নুসরাত তানিয়াকে কল করল।
নুসরাতঃ হ্যালো
তানিয়াঃ হ্যাঁ, নুসরাত বল।
নুসরাতঃ কেমন আছিস?
তানিয়াঃ ভালো। তুই?
নুসরাতঃ আমিও। আচ্ছা, তুই ফরহাদের কোন খবর জানিস?
তানিয়াঃ কেন?
নুসরাতঃ না মানে, ওকে কয়েকদিন যাবৎ ফোনে পাচ্ছি না তো, তাই টেনশন হচ্ছে।
তানিয়াঃ দাঁড়া, আমি ভাইয়াকে জিজ্ঞাসা করে আসি। সে ফরহাদের খবর নিশ্চয়ই দিতে পারবে।
নুসরাত অপেক্ষায় রইলো। কিছুক্ষণ পর তানিয়ার কল এলো।
নুসরাতঃ হুম, বল।
তানিয়াঃ ফরহাদ তো নাম্বার চেঞ্জ করেছে। তোকে জানায়নি?
নুসরাতঃ নাম্বার চেঞ্জ করেছে?
তানিয়াঃ হ্যাঁ।
নুসরাতঃ জানাতে ভুলে গেছে মনে হয়। তুই তার নতুন নাম্বারটা দে।
তানিয়া নুসরাতকে নাম্বার দিল।
*****
নুসরাত রাতে ফরহাদকে কল দিল।
ফরহাদঃ হ্যালো
নুসরাতঃ হ্যালো, ফরহাদ।
ফরহাদঃ তুমি তানিয়াদের বাসায় ফোন দিয়ে আমার নাম্বার কালেক্ট করেছ?
নুসরাতঃ হ্যাঁ।
ফরহাদ রেগে গিয়ে বলল, কেন? এত কী প্রয়োজন আমাকে যে এভাবে তাদের কল দিয়ে আমার নাম্বার নিতে হবে?
নুসরাতঃ আমি তো শুধু তোমার খোঁজ খবর নেয়ার জন্য তাদের কাছ থেকে নাম্বার নিয়েছি। তুমি নাম্বার চেঞ্জ করেছ, আমাকে জানাওনি তো।
ফরহাদঃ তুমি আমার এমন কে লাগো যে তোমাকে আমার সবকিছু জানিয়ে করতে হবে? কেন আমার পিছনে লেগে আছ তুমি?
নুসরাতঃ আমি তোমার পিছনে লেগে আছি?
ফরহাদঃ তো? তোমার জন্যেই তো আমি নাম্বার...
নুসরাতঃ থামলে কেন? বলো।
ফরহাদঃ আমি রাখছি।
ফরহাদ ফোন কেটে দিল। নুসরাত কেঁদে দিল। বিছানায় বসে বসে অনেকক্ষণ কাঁদল সে। তারপর দাদির রুমে গেল। দাদির কোলে মাথা রেখে কাঁদতে লাগল।
ফাতেমা বেগম বললেন, কী হয়েছে, বোন?
নুসরাতঃ মানুষের হৃদয় এত অদ্ভুত কেন? সে এমন কিছু চায়, যা তার চাওয়া উচিৎ নয়। তারপরও সে চায়, জেনেশুনে বিষ পান করে।
ফাতেমা বেগমঃ ফরহাদ কিছু বলেছে?
নুসরাতঃ কেউ কিছু বলেনি। কারো কিছু বলার প্রয়োজন নেই। হয়তো আমার মধ্যেই কোন কমতি আছে। আচ্ছা দিদা, আমার মধ্যে কী নেই? সে কেন আমাকে অবহেলা করে!
ফাতেমা বেগমঃ তাহলেই দ্যাখ! ফরহাদ তোকে অবহেলা করেছে বলে তোর এত কষ্ট লাগছে! আর যিনি এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা, তাঁকে যখন তাঁরই সৃষ্ট বান্দা অবহেলা করে, তখন তাঁর কেমন লাগে! অথচ তিনি আমাদের সুযোগ দিচ্ছেন তওবা করার, একবার নয়, দুইবার নয়, বারবার।
নুসরাতঃ তুমি শুধু কথাকে ঘুরিয়ে অন্য দিকে নিয়ে যাও। আমি যাই।
ফাতেমা বেগমঃ মাটির মানুষকে ভালবাসিস রে বান্দা, কিন্তু পূজা করিস না, পূজা করিস না।
*****
নুসরাত তার রুমে আসতেই দেখল ফরহাদের কল এসেছে।
নুসরাতঃ ধমকানো আরো বাকি রয়ে গেছে বুঝি?
ফরহাদঃ তুমি কাঁদছ?
নুসরাতঃ না, হাসছি।
ফরহাদঃ আই এম সরি। একচুয়ালি আমার মাথা গরম হয়ে গেলে আমি কাকে কী বলে ফেলি কোন হুশ থাকে না।
নুসরাতঃ ইটস ওকে। বাট এরপর থেকে আর কখনও আমার সাথে এভাবে কথা বলবে না। আমার খুব কষ্ট লাগে।
ফরহাদঃ ওকে, বলব না।
নুসরাত ও ফরহাদের কথা চলতে লাগল।
*****
নুসরাত আবিদের বাসায় এলো। আবিদ পেইন্টিং করছিল।
নুসরাতঃ হাই
আবিদঃ হাই
নুসরাতঃ কী করছ?
আবিদঃ চুল কাটছি।
নুসরাতঃ পেইন্টার থেকে নাপিত হয়ে গেলে কবে থেকে?
আবিদঃ আমার এত ঠ্যাকা পড়ে নাই যে তোমার ছ্যাকা খেয়ে পেইন্টার থেকে নাপিত হয়ে যাবো।
নুসরাত চেয়ার টেনে বসল।
আবিদ বলল, ফরহাদের কী খবর?
নুসরাত বলল, ভালো। আসলে ওর বাসায় একটা পেইন্টিং লাগাবে। তাই তোমার এখানে আসা। আমাকে একটা ভালো দেখে পোরট্রেট দেবে?আমি ওকে গিফট করব।
আবিদ রঙ তুলি রাখল। তারপর রুমের ভেতরে ঢুকে গেল। একটা পোরট্রেট নিয়ে এসে নুসরাতকে দিল।
নুসরাত বলল, থ্যাঙ্ক ইউ। নুসরাত দেখল, পোরট্রেটের নিচে নুসরাতের সাইন দেয়া। নুসরাত বলল, আরে এখানে আমার সাইন কেন? ছবিটা তো তুমি এঁকেছ!
আবিদ বলল, আমি হই আর তুমি হই, একই ব্যপার! নিয়ে যাও।
নুসরাত বলল, কিন্তু...
আবিদ বলল, লাগবে না?
নুসরাত বলল, না, লাগবে। থ্যাঙ্ক ইউ। আমি আসি।
*****
নুসরাত পোরট্রেট নিয়ে ফরহাদের বাসায় গেল। ফরহাদের মা দিলারা বললেন, তুমি?
নুসরাতঃ জ্বী, আমার নাম নুসরাত। ফরহাদের ফ্রেন্ড। ফরহাদ বাসায় আছে?
দিলারাঃ না, সে তো বাসায় নেই। তুমি ভেতরে এসো।
নুসরাতঃ না, আন্টি। আজ না, আরেকদিন। আমি আসলে এই পোরট্রেটটা দিতে এসেছিলাম।
দিলারা পোরট্রেট নিয়ে বলল, বাহ, অনেক সুন্দর তো। তুমি এঁকেছ?
নুসরাত বলল, জ্বী, আন্টি। আমি একেছি। আমি চারুকলায় পড়ি। আচ্ছা আন্টি, আসি।
দিলারা বলল, এসো আবার।
নুসরাত বলল, জ্বী, আসব।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:০৯