ভন্ডামি করে বেড়াচ্ছে তাদের জন্য উপরের ছবিগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ‌এই সমস্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×