ছোটবেলায় পড়া জিম ও ডেলার সেই শতবর্ষ পূর্বের আর ম্যাজাইদের দেয়া সেই পুরাতন উপহার ওদের টানেনি। ওদের টেনেছিলো রুপকথার রাজকন্যা কঙ্কাবতী। রাজকুমার, ঘোড়ায় চড়া প্রিন্স চার্মিং। এরপর জীবনের গল্প বদলাতে থাকে। সেইসব সময়ের বরপুত্ররা সময়ের কাছে পরাজিত নতজানু।
চাওয়া পাওয়ার হিসেব মেলাতে গিয়ে বোঝা না বোঝার দোল দোলানো অবস্থায় চরম বিভ্রান্তির মাঝে দাঁড়িয়ে কখনো কখনো আতুর ঘরে লবন মুখে দিয়ে খুন করে আজন্ম লালিত্য সকল ইচ্ছেদের। এক নিঃস্বপ্ন নিদ্রায় একসময়কার দুর্দান্ত জীবিত ওরা নিহত হয়ে থাকে, প্রতি মাইক্রোসেকেন্ডে।
শেষ রাতের গাড়ি হারিয়ে পৃথিবী নামের এক অখ্যাত স্টেশনে কুয়াশায় কাঁপে ওরা। তবুও আশায় বাঁচে। একদিন দিন চলে গেলেও কুয়াশার শাদা পর্দা দোলাতে দোলাতে হয়ত আবার সে ঘরে ফিরবে। মানুষদের ওই একটাই গন্তব্য, ঘর। ঘরের খোঁজে ঘরের মানুষেরা ঘর ছেড়ে পালায়।
আর একবার যে পালায় তাকে বারবার পালাতে হয়। চক্র। অর্থহীন চক্রের আবর্তন ছেড়ে পারেনা অসহায় ওরা বেরিয়ে আসতে। লোভী ওরা। আবার যায় ঘর সাজাতে। ভাবতে থাকে, চোখের পাতায় শীতের বিন্দু জমতে জমতে নির্লজ্জের মতোন হঠাৎ সোনালী সূর্য উঠে আসবে। অভাব অবহেলায় ম্লান হয়ে যাওয়া ওদের মুখের উপর রোদ নামলে, সামনে দেখবে পরিচিত নদী। স্বপ্নের মন্দাকিনী।
মোহো কিংবা মোহোগ্রস্থ এক তন্দ্রাবিলাস জীবনের প্রান রস কেবলি শুষে নেয়। অবচেতন মনে পান করে চেতন চেতন ভালোবাসার সায়ানাইড। আহ! কি সুমিষ্ট সেইসব অমৃতসম সুধাময় গরল! আরেকটু দাওনা, তিয়াস মেটাই। বড্ড তিয়াস জাগে। আরেকবার বাঁচবার। বেশরমের মত এইসব চাওয়া।
জানিনা, জানালার ফাঁক গলে সূর্যের আলোরা কোনোদিন ঘুম জড়ানো অপরুপ রুপসীদের কুন্তলা চুল সরিয়ে আদুরে চুমু দিয়ে যায় কিনা। নাকি রোদেরা গতদিনের মতই বিদেশ ভ্রমনে যায় আর লিলুয়া বাতাসেরা দখিন দুয়ারে ফেরেনা।
সময় ভিখারী হয়ে ঘোরে অথচ সময়ই জানে, কথা আছে, ঢের কথা আছে। যারা একদিন গাইতো মধুরতম আনন্দময় সব সঙ্গীত, তারা আজ কুর্নিশ জানায় পৃথিবীর আনাচেকানাচে ধনীদের অপরূপ শহরের সকল জিম ও ডেলাকে। বেঁচে থাকবার বিভৎসতার কাছে যেই জিম ও ডেলা পরাজিত হয়নি। শুভেচ্ছা তাদের।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৬ সকাল ১০:৪৮