somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাগজের ফেরিওয়ালা
যদি ভালো ইনসানই না হতে পারি, তবে এই রক্ত-মাংস-রূহ-মস্তিষ্কের মূল্য কী? আমি উড়ার স্বপ্ন দেখি না, উড়তে তো মাছিও পারে! আমি মাটির আদম, মাটিতেই মরতে চাই, আমার বুকে লাগিয়ে দিও কদম ফুলের গাছ।

মোস্তাকিমের পথে (পর্ব ১২)

১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অবশেষে মহা ধুমধামের সাথে নুসরাত ও ফরহাদের বিবাহ সম্পন্ন হলো। বাসর রাতে নুসরাত ফরহাদকে বলল, তাহলে আমাদের বিয়ে হয়েই গেল?
ফরহাদ বলল, হুম।
নুসরাত বলল, আমার তো এখনও বিশ্বাসই হচ্ছে না যে আমি তোমাকে পেয়েছি। একটু চিমঠি কাটবে?
ফরহাদ বলল, চিমঠি?
নুসরাত বলল, হ্যাঁ, এই হাতের উপর কাটো।
ফরহাদ চিমঠি কাটল। নুসরাত চিৎকার করে বলল, উহ, একটু আস্তে কাটবে না?
ফরহাদ বলল, ব্যথা পেয়েছ?
নুসরাত বলল, নাহ। আজ কোন ব্যথাই ব্যথা নয়। কোন কষ্টই কষ্ট নয়। আজ থেকে শুধু সুখ আর সুখ। কী দেখছ ওভাবে?
ফরহাদ বলল, ভাবছি।
নুসরাত বলল, কী ভাবছ?
ফরহাদ বলল, এত বিশাল আকাশ ছেড়ে চাঁদ কেন এই অভাগার ঘরেই এলো!
নুসরাত বলল, বাব্বাহ! রোমান্টিক হয়ে গেছে আমার রাগী স্বামী!
ফরহাদ বলল, রোমান্স তো তুমিই আমাকে শিখিয়েছ। আমি তো ভালবাসার ক খ-ও জানতাম না।
নুসরাত বলল, একটাই অভিযোগ আমার জীবনের তরে, তোমাকে কেন পেলাম এতোদিন পরে! আরো আগে যদি তোমায় পেতাম কত ভালো হতো!
ফরহাদ বলল, কেন?
নুসরাত বলল, জীবনের কত বসন্ত তোমাকে ছাড়াই কেটে গেল!
ফরহাদ হেসে দিল। নুসরাতও হাসল।
*****
নুসরাত ও ফরহাদ সেন্ট মারটিনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সমুদ্র আর আকাশের সীমাহীন সৌন্দর্য তারা মুগ্ধ চোখে উপভোগ করছে। হটাৎ তারা দেখল বালি আর ইট দিয়ে কাঁদার মাঝে একজন বৃদ্ধ লোক কী যেন তৈরী করছে। লোকটির উসকোখুসকো চুল, ছেঁড়া জামা, অগোছালো দাঁড়ি। গায়ে প্রচুর ময়লা। পাগলের মতো দেখতে।
নুসরাত বলল, উনি কী করছেন?
ফরহাদ বলল, কী জানি! চলো তো দেখি গিয়ে।
নুসরাত ও ফরহাদ এগিয়ে এলো। নুসরাত আরো একটু এগিয়ে আসতেই লোকটি চিৎকার করে বলল, থাম।আর এগোবি না। আর এগোনো নিষেধ।
নুসরাত বলল, কেন? আরও এগোলে কী হবে? কী এটা?
লোকটি পাগলের মতো হাসল। তারপর বলল, এটা? এটা জান্নাত।
নুসরাত ব্যঙ্গাত্বক ভাবে বলল, জান্নাত! পৃথিবীতে?
লোকটি বলল, কেন? তুইও তো তোর জান্নাত পৃথিবীতেই বানিয়ে নিয়েছিস!
নুসরাত বলল, হ্যাঁ, বানিয়ে নিয়েছি। এই যে দেখছ, আমার স্বামী। এই আমার সবকিছু, এই আমার জান্নাত। আমি আর কোন জান্নাতের পরোয়া করি না।
লোকটি ফরহাদের দিকে তাকিয়ে দেখল। তারপর হাসতে হাসতে নুসরাতকে বলল, এটা তোর জান্নাত! না না না। আরে, এটা তো দরজা। এটা তোর পথ আটকে রেখেছে যাতে তুই গন্তব্যে পৌছতে না পারিস। তুই কত নির্বোধ, তুই কত বোকা!
নুসরাত বলল, চুপ করো। তোমাদের মতো ফকিরদের জন্যই এই দেশের বদনাম হচ্ছে। যেখানে খুশি সেখানেই বসে যাও ভিক্ষা করতে।
লোকটি হাসতে হাসতে বলল, ফকির! আরে নির্বোধ মেয়ে, সবাই ফকির। সবাই ভিখারী। ধনী হলেন একমাত্র ঐ উপরে যিনি বসে আসেন, তিনি। তিনি সবাইকে ভিখারী করে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিয়েছেন যাতে সবাই তার কাছে ভিক্ষা চায়। আর বোকা মাটির পুতুল, পৃথিবীতে এসে নিজেই নিজেকে আমির ভাবতে শুরু করেছে, ধনী ভাবতে শুরু করেছে। এই দ্যাখ মাটি, চিনতে পারিস একে?
লোকটি কাঁদা মাটি তুলে তার সারা গায়ে মাখলেন। নুসরাত বলল, ছিঃ কী নোংরা!
লোকটি হাসতে হাসতে বলল, নোংরা! মাটি তোর কাছে নোংরা লাগে! তাহলে তুই নোংরা, পৃথিবীর সব মানুষ নোংরা! এই মাটি থেকে সবার সৃষ্টি, মাটিতেই সবাইকে ফিরে যেতে হবে। আর দেখিস, একদিন তোর মত সবার গর্ব, সবার দাম্ভিকতা এই মাটিতে এসে মিশে যাবে।
নুসরাত বলল, তোমার ঘেন্না করে না? তোমার কোন রুচি নেই?
লোকটি বলল, না, আমার ঘেন্না করে না। কারণ আমার প্রিয়তম তোর মত দুনিয়ার কোন পুতুল নয়। আমার প্রিয়তম সবচেয়ে পবিত্র, সবচেয়ে উত্তম।
লোকটি কাঁদতে লাগল। তারপর বলল, আমি জানি, আমার প্রিয়তম আমায় দেখছেন, আমার কষ্ট, আমার আনন্দ, আমার প্রেম, আমার বিরহ সব তিনি দেখছেন। আমি তাঁকে চাই, আমি শুধু তাঁকে চাই।
নুসরাত বলল, তোমার মত অদৃশ্য কারও ভরসায় আমি থাকি না। আমি আমার প্রেমকে দেখতে পাই, আমার সুখকে দেখতে পাই, আমার বেহেশতকে দেখতে পাই। আমার স্বামীই আমার বেহেশত। তুমি থাকো তোমার অদৃশ্য প্রিয়তমকে নিয়ে।
নুসরাত ফরহাদের হাত ধরে চলে গেছ। লোকটি কাঁদতে কাঁদতে সারা গায়ে কাঁদা মাটি মাখতে লাগল আর চিৎকার করে বলতে লাগল, আমায় তোমার কাছে নিয়ে যাও প্রিয়, আমায় তোমার কাছে নিয়ে যাও।
*****
গাড়িতে চড়ে ঢাকা ফিরছে নুসরাত ও ফরহাদ।
ফরহাদঃ তুমি লোকটার সাথে ওভাবে ঝগড়া না করলেও পারতে।
নুসরাতঃ তুমি দেখলে না, কী বাজে ব্যবহার করছিল আমাদের সাথে! কী সব উলটাপালটা কথা বলছিল তোমার সম্পর্কে! আমার সহ্য হচ্ছিল না।
ফরহাদঃ আরে, পাগলের কথায় এত গুরুত্ব দিলে চলে নাকি?
নুসরাতঃ এসব পাগলকে পাগলাগারদে নিয়ে কারেন্ট শক দেয়া উচিৎ। তাহলে যদি শিক্ষা হয়!
ফরহাদ হেসে দিল।
নুসরাতঃ হেসোনা, আমার মুডটাই নষ্ট হয়ে গেছে।
******
নুসরাত ও ফরহাদ তাদের নতুন ফ্ল্যাটে উঠল।
নুসরাতঃ শোবার ঘরটা আমি আমার পছন্দের রঙ দিয়ে সাজাবো।
ফরহাদঃ কিন্তু আমি অলরেডি আমার পছন্দের রঙ লাগিয়ে ফেলেছি।
নুসরাতঃ তাই? তাহলে ফার্নিচারগুলো আমার নিজের মতো করে সাজাবো। এটায় কিন্তু তোমার ফরমায়েশ চলবে না।
ফরহাদ হেসে বলল, ঠিক আছে।
নুসরাতঃ আমাদের দুজনের সংসার। কী মজা! শুধু তুমি আর আমি।
ফরহাদঃ কাজের লোক একটা রাখতে হবে। নইলে রান্না বান্না করবে কে?
নুসরাতঃ তুমি সে টেনশন করো না। আমি আজই মাকে বলবো বিনুকে এ বাসায় পাঠিয়ে দিতে। সেই কাজকর্ম সব করবে।
ফরহাদঃ থ্যাঙ্কস গড! বাঁচা গেল। তুমি তো এক কাপ চা-ও বানাতে পারো না।
নুসরাতঃ এতোটা অকাজেরও আমি না। এখনই চা বানিয়ে আনছি। তুমি বসো।
(চলবে...)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৪৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×