ফরহাদ, ফরহাদের বাবা আমজাদ আর ফরহাদের মা দিলারা একসাথে রাতের খাবার খাচ্ছে।
দিলারাঃ আজ ফরহাদের এক মেয়েবন্ধু এসেছিল বাসায়।
আমজাদঃ মেয়েবন্ধু? ফরহাদের? হাহাহা।
দিলারাঃ সত্যি। কী যেন নাম বলছিল! ও হ্যাঁ, নুসরাত।
আমজাদঃ বাহ, সুন্দর নাম তো। কী রে ফরহাদ, কখনও বলিস নি তো নুসরাতের কথা।
ফরহাদঃ আমার খাওয়া শেষ। আমি রুমে যাচ্ছি।
ফরহাদ চলে গেল। দিলারা হেসে বলল, মেয়েদের মতো লজ্জা পায় আমার ছেলে।
*****
ফরহাদ রুমে এসে নুসরাতকে কল দিল।
ফরহাদঃ হ্যালো
নুসরাতঃ ওয়াও! আজ মশাইয়ের সময় হলো নিজের ইচ্ছায় কল দেবার।
ফরহাদঃ তুমি আমাকে না জানিয়ে কেন আমার বাসায় এসেছিলে?
নুসরাতঃ কেন? তাতে কি হয়েছে? আমি ভেবেছিলাম, তুমি বাসাতেই আছ।
ফরহাদঃ তুমি আমাকে একটা কল তো করতে পারতে? কী ভাববে আমার বাসার লোক আমার সম্পর্কে!
নুসরাতঃ ওকে, আই এম সরি। আমি তো তোমাকে পোরট্রেট গিফট দিতে গিয়েছিলাম।
ফরহাদঃ জাহান্নামে যাক তুমি আর তোমার পোরট্রেট। কী ভাবো তুমি নিজেকে?
ফরহাদ ফোন কেটে দিল।
নুসরাত কেঁদে দিল। সে বুঝতে পারলনা তার দোষটা কোথায়! সে তো শুধু গিফট দিতে গিয়েছিল। তবে ফরহাদ তার সাথে কেন এমন খারাপ ব্যবহার করল! বিনু এসে বলল, আপা, খাবেন না?
নুসরাত বলল, না, তুমি যাও।
বিনু বলল, আপনি খাননি শুনলে খালাম্মা রাগ করবে।
নুসরাত বলল, মা কে গিয়ে বলো আমাকে বিষ এনে দিতে, আমি বিষ খেয়ে উদরপূর্তি করব।
বিনু চলে গেল।
কিছুক্ষণ পর সুরাইয়া এলো রুমে। নুসরাতের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল, কী হয়েছে মা? খাচ্ছিস না কেন?
নুসরাত বলল, কিছুনা। ভাল লাগছে না।
*****
পরদিন সুরাইয়া রুমে এসে দেখল নুসরাত এখনও ঘুম থেকে উঠেনি।
সুরাইয়া বলল, নুসরাত, আজ ভার্সিটি যাবি না?
নুসরাত বলল, না আম্মা, যাবো না। ভালো লাগছে না।
সুরাইয়া নুসরাতের কপালে হাত দিয়ে দেখল। তারপর বলল, জ্বরে তো তোর গা পুড়ে যাচ্ছে। শুয়ে থাক। আমি গরম দুধ নিয়ে আসছি।
*****
ক্যাম্পাসে সুমাইয়া ও আবিদ কথা বলছে।
সুমাইয়াঃ তুমি নুসরাতকে দেখেছ?
আবিদঃ না তো। কেন?
সুমাইয়াঃ আজ এক্সাম ছিল। অথচ নুসরাত আজ এলোই না। ফোনও সুইচ অফ করে রেখেছে। ও তো কখনও কোন এক্সাম মিস দেয় না!
আবিদঃ দাঁড়াও, আন্টিকে কল করে দেখি।
আবিদ সুরাইয়াকে কল দিল।
আবিদঃ হ্যালো আন্টি, নুসরাত যে আজ ভার্সিটি এলো না! আজ তো এক্সাম ছিল।
সুরাইয়াঃ আর বলো না বাবা। কাল রাত থেকে ওর শরীর খারাপ। আজ তো জ্বরই এসে গেছে। তুমি একটু আসো না! তুমি আসলে হয়তো ও একটু বেটার ফিল করবে।
আবিদঃ জ্বী, আন্টি। আমি আসছি।
*****
নুসরাত কাঁদছে। আবিদ তার দিকে তাকিয়ে আছে।
আবিদঃ কার জন্য কাঁদছ! তার জন্য যে তোমাকে ন্যুনতম রেসপেক্ট দিতে জানে না। আমি তো তোমাকে আগেই বলেছি, সে তোমার যোগ্য নয়। হি ইজ নট পারফেক্ট ফর ইউ। তুমি চাইলে ওর থেকে আরো বেটার লাইফ পার্টনার পাবে। কেন এভাবে দিনকে দিন নিজেই নিজের কাছে ছোট হচ্ছো?
এমন সময় ফরহাদের ফোন এলো।
নুসরাত বলল, ফরহাদ ফোন করেছে।
আবিদ বলল, কেটে দাও। খবরদার, তুমি ফোন ধরবে না।
নুসরাত বলল, দেখি না, কী বলে!
আবিদ বলল, একদম না। ফোন সুইচ অফ করে দাও।
নুসরাত ফোন রিসিভ করল।
আবিদ চিৎকার করে বলল, নিজেকে আর কত ছোট করবে তুমি? যার কাছে তোমার কোন ভ্যালু নেই, তাকে তুমি এত ভ্যালু কেন দিচ্ছ?
নুসরাত অন্য রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিল। তারপর বলল, হ্যালো
ফরহাদ বলল, হ্যালো নুসরাত
নুসরাত বলল, আর কে হবে? সরি বলবে তো।
ফরহাদ বলল, আমার আসলে তখন ওভাবে কথা বলাটা ঠিক হয়নি। আই এম সরি।
নুসরাত বলল, তুমি আমাকে এত কষ্ট কেন দাও?
ফরহাদ বলল, জানিনা! আমার যে মাঝে মাঝে কী হয়! আমি নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারি না। সারারাত তোমার নাম্বারে ট্রাই করেছি সরি বলার জন্য। কিন্তু তোমার মোবাইল বন্ধ ছিল।
নুসরাত বলল, আহারে! খুব কষ্ট হয়েছে না? আর মোবাইল সুইচ অফ করে রাখব না। প্রমিজ।
ফরহাদ বলল, আচ্ছা, এখন রাখি?
নুসরাত বলল, ওকে, বাই।
নুসরাত রুমের দরজা খুলতেই দেখল আবিদ দাঁড়িয়ে আছে। আবিদ বলল, তোমাকে কী বলব? কিচ্ছু বলার নেই। জাস্ট আনবিলিভেবল।
নুসরাত বলল, কিছু বলতেও হবে না। আমি তো জানি, ফরহাদকে ছেড়ে দিলে কার বেশী ফায়দা হয়!
আবিদ বলল, তোমার মা ডেকেছিল বলে আমি এখানে এসেছিলাম। নয়তো মরে গেলেও এখানে পা রাখতাম না।
আবিদ চলে গেল।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:২২